শীত গ্রীষ্ম চলে যায়, ঝুলে রয় সাঁতার প্রশিক্ষণ

অর্চি হক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৩, ০৯: ৫৮
আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৩, ১০: ০২

বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে গান শেখে সাত বছরের শিশু ফাইরুজ (ছদ্মনাম)। গত বছর গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে পুকুরে পড়ে মরতে বসেছিল সে। মা সুরাইয়া আক্তার সে সময় ভেবে রাখেন, ঢাকায় ফিরে মেয়েকে সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা করবেন। সময়, সুযোগ, নিরাপত্তা ও খরচ বিবেচনায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমির পোর্টেবল সুইমিংপুলে সাঁতার প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে ফাইরুজকে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

কিন্তু এরপর প্রায় বছর পেরোতে বসলেও আজও সাঁতারে ভর্তি হতে পারেনি ফাইরুজ। আজকের পত্রিকাকে সুরাইয়া আক্তার বলেন, প্রায় বছর হতে চলল ওদের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি এখনো আসছে না। অথচ সময় আছে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

সুরাইয়া আক্তারের মতো মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেক অভিভাবক সন্তানকে সাঁতার শেখানোর জন্য তাকিয়ে আছেন শিশু একাডেমির দিকে।অথচ এই প্রতিষ্ঠানটি সাঁতার প্রশিক্ষণ মৌসুমের অর্ধেক পেরিয়ে গেলেও এখনো প্রস্তুতিই শেষ করতে পারেনি। এমনকি প্রশিক্ষক নিয়োগের কাজও হয়নি।

শিশুদের সাঁতার শেখানোর জন্য একটি পোর্টেবল সুইমিংপুল দিয়েছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক মালিনি মেহরা।  সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি)-এর কারিগরি সহায়তায় দোয়েল চত্বরে শিশু একাডেমির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্থাপন করা হয় সেটি। ‘বিশ্ব পানিতে ডুবা প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে গত বছরের ২৫ জুলাই মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা ওই পোর্টেবল সুইমিংপুলে শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এ পর্যন্ত মাত্র একটি ব্যাচের সাঁতার প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই কার্যক্রমের দায়িত্বে থাকা একাডেমির জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা। এতে ১৪ জন শিশু প্রশিক্ষণ পেয়েছে বলেও জানান তিনি।

এক বছরে মাত্র ১৪ জন শিশু প্রশিক্ষণ পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত বছর একটি ব্যাচ হওয়ার পর শীত শুরু হয়ে যাওয়ায় নতুন আর কোনো ব্যাচ নেওয়া হয়নি।’ শীতের পর নতুন বছরের গ্রীষ্ম চলে গেলেও শুরু হয়নি প্রশিক্ষণ। অথচ দুই-আড়াই মাস পরেই কড়া নাড়তে শুরু করবে আরেকটি শীতকাল।

সুইম সেইফের কার্যক্রম শিশু একাডেমি পরিচালনা করলেও পুল স্থাপনের যাবতীয় খরচ বহন করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিআইপিআরবি। এই সুইমিংপুলটি স্থাপনের ব্যয় সম্পর্কে সিআইপিআরবির ডেপুটি ফাইন্যান্স ডিরেক্টর (উপ-অর্থ পরিচালক) মামুন অর রশিদ বলেন, পুলটি একজন ব্রিটিশ নাগরিক উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। সেটার দাম আমরা বলতে পারব না। তবে এটা স্থাপনের জন্য আমাদের সব মিলিয়ে ৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

প্রস্তুতি নিতেই অর্ধেক মৌসুম পার সুইম সেইফ সাঁতার কার্যক্রম সুষ্ঠু ও কার্যকরভাবে পরিচালনার উদ্দেশে গত বছর ‘পোর্টেবল সুইমিংপুলে সাঁতার প্রশিক্ষণ পরিচালনাসংক্রান্ত নীতিমালা’ প্রণয়ন করা হয়। সেখানে বলা হয়, কার্যক্রমটি ৬-১০ বছর বয়সী শিশুদের জীবন রক্ষাকারী প্রশিক্ষণ হিসেবে একাডেমির প্রশিক্ষণ শাখার মাধ্যমে পরিচালিত হবে। প্রতিবছর এপ্রিল-সেপ্টেম্বর মেয়াদে সপ্তাহে পাঁচ দিন ৩০ মিনিট করে চলবে প্রশিক্ষণ।

নীতিমালা অনুযায়ী, সাঁতার প্রশিক্ষণ চলার কথা বছরের ছয় মাস। সে হিসাবে ইতিমধ্যেই পেরিয়ে গেছে মৌসুমের প্রথম তিন মাস। অথচ এখনো প্রশিক্ষণের প্রস্তুতিই শেষ হয়নি। এপ্রিল পেরিয়ে মে-জুন চলে গেলেও এখনো কেন প্রশিক্ষণ শুরু হয়নি জানতে চাইলে শিশু একাডেমির মহাপরিচালক আনজীর লিটন বলেন, ‘এপ্রিলে রোজার ছুটি ছিল, সে কারণে প্রশিক্ষণ শুরু করা যায়নি। রোজা ও ঈদুল ফিতরের ছুটি পেরিয়ে ঈদুল আজহার ছুটি চলে যাওয়ার পরেও প্রশিক্ষণ কেন শুরু হলো না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশিক্ষক নিয়োগসহ আরও কিছু কাজ রয়েছে, সেগুলো আমরা এখনো করছি। সাঁতার প্রশিক্ষণ অতিসত্বর শুরু হবে। প্রস্তুতি চলছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত