শিল্পীদের ঠকাচ্ছে বেতার

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩: ২৪
Thumbnail image

অনিয়মিত শিল্পীদের বেশি খাটিয়ে কম টাকা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে বাংলাদেশ বেতারের রাজশাহী কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। প্রতি মাসে অনিয়মিত শিল্পীদের ১২ থেকে ১৭ দিনের কাজের চুক্তি করা হয়। পারিশ্রমিকও দেওয়া হয় চুক্তি অনুযায়ী। অথচ সরকারি ছুটি ছাড়া প্রতিদিনই কাজ করানো হচ্ছে অনিয়মিত শিল্পীদের। কাজ হারানোর ভয়ে এর প্রতিবাদ করতে পারেন না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিল্পীরা।

বেতারের অনিয়মিত শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহী বেতারের সংবাদ, অনুষ্ঠান ও প্রকৌশল শাখায় ৭৩ জন অনিয়মিত শিল্পী রয়েছেন। গায়ক, বাদক, কলাকৌশলী থেকে শুরু করে মালিদের ধরা হয় অনিয়মিত শিল্পী হিসেবে। তাঁরা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন। এ জন্য তাঁদের সঙ্গে প্রতি মাসেই চুক্তি করা হয়। ১২ থেকে ১৭ দিন কাজ করতে হবে, এমন চুক্তি থাকে। অথচ তাঁদের প্রতিদিনই কাজ করতে হয়। হাজিরা খাতায় মাসের শুক্র ও শনিবার ছাড়া বাকি সব দিনে সই থাকে তাঁদের।

২০২০ সালের ১৬ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের এক পরিপত্রে বলা হয়েছে, বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন অনিয়মিত শিল্পীদের দৈনিক এক হাজার টাকা ও কম দক্ষ অনিয়মিত শিল্পীদের দৈনিক ৮০০ টাকা মজুরি দিতে হবে। অনিয়মিত শিল্পীদের মাসিক সর্বোচ্চ ২১ দিনের জন্য চুক্তিবদ্ধ করা যাবে। আদেশ জারির তারিখ থেকেই এটি কার্যকর হবে। অথচ রাজশাহী বেতারের শিল্পীরা এত দিন ধরে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। প্রতিবাদ করতে গেলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরের মাস থেকেই চুক্তি না করার হুমকি দেন।

কয়েকজন অনিয়মিত শিল্পী বলেন, শিল্পী ও কলাকৌশলীদের নামে বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে কর্মকর্তাদের পিয়ন, গাড়িচালক, মালি ও বাড়ির কাজের লোক নিয়োগ করে বেতন দেওয়া হয়। কাগজে-কলমে শিল্পী দেখিয়ে বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করছেন সুইপার, যন্ত্রশিল্পী, অফিস সহকারী এমনকি কর্মকর্তাদের কাজের মেয়েরাও। এ কারণে অনিয়মিত শিল্পীদের কম দিনের জন্য চুক্তিবদ্ধ করে বেশি দিন কাজ করানো হয়। আর পারিশ্রমিক দেওয়া হয় চুক্তিতে উল্লেখ থাকা দিনেরই।

ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, বাংলাদেশ বেতারের রাজশাহী কেন্দ্রের প্রতিটি বিভাগেই রয়েছে অনিয়ম আর দুর্নীতি। গত বছর সংবাদ বিভাগের উপ-আঞ্চলিক বার্তা নিয়ন্ত্রক উম্মে কুলসুমের বিরুদ্ধে গাড়ির অপব্যবহার, করোনাকালীন স্থানীয় সংবাদদাতাদের সহায়তার অর্থ আত্মসাৎ ও ভুয়া অনিয়মিত শিল্পী দেখিয়ে টাকা তুলে নেওয়ার নানা অভিযোগ ওঠে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরই তাঁকে তাৎক্ষণিক ঢাকায় বদলি করেন। এরপর তদন্ত শুরু হয়। এ তদন্ত শেষ না হতেই তিনি আবার রাজশাহী ফিরে এসেছেন। তারপর আরও কিছু অনিয়ম করেছেন তিনি।

অনিয়মিত শিল্পীদের পারিশ্রমিক প্রদানে অনিয়মের বিষয়ে উম্মে কুলসুম বলেন, ‘আমরা কত টাকা দিতে পারব সেটা চুক্তিতে উল্লেখ থাকে। এর বাইরে দাপ্তরিক প্রয়োজনেই অনিয়মিত শিল্পীদের কাজ করানো হয়। কিন্তু চুক্তির বেশি টাকা দেওয়ার সুযোগ নেই।’

বাংলাদেশ বেতারের রাজশাহী কেন্দ্রের আঞ্চলিক পরিচালক হাসান আখতার বলেন, ‘অনিয়মিত শিল্পীদের জন্য একটা বাজেট থাকে। সেই বাজেট অনুযায়ীই শিল্পীদের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। তবে দাপ্তরিক প্রয়োজনেই চুক্তির চেয়ে বেশি দিন কাজ করানো হয়। কারও যদি এতে না পোষায় তাহলে কাজ ছেড়ে দেবেন। আমরা তো জোর করে খাটাচ্ছি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত