সোয়া চার শ বছরের বরমী

রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর) 
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২২, ১০: ১২

মিয়ানমার বা বার্মা থেকে এ অঞ্চলে মানুষ আসার ইতিহাস শত শত বছরের পুরোনো। প্রায় সোয়া চার শ বছর আগে বার্মার জলদস্যুরা বাংলা লুটপাট করতে এসেছিল শীতলক্ষ্যা নদী বেয়ে। এরপর মোগল সেনারা তাদের গতিপথ জানতে পেরে বিশেষ একটি জায়গায় অবস্থান নেয়। জলদস্যুরা এ অঞ্চলে প্রবেশ করলে মোগল সেনারা অভিযান চালিয়ে তাদের ধরে ফেলে এবং সেখানে আটকে রাখে সপ্তাহখানেক। এ ঘটার পরে অঞ্চলটির নাম হয় বরমী। সেখানে বাজার গড়ে উঠলে বাজারটির নাম হয় বরমী বাজার।

আজ থেকে ৪১৯ বছর আগে আজকের বরমী নৌবাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল। এর পর থেকে আশপাশের কয়েকটি অঞ্চলে প্রভাবশালী বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে বরমীর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এখানকার দীর্ঘ সময়ের স্থায়ী বাসিন্দা হাজার হাজার বানর। এদের দৌড়াদৌড়িতে সব সময় মুখর থাকে বরমী বাজারের প্রতিটি অলিগলি। বানরের খেলা দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসে বরমী বাজারে। এখনো এ বাজারে রয়েছে শত শত বানর।

বরমী বিভিন্ন ব্যবসার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বাজার। এটি এই এলাকায় ধান, পাট, কাঁঠাল এবং বিভিন্ন প্রজাতির কাঠের সবচেয়ে বড় আড়ত। এ বাজারের খ্যাতি আছে তাল কাঠের জন্য। বাজারের বড় একটা অংশজুড়ে বসে তাল কাঠসহ বিভিন্ন কাঠের বাজার। কৃষিজ ফসল ছাড়াও বরমী হাটে বেশ বড় একটি পশুর হাট বসে। এ ছাড়া আছে পাইকারি কাপড় ও কামারপট্টি। এক শর বেশি কামার বসেন এখানে। এর পাশেই বিক্রি হয় মাছ শিকারের বিভিন্ন ধরনের জাল। শ্রীপুর উপজেলা ছাড়াও আশপাশের কমপক্ষে ১০টি উপজেলার জেলেরা এই বাজার থেকে জাল কিনে নিয়ে যান। বরমী বাজারে রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক চালের কারখানা। এসব কারখানায় উৎপাদিত চাল দেশের বিভিন্ন বাজারে সড়ক ও নৌপথে পাঠানো হয়।

বিশাল একটি পাইকারি মাছের আড়ত আছে বরমী বাজারে। প্রতিদিন শীতলক্ষ্যা, সুতিয়া, মাটিকাটা, ব্রহ্মপুত্র নদ-নদীসহ আশপাশের কয়েকটি উপজেলার মাছচাষিরা মাছ নিয়ে আসে এখানে।

বরমী বাজারের প্রাচীন ব্যবসায়ীদের অন্যতম সুদীপ্ত কর্মকারের পরিবার। জানা যায়, প্রবীণ সুদীপ্ত কর্মকারের ঠাকুরদাদা পীযূষ কর্মকার তাঁদের পারিবারিক ব্যবসা শুরু করেছিলেন। তারপর বাবা নরেন্দ্র কর্মকারের কাছ থেকে পারিবারিক ব্যবসার ভার আসে সুদীপ্ত কর্মকারের হাতে। সুদীপ্ত কর্মকার জানান, চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুই এখানে বিক্রি হয়ে আসছে কয়েক শ বছর ধরে।

রবীন্দ্র কুমার বরমীতে পাইকারি চালের ব্যবসা করেন। তাঁরও কয়েক পুরুষের ব্যবসা এখানে। রবীন্দ্র কুমার জানান, বরমী বাজারের সুদিন শুরু হয়েছে কয়েক শ বছর আগে, এখনো এর জৌলুশ কমেনি। নৌপথে নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কাপাসিয়া, ভালুকা, গফরগাঁও, কিশোরগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলায় রবীন্দ্র কুমার চাল বিক্রি করেন।

বরমী বাজারের প্রবীণ ব্যবসায়ী অহিদুল হক ভূঁইয়া জানান, এখানকার ঘানিতে ভাঙা সরিষার তেল ও চিড়ার সুনাম রয়েছে দেশব্যাপী। অনেক আগে থেকেই এখানে তেল ও চিড়ার মিল গড়ে উঠেছিল। বরমী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আবুল হাসেম বলেন, বরমী বাজার বাংলাদেশের অন্যতম একটি বাণিজ্যকেন্দ্র। শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ঐতিহ্যে ঘেরা বরমী বাজারের বানরসহ সৌন্দর্য রক্ষায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকে। স্থানীয় প্রশাসন এটি চালু রাখবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত