স্বপ্না রেজা
ভারতীয় কাস্টমসের একজন সদস্য জানতে চাইলেন লাগেজে কী কী আছে। জবাবে বললাম, দুজোড়া স্যান্ডেল, একটা ভ্যানিটি ব্যাগ, তিনটা শাড়ি, তিনটা শার্ট এবং ওষুধপত্র। মেডিকেল ভিসা, বুঝতেই পারছেন, ওষুধপত্র বেশি থাকারই কথা। কাস্টমসের লোকটি মুখ বাঁকা করে বললেন, ‘সবই তো আছে, সবই তো নিয়েছেন। দিন দিন, ৫০০ রুপি দিন।’ বেশরম আর নির্লজ্জের মতো চেয়ে বসলেন ৫০০ রুপি। মাথার ওপর সিসিটিভি ক্যামেরা খুঁজলাম। যাত্রীদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার বা আচরণ করা হয়, তা দেখার কী ব্যবস্থা, কেউ আছে কি না, সেটাই অনুসন্ধানে ছিলাম।
কাস্টমসের স্ক্যানার মেশিন থেকে লাগেজ নিয়ে এলাকা ত্যাগ করার গেটের মুখেই সমস্যা। দুর্গম ব্যারিকেড যেন। একজন টেবিলের ওপর আধা বসা, পা দুলছে শিকারির সন্ধানে, অন্যজন দাঁড়িয়ে। কোনোভাবেই যেন সুযোগ ফসকে না যায়। এঁদের পোশাকি চাঁদাবাজ বললে অযৌক্তিক হবে না। আইন, নিয়ম কোনো কিছুর তোয়াক্কা নেই। অথচ এসব রক্ষার্থেই তাঁরা নিয়োজিত। বিরক্তিকর ব্যাপার। অত্যন্ত আপত্তিকর বিষয়টি হলো, যাত্রীদের ছোট-বড় লাগেজ খুলে স্বাধীনভাবে ওলটপালট করছেন পুরুষ কাস্টমস সদস্যরা। কোনো কোনো পুরুষ কাস্টমস সদস্যের হাতে নারী যাত্রীর একান্তই ব্যক্তিগত পোশাকের স্পর্শ লাগছে, ওপরের দিকে উঠে আসছে, ভেসে উঠছে। উঠতি বয়সী মেয়ে দেখলে যেমন বখাটে ছেলে ও পুরুষদের মাথা নষ্ট হয়, হিতাহিত জ্ঞান থাকে না, এরাও তাই হয়ে উঠেছেন অনেকটা। দুই দেশের সীমান্তে এমন অভিজ্ঞতা প্রায়ই দৃশ্যমান—এমন কথা যাত্রীরা বলে থাকেন।
অনেক দিন পর সড়কপথে কলকাতা থেকে ফেরার অভিজ্ঞতা এমনই। সীমানার ভারত অংশের এমন অভিজ্ঞতা নিয়ে যখন বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ক্রস করে কাস্টমসে এলাম, স্ক্যানার মেশিনই আশ্বস্ত করল, সব করল। রক্ত-মাংসের মানুষগুলো পোশাক পরে দাঁড়িয়ে থাকলেন আর মৃদু হাসি উপহার দিলেন। আনন্দে আপ্লুত মন, এতটা বিনয় আর ভদ্রতা! এসব পেতেই তো মন মরিয়া থাকে! বাংলাদেশের অংশ থেকে বের হওয়ার সময় বলতেই হলো, এতটুকুন জায়গার মধ্যে কী ভয়ংকর বৈপরীত্য! আপনারা সত্যি ভালো! স্বস্তি দিলেন। ওপারে যে কী কষ্ট পেলাম, বলার মতো নয়। পাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলেন, ‘এটা তো বাংলাদেশ।’ তাল মেলালাম, সত্যি তাই। আমার দেশ।
ঘোর কাটল কিছুক্ষণের মধ্যে। একজন মৃদুস্বরে বললেন, ‘বাংলাদেশ কাস্টমস ইন্ডিয়ান যাত্রীদের সঙ্গে একই আচরণ করে, যেটা ইন্ডিয়ান কাস্টমস আপনার সঙ্গে করেছে। আপনি বাংলাদেশি, তাই তারা সংযত থেকেছে।’ তার মানে দাঁড়ায়, সড়কপথে যাত্রীরা হয়রানির শিকার হন। এটা নতুন নয়, বহুদিনের সংস্কৃতি।
সাধারণত দেখা যায়, সাধারণ যাত্রীরা লজ্জা ও হয়রানির শিকার হওয়ার জ্বরে কাতর থাকেন। দুশ্চিন্তায় থাকেন। ফলে বড় ঝামেলায় পা ফসকে পড়ার আগেই বিপরীত পার্টির চাহিদা মেটাতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠেন। যত দূর জানা যায়, বোঝা যায় যে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক চমৎকার। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান। রাজনৈতিক সমর্থনও রয়েছে। ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও বেশি দৃঢ় ও উন্মুক্ত। এত কিছুর মধ্যে সীমান্তে অভিজ্ঞতা কোনো সত্যকেই সমর্থন করে না, অন্য কথা বলে। সোজা কথায়, বর্ডার ক্রসের সময়ই মনে হয়, দুই দেশের বন্ধুত্ব কাগজ-কলমে মাত্র, ব্যক্তি বা জাতির চেতনায় নয়।
সড়কপথে দেশ দুটির যাতায়াতব্যবস্থায় যাত্রীদের এমন হয়রানি ভালো লাগেনি। যাঁরা ওপেন টাকা বা রুপি চাইছেন, তাঁরা কি এমন কাজ করার জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমোদন বা অনুমতিপ্রাপ্ত? সংগত কারণেই প্রশ্নটা এসে যায়। নতুবা এতটা প্রকাশ্যে ঘটে কী করে এমন সব আপত্তিকর ঘটনা বা অনিয়ম? এসব জায়গায় এককভাবে কোনো অনিয়ম বা অপরাধ করা সম্ভব নয়, এটা আর কারোর অজানা নয়। একটা চক্র গড়ে ওঠে, চক্রটি সক্রিয় থাকে এসব কাজে। তারপর চলে ভাগ-বাঁটোয়ারা। সংশ্লিষ্ট ছোট-বড় অনেক ব্যক্তিই এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকেন। এটাকে ‘উপরি’ বা বাড়তি আয়ের ফন্দি বা উপায় বলা যায়। প্রায় প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে এমন আয়ের পথ তৈরি হয়। শত শত বিধি, নিয়মের মধ্য দিয়েই এমন অনিয়ম চলে।
যাই হোক, গল্পে ফিরি। যখন ইতস্তত করছিলাম, কেন আমাকে ৫০০ রুপি দিতে হবে, আমি তো কোনো অন্যায় করিনি, অবৈধ কিছু বহন করছি না, আমাকে কেন শাস্তি পেতে হবে; তখন নিরাপত্তাকর্মীর কণ্ঠ নরম হয়ে এল। বললেন, ‘ঠিক আছে, প্রতি ব্যাগের জন্য ২০০ রুপি করে দিন। রুপি না থাকলে টাকাই দিন।’ যখন ভাবছিলাম কী করব, তখন পেছন ও পাশ থেকে কয়েকজন যাত্রী বলতে ও ঠেলতে লাগলেন—‘এরা আপনাকে দাবি ছাড়া ছাড়বে না। যা পারেন দিয়ে দিন। নতুবা আপনার জন্য পুরো বাস মুখ থুবড়ে থাকবে। তা-ও কম করে হলেও আড়াই-তিন ঘণ্টা। বাসে অনেক বয়স্ক ও অসুস্থ যাত্রী রয়েছে।’ ব্যাপারটা শেষ অবধি পৌঁছাল অন্যের অসুবিধার জায়গায়। মাত্র ২০০ রুপি দিয়ে ছাড় নিলাম। নিজেকে অন্যায়ের সঙ্গে যুক্ত করলাম। ভাবছিলাম, এসব ব্যক্তি কি নিজে থেকেই এমন জায়গায় চাকরি পেয়ে যান, চাকরি পেতে মুখিয়ে থাকেন, নাকি এ ধরনের কর্মস্থল তাঁদের এমন অন্যায়কারী হতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে?
আধুনিক বিশ্বে প্রযুক্তির ব্যবহার সীমাহীন। সেই অনুযায়ী বাংলাদেশের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এমন একটা প্রতিষ্ঠান পাওয়া যাবে না, যেখানে প্রযুক্তির ব্যবহার নেই। না বললেই নয়, প্রযুক্তির এই ব্যবহার ও প্রচলন ঘটার কারণে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতি কিছুটা হলেও কমেছে। আর প্রযুক্তিনির্ভর ভারতের পথচলা তো তারও আগে। দুই দেশের সীমান্তে কেন যাত্রীদের চলাচলের জন্য প্রযুক্তিনির্ভরতা বাড়ছে না? অনেক যাত্রীর দাবি ও প্রত্যাশা কিন্তু এমনটাই। যে আচরণ আমি ভারতীয় কাস্টমস থেকে পেয়েছি, একই আচরণ ভারতীয়রা পাচ্ছেন বাংলাদেশের কাস্টমস থেকে, সত্যি দুঃখজনক। বিষয়টি দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আমলে নেওয়া উচিত। যাত্রীরা কতটা নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পারাপারের সুযোগ পাবেন, নিরাপদ বোধ করবেন এবং এই যাত্রীদের ঘিরে যেন কোনো অনিয়মের পথ তৈরি না হয়, সে বিষয় নিয়ে দুই দেশের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় ও সিদ্ধান্ত জরুরি। এখন যে অবস্থা দেখা গেল, তাতে যে কারোর মনে হতেই পারে যে, উল্লিখিত মন্ত্রণালয় এসব ঘটনা জানে, নতুন করে কিছু জানার বা করার কিছু নেই, বিষয়টি ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে।
কোনো দেশ থেকে অন্য দেশের কেউ কোনো বৈধ বস্তু সংগ্রহ করবেন, বহন করবেন এটাই স্বাভাবিক। প্রতিটি দেশের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে কিছু উৎপাদন থাকে, যার চাহিদা সৃষ্টি হয় বিশ্ববাজারে। ভারতীয় শাড়ি ও চামড়াজাত বস্তু বেশ উন্নতমানের। বিশ্বজুড়ে চাহিদাও রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে কেউ ভারতে গেলে অন্তত একটা হলেও শাড়ি নিয়ে আসবেন, এটাই হওয়ার কথা। আবার বাংলাদেশের গার্মেন্টসের উৎপাদিত কাপড়চোপড়ের বেশ চাহিদা ভারতীয়দের কাছে। ফলে বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার সময় ভারতীয়রা ব্যবহারের জন্য দু-চারটি কাপড় নেবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বর্ডারে যে ভোগান্তি ও হয়রানি, তার অবসান না হলে দুই দেশের পর্যটক হারানোর শঙ্কা বেশি।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সড়ক ও রেলপথের বর্ডারে যাত্রী পারাপার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন জরুরি। প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, যেন কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি অনিয়ম করার সুযোগ না পান। যাত্রীদের মতামত গ্রহণের ব্যবস্থা থাকতে হবে, যেখানে যাত্রীরা তাঁদের স্বস্তি কিংবা অস্বস্তির কথা জানানোর সুযোগ পাবেন। অন্যায় করার সুযোগ না থাকলে অন্যায়কারী জন্ম নেবে না—এ কথা তো আর অস্বীকার করার উপায় নেই।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
ভারতীয় কাস্টমসের একজন সদস্য জানতে চাইলেন লাগেজে কী কী আছে। জবাবে বললাম, দুজোড়া স্যান্ডেল, একটা ভ্যানিটি ব্যাগ, তিনটা শাড়ি, তিনটা শার্ট এবং ওষুধপত্র। মেডিকেল ভিসা, বুঝতেই পারছেন, ওষুধপত্র বেশি থাকারই কথা। কাস্টমসের লোকটি মুখ বাঁকা করে বললেন, ‘সবই তো আছে, সবই তো নিয়েছেন। দিন দিন, ৫০০ রুপি দিন।’ বেশরম আর নির্লজ্জের মতো চেয়ে বসলেন ৫০০ রুপি। মাথার ওপর সিসিটিভি ক্যামেরা খুঁজলাম। যাত্রীদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার বা আচরণ করা হয়, তা দেখার কী ব্যবস্থা, কেউ আছে কি না, সেটাই অনুসন্ধানে ছিলাম।
কাস্টমসের স্ক্যানার মেশিন থেকে লাগেজ নিয়ে এলাকা ত্যাগ করার গেটের মুখেই সমস্যা। দুর্গম ব্যারিকেড যেন। একজন টেবিলের ওপর আধা বসা, পা দুলছে শিকারির সন্ধানে, অন্যজন দাঁড়িয়ে। কোনোভাবেই যেন সুযোগ ফসকে না যায়। এঁদের পোশাকি চাঁদাবাজ বললে অযৌক্তিক হবে না। আইন, নিয়ম কোনো কিছুর তোয়াক্কা নেই। অথচ এসব রক্ষার্থেই তাঁরা নিয়োজিত। বিরক্তিকর ব্যাপার। অত্যন্ত আপত্তিকর বিষয়টি হলো, যাত্রীদের ছোট-বড় লাগেজ খুলে স্বাধীনভাবে ওলটপালট করছেন পুরুষ কাস্টমস সদস্যরা। কোনো কোনো পুরুষ কাস্টমস সদস্যের হাতে নারী যাত্রীর একান্তই ব্যক্তিগত পোশাকের স্পর্শ লাগছে, ওপরের দিকে উঠে আসছে, ভেসে উঠছে। উঠতি বয়সী মেয়ে দেখলে যেমন বখাটে ছেলে ও পুরুষদের মাথা নষ্ট হয়, হিতাহিত জ্ঞান থাকে না, এরাও তাই হয়ে উঠেছেন অনেকটা। দুই দেশের সীমান্তে এমন অভিজ্ঞতা প্রায়ই দৃশ্যমান—এমন কথা যাত্রীরা বলে থাকেন।
অনেক দিন পর সড়কপথে কলকাতা থেকে ফেরার অভিজ্ঞতা এমনই। সীমানার ভারত অংশের এমন অভিজ্ঞতা নিয়ে যখন বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ক্রস করে কাস্টমসে এলাম, স্ক্যানার মেশিনই আশ্বস্ত করল, সব করল। রক্ত-মাংসের মানুষগুলো পোশাক পরে দাঁড়িয়ে থাকলেন আর মৃদু হাসি উপহার দিলেন। আনন্দে আপ্লুত মন, এতটা বিনয় আর ভদ্রতা! এসব পেতেই তো মন মরিয়া থাকে! বাংলাদেশের অংশ থেকে বের হওয়ার সময় বলতেই হলো, এতটুকুন জায়গার মধ্যে কী ভয়ংকর বৈপরীত্য! আপনারা সত্যি ভালো! স্বস্তি দিলেন। ওপারে যে কী কষ্ট পেলাম, বলার মতো নয়। পাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলেন, ‘এটা তো বাংলাদেশ।’ তাল মেলালাম, সত্যি তাই। আমার দেশ।
ঘোর কাটল কিছুক্ষণের মধ্যে। একজন মৃদুস্বরে বললেন, ‘বাংলাদেশ কাস্টমস ইন্ডিয়ান যাত্রীদের সঙ্গে একই আচরণ করে, যেটা ইন্ডিয়ান কাস্টমস আপনার সঙ্গে করেছে। আপনি বাংলাদেশি, তাই তারা সংযত থেকেছে।’ তার মানে দাঁড়ায়, সড়কপথে যাত্রীরা হয়রানির শিকার হন। এটা নতুন নয়, বহুদিনের সংস্কৃতি।
সাধারণত দেখা যায়, সাধারণ যাত্রীরা লজ্জা ও হয়রানির শিকার হওয়ার জ্বরে কাতর থাকেন। দুশ্চিন্তায় থাকেন। ফলে বড় ঝামেলায় পা ফসকে পড়ার আগেই বিপরীত পার্টির চাহিদা মেটাতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠেন। যত দূর জানা যায়, বোঝা যায় যে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক চমৎকার। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান। রাজনৈতিক সমর্থনও রয়েছে। ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও বেশি দৃঢ় ও উন্মুক্ত। এত কিছুর মধ্যে সীমান্তে অভিজ্ঞতা কোনো সত্যকেই সমর্থন করে না, অন্য কথা বলে। সোজা কথায়, বর্ডার ক্রসের সময়ই মনে হয়, দুই দেশের বন্ধুত্ব কাগজ-কলমে মাত্র, ব্যক্তি বা জাতির চেতনায় নয়।
সড়কপথে দেশ দুটির যাতায়াতব্যবস্থায় যাত্রীদের এমন হয়রানি ভালো লাগেনি। যাঁরা ওপেন টাকা বা রুপি চাইছেন, তাঁরা কি এমন কাজ করার জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমোদন বা অনুমতিপ্রাপ্ত? সংগত কারণেই প্রশ্নটা এসে যায়। নতুবা এতটা প্রকাশ্যে ঘটে কী করে এমন সব আপত্তিকর ঘটনা বা অনিয়ম? এসব জায়গায় এককভাবে কোনো অনিয়ম বা অপরাধ করা সম্ভব নয়, এটা আর কারোর অজানা নয়। একটা চক্র গড়ে ওঠে, চক্রটি সক্রিয় থাকে এসব কাজে। তারপর চলে ভাগ-বাঁটোয়ারা। সংশ্লিষ্ট ছোট-বড় অনেক ব্যক্তিই এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকেন। এটাকে ‘উপরি’ বা বাড়তি আয়ের ফন্দি বা উপায় বলা যায়। প্রায় প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে এমন আয়ের পথ তৈরি হয়। শত শত বিধি, নিয়মের মধ্য দিয়েই এমন অনিয়ম চলে।
যাই হোক, গল্পে ফিরি। যখন ইতস্তত করছিলাম, কেন আমাকে ৫০০ রুপি দিতে হবে, আমি তো কোনো অন্যায় করিনি, অবৈধ কিছু বহন করছি না, আমাকে কেন শাস্তি পেতে হবে; তখন নিরাপত্তাকর্মীর কণ্ঠ নরম হয়ে এল। বললেন, ‘ঠিক আছে, প্রতি ব্যাগের জন্য ২০০ রুপি করে দিন। রুপি না থাকলে টাকাই দিন।’ যখন ভাবছিলাম কী করব, তখন পেছন ও পাশ থেকে কয়েকজন যাত্রী বলতে ও ঠেলতে লাগলেন—‘এরা আপনাকে দাবি ছাড়া ছাড়বে না। যা পারেন দিয়ে দিন। নতুবা আপনার জন্য পুরো বাস মুখ থুবড়ে থাকবে। তা-ও কম করে হলেও আড়াই-তিন ঘণ্টা। বাসে অনেক বয়স্ক ও অসুস্থ যাত্রী রয়েছে।’ ব্যাপারটা শেষ অবধি পৌঁছাল অন্যের অসুবিধার জায়গায়। মাত্র ২০০ রুপি দিয়ে ছাড় নিলাম। নিজেকে অন্যায়ের সঙ্গে যুক্ত করলাম। ভাবছিলাম, এসব ব্যক্তি কি নিজে থেকেই এমন জায়গায় চাকরি পেয়ে যান, চাকরি পেতে মুখিয়ে থাকেন, নাকি এ ধরনের কর্মস্থল তাঁদের এমন অন্যায়কারী হতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে?
আধুনিক বিশ্বে প্রযুক্তির ব্যবহার সীমাহীন। সেই অনুযায়ী বাংলাদেশের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এমন একটা প্রতিষ্ঠান পাওয়া যাবে না, যেখানে প্রযুক্তির ব্যবহার নেই। না বললেই নয়, প্রযুক্তির এই ব্যবহার ও প্রচলন ঘটার কারণে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতি কিছুটা হলেও কমেছে। আর প্রযুক্তিনির্ভর ভারতের পথচলা তো তারও আগে। দুই দেশের সীমান্তে কেন যাত্রীদের চলাচলের জন্য প্রযুক্তিনির্ভরতা বাড়ছে না? অনেক যাত্রীর দাবি ও প্রত্যাশা কিন্তু এমনটাই। যে আচরণ আমি ভারতীয় কাস্টমস থেকে পেয়েছি, একই আচরণ ভারতীয়রা পাচ্ছেন বাংলাদেশের কাস্টমস থেকে, সত্যি দুঃখজনক। বিষয়টি দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আমলে নেওয়া উচিত। যাত্রীরা কতটা নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পারাপারের সুযোগ পাবেন, নিরাপদ বোধ করবেন এবং এই যাত্রীদের ঘিরে যেন কোনো অনিয়মের পথ তৈরি না হয়, সে বিষয় নিয়ে দুই দেশের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় ও সিদ্ধান্ত জরুরি। এখন যে অবস্থা দেখা গেল, তাতে যে কারোর মনে হতেই পারে যে, উল্লিখিত মন্ত্রণালয় এসব ঘটনা জানে, নতুন করে কিছু জানার বা করার কিছু নেই, বিষয়টি ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে।
কোনো দেশ থেকে অন্য দেশের কেউ কোনো বৈধ বস্তু সংগ্রহ করবেন, বহন করবেন এটাই স্বাভাবিক। প্রতিটি দেশের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে কিছু উৎপাদন থাকে, যার চাহিদা সৃষ্টি হয় বিশ্ববাজারে। ভারতীয় শাড়ি ও চামড়াজাত বস্তু বেশ উন্নতমানের। বিশ্বজুড়ে চাহিদাও রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে কেউ ভারতে গেলে অন্তত একটা হলেও শাড়ি নিয়ে আসবেন, এটাই হওয়ার কথা। আবার বাংলাদেশের গার্মেন্টসের উৎপাদিত কাপড়চোপড়ের বেশ চাহিদা ভারতীয়দের কাছে। ফলে বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার সময় ভারতীয়রা ব্যবহারের জন্য দু-চারটি কাপড় নেবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বর্ডারে যে ভোগান্তি ও হয়রানি, তার অবসান না হলে দুই দেশের পর্যটক হারানোর শঙ্কা বেশি।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সড়ক ও রেলপথের বর্ডারে যাত্রী পারাপার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন জরুরি। প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, যেন কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি অনিয়ম করার সুযোগ না পান। যাত্রীদের মতামত গ্রহণের ব্যবস্থা থাকতে হবে, যেখানে যাত্রীরা তাঁদের স্বস্তি কিংবা অস্বস্তির কথা জানানোর সুযোগ পাবেন। অন্যায় করার সুযোগ না থাকলে অন্যায়কারী জন্ম নেবে না—এ কথা তো আর অস্বীকার করার উপায় নেই।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে