Ajker Patrika

থামছে না বালু উত্তোলন

জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪: ২৩
থামছে না বালু উত্তোলন

সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চলতি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন থামছেই না। প্রশাসন থেকে অভিযান ও মামলা দায়ের এবং এলাকাবাসীর প্রতিবাদ সমাবেশেও বন্ধ হচ্ছে না বালু উত্তোলন। এদিকে অবাধে বালু ও পাথর তোলায় নদীতীরবর্তী গ্রামগুলোতে দেখা দিয়েছে ভাঙন।

প্রশাসন সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে যৌথভাবে অভিযান চালানো হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি খনন যন্ত্র (ড্রেজার মেশিন) পোড়ানো হয়। পাশাপাশি জরিমানা করা হয় প্রায় ৫০ লাখ টাকা।

গত মঙ্গলবার বিকেলে অবৈধভাবে বেড়িবাঁধে মাটি তুলে ইট ভাটায় ব্যবহার ও ধোপাজান নদী থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের দায়ে দুজনকে পৃথকভাবে ২ লাখ টাকা করে জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

যারা অবৈধভাবে খনন যন্ত্র চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা কথা বলতেও ভয় পান। তাঁরা জানান, ভারত থেকে বেয়ে আসা চলতি নদী সদর উপজেলার সুরমা, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন এবং বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নে বয়ে গেছে। যুগ যুগ ধরে এখানকার মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে চলতি নদীর ওপর।

তবে অবৈধভাবে খনন যন্ত্র দিয়ে বালু ও পাথর তোলায় পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। বর্তমানে ঘর-বাড়ি, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ঈদগাহ ভাঙন কবলে রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চলতি নদী পাড়ের এক বাসিন্দা বলেন, বোমা ও খনন যন্ত্র দিয়ে বালু-পাথর তোলায় রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে। ফলে যাতায়াতে দুর্ভোগ বেড়েছে। বসতভিটা ও প্রাচীন স্থাপনাও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

এদিকে বোম মেশিন ও খনন যন্ত্রের বিকট শব্দে নদী তীরবর্তী মানুষেরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। উচ্চ শব্দের কারণে শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়া ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে বয়োজ্যেষ্ঠরা বেশি কষ্টে রয়েছেন। অনেকে আবার শব্দের কারণে ঘুমাতে পারেন না; এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

নদী তীরের ইব্রাহিমপুর গ্রামের বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দিন-রাত টানা খনন যন্ত্র চালানো হয়। ফলে শব্দে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। অথচ এ কার্যক্রম বন্ধে কেউ কিছু বলতে পারে না।

পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের অভিযানে বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ হলেও কিছুদিনের মধ্যে তা পুনরায় শুরু হয়। ছয় গ্রামের মানুষ প্রতিবাদ সমাবেশ করে অবৈধভাবে বালু-পাথর তোলা বন্ধের দাবি জানিয়েছে।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহরিয়ার বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে ড্রেজার বাজেয়াপ্ত করব।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, এভাবে খনন যন্ত্র দিয়ে বালু-পাথর তুললে পরিবেশের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সাঈদ বলেন, ‘আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে চলতি নদীতে টহল কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। এই টহল চলতে থাকবে।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ধোপাজান ও চলতি নদীতে অবৈধভাবে বালু-পাথর তোলা বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোরভাবে অভিযান চালানো হচ্ছে। বালু মহাল বর্তমানে ইজারাবিহীন আছে তাই নির্বিচারে বালু-পাথর তুলতে পারছে। এর বালুমহালে উচ্চ আদালতের স্থিতাবস্থা রয়েছে এ কারণে ইজারা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত