কলেজের প্রাঙ্গণে ময়লার স্তূপ

টঙ্গিবাড়ী (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪: ০০

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বালিগাঁও আমজাদ আলী কলেজের সীমানা দেয়ালের ভেতরেই ভবন তৈরির কাজ শুরু করছিলেন জমিদাতা। পরে আদালত স্থগিতাদেশে ভবন নির্মাণ বন্ধ আছে। এখন ওই স্থানে ময়লার স্তূপ গড়ে উঠেছে। উন্মুক্ত শৌচাগার হিসেবে ব্যবহার করছেন অনেকে। এতে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সড়কে চলাচলকারীরা দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।

জমিদাতা আবুল কালামের উত্তরসূরিদের দাবি, দান করার পরেও যে জায়গা ছিল, সেখানে ভবন নির্মাণের জন্য ভিত্তি স্থাপন করেছেন আবুল কালাম। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, দান করা সম্পদের মধ্যেই আবুল কালাম ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, টঙ্গিবাড়ী-মাওয়া সড়কের পাশে অবস্থিত কলেজটি। এর সীমানা দেয়ালের বাইরে অবৈধভাবে অটোরিকশা ও ইজিবাইক স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। মূল ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়ে ময়লার স্তূপ। সেখান থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। স্থানটি উন্মুক্ত শৌচাগার হিসেবে ব্যবহার করছেন কেউ কেউ। এতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

এদিকে আবর্জনার স্তূপের পাশেই ভবন নির্মাণের পিলার তৈরি করা হয়েছে। ওপরে জরাজীর্ণ টিনের ছাউনি আছে, নিচে ইট স্তূপ করে রাখা হয়েছে। অব্যবহৃত অবস্থায় থাকায় ওই স্থান কেউ কেউ যানবাহনও রেখে দিচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কলেজের একপাশে ফুলবাগান থাকলেও প্রবেশদ্বারে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ পরিষ্কার করা হচ্ছে না। এতে দুর্গন্ধে নাক চেপে হেঁটে চলতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই এই অবস্থা হয়েছে।

জানা গেছে, স্বাধীনতার ঠিক পরবর্তী সময়ে জমিদান করে বালিগাঁও উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন আমজাদ আলী। ২০০৩ সালে আমজাদ আলীর নামে কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য বিদ্যালয়ের পাশের জমিদান করেন তাঁর ছেলে মো. আবুল কালাম মিয়া।

স্থানীয় বাসিন্দা ও কলেজ সূত্রে জানা গেছে, বালিগাঁও উচ্চবিদ্যালয়ের পাশের ২ দশমিক ২৬ একর জায়গা বিদ্যালয় ও বালিগাঁও আমজাদ আলী কলেজকে অ-তফসিল অনুযায়ী দান করেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবুল কালাম। বিদ্যালয়ের একটি ভবন দ্বারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটির জায়গা আলাদা করা হয়েছে।

এদিকে কলেজ প্রতিষ্ঠার এক বছরের মধ্যেই কলেজ ভবনের সামনে একটি স্থাপনার তৈরির জন্য পিলার তৈরি করেন আবুল কালাম। তাতে বাধা দেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে মামলার পর আদালত স্থগিতাদেশ দিলে ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরে ভবনের জন্য নির্মিত পিলারের ওপর টিনশেড ছাদ দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ২০২১ সালে আজাদের মৃত্যুর পর জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব গড়ায় আবুল কালামের উত্তরসূরিদের সঙ্গে। তাঁদের দাবি, দান করার পরেও যে জায়গা ছিল, সেখানে ভবন নির্মাণের জন্য ভিত্তি স্থাপন করেছেন আবুল কালাম। তবে আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে স্থানটি প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছে। আবুল কালামের উত্তরসূরিরা রাজধানীর বাসিন্দা হওয়ায় তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘আশপাশের সবাইকে না করা সত্ত্বেও কলেজের সামনে অনেকে ময়লা ফেলে রাখে। কলেজ গেটের বাইরে অটোরিকশা ও ইজিবাইকের স্ট্যান্ড। এসব যানবাহনের চালকসহ পথচারীরা অনেক সময় ময়লার স্তূপে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেন। এতে পরিবেশদূষণসহ শিক্ষাদানের পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে।’ তবে জমির মালিকানা বিষয়ে তিনি বলতে পারেননি।

কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি এস এম হাফিজ আল আসাদ বারেক বলেন, ‘এটা কলেজের সীমানার বাইরের জায়গা। তাই এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না।’

বালিগাঁও বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মোল্লা বলেন, ‘আমি কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলে দেখছি, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা হবে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শোয়েব মিয়া জমির মালিকানা দ্বন্দ্ব বিষয়ে বলেন, ‘দান করা জায়গায় আবুল কালাম ভবন নির্মাণ শুরু করলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পক্ষ বাধা দেয়। এ নিয়ে মামলা হলে আদালতের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। সেসময় আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলাম না। তাই এর বেশি বলতে পারছি না। তবে জায়গাটি বর্তমানে স্কুল ও কলেজের ভোগ দখলে আছে।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত