কামরুল হাসান, ঢাকা
বয়স্ক লোকটি অনেকক্ষণ ধরে বসে ছিলেন। হাতে আ-ফোর সাইজের একটি কাগজের খাম। এক অফিস সহকারী এসে বললেন, ‘ভদ্রলোক আমার সঙ্গে ছাড়া আর কারও সঙ্গে কথা বলবেন না।’ হাতে একটি জরুরি কাজ ছিল, তারপরও পীড়াপীড়ির কথা শুনে সেটা অসমাপ্ত রেখে চলে এলাম। এসে মনে হলো ভালোই হয়েছে, আর একটু দেরি করলে তিনি চলে যেতেন।
অভ্যর্থনাকক্ষের চেয়ারে ভদ্রলোককে দেখে ভালো লাগল। যৌবনে তিনি যে বেশ সুদর্শন ছিলেন, তা তখনো বোঝা যাচ্ছিল। তবে কথায় কিছুটা অবাঙালি টান, অনেকটা পাকিস্তানিদের মতো। আমাকে অনুরোধ করলেন, তিনি যা বলবেন, তা মনোযোগ দিয়ে শুনতে। আমি রাজি হয়ে বললাম, বলুন। বললেন, ‘আমার নাম সৈয়দ মাহাবুব করিম। আমি তিন্নির হতভাগ্য বাবা। করাচিতে থাকি, কাল রাতে ঢাকায় এসেছি। আমার বোনের কাছে আপনার কথা শুনে দেখা করতে এলাম। আমার কিছু কষ্টের কথা আপনাকে বলব।’ আবারও তাঁকে বললাম, ঠিক আছে বলুন।
পাঠক, এবার খোলাসা করে বলি, এই ভদ্রলোক কোন তিন্নির বাবা। তিনি হলেন একসময়ের আলোচিত মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি, যিনি খুন হয়েছিলেন, তাঁর বাবা। তিনি কথা বলতে এসেছিলেন ২০০২ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি। আর তিন্নি খুন হয়েছিলেন ওই বছরের ১০ নভেম্বর রাতে। তাঁকে খুন করার পর মৃতদেহ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর পশ্চিম দিক থেকে ১১ নম্বর পিলারের কাছে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পরিচয় না পাওয়ায় আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম জুরাইন কবরস্থানে লাশ দাফন করে। এরপর দৈনিক জনকণ্ঠে লাশের ছবি ছাপা হলে তিন্নির পরিবার বিষয়টি জানতে পারে। সে সময় তিন্নির বাবা দেশে ছিলেন না। তাঁর চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। মেয়ে মারা যাওয়ার খবর পেয়ে ঢাকায় আসেন তিন্নির বাবা সৈয়দ মাহাবুব করিম।
যত দূর মনে পড়ে, কেরানীগঞ্জ থানার এসআই কাইয়ুম আলী সরদার প্রথমে মামলাটি তদন্ত করছিলেন। তিনি তদন্তের শুরুতেই তিন্নির স্বামী শাফকাত হোসেন পিয়ালকে গ্রেপ্তার করেন। পুলিশ ধরে নেয়, কোনো ক্ষোভের কারণে পিয়াল তাঁকে খুন করেন। তবে পুলিশ পিয়ালকে ধরলেও এ খুনের পেছনে যে আরও বড় কারও হাত ছিল, তা শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু পরিষ্কার করে কেউ কিছুই বলতে পারছিলেন না। তিন্নির বাবা প্রথম সবকিছু খোলাসা করলেন। তিনি আমাকে বললেন, ‘আমি যা বলব আগে চুপ করে শুনবেন।’ আমি চুপ করে থাকলাম, তিনি বলতে থাকলেন।
মাহাবুব করিম বললেন, ১৯৭৬ সালে তিন্নির মা নাহিদ ফারজানাকে তিনি বিয়ে করেন। তিন্নির জন্ম হয় ১৯৭৭ সালের ২২ অক্টোবর। তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান ঈশিতার জন্ম হয় ১৯৮৫ সালে। এই কন্যা জন্মের ৪০ দিন পরে তিনি জীবিকার সন্ধানে পাকিস্তান হয়ে ইউরোপ পাড়ি দিতে দেশ ত্যাগ করেন। কিন্তু তখন ইরাক-ইরান যুদ্ধের কারণে ইউরোপ যেতে পারেননি। পাকিস্তানেই থেকে যান। তিন্নি তখন ঢাকায় কামরুন্নেছা গার্লস হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। মেয়ের পড়াশোনার ক্ষতি হবে ভেবে মাহাবুব করিম তিন্নিকে ঢাকায় তাঁর দাদির কাছে রেখে স্ত্রী ও আরেক মেয়েকে নিয়ে পাকিস্তানে চলে যান। ১৯৯৩ সালে তিন্নি এসএসসিতে ভালো ফল করেন। পিতা-কন্যার মধ্যে তখন অবধি চিঠি বিনিময় হতো। ভালো ফল করার জন্য মেয়ের কাছে তিনি উপহারও পাঠিয়েছিলেন।
মাহাবুব করিম বলেন, ১৯৯৯ সালে তিনি তিন্নির একটি চিঠি পান। তিন্নি বাবাকে জানান, পিয়াল নামে বরিশালের এক ছেলেকে বিয়ে করেছেন। ছেলে পেশায় ফ্যাশন ডিজাইনার। তিন্নির মায়ের ওই বিয়েতে মত ছিল না। তিন্নির ফুফু তাঁর মাকে বলেছিলেন, সোমা নামের একটি মেয়ের সঙ্গে ছেলেটার সম্পর্ক আছে। পরে তিন্নি তাঁর মাকে বলেছিলেন, হাতিরপুলের এক মেয়ের সঙ্গে পিয়ালের প্রেম ছিল, সেটা আর নেই।
তিন্নির বাবা সেদিন আমাকে বললেন, ‘বিয়ের পর থেকেই ছেলেটা তিন্নিকে সিনেমা-নাটকে অভিনয় করার জন্য চাপ দিতে থাকে। প্রথম দিকে তিন্নি তাতে রাজি হচ্ছিল না। তখন পিয়াল তাকে মারধর করে। একপর্যায়ে তিন্নি রাজি হলে জি এম সরকার নামের এক পরিচালক একদিন এসে বলেন, তিনি পোশাক কেনার জন্য তিন্নিকে ভারতে নিয়ে যাবেন। তিন্নি একা যেতে রাজি না হলে জি এম সরকার চলে যান। এরপর তাদের সংসারে একটি মেয়েসন্তানের জন্ম হয়। সেই মেয়ের বয়স যখন দেড় বছর, তখন পিয়াল একদিন সাবেক এমপি গোলাম ফারুক অভিকে বাসায় নিয়ে আসে। অভিকে দেখেই চমকে ওঠে তিন্নি। সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানে অভির সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল আগেই। প্রথম দেখায় অভি তাকে নানা প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিন্নির সেটা ভালো লাগেনি। তিন্নি লক্ষ করে, তার স্বামী অভির কথায় ওঠবস করতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে তাদের বাসায় অভির আসা-যাওয়াও বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে তিন্নির ওপরও খবরদারি করতে শুরু করে অভি। তিন্নি কী করবে, কোথায় যাবে–সবই নিয়ন্ত্রণ করে অভি। কথা না শুনলে তিন্নিকে ভয় দেখাতে থাকে।’
এভাবে বলতে বলতে উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছিলেন মাহাবুব করিম, বেশ জোরে জোরে কথা বলছিলেন। আমি তাঁকে শান্ত করে শুনে যাচ্ছিলাম। একপর্যায়ে তিনি বললেন, কিছুদিনের জন্য ঢাকায় এসেছিলেন। সে সময় অভি একদিন তাঁকে ফোন করে পিয়ালের বাসায় যেতে বলেন। শুনে কিছুটা অবাক হন, তারপরও গিয়ে দেখেন তাঁর আগেই অভি সেখানে হাজির। একটু পর পিয়াল বাসায় আসেন। তাঁর সামনেই অভি পিয়ালকে উচ্চ স্বরে বকাঝকা করতে থাকেন। বলেন, ‘তোর বউ একটি বেশ্যা, তাকে তালাক দিয়ে দে। এই নে কাগজ।’ বলেই কয়েকটি কাগজ পিয়ালের হাতে ধরিয়ে দেন। এরপর অভি খুব উত্তেজিত হয়ে তিন্নিকে বলেন, ‘তুই তোর বাপকে বল কার কার সঙ্গে বিছানায় গেছিস।’ এরপর অভি তিন্নির বাবার সামনেই মেয়ের গায়ের কাপড় অর্ধেক খুলে আবার ছেড়ে দেন। তিন্নির মুখের কাছে পিস্তল ঠেকিয়ে বলেন, ‘দেখ, তোর সামনেই তোর বাবাকে উলঙ্গ করব।’ অভির কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পিয়াল বলে ওঠেন, ‘তিন্নির মা করাচিতে লিভ টুগেদার করে।’ অভি তখন তিন্নির বাবাকে বলেন, ‘এখনই চলে যাও, না হলে খরচ হয়ে যাবে।’ আর তিন্নিকে বলেন, ‘তুই আজ থেকে আমার কাছেই থাকবি। এক মাস পরে সব ফয়সালা করা হবে।’ অভি বলতে থাকেন, ‘আমি তোর পেছনে সময় আর টাকা ঢেলেছি।’ এসব কথা প্রকাশ করতে তিন্নির বাবাই আমাকে অনুরোধ করেছিলেন। আমার তখনকার রিপোর্টেও তার উল্লেখ ছিল।
তিন্নি খুনের ঘটনা নিয়ে এর আগেও ‘আষাঢ়ে নয়’-এ লিখেছি। এই খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পরপরই গা ঢাকা দেন অভি। শুনেছিলাম, ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী উলফার নেতা পরেশ বড়ুয়ার সাহায্য নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে নেপালে যান। সেখান থেকে কলকাতা হয়ে কানাডায় থিতু হন। এখন সেখানেই আছেন বহাল তবিয়তে।
মাহাবুব করিম আমাকে বলেছিলেন, নিজে অপ্রস্তুত হওয়ার পরও মেয়েকে এভাবে ফেলে আসতে চাইছিলেন না তিনি, কিন্তু উপায়ও ছিল না। এর কয়েক দিন পরই তিন্নি খুন হন। এটুকু বলার পর মাহাবুব করিম আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। তিনি শিশুর মতো কাঁদতে থাকেন। সেই বৃদ্ধের কান্না আমাকেও সংক্রমিত করে। তাঁর সেই অসহায় মুখ অনেক দিন দৃষ্টি থেকে সরাতে পারিনি।
আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
বয়স্ক লোকটি অনেকক্ষণ ধরে বসে ছিলেন। হাতে আ-ফোর সাইজের একটি কাগজের খাম। এক অফিস সহকারী এসে বললেন, ‘ভদ্রলোক আমার সঙ্গে ছাড়া আর কারও সঙ্গে কথা বলবেন না।’ হাতে একটি জরুরি কাজ ছিল, তারপরও পীড়াপীড়ির কথা শুনে সেটা অসমাপ্ত রেখে চলে এলাম। এসে মনে হলো ভালোই হয়েছে, আর একটু দেরি করলে তিনি চলে যেতেন।
অভ্যর্থনাকক্ষের চেয়ারে ভদ্রলোককে দেখে ভালো লাগল। যৌবনে তিনি যে বেশ সুদর্শন ছিলেন, তা তখনো বোঝা যাচ্ছিল। তবে কথায় কিছুটা অবাঙালি টান, অনেকটা পাকিস্তানিদের মতো। আমাকে অনুরোধ করলেন, তিনি যা বলবেন, তা মনোযোগ দিয়ে শুনতে। আমি রাজি হয়ে বললাম, বলুন। বললেন, ‘আমার নাম সৈয়দ মাহাবুব করিম। আমি তিন্নির হতভাগ্য বাবা। করাচিতে থাকি, কাল রাতে ঢাকায় এসেছি। আমার বোনের কাছে আপনার কথা শুনে দেখা করতে এলাম। আমার কিছু কষ্টের কথা আপনাকে বলব।’ আবারও তাঁকে বললাম, ঠিক আছে বলুন।
পাঠক, এবার খোলাসা করে বলি, এই ভদ্রলোক কোন তিন্নির বাবা। তিনি হলেন একসময়ের আলোচিত মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি, যিনি খুন হয়েছিলেন, তাঁর বাবা। তিনি কথা বলতে এসেছিলেন ২০০২ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি। আর তিন্নি খুন হয়েছিলেন ওই বছরের ১০ নভেম্বর রাতে। তাঁকে খুন করার পর মৃতদেহ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর পশ্চিম দিক থেকে ১১ নম্বর পিলারের কাছে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পরিচয় না পাওয়ায় আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম জুরাইন কবরস্থানে লাশ দাফন করে। এরপর দৈনিক জনকণ্ঠে লাশের ছবি ছাপা হলে তিন্নির পরিবার বিষয়টি জানতে পারে। সে সময় তিন্নির বাবা দেশে ছিলেন না। তাঁর চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। মেয়ে মারা যাওয়ার খবর পেয়ে ঢাকায় আসেন তিন্নির বাবা সৈয়দ মাহাবুব করিম।
যত দূর মনে পড়ে, কেরানীগঞ্জ থানার এসআই কাইয়ুম আলী সরদার প্রথমে মামলাটি তদন্ত করছিলেন। তিনি তদন্তের শুরুতেই তিন্নির স্বামী শাফকাত হোসেন পিয়ালকে গ্রেপ্তার করেন। পুলিশ ধরে নেয়, কোনো ক্ষোভের কারণে পিয়াল তাঁকে খুন করেন। তবে পুলিশ পিয়ালকে ধরলেও এ খুনের পেছনে যে আরও বড় কারও হাত ছিল, তা শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু পরিষ্কার করে কেউ কিছুই বলতে পারছিলেন না। তিন্নির বাবা প্রথম সবকিছু খোলাসা করলেন। তিনি আমাকে বললেন, ‘আমি যা বলব আগে চুপ করে শুনবেন।’ আমি চুপ করে থাকলাম, তিনি বলতে থাকলেন।
মাহাবুব করিম বললেন, ১৯৭৬ সালে তিন্নির মা নাহিদ ফারজানাকে তিনি বিয়ে করেন। তিন্নির জন্ম হয় ১৯৭৭ সালের ২২ অক্টোবর। তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান ঈশিতার জন্ম হয় ১৯৮৫ সালে। এই কন্যা জন্মের ৪০ দিন পরে তিনি জীবিকার সন্ধানে পাকিস্তান হয়ে ইউরোপ পাড়ি দিতে দেশ ত্যাগ করেন। কিন্তু তখন ইরাক-ইরান যুদ্ধের কারণে ইউরোপ যেতে পারেননি। পাকিস্তানেই থেকে যান। তিন্নি তখন ঢাকায় কামরুন্নেছা গার্লস হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। মেয়ের পড়াশোনার ক্ষতি হবে ভেবে মাহাবুব করিম তিন্নিকে ঢাকায় তাঁর দাদির কাছে রেখে স্ত্রী ও আরেক মেয়েকে নিয়ে পাকিস্তানে চলে যান। ১৯৯৩ সালে তিন্নি এসএসসিতে ভালো ফল করেন। পিতা-কন্যার মধ্যে তখন অবধি চিঠি বিনিময় হতো। ভালো ফল করার জন্য মেয়ের কাছে তিনি উপহারও পাঠিয়েছিলেন।
মাহাবুব করিম বলেন, ১৯৯৯ সালে তিনি তিন্নির একটি চিঠি পান। তিন্নি বাবাকে জানান, পিয়াল নামে বরিশালের এক ছেলেকে বিয়ে করেছেন। ছেলে পেশায় ফ্যাশন ডিজাইনার। তিন্নির মায়ের ওই বিয়েতে মত ছিল না। তিন্নির ফুফু তাঁর মাকে বলেছিলেন, সোমা নামের একটি মেয়ের সঙ্গে ছেলেটার সম্পর্ক আছে। পরে তিন্নি তাঁর মাকে বলেছিলেন, হাতিরপুলের এক মেয়ের সঙ্গে পিয়ালের প্রেম ছিল, সেটা আর নেই।
তিন্নির বাবা সেদিন আমাকে বললেন, ‘বিয়ের পর থেকেই ছেলেটা তিন্নিকে সিনেমা-নাটকে অভিনয় করার জন্য চাপ দিতে থাকে। প্রথম দিকে তিন্নি তাতে রাজি হচ্ছিল না। তখন পিয়াল তাকে মারধর করে। একপর্যায়ে তিন্নি রাজি হলে জি এম সরকার নামের এক পরিচালক একদিন এসে বলেন, তিনি পোশাক কেনার জন্য তিন্নিকে ভারতে নিয়ে যাবেন। তিন্নি একা যেতে রাজি না হলে জি এম সরকার চলে যান। এরপর তাদের সংসারে একটি মেয়েসন্তানের জন্ম হয়। সেই মেয়ের বয়স যখন দেড় বছর, তখন পিয়াল একদিন সাবেক এমপি গোলাম ফারুক অভিকে বাসায় নিয়ে আসে। অভিকে দেখেই চমকে ওঠে তিন্নি। সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানে অভির সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল আগেই। প্রথম দেখায় অভি তাকে নানা প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিন্নির সেটা ভালো লাগেনি। তিন্নি লক্ষ করে, তার স্বামী অভির কথায় ওঠবস করতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে তাদের বাসায় অভির আসা-যাওয়াও বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে তিন্নির ওপরও খবরদারি করতে শুরু করে অভি। তিন্নি কী করবে, কোথায় যাবে–সবই নিয়ন্ত্রণ করে অভি। কথা না শুনলে তিন্নিকে ভয় দেখাতে থাকে।’
এভাবে বলতে বলতে উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছিলেন মাহাবুব করিম, বেশ জোরে জোরে কথা বলছিলেন। আমি তাঁকে শান্ত করে শুনে যাচ্ছিলাম। একপর্যায়ে তিনি বললেন, কিছুদিনের জন্য ঢাকায় এসেছিলেন। সে সময় অভি একদিন তাঁকে ফোন করে পিয়ালের বাসায় যেতে বলেন। শুনে কিছুটা অবাক হন, তারপরও গিয়ে দেখেন তাঁর আগেই অভি সেখানে হাজির। একটু পর পিয়াল বাসায় আসেন। তাঁর সামনেই অভি পিয়ালকে উচ্চ স্বরে বকাঝকা করতে থাকেন। বলেন, ‘তোর বউ একটি বেশ্যা, তাকে তালাক দিয়ে দে। এই নে কাগজ।’ বলেই কয়েকটি কাগজ পিয়ালের হাতে ধরিয়ে দেন। এরপর অভি খুব উত্তেজিত হয়ে তিন্নিকে বলেন, ‘তুই তোর বাপকে বল কার কার সঙ্গে বিছানায় গেছিস।’ এরপর অভি তিন্নির বাবার সামনেই মেয়ের গায়ের কাপড় অর্ধেক খুলে আবার ছেড়ে দেন। তিন্নির মুখের কাছে পিস্তল ঠেকিয়ে বলেন, ‘দেখ, তোর সামনেই তোর বাবাকে উলঙ্গ করব।’ অভির কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পিয়াল বলে ওঠেন, ‘তিন্নির মা করাচিতে লিভ টুগেদার করে।’ অভি তখন তিন্নির বাবাকে বলেন, ‘এখনই চলে যাও, না হলে খরচ হয়ে যাবে।’ আর তিন্নিকে বলেন, ‘তুই আজ থেকে আমার কাছেই থাকবি। এক মাস পরে সব ফয়সালা করা হবে।’ অভি বলতে থাকেন, ‘আমি তোর পেছনে সময় আর টাকা ঢেলেছি।’ এসব কথা প্রকাশ করতে তিন্নির বাবাই আমাকে অনুরোধ করেছিলেন। আমার তখনকার রিপোর্টেও তার উল্লেখ ছিল।
তিন্নি খুনের ঘটনা নিয়ে এর আগেও ‘আষাঢ়ে নয়’-এ লিখেছি। এই খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পরপরই গা ঢাকা দেন অভি। শুনেছিলাম, ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী উলফার নেতা পরেশ বড়ুয়ার সাহায্য নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে নেপালে যান। সেখান থেকে কলকাতা হয়ে কানাডায় থিতু হন। এখন সেখানেই আছেন বহাল তবিয়তে।
মাহাবুব করিম আমাকে বলেছিলেন, নিজে অপ্রস্তুত হওয়ার পরও মেয়েকে এভাবে ফেলে আসতে চাইছিলেন না তিনি, কিন্তু উপায়ও ছিল না। এর কয়েক দিন পরই তিন্নি খুন হন। এটুকু বলার পর মাহাবুব করিম আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। তিনি শিশুর মতো কাঁদতে থাকেন। সেই বৃদ্ধের কান্না আমাকেও সংক্রমিত করে। তাঁর সেই অসহায় মুখ অনেক দিন দৃষ্টি থেকে সরাতে পারিনি।
আষাঢ়ে নয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে