ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবৈধ স্ট্যান্ড–বাজার, ভোগাবে পথে পথে

গাজীপুর, ময়মনসিংহ, ত্রিশাল ও ভালুকা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২: ১৩

ঈদযাত্রায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক বরাবরই ভোগান্তির কারণ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে যাত্রী ও চালকদের নাজেহাল হতে হয়। অবশ্য এত দিন যে বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) ভোগান্তির মাত্রা বাড়িয়ে রেখেছিল, সেটাই এবার কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে। তারপরও সরু রাস্তা, অবৈধ বাসস্ট্যান্ড, বাজার ও অটোস্ট্যান্ড পথে পথে যানজটের কারণ হতে পারে। এই মহাসড়কে গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত অনেক কারখানা আছে। এগুলো একযোগে ছুটি দিলে বিপত্তি বাড়বে। এ ছাড়া ঈদযাত্রায় বৃষ্টিও ভোগান্তি বাড়াতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের জয়দেবপুর পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের কাজ ৯১ শতাংশ শেষ। ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে প্রকল্পের আটটি উড়ালসড়কের সাতটিই খুলে দেওয়া হয়েছে। টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারে এসব উড়ালসড়ক।

যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্টরাও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। এদিকে গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত অংশেও পুলিশ ও প্রশাসন প্রস্তুতি নিয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহারেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারপরও শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

গত বুধবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রাজধানী থেকে বের হওয়ার সময় আবদুল্লাহপুর থেকে উড়ালসড়ক দিয়ে উত্তরের যাত্রা শুরু করলে কোনো সমস্যা নেই। তবে উড়ালসড়কের নিচ দিয়ে যাত্রা করলে বিপত্তি হতে পারে। বিশেষ করে তুরাগ সেতুর গোড়া থেকে গাজীপুরের প্রবেশমুখে টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় সড়কে অনেক জায়গায় খানাখন্দ ও উঁচু–নিচু। কিছু অংশ কার্পেটিং করা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ জায়গায় কার্পেটিং বাকি। যাত্রী ওঠানো-নামানোর আশায় পরিবহনগুলো উড়ালসড়কের নিচ দিয়ে গাজীপুরে প্রবেশ করলে যানজটের আশঙ্কা আছে। ঈদযাত্রায় বৃষ্টি হলে এসব খানাখন্দ ও উঁচু-নিচু স্থানে পানি জমে ভোগান্তি বাড়াবে। এ ছাড়া মহাসড়কের টঙ্গী কলেজ গেট, বোর্ড বাজার, ভোগড়া, চান্দনা চৌরাস্তা, বাঘের বাজার, মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় মহাসড়ক দখল করে বাসস্ট্যান্ড, সিএনজিচালিত অটোস্ট্যান্ড, কাঁচাবাজার গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া বিআরটি লেন আলাদা হওয়ার পর সাধারণ যানবাহন চলাচলের লেন কোথাও এক লেন, কোথাও দুই লেন। অনেক স্থানে ফুটপাত নেই।

মহাসড়কের চান্দনা ও ভোগড়া চৌরাস্তা এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর চন্দ্রা ত্রিমোড় গেটওয়ে হিসেবে কাজ করে। স্বাভাবিকভাবে এই তিন জায়গায় যানবাহনের চাপ থাকে। সে চাপ বাড়লে যানজটের সৃষ্টি হয়। এবার তিনটি স্থানেই উড়ালসড়ক চালু হয়েছে। তবে উড়ালসড়ক ব্যবহার না করলে ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে। কারণ, শ্রীপুরের কারখানাগুলোর উত্তরবঙ্গগামী শ্রমিকেরা বাড়ি ফিরতে এখানেই যানবাহনের অপেক্ষায় থাকবেন। ফলে যানজটও হবে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) আলমগীর হোসেন বলেন, বিআরটি মহাসড়ক এবং ফ্লাইওভারগুলো চালু হওয়ায় এবার যানজট তেমন হবে না। বিআরটি লেন এবং মিক্স লেন মিলিয়ে অন্তত পাঁচটি লেনে যানবাহনকে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে। আন্তজেলা পরিবহন ও ব্যক্তিগত যানবাহন যদি ফ্লাইওভারগুলো ব্যবহার করে এবং নির্দেশিত লেনে চলে, তাহলে তেমন সমস্যা হবে না। তবে তিনি বলেন, ঈদের ১-২ দিন আগে একসঙ্গে সব পোশাক কারখানা ছুটি হলে শ্রমিকেরা মহাসড়কে নেমে আসবেন। তখন যানজট হতে পারে, বৃষ্টিও দিতে পারে বাগড়া।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকা এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা এলাকাসহ জেলা পুলিশের অধীন অন্যান্য এলাকায় ট্রাফিক পুলিশিং জোরদার করা হয়েছে। অবৈধ পার্কিং, ফুটপাত দখল এবং অবৈধ যানবাহন চলাচল রোধে কাজ করছে পুলিশ। ঈদযাত্রা সামনে রেখে মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে পুলিশের সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হবে।

তবে গাজীপুরেই যে ভোগান্তির ইতি ঘটবে, তা কিন্তু নয়। বিপত্তি ঘটতে পারে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল অংশের ২৫ কিলোমিটার এলাকায়ও। এখানে কাজির শিমলা, ত্রিশালের বৈলর, কানহর, ত্রিশাল উপজেলা সদর মোড়, বাগান, বগারবাজার, সাইনবোর্ড এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ পার্কিং, গাড়িস্ট্যান্ড ও দোকানপাট। ত্রিশালের কয়েকটি শিল্পকারখানার সামনে রাস্তার ওপর দিনের বেলায়ও পার্ক করে রাখা হয় পরিবহন বাস, কাভার্ড ভ্যান ও পণ্যবাহী ট্রাক।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নিয়মিত চলাচলকারী সৌখিন পরিবহন সার্ভিসের চালক সুমন মিয়া বলেন, ‘ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চার লেনের ত্রিশাল অংশে ভাঙাচোরা কিংবা গর্ত নেই বললেই চলে। তবে মোড়ে মোড়ে অবৈধ স্ট্যান্ড আর যানবাহনের পার্কিং ঈদে দুর্ভোগে ফেলবে।’

এদিকে ময়মনসিংহ নগরীর পাটগুদাম ব্রিজে যানজটের কারণে প্রতিবছর ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ব্রিজে গাড়ি চলাচলের ধীরগতির কারণে শম্ভুগঞ্জ ও বাইপাস মোড়ে গিয়ে যানজট ঠেকে। অপরদিকে চুরখাই, বইলর, ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড, রাঘামারা, ভরাডোবা, ভালুকা বাসস্ট্যান্ড, হবিরবাড়ী, মাস্টারবাড়ীসহ বেশ কয়েকটি স্থানে মহাসড়ক দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের চুরখাই এলাকায় রাস্তার দুপাশে সারিবদ্ধভাবে দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দাঁড় করানো থাকে শত শত বালুভর্তি ট্রাক। মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। এদিকে ভালুকা বাসস্ট্যান্ড, সিডস্টোর বাজার, জামিরদিয়া স্কয়ার, মাস্টারবাড়ীতে মহাসড়কের দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা ও কাঁচাবাজার গড়ে উঠেছে। আবার মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত তিন চাকার অটোরিকশা, মিনিবাস। সড়কের ওপর এসব যানবাহন দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো হয়।

এনা পরিবহনের চালক সোহেল মিয়া বলেন, ময়মনসিংহ শহর থেকে বাস নিয়ে বের হলে প্রথমে বাইপাস, পরে চুরখাই এলাকায় যানজটের মধ্যে পড়তেই হয়। রাস্তার দুপাশের বালুভর্তি ট্রাক ঈদের আগে সরানো না হলে মানুষের ভোগান্তি কোনোভাবেই কমবে না।

ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, ঈদে ঘরমুখী মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পুলিশের আলাদা স্পেশাল টিম অন্য বছরের মতো এবারও কাজ করবে। এরই মধ্যে মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। মহাসড়কে সিসি ক্যামেরার পাশাপাশি ড্রোন ক্যামেরার ব্যবহার করা হবে। সাদাপোশাকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করবে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত