সংস্কারে দুর্নীতি, তদন্তে দুদক

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি 
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ০৮
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২২, ১৪: ২৮

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার দাড়েরপাড়া-দৌলতখালী সড়কের সংস্কারকাজে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। সংস্কারকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ পেয়ে ইতিমধ্যে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতিমধ্যে কুষ্টিয়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) প্রকৌশলীর কার্যালয়ে তদন্ত চালিয়েছে দুদক।

দুদকের সমন্বিত কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযানে প্রকল্পের কার্যাদেশ, গত ১৩ এপ্রিল নির্মাণব্যয়ের কাগজপত্রসহ বিভিন্ন নথি ও রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছে দুদক। সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নীলকমল পালের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল এ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় সড়কের নির্মাণকাজ যাচাই করেন কুষ্টিয়া সড়ক বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান। তদন্ত এখনো চলছে।

প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সড়কের কার্পেটিং, খোয়া ও বিটুমিন সরেজমিনে যাচাই করেছি। খালি চোখে সড়কে ব্যবহৃত বিটুমিনের পরিমাণ সঠিক নেই বলে মনে হয়েছে। তবে এটির সঠিক মাত্রা জানার জন্য উপকরণ পরীক্ষা করা প্রয়োজন।’

জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে গ্রামীণ সড়ক সংস্কার ও সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় দৌলতপুরের মথুরাপুর ইউনিয়নের হোসেনাবাদ বাজার থেকে সদর ইউনিয়নের দাড়েরপাড়া-দৌলতখালী সড়ক সংস্কারের প্রকল্প নেওয়া হয়। সংস্কারকাজের জন্য ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আজমেরী ট্রেডার্সের মালিক ঠিকাদার এস এম রবিউল আজম টিপুকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পের ঠিকাদার এস এম রবিউল আজম টিপু হলেও কাজটি বাস্তবায়ন করেছেন এমআর খান ছোটন নামের এক ব্যক্তি।

আরও জানা গেছে, প্রকৌশলী ইফতেখার জোয়ারদার দায়িত্ব নেওয়ার পর দৌলতপুরের নতুন-পুরোনো অন্তত ৭০ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজ হয়েছে, যার অধিকাংশেরই মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এলাকাবাসী। কোথাও কোথাও মানহীন পরিস্থিতি দৃশ্যমানও হয়েছে।

স্থানীদের অভিযোগ, যোগদানের পরপরই ২০২০ সালের জুন মাসে মথুরাপুর ইউনিয়নের হোসেনাবাদ সমিল পাড়া থেকে মথুরাপুর গোহাট পর্যন্ত ১ হাজার ৭০০ মিটার সড়কের কাজে নিম্নমানের উপকরণ ও বৃষ্টির পানির মধ্যে কার্পেটিং করা হয়। ওই সময় এলাকাবাসী এর প্রতিবাদ করে। পরে ঘটনা ধামাচাপা দিতে হোসেনাবাদ কান্দির পাড়া এলাকার ১৩ জনকে আসামি করে থানায় চাঁদাবাজির মামলা করে কার্যাদেশ পাওয়া চুয়াডাঙ্গার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টিটু এন্টারপ্রাইজ। এরপর থেকে প্রতিবাদ জানানোর সাহস করেন না উপজেলাবাসী।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, সরকারের প্রতিটি উন্নয়নে উপজেলা প্রকৌশলী দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করেন এবং বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেন। গুটিকয়েক ঠিকাদার দৌলতপুরের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কাজ নিয়ন্ত্রণ করছে।

জনশ্রুতি আছে, কোনো দুর্নীতি বা অনিয়মে বিষয়ে সাংবাদিকেরা ইফতেখার জোয়ারদারের কাছে জানতে চাইলেই তিনি নির্দিষ্ট ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। মূলত ওই ঠিকাদারেরা এলজিইডি, দৌলতপুরের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ চক্রের অন্যতম সদস্য। এই চক্রটি নির্মূল করতে পারলে বরাদ্দের পুরো সুফল পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স আজমেরী ট্রেডার্সের মালিক ঠিকাদার এস এম রবিউল আজম টিপু এবং দৌলতপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইফতেখার উদ্দিন জোয়ারদারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা কল রিসিভ করেননি।

সমন্বিত জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন, কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক নীলকমল পাল জানান, গ্রামীণ সড়ক সংস্কার ও সংরক্ষণ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযান চালানো হয়েছে। সড়কে ব্যবহৃত উপকরণের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা করে বিস্তারিত প্রতিবেদন কমিশন বরাবর উপস্থাপন করা হবে। দুর্নীতির প্রমাণ মিললে এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

ভারতের পাল্টা আক্রমণে দিশেহারা অস্ট্রেলিয়া

ঢাকা কলেজে সংঘর্ষকালে বোমা বিস্ফোরণে ছিটকে পড়েন সেনাসদস্য—ভাইরাল ভিডিওটির প্রকৃত ঘটনা

ঐশ্বরিয়ার বিচ্ছেদের খবরে মুখ খুললেন অমিতাভ

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত