রাশেদ রাব্বি ও মারুফ কিবরিয়া, ঢাকা
উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণে অনিয়মের আশ্রয়, যোগ্যতার ঘাটতি নিয়ে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি লাভ, পরিবারের সদস্যদের নিয়োগ, অনৈতিক উপায়ে অর্থ উত্তোলন, দরপত্রে অনিয়মের মতো বিস্তর অভিযোগ উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে। আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দাখিল করা অভিযোগ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
২১ মে দুদকে জমা পড়া অভিযোগে বলা হয়েছে, গত জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাসে জাপান ও মালয়েশিয়া থেকে আমন্ত্রণ পান উপাচার্য। মালয়েশিয়ার ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটিতে একটি সেমিনারে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণপত্রে উল্লেখ ছিল, যাবতীয় ব্যয় তারাই বহন করবে। একই ধরনের বিষয় উল্লেখ করা হয় জাপানের শিপ হেলথ কেয়ারের আমন্ত্রণপত্রেও। কিন্তু দেশে ফিরে অধ্যাপক শারফুদ্দিন ভ্রমণ খরচ বাবদ ৩ লাখ ৩৭ হাজার ২৭৭ টাকা বিল জমা দেন অর্থ শাখায়।
বিএসএমএমইউয়ে সংরক্ষিত ব্যক্তিগত নথি থেকে জানা যায়, শারফুদ্দিন আহমেদ সহযোগী অধ্যাপক পদে ব্যক্তিগত পদোন্নতির লক্ষ্যে গঠিত নির্বাচন কমিটির কাছে ২০০১ সালের ২ জুন সাক্ষাৎকার দেন। তখন তিনি চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক (চলতি দায়িত্ব) ছিলেন। পদোন্নতির জন্য তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘাটতি ছিল। সাক্ষাৎকার শেষে নির্বাচন কমিটির মন্তব্যে বলা হয়, শারফুদ্দিন আহমেদ পদোন্নতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী কোনো শর্ত পূরণ করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্তীকৃত ও প্রকাশনা থাকায় বিশেষ বিবেচনায় সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ থাকায় বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিল সভায় পাঠাতে কমিটি সুপারিশ করে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কোনো শিক্ষক কোনো বিষয়ে ক্লাস নিলে অনারারি শিক্ষক হিসেবে সম্মানী ভাতা দেওয়া হয়। কিন্তু অধ্যাপক শারফুদ্দিন উপাচার্য হওয়ার পর ক্লাসপ্রতি ২ হাজার টাকা সম্মানী নিয়েছেন। বিএসএমএমইউর ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের নথি থেকে জানা যায়, শারফুদ্দিন আহমেদ ২০২২ সালের জুন মাসে চারটি এবং জুলাই মাসে দুটি ক্লাস নিয়ে ১২ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা নিয়েছেন। ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ও প্রোগ্রাম ইনচার্জ শাহ আলম ওই নথিতে সই করেন। গত বছরের ২৮ এপ্রিল অনারারি শিক্ষকদের ক্লাস নেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ।
এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওনারা (দুদক) কমিটি করে যেভাবে আগায়, আগাক। এ ব্যাপারে পত্রপত্রিকায় আমি আর কথা বলতে চাই না।’ এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
এ বিষয়ে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে এখনো কিছু জানি না। ফাইল দেখে বলতে হবে। তবে একজন উপাচার্যের বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা খুবই দুঃখজনক এবং অপ্রত্যাশিত।’
চার শর্তে সহযোগী অধ্যাপক
অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ ২০০১ সালে সহযোগী অধ্যাপক হতে সাক্ষাৎকার দিয়েও নির্বাচন কমিটির শক্ত সুপারিশ না থাকায় পদোন্নতি পাননি। এরপরও তিনি সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়মিত না হয়েই সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির চেষ্টা চালিয়ে যান। ২০০৪ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি আবারও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ৪ নভেম্বর সিন্ডিকেট সভায় চার শর্তে তাঁকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ৯ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ আবদুল গফুরের সই করা এক চিঠিতে শারফুদ্দিনকে নিয়োগপ্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে সম্মতিপত্র বিভাগীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে রেজিস্ট্রার অফিসে জমা দিতে বলা হয়।
ওই চিঠিতে বলা হয়, ২৪ এপ্রিল ২০০৪ সালের আবেদনের সূত্রে এবং ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জানানো যাচ্ছে, ‘আপনি বর্তমানে চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপকের যে পদে নিয়োজিত আছেন, সেই পদটিকে সহযোগী অধ্যাপক পদে আপগ্রেড করে ব্যক্তিগত পদোন্নতির মাধ্যমে উক্ত পদে আপনাকে নিম্নলিখিত শর্তে নিয়োগ করা হয়েছে—১. ১০,৭০০-১৩,১০০ /- টাকা বেতন স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী নির্ধারিত মূল বেতন এবং অন্যান্য ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে। ২. নিয়োগকৃত পদের দায়িত্বসহ অব্যবহিত পূর্ব পদের দায়িত্বও পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নতুন বা পৃথক কোনো ইউনিট দেওয়া হবে না। ৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন (১৯৯৮ সনের ১ নং আইন), বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত ও প্রণীত সংশ্লিষ্ট সব সংবিধি, অধ্যাদেশ, প্রবিধান ও নিয়ম অনুযায়ী চাকরি নিয়ন্ত্রিত হবে। ৪. এমএস ডিগ্রি প্রাপ্তির তারিখ (২৬-৪-২০০৪ ইং) থেকে এ নিয়োগ কার্যকর হবে।’
ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি
২০০৪ সালে কয়েকটি শর্তে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পেলেও ২০০৭ সালে এসে আবারও শারফুদ্দিন আহমেদের নিয়োগের সময় পাল্টে যায় ভূতাপেক্ষভাবে। এমনকি আগের বেতন স্কেল ১০,৭০০-১৩,১০০ টাকার পরিবর্তে নতুন জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী ১৫,০০০-১৯,৮০০ টাকা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ আবদুল গফুর স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনি ২০০৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তারিখে পুনঃআবেদন করেছিলেন। সেই সূত্রে জানানো যাচ্ছে যে, গত ২০০১ সালের ১২ জুলাই অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের বিশেষ সভার সিদ্ধান্ত এবং পরবর্তী ৪ আগস্টের একাডেমিক কাউন্সিলের ৯ম সভার (কার্যবিবরণীর) সুপারিশ অনুযায়ী পদোন্নতি কার্যকরের জন্য ২০০১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তারিখের স্মারক (আদেশ নং-৭১৭১) দ্বারা গঠিত বিশেষ কমিটির সুপারিশ ও ভাইস চ্যান্সেলরের অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপকের যে পদে আপনি নিয়োজিত ছিলেন, সেই পদটিকে ২০০৪ সালের ৯ নভেম্বর তারিখের স্মারক (আদেশ পত্র নং-বিএসএমএমইউ/ ২০০৪/৮১০৭) দ্বারা আপগ্রেড করে নির্ধারিত শর্তে ব্যক্তিগত পদোন্নতির মাধ্যমে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল।’
পরীক্ষা ছাড়াই কোর্সে ভর্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কোনো কোর্সে ভর্তি হতে হলে অবশ্যই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। কিন্তু ১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য বরাবর সরাসরি এমএস (চক্ষু) কোর্সে ভর্তির সুযোগ চান শারফুদ্দিন। ওই আবেদনে বিভাগীয় চেয়ারম্যান, ডিন, উপ-উপাচার্যের সুপারিশ ছিল। তবে নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যানকে উপেক্ষা করে সেটি উপাচার্য বরাবর পাঠানো হয়। উপাচার্য এটি অনুমোদনও করেন। তবে একাডেমিক কাউন্সিলের নথিতে উল্লেখ করা হয়, ভর্তি কমিটি উপেক্ষা করে ভর্তি করার ক্ষমতা উপাচার্যের নেই।
৯ বছরের শিক্ষা ছুটি ছেলের
অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদের বড় ছেলে ডা. তাজবীর আহমেদ। পিতার ক্ষমতাবলে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল অফিসার হিসেবে চাকরি পাওয়ার পর ৫ বছরের শিক্ষা ছুটি নিয়ে জাপানে চলে যান। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরে যোগ দিয়ে পুনরায় চার বছরের শিক্ষা ছুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো যান। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পাঁচ বছরের ওপরে শিক্ষা ছুটি নেওয়ার সুযোগ নেই। পরে ছুটি নিতে হলে অবশ্যই সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু এ-সংক্রান্ত কোনো চিঠি বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই।
বিনা ভাড়ায় ক্যানটিন
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১২টি ক্যানটিন পরিচালিত হয়। এগুলোর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্যানটিন, ডক্টরস ক্যাফেটেরিয়া (এ ব্লক, ৫ম তলা), আল মদিনা (বি ব্লক, নিচতলা), অপটিকস সেন্টার (ওপিডি-২, নিচতলা), টিচার্স লাউঞ্জ (ব্লক বি, ২য় তলা) এই ৫টি দোকান ও ক্যানটিন থেকে ভাড়া পাওয়া যায়। কিন্তু কাটারিং (সি ব্লক ১১ তলা), ডক্টরস হোস্টেল (এ ব্লক ৭ম তলা), টিএসসি ক্যানটিন, বহির্বিভাগ-১ স্ন্যাকস কর্নার, বহির্বিভাগ-২ স্ন্যাকস কর্নার, বহির্বিভাগ-৩ স্ন্যাকস কর্নার, সিঅ্যান্ডসি—এই সাতটি ক্যানটিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে কোনো টাকা জমা হয় না। বিষয়টি উপাচার্যের নজরে আনলেও তিনি নীরব ভূমিকায় আছেন।
দরপত্রে অনিয়ম
জানা যায়, ২০২১ সালের মার্চে বিএসএমএমইউর উপাচার্য পদে নিয়োগ পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইয়ার-ই-মাহবুবের নেতৃত্বে মিডিয়া সেল গঠন করেন অধ্যাপক শারফুদ্দিন। এর পর থেকে এই সেলের মাধ্যমে দরপত্র ছাড়াই কয়েক কোটি টাকার প্রকাশনার কাজ করা হয়। চলতি বছরের ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত সমাবর্তনে ভুলে ভরা ম্যাগাজিন ও ব্যাগ ছাপিয়ে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের নামে বিপুল টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, দরপত্র ছাড়াই কোটেশনের মাধ্যমে সমাবর্তন আয়োজন করে ৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ভুয়া বিলের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের দায় উপাচার্য এড়াতে পারেন না।
দরপত্র-সংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ ক্লিনিং কোম্পানি নিয়োগের দরপত্র আহ্বান করে। এতে সাত সদস্যের কমিটি থাকলেও কমিটির মতামত মূল্যায়ন করা হয়নি। দরপত্রের শিডিউল প্রকাশের পর দেখা যায়, প্রথম লটের ১০টি কোম্পানির মধ্যে ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা একটিকে, দ্বিতীয় লটেও ছয়টির মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে থাকা কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এভাবে ষষ্ঠ লট পর্যন্ত যেসব কোম্পানি বিএসএমএমইউর ক্লিনিংয়ের দায়িত্ব পেয়েছে, তাদের কারও ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয় বিধিমালা, ২০০৮ মানা হয়নি। একই অভিযোগ আছে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের দায়িত্ব প্রদান, ফটোকপি কাম স্টেশনারি দোকানের দরপত্রের ক্ষেত্রে।
নিয়োগ-বাণিজ্য ও স্বজনপ্রীতি
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী কোনো নিকটাত্মীয় পরীক্ষার্থী হলে প্রতিষ্ঠানের কোনো অধ্যাপক, শিক্ষক অথবা কর্মকর্তা ওই পরীক্ষার দায়িত্বে থাকতে পারেন না। কিন্তু শারফুদ্দিন আহমেদের ছোট ছেলে তানভীর আহমেদ ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর স্নাতকোত্তর (এমডি/এমএস) কোর্সের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। ওই পরীক্ষার সার্বিক তত্ত্বাবধান কমিটির প্রধান ছিলেন উপাচার্য নিজে। তানভীর আহমেদ এখন বিএসএমএমইউর স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী। একই সঙ্গে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তিনি অটোল্যারিংগোলজি বিভাগে কনসালট্যান্ট পদে আছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, উপাচার্যের এমন অন্তত ১১ আত্মীয় চাকরি পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুদকে অভিযোগে বলা হয়, যত নিয়োগ হয়েছে, সেগুলোর সামান্যই বিজ্ঞাপন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
সুষ্ঠু অনুসন্ধানের প্রত্যাশা
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একজন উপাচার্যের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ থাকা দেশ ও জাতির জন্য দুঃখজনক। যেহেতু দুর্নীতি-সংক্রান্ত অভিযোগ, দুদক অবস্থান বা ব্যক্তির দিক বিবেচনা না করে অনুসন্ধান করবে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের মাধ্যমে অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে বলে মনে করি।’
উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণে অনিয়মের আশ্রয়, যোগ্যতার ঘাটতি নিয়ে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি লাভ, পরিবারের সদস্যদের নিয়োগ, অনৈতিক উপায়ে অর্থ উত্তোলন, দরপত্রে অনিয়মের মতো বিস্তর অভিযোগ উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে। আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দাখিল করা অভিযোগ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
২১ মে দুদকে জমা পড়া অভিযোগে বলা হয়েছে, গত জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাসে জাপান ও মালয়েশিয়া থেকে আমন্ত্রণ পান উপাচার্য। মালয়েশিয়ার ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটিতে একটি সেমিনারে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণপত্রে উল্লেখ ছিল, যাবতীয় ব্যয় তারাই বহন করবে। একই ধরনের বিষয় উল্লেখ করা হয় জাপানের শিপ হেলথ কেয়ারের আমন্ত্রণপত্রেও। কিন্তু দেশে ফিরে অধ্যাপক শারফুদ্দিন ভ্রমণ খরচ বাবদ ৩ লাখ ৩৭ হাজার ২৭৭ টাকা বিল জমা দেন অর্থ শাখায়।
বিএসএমএমইউয়ে সংরক্ষিত ব্যক্তিগত নথি থেকে জানা যায়, শারফুদ্দিন আহমেদ সহযোগী অধ্যাপক পদে ব্যক্তিগত পদোন্নতির লক্ষ্যে গঠিত নির্বাচন কমিটির কাছে ২০০১ সালের ২ জুন সাক্ষাৎকার দেন। তখন তিনি চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক (চলতি দায়িত্ব) ছিলেন। পদোন্নতির জন্য তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘাটতি ছিল। সাক্ষাৎকার শেষে নির্বাচন কমিটির মন্তব্যে বলা হয়, শারফুদ্দিন আহমেদ পদোন্নতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী কোনো শর্ত পূরণ করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্তীকৃত ও প্রকাশনা থাকায় বিশেষ বিবেচনায় সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ থাকায় বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিল সভায় পাঠাতে কমিটি সুপারিশ করে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কোনো শিক্ষক কোনো বিষয়ে ক্লাস নিলে অনারারি শিক্ষক হিসেবে সম্মানী ভাতা দেওয়া হয়। কিন্তু অধ্যাপক শারফুদ্দিন উপাচার্য হওয়ার পর ক্লাসপ্রতি ২ হাজার টাকা সম্মানী নিয়েছেন। বিএসএমএমইউর ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের নথি থেকে জানা যায়, শারফুদ্দিন আহমেদ ২০২২ সালের জুন মাসে চারটি এবং জুলাই মাসে দুটি ক্লাস নিয়ে ১২ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা নিয়েছেন। ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ও প্রোগ্রাম ইনচার্জ শাহ আলম ওই নথিতে সই করেন। গত বছরের ২৮ এপ্রিল অনারারি শিক্ষকদের ক্লাস নেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ।
এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওনারা (দুদক) কমিটি করে যেভাবে আগায়, আগাক। এ ব্যাপারে পত্রপত্রিকায় আমি আর কথা বলতে চাই না।’ এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
এ বিষয়ে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে এখনো কিছু জানি না। ফাইল দেখে বলতে হবে। তবে একজন উপাচার্যের বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা খুবই দুঃখজনক এবং অপ্রত্যাশিত।’
চার শর্তে সহযোগী অধ্যাপক
অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ ২০০১ সালে সহযোগী অধ্যাপক হতে সাক্ষাৎকার দিয়েও নির্বাচন কমিটির শক্ত সুপারিশ না থাকায় পদোন্নতি পাননি। এরপরও তিনি সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়মিত না হয়েই সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির চেষ্টা চালিয়ে যান। ২০০৪ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি আবারও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ৪ নভেম্বর সিন্ডিকেট সভায় চার শর্তে তাঁকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ৯ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ আবদুল গফুরের সই করা এক চিঠিতে শারফুদ্দিনকে নিয়োগপ্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে সম্মতিপত্র বিভাগীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে রেজিস্ট্রার অফিসে জমা দিতে বলা হয়।
ওই চিঠিতে বলা হয়, ২৪ এপ্রিল ২০০৪ সালের আবেদনের সূত্রে এবং ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জানানো যাচ্ছে, ‘আপনি বর্তমানে চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপকের যে পদে নিয়োজিত আছেন, সেই পদটিকে সহযোগী অধ্যাপক পদে আপগ্রেড করে ব্যক্তিগত পদোন্নতির মাধ্যমে উক্ত পদে আপনাকে নিম্নলিখিত শর্তে নিয়োগ করা হয়েছে—১. ১০,৭০০-১৩,১০০ /- টাকা বেতন স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী নির্ধারিত মূল বেতন এবং অন্যান্য ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে। ২. নিয়োগকৃত পদের দায়িত্বসহ অব্যবহিত পূর্ব পদের দায়িত্বও পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নতুন বা পৃথক কোনো ইউনিট দেওয়া হবে না। ৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন (১৯৯৮ সনের ১ নং আইন), বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত ও প্রণীত সংশ্লিষ্ট সব সংবিধি, অধ্যাদেশ, প্রবিধান ও নিয়ম অনুযায়ী চাকরি নিয়ন্ত্রিত হবে। ৪. এমএস ডিগ্রি প্রাপ্তির তারিখ (২৬-৪-২০০৪ ইং) থেকে এ নিয়োগ কার্যকর হবে।’
ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি
২০০৪ সালে কয়েকটি শর্তে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পেলেও ২০০৭ সালে এসে আবারও শারফুদ্দিন আহমেদের নিয়োগের সময় পাল্টে যায় ভূতাপেক্ষভাবে। এমনকি আগের বেতন স্কেল ১০,৭০০-১৩,১০০ টাকার পরিবর্তে নতুন জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী ১৫,০০০-১৯,৮০০ টাকা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ আবদুল গফুর স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনি ২০০৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তারিখে পুনঃআবেদন করেছিলেন। সেই সূত্রে জানানো যাচ্ছে যে, গত ২০০১ সালের ১২ জুলাই অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের বিশেষ সভার সিদ্ধান্ত এবং পরবর্তী ৪ আগস্টের একাডেমিক কাউন্সিলের ৯ম সভার (কার্যবিবরণীর) সুপারিশ অনুযায়ী পদোন্নতি কার্যকরের জন্য ২০০১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তারিখের স্মারক (আদেশ নং-৭১৭১) দ্বারা গঠিত বিশেষ কমিটির সুপারিশ ও ভাইস চ্যান্সেলরের অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপকের যে পদে আপনি নিয়োজিত ছিলেন, সেই পদটিকে ২০০৪ সালের ৯ নভেম্বর তারিখের স্মারক (আদেশ পত্র নং-বিএসএমএমইউ/ ২০০৪/৮১০৭) দ্বারা আপগ্রেড করে নির্ধারিত শর্তে ব্যক্তিগত পদোন্নতির মাধ্যমে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল।’
পরীক্ষা ছাড়াই কোর্সে ভর্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কোনো কোর্সে ভর্তি হতে হলে অবশ্যই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। কিন্তু ১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য বরাবর সরাসরি এমএস (চক্ষু) কোর্সে ভর্তির সুযোগ চান শারফুদ্দিন। ওই আবেদনে বিভাগীয় চেয়ারম্যান, ডিন, উপ-উপাচার্যের সুপারিশ ছিল। তবে নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যানকে উপেক্ষা করে সেটি উপাচার্য বরাবর পাঠানো হয়। উপাচার্য এটি অনুমোদনও করেন। তবে একাডেমিক কাউন্সিলের নথিতে উল্লেখ করা হয়, ভর্তি কমিটি উপেক্ষা করে ভর্তি করার ক্ষমতা উপাচার্যের নেই।
৯ বছরের শিক্ষা ছুটি ছেলের
অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদের বড় ছেলে ডা. তাজবীর আহমেদ। পিতার ক্ষমতাবলে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল অফিসার হিসেবে চাকরি পাওয়ার পর ৫ বছরের শিক্ষা ছুটি নিয়ে জাপানে চলে যান। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরে যোগ দিয়ে পুনরায় চার বছরের শিক্ষা ছুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো যান। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পাঁচ বছরের ওপরে শিক্ষা ছুটি নেওয়ার সুযোগ নেই। পরে ছুটি নিতে হলে অবশ্যই সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু এ-সংক্রান্ত কোনো চিঠি বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই।
বিনা ভাড়ায় ক্যানটিন
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১২টি ক্যানটিন পরিচালিত হয়। এগুলোর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্যানটিন, ডক্টরস ক্যাফেটেরিয়া (এ ব্লক, ৫ম তলা), আল মদিনা (বি ব্লক, নিচতলা), অপটিকস সেন্টার (ওপিডি-২, নিচতলা), টিচার্স লাউঞ্জ (ব্লক বি, ২য় তলা) এই ৫টি দোকান ও ক্যানটিন থেকে ভাড়া পাওয়া যায়। কিন্তু কাটারিং (সি ব্লক ১১ তলা), ডক্টরস হোস্টেল (এ ব্লক ৭ম তলা), টিএসসি ক্যানটিন, বহির্বিভাগ-১ স্ন্যাকস কর্নার, বহির্বিভাগ-২ স্ন্যাকস কর্নার, বহির্বিভাগ-৩ স্ন্যাকস কর্নার, সিঅ্যান্ডসি—এই সাতটি ক্যানটিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে কোনো টাকা জমা হয় না। বিষয়টি উপাচার্যের নজরে আনলেও তিনি নীরব ভূমিকায় আছেন।
দরপত্রে অনিয়ম
জানা যায়, ২০২১ সালের মার্চে বিএসএমএমইউর উপাচার্য পদে নিয়োগ পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইয়ার-ই-মাহবুবের নেতৃত্বে মিডিয়া সেল গঠন করেন অধ্যাপক শারফুদ্দিন। এর পর থেকে এই সেলের মাধ্যমে দরপত্র ছাড়াই কয়েক কোটি টাকার প্রকাশনার কাজ করা হয়। চলতি বছরের ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত সমাবর্তনে ভুলে ভরা ম্যাগাজিন ও ব্যাগ ছাপিয়ে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের নামে বিপুল টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, দরপত্র ছাড়াই কোটেশনের মাধ্যমে সমাবর্তন আয়োজন করে ৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ভুয়া বিলের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের দায় উপাচার্য এড়াতে পারেন না।
দরপত্র-সংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ ক্লিনিং কোম্পানি নিয়োগের দরপত্র আহ্বান করে। এতে সাত সদস্যের কমিটি থাকলেও কমিটির মতামত মূল্যায়ন করা হয়নি। দরপত্রের শিডিউল প্রকাশের পর দেখা যায়, প্রথম লটের ১০টি কোম্পানির মধ্যে ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা একটিকে, দ্বিতীয় লটেও ছয়টির মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে থাকা কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এভাবে ষষ্ঠ লট পর্যন্ত যেসব কোম্পানি বিএসএমএমইউর ক্লিনিংয়ের দায়িত্ব পেয়েছে, তাদের কারও ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয় বিধিমালা, ২০০৮ মানা হয়নি। একই অভিযোগ আছে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের দায়িত্ব প্রদান, ফটোকপি কাম স্টেশনারি দোকানের দরপত্রের ক্ষেত্রে।
নিয়োগ-বাণিজ্য ও স্বজনপ্রীতি
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী কোনো নিকটাত্মীয় পরীক্ষার্থী হলে প্রতিষ্ঠানের কোনো অধ্যাপক, শিক্ষক অথবা কর্মকর্তা ওই পরীক্ষার দায়িত্বে থাকতে পারেন না। কিন্তু শারফুদ্দিন আহমেদের ছোট ছেলে তানভীর আহমেদ ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর স্নাতকোত্তর (এমডি/এমএস) কোর্সের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। ওই পরীক্ষার সার্বিক তত্ত্বাবধান কমিটির প্রধান ছিলেন উপাচার্য নিজে। তানভীর আহমেদ এখন বিএসএমএমইউর স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী। একই সঙ্গে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তিনি অটোল্যারিংগোলজি বিভাগে কনসালট্যান্ট পদে আছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, উপাচার্যের এমন অন্তত ১১ আত্মীয় চাকরি পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুদকে অভিযোগে বলা হয়, যত নিয়োগ হয়েছে, সেগুলোর সামান্যই বিজ্ঞাপন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
সুষ্ঠু অনুসন্ধানের প্রত্যাশা
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একজন উপাচার্যের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ থাকা দেশ ও জাতির জন্য দুঃখজনক। যেহেতু দুর্নীতি-সংক্রান্ত অভিযোগ, দুদক অবস্থান বা ব্যক্তির দিক বিবেচনা না করে অনুসন্ধান করবে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের মাধ্যমে অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে বলে মনে করি।’
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে