নতুন রাষ্ট্রপতিকে অভিনন্দন

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৩, ১১: ০৯
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৩, ১১: ০৯

সোমবার সকালে বঙ্গভবনের ঐতিহাসিক দরবার হলে দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন মো. সাহাবুদ্দিন। শপথ পাঠ করিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

৭৩ বছর বয়সী রাজনীতিবিদ মো. সাহাবুদ্দিন ২০২৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনি এমন এক সময় রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন, যখন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ চলছে। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অরাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে আন্দোলন করছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও সরকার সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথাই বলছে। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক হওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে সেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে নতুন রাষ্ট্রপতি কোনো ভূমিকা রাখতে পারবেন কি না বা রাখবেন কি না, সেটাই এখন সবাই কৌতূহল নিয়ে দেখার অপেক্ষায় রয়েছে।

সংসদীয় পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতির নামেই রাষ্ট্রের সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হলেও তাঁর ক্ষমতা সংবিধান অনুযায়ী সীমিত। তিনি সরকারপ্রধান নন, সরকারপ্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। তাই প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি বা অনুমোদনের বাইরে বিশেষ কোনো রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের সুযোগ রাষ্ট্রপতির নেই। তারপরও রাষ্ট্রপতি যেহেতু দেশের প্রধান ব্যক্তি, সেহেতু তাঁর কাছে মানুষের প্রত্যাশাও বেশি থাকে। মো. সাহাবুদ্দিন একজন ধীমান ও বিচক্ষণ ব্যক্তি হিসেবে ব্যাপক আলোচিত বা পরিচিত না হলেও তাঁর অতীত জীবন একেবারে বর্ণহীন নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রতি যে আস্থা রেখেছেন, সেটা একেবারে অনর্থক নয়। তিনি আস্থা রাখার মতো অনেক কাজই খুব বেশি ঢাকঢোল না বাজিয়ে অতীতে করেছেন। 

১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন মো. সাহাবুদ্দিন। ছাত্রজীবনে পাবনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল এবং তখন থেকেই তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। 
সাহাবুদ্দিন ছেষট্টির ৬ দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি পাবনা জেলার আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর তিনি তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন। ওই সময় সামরিক স্বৈরশাসকদের রোষানলে পড়ে তিন বছর জেল খাটেন এবং অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন। 

কর্মজীবনে তিনি জেলা ও দায়রা জজ এবং দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দুদক কমিশনার হিসেবে সাহাবুদ্দিন পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিরুদ্ধে ওঠা কথিত দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দৃঢ়তার পরিচয় দেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালেও তিনি নীতিনৈতিকতার প্রশ্নে দৃঢ়তার পরিচয় দেবেন, এই প্রত্যাশা দেশবাসীর। আমরা তাঁর সাফল্য কামনা করি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত