সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের লোকদেরও কেউ কেউ তাঁর অবস্থানের প্রতি নমনীয় ছিলেন। যে জন্য গণহত্যা শুরুর আগে পূর্ববঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে কর্তব্যরত সাহাবজাদা ইয়াকুব খান পদত্যাগ করেন; এবং নৌবাহিনীর এস এম হাসানকে সরিয়ে দিয়ে টিক্কা খানকে গভর্নর ও সামরিক শাসক হিসেবে আনা হয়।
টিক্কা খান ‘বেলুচিস্তানের কসাই’ উপাধি পেয়েছিলেন; যে উপাধির তিনি অযোগ্য ছিলেন না এবং পূর্ববঙ্গেও তিনি এসেছিলেন ‘কসাই’ হিসেবেই। এই পাঞ্জাবি সেনাধ্যক্ষ উঠে এসেছিলেন একেবারে সিপাহির স্তর থেকে এবং সেনাবাহিনীতে ঢোকার সময় ম্যাট্রিক পাস ছিলেন কি না সন্দেহ; পরাজয়ের আগেভাগে তিনি পূর্ববঙ্গ ত্যাগ করেন এবং তাঁর ‘দক্ষতার’ বিবেচনায় প্রেসিডেন্ট ভুট্টো তাঁকে সেনাবাহিনীর প্রধানের পদ দেন। ভুট্টো শেষ পর্যন্ত নিহত হলেন জুলুমবাজ ওই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতেই। তিনি ঘোরতর পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদী ছিলেন, তাঁর হত্যাকারীরাও ওই একই ঘরানার লোক, কিন্তু তাদের মনে হয়েছিল পাকিস্তানের খণ্ডিতকরণের জন্য ভুট্টোও কম দায়ী নন; এবং তাঁর হাতে রাষ্ট্রের কাঙ্ক্ষিত ‘ইসলামি’ চরিত্রটা সুরক্ষিত থাকবে না। তাই তাঁকে সরিয়ে দেওয়াটা দরকার।
শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য সাফল্যের পেছনে তাঁর ব্যক্তিগত বিভূতি কার্যকর ছিল। সাহস তো অবশ্যই, তাঁর বুদ্ধিমত্তাও ছিল প্রখর। কখন কোন আওয়াজটা তুলতে হবে, তুললে মানুষ সাড়া দেবে, সেটা তিনি জানতেন। আপস করতেন না। মানুষ চেনার ক্ষমতা তাঁর ছিল অতুলনীয়। ছাত্র ও যুবকদের তিনি যে অমনভাবে কাছে টেনে নিতে পারতেন তার কারণ ছিল নেতৃত্বদানে তাঁর ক্ষমতা। কাকে দিয়ে কোন কাজ হবে সেটা তিনি বুঝতেন। আগরতলা মামলার সময় তাঁর মুক্তির দাবিতে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ যে আন্দোলন করছে সেটা তাঁর অজানা থাকার কথা নয়; কিন্তু তিনি জানতেন এ আন্দোলনকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য একজনকে খুব দরকার, তিনি হচ্ছেন মওলানা ভাসানী।
সামরিক আদালত থেকে সাংবাদিক আতাউস সামাদের মারফত মওলানার কাছে তিনি বার্তা পাঠিয়েছিলেন তাঁর মুক্তির জন্য আন্দোলনের অনুরোধ জানিয়ে। সংক্ষিপ্ত বার্তাটিতে তিনি বলেছিলেন, ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য তাঁকে মওলানার দরকার হবে, এবং তাঁরও দরকার হবে মওলানাকে। মওলানা বুঝি এই রকমের একটি বার্তার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন।
তাৎক্ষণিকভাবেই তিনি ঘোষণা দেন যে ১৬ ফেব্রুয়ারি পল্টনে জনসভা হবে মুজিবের মুক্তির দাবিতে। সেই জনসভায় মওলানা যে অনলবর্ষী বক্তৃতা দেন, তাতে মানুষ যেমন উদ্বুদ্ধ হয়েছে, তেমনি ভয় পেয়েছে শাসকেরা। তিনি বলেছিলেন, প্রয়োজনে ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করা হবে, জেলের তালা ভাঙা হবে, বাস্তিলের দুর্গের মতন পতন ঘটবে সামরিক কারাগারের। সমাবেশ থেকে সঙ্গে সঙ্গে গগনবিদারী আওয়াজ উঠেছিল ‘জেলের তালা ভাঙব, শেখ মুজিবকে আনব’। এরপর অবশ্যম্ভাবী ছিল যে আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করা হবে এবং মামলার সব অভিযুক্ত তো বটেই, অন্য রাজবন্দীরাও মুক্তি পাবেন। পেয়েছিলেনও।
গণহত্যা শুরুর আগে একাত্তরের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান আসগার খান দেখা করেছিলেন শেখ মুজিবের সঙ্গে। ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর দাবিকে তিনি অযৌক্তিক মনে করতেন না। তাঁর উদ্বেগ ছিল পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে এবং টের পাচ্ছিলেন যে পীড়ন করলে পাকিস্তান টিকবে না। গভীর দুঃখের সঙ্গে শেখ মুজিব তাঁকে বলেছিলেন, পাকিস্তানি শাসকেরা বাঙালিদের কখনো বিশ্বাস করেনি, তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা হয়নি। আসগার খান বিস্মিত হয়েছিলেন শেখ মুজিবের দূরদৃষ্টি দেখে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাঁকে বলেছিলেন তিনি নিশ্চিত যে ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তর না করার সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই নিয়ে ফেলেছেন। ইয়াহিয়ার ইচ্ছা সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে পূর্ব পাকিস্তানকে চিরকালের জন্য দাবিয়ে দেওয়া। সামনে কী কী ঘটতে যাচ্ছে তারও একটা ছবি দিয়েছিলেন শেখ মুজিব। বলেছিলেন প্রথমে ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসবেন, অল্প পরেই আসবেন পরিকল্পনা কমিশনের প্রধান এম এম আহমদ; তারপরে ভুট্টো। এরপরে ইয়াহিয়া খান সামরিক পদক্ষেপ নেবেন, এবং তাতে পাকিস্তান শেষ হয়ে যাবে। সেসব ঘটনাই ঘটেছে; এবং ওই অনুক্রমেই। নিজের সম্বন্ধে মুজিব বলেছিলেন যে, তাঁকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হবে; আর সেটা যদি না ঘটে তাহলে তিনি নিহত হবেন হয় পাকিস্তানি সেনাদের হাতে, নয়তো তাঁর নিজের লোকদের দ্বারা। আসগার খান এসব কথা লিখেছেন তাঁর ‘জেনারেলস ইন পলিটিকস ১৯৫৮-১৯৮২’ নামের বইতে।
উল্লেখ্য যে মার্চে ইয়াহিয়া-মুজিব বৈঠকের সময়ে একদিন ঢাকাস্থ প্রেসিডেন্টের ভবনে ভুট্টোর সঙ্গে দেখা হলে একান্তে ডেকে নিয়ে ভুট্টোকে মুজিব এই বলে সতর্ক করে দেন, সেনাবাহিনী আগে তাঁকে (মুজিবকে) হত্যা করবে, তারপর ভুট্টোকে। ভুট্টো সেই সতর্কবাণীতে কর্ণপাত করেননি; তাঁর মাথায় তখন খেলা করছে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ক্ষমতায় আরোহণের স্বপ্ন। অথচ মুজিব যা বলেছিলেন সেনাবাহিনীর পরিকল্পনা ছিল সেটাই। তারা মুজিবকে হত্যা করতে চেয়েছিল, পারেনি; পরে ভুট্টোকে হত্যা করতে চেয়েছে, পেরেছে। মুজিবের সতর্কবাণীর কথা ভুট্টো নিজেই বলেছেন তাঁর ‘দ্য গ্রেট ট্র্যাজেডি’ বইয়ে। সেটা লেখা হয়েছিল ওই একাত্তর সালেই, আগস্টের দিকে। দৃষ্টির এই প্রখরতা না থাকলে মুজিব অত বড় নেতা হলেন কী করে, সমসাময়িক ও সমবয়স্ক সবাইকে ছাড়িয়ে? সঙ্গে ছিল অতুলনীয় সাহস। জানতেন কী ঘটতে যাচ্ছে, তবু সাহস হারাননি। প্রাণসংশয় যখন দেখা দিয়েছে তখনো অবিচলিত থেকেছেন।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর একটি অংশ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে; ৪৯ বছর পরে তাঁর নিজের কন্যা তাঁকে দ্বিতীয়বার হত্যা করলেন। সেবার নিহত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, এবার নিহত হলেন শেখ মুজিব, নামান্তরে শেখ হাসিনার পিতা। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের কাজটা মৌলবাদীরা ঘটিয়েছে, সাধারণ মানুষও হাত লাগিয়েছে, কারণ তাদের ক্ষোভ ও ক্রোধ পুঞ্জীভূত হয়েছিল বঙ্গবন্ধু-কন্যার ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এখন অসংখ্য মামলা দেওয়া হচ্ছে। উৎসবের মতো ঘটনা, যে উৎসব আগে চলছিল বিগত আওয়ামী লীগের শাসনকালে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে পিতৃহত্যার মামলাটা কেউ করবেন না; যদিও সবচেয়ে নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড ছিল ওটিই; এবং ঘটেছিল তাঁর ব্যক্তিগত তৎপরতায়। পত্রপত্রিকায় পিতা ও মাতাকে হত্যা করার খবর পাওয়া যায়, পেছনে থাকে সম্পত্তিপ্রাপ্তির লোভ; বঙ্গবন্ধু-কন্যা যে নিজের হাতে পিতৃ-হত্যাকাণ্ডটি ঘটালেন, সেটা অবশ্য একটু ভিন্ন কারণে—সম্পত্তি তো তিনি পেয়েছিলেনই, সেই সম্পত্তি বাড়াবেন ও ব্যক্তিমালিকানা চিরস্থায়ী করবেন, এই ছিল অভিলাষ।
ক্ষমতা সম্পত্তিই বটে, অস্থাবর যদিও, তবু অতিশয় মূল্যবান বৈকি। তাকে রক্ষা করার জন্য সৈন্যসামন্ত লাগে। সে বন্দোবস্তও করা হয়েছিল। শেষরক্ষা হয়নি, এই যা। মাঝখান থেকে যা ঘটালেন সেটা শুধু নিজের পতন নয়, পিতার যা কিছু অর্জন ছিল সবগুলো খুলে খুলে রাস্তাঘাটে ডোবা-নর্দমায় নিক্ষেপ করাও বটে। সমানে চলল কর্ণবিদারী ঢাকঢোল পেটানো। মানুষ কত যে বিরক্ত হয়েছে বোঝা গেল আগস্টের ৫ তারিখে। কন্যার ভালোবাসার এই নিষ্ঠুরতাকে পঁচাত্তরের হানাদারদের বর্বর নৃশংসতার তুলনায় বোধ করি কম বলা যাবে না। ইতিহাসের বঙ্গবন্ধু তাঁর মর্যাদার নির্ধারিত স্থানটি অবশ্যই ফেরত পাবেন; কিন্তু সে জন্য প্রয়োজন হবে কন্যা-সৃষ্ট প্রতিবন্ধক সরিয়ে ফেলার সময়টুকু।
‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের লোকদেরও কেউ কেউ তাঁর অবস্থানের প্রতি নমনীয় ছিলেন। যে জন্য গণহত্যা শুরুর আগে পূর্ববঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে কর্তব্যরত সাহাবজাদা ইয়াকুব খান পদত্যাগ করেন; এবং নৌবাহিনীর এস এম হাসানকে সরিয়ে দিয়ে টিক্কা খানকে গভর্নর ও সামরিক শাসক হিসেবে আনা হয়।
টিক্কা খান ‘বেলুচিস্তানের কসাই’ উপাধি পেয়েছিলেন; যে উপাধির তিনি অযোগ্য ছিলেন না এবং পূর্ববঙ্গেও তিনি এসেছিলেন ‘কসাই’ হিসেবেই। এই পাঞ্জাবি সেনাধ্যক্ষ উঠে এসেছিলেন একেবারে সিপাহির স্তর থেকে এবং সেনাবাহিনীতে ঢোকার সময় ম্যাট্রিক পাস ছিলেন কি না সন্দেহ; পরাজয়ের আগেভাগে তিনি পূর্ববঙ্গ ত্যাগ করেন এবং তাঁর ‘দক্ষতার’ বিবেচনায় প্রেসিডেন্ট ভুট্টো তাঁকে সেনাবাহিনীর প্রধানের পদ দেন। ভুট্টো শেষ পর্যন্ত নিহত হলেন জুলুমবাজ ওই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতেই। তিনি ঘোরতর পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদী ছিলেন, তাঁর হত্যাকারীরাও ওই একই ঘরানার লোক, কিন্তু তাদের মনে হয়েছিল পাকিস্তানের খণ্ডিতকরণের জন্য ভুট্টোও কম দায়ী নন; এবং তাঁর হাতে রাষ্ট্রের কাঙ্ক্ষিত ‘ইসলামি’ চরিত্রটা সুরক্ষিত থাকবে না। তাই তাঁকে সরিয়ে দেওয়াটা দরকার।
শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য সাফল্যের পেছনে তাঁর ব্যক্তিগত বিভূতি কার্যকর ছিল। সাহস তো অবশ্যই, তাঁর বুদ্ধিমত্তাও ছিল প্রখর। কখন কোন আওয়াজটা তুলতে হবে, তুললে মানুষ সাড়া দেবে, সেটা তিনি জানতেন। আপস করতেন না। মানুষ চেনার ক্ষমতা তাঁর ছিল অতুলনীয়। ছাত্র ও যুবকদের তিনি যে অমনভাবে কাছে টেনে নিতে পারতেন তার কারণ ছিল নেতৃত্বদানে তাঁর ক্ষমতা। কাকে দিয়ে কোন কাজ হবে সেটা তিনি বুঝতেন। আগরতলা মামলার সময় তাঁর মুক্তির দাবিতে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ যে আন্দোলন করছে সেটা তাঁর অজানা থাকার কথা নয়; কিন্তু তিনি জানতেন এ আন্দোলনকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য একজনকে খুব দরকার, তিনি হচ্ছেন মওলানা ভাসানী।
সামরিক আদালত থেকে সাংবাদিক আতাউস সামাদের মারফত মওলানার কাছে তিনি বার্তা পাঠিয়েছিলেন তাঁর মুক্তির জন্য আন্দোলনের অনুরোধ জানিয়ে। সংক্ষিপ্ত বার্তাটিতে তিনি বলেছিলেন, ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য তাঁকে মওলানার দরকার হবে, এবং তাঁরও দরকার হবে মওলানাকে। মওলানা বুঝি এই রকমের একটি বার্তার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন।
তাৎক্ষণিকভাবেই তিনি ঘোষণা দেন যে ১৬ ফেব্রুয়ারি পল্টনে জনসভা হবে মুজিবের মুক্তির দাবিতে। সেই জনসভায় মওলানা যে অনলবর্ষী বক্তৃতা দেন, তাতে মানুষ যেমন উদ্বুদ্ধ হয়েছে, তেমনি ভয় পেয়েছে শাসকেরা। তিনি বলেছিলেন, প্রয়োজনে ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করা হবে, জেলের তালা ভাঙা হবে, বাস্তিলের দুর্গের মতন পতন ঘটবে সামরিক কারাগারের। সমাবেশ থেকে সঙ্গে সঙ্গে গগনবিদারী আওয়াজ উঠেছিল ‘জেলের তালা ভাঙব, শেখ মুজিবকে আনব’। এরপর অবশ্যম্ভাবী ছিল যে আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করা হবে এবং মামলার সব অভিযুক্ত তো বটেই, অন্য রাজবন্দীরাও মুক্তি পাবেন। পেয়েছিলেনও।
গণহত্যা শুরুর আগে একাত্তরের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান আসগার খান দেখা করেছিলেন শেখ মুজিবের সঙ্গে। ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর দাবিকে তিনি অযৌক্তিক মনে করতেন না। তাঁর উদ্বেগ ছিল পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে এবং টের পাচ্ছিলেন যে পীড়ন করলে পাকিস্তান টিকবে না। গভীর দুঃখের সঙ্গে শেখ মুজিব তাঁকে বলেছিলেন, পাকিস্তানি শাসকেরা বাঙালিদের কখনো বিশ্বাস করেনি, তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা হয়নি। আসগার খান বিস্মিত হয়েছিলেন শেখ মুজিবের দূরদৃষ্টি দেখে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাঁকে বলেছিলেন তিনি নিশ্চিত যে ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তর না করার সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই নিয়ে ফেলেছেন। ইয়াহিয়ার ইচ্ছা সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে পূর্ব পাকিস্তানকে চিরকালের জন্য দাবিয়ে দেওয়া। সামনে কী কী ঘটতে যাচ্ছে তারও একটা ছবি দিয়েছিলেন শেখ মুজিব। বলেছিলেন প্রথমে ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসবেন, অল্প পরেই আসবেন পরিকল্পনা কমিশনের প্রধান এম এম আহমদ; তারপরে ভুট্টো। এরপরে ইয়াহিয়া খান সামরিক পদক্ষেপ নেবেন, এবং তাতে পাকিস্তান শেষ হয়ে যাবে। সেসব ঘটনাই ঘটেছে; এবং ওই অনুক্রমেই। নিজের সম্বন্ধে মুজিব বলেছিলেন যে, তাঁকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হবে; আর সেটা যদি না ঘটে তাহলে তিনি নিহত হবেন হয় পাকিস্তানি সেনাদের হাতে, নয়তো তাঁর নিজের লোকদের দ্বারা। আসগার খান এসব কথা লিখেছেন তাঁর ‘জেনারেলস ইন পলিটিকস ১৯৫৮-১৯৮২’ নামের বইতে।
উল্লেখ্য যে মার্চে ইয়াহিয়া-মুজিব বৈঠকের সময়ে একদিন ঢাকাস্থ প্রেসিডেন্টের ভবনে ভুট্টোর সঙ্গে দেখা হলে একান্তে ডেকে নিয়ে ভুট্টোকে মুজিব এই বলে সতর্ক করে দেন, সেনাবাহিনী আগে তাঁকে (মুজিবকে) হত্যা করবে, তারপর ভুট্টোকে। ভুট্টো সেই সতর্কবাণীতে কর্ণপাত করেননি; তাঁর মাথায় তখন খেলা করছে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ক্ষমতায় আরোহণের স্বপ্ন। অথচ মুজিব যা বলেছিলেন সেনাবাহিনীর পরিকল্পনা ছিল সেটাই। তারা মুজিবকে হত্যা করতে চেয়েছিল, পারেনি; পরে ভুট্টোকে হত্যা করতে চেয়েছে, পেরেছে। মুজিবের সতর্কবাণীর কথা ভুট্টো নিজেই বলেছেন তাঁর ‘দ্য গ্রেট ট্র্যাজেডি’ বইয়ে। সেটা লেখা হয়েছিল ওই একাত্তর সালেই, আগস্টের দিকে। দৃষ্টির এই প্রখরতা না থাকলে মুজিব অত বড় নেতা হলেন কী করে, সমসাময়িক ও সমবয়স্ক সবাইকে ছাড়িয়ে? সঙ্গে ছিল অতুলনীয় সাহস। জানতেন কী ঘটতে যাচ্ছে, তবু সাহস হারাননি। প্রাণসংশয় যখন দেখা দিয়েছে তখনো অবিচলিত থেকেছেন।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর একটি অংশ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে; ৪৯ বছর পরে তাঁর নিজের কন্যা তাঁকে দ্বিতীয়বার হত্যা করলেন। সেবার নিহত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, এবার নিহত হলেন শেখ মুজিব, নামান্তরে শেখ হাসিনার পিতা। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের কাজটা মৌলবাদীরা ঘটিয়েছে, সাধারণ মানুষও হাত লাগিয়েছে, কারণ তাদের ক্ষোভ ও ক্রোধ পুঞ্জীভূত হয়েছিল বঙ্গবন্ধু-কন্যার ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এখন অসংখ্য মামলা দেওয়া হচ্ছে। উৎসবের মতো ঘটনা, যে উৎসব আগে চলছিল বিগত আওয়ামী লীগের শাসনকালে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে পিতৃহত্যার মামলাটা কেউ করবেন না; যদিও সবচেয়ে নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড ছিল ওটিই; এবং ঘটেছিল তাঁর ব্যক্তিগত তৎপরতায়। পত্রপত্রিকায় পিতা ও মাতাকে হত্যা করার খবর পাওয়া যায়, পেছনে থাকে সম্পত্তিপ্রাপ্তির লোভ; বঙ্গবন্ধু-কন্যা যে নিজের হাতে পিতৃ-হত্যাকাণ্ডটি ঘটালেন, সেটা অবশ্য একটু ভিন্ন কারণে—সম্পত্তি তো তিনি পেয়েছিলেনই, সেই সম্পত্তি বাড়াবেন ও ব্যক্তিমালিকানা চিরস্থায়ী করবেন, এই ছিল অভিলাষ।
ক্ষমতা সম্পত্তিই বটে, অস্থাবর যদিও, তবু অতিশয় মূল্যবান বৈকি। তাকে রক্ষা করার জন্য সৈন্যসামন্ত লাগে। সে বন্দোবস্তও করা হয়েছিল। শেষরক্ষা হয়নি, এই যা। মাঝখান থেকে যা ঘটালেন সেটা শুধু নিজের পতন নয়, পিতার যা কিছু অর্জন ছিল সবগুলো খুলে খুলে রাস্তাঘাটে ডোবা-নর্দমায় নিক্ষেপ করাও বটে। সমানে চলল কর্ণবিদারী ঢাকঢোল পেটানো। মানুষ কত যে বিরক্ত হয়েছে বোঝা গেল আগস্টের ৫ তারিখে। কন্যার ভালোবাসার এই নিষ্ঠুরতাকে পঁচাত্তরের হানাদারদের বর্বর নৃশংসতার তুলনায় বোধ করি কম বলা যাবে না। ইতিহাসের বঙ্গবন্ধু তাঁর মর্যাদার নির্ধারিত স্থানটি অবশ্যই ফেরত পাবেন; কিন্তু সে জন্য প্রয়োজন হবে কন্যা-সৃষ্ট প্রতিবন্ধক সরিয়ে ফেলার সময়টুকু।
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
১ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
১ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
১ দিন আগেশুভবুদ্ধিসম্পন্ন প্রায় সব মানুষই বর্তমানের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। প্রতিটা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শিক্ষাপদ্ধতি চালু আছে, তাতে ছাত্র-ছাত্রীরা মানসম্পন্ন সুশিক্ষা পাচ্ছে, এমন কথা অনেক গুণীজন বিশ্বাস করেন না।
১ দিন আগে