Ajker Patrika

নওগাঁর ধান-চালের বাজার কোন পথে

সিয়াম সাহারিয়া, নওগাঁ
আপডেট : ১২ জুন ২০২২, ১৪: ২৩
নওগাঁর ধান-চালের বাজার কোন পথে

নওগাঁয় ভরা মৌসুমে ঊর্ধ্বমুখী হলো চালের বাজার। ধানের দাম কখনো বাড়ছে, কখনো কমছে। কিন্তু বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ধান গেল কোথায়—ঘুরপাক খাচ্ছে এমন প্রশ্ন। অন্যদিকে বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাধারণ মিলার আর ব্যবসায়ীদের মধ্যে চলছে রশি টানাটানি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে লাগাম টানতেই সপ্তাহের ব্যবধানে ধানের দাম কমেছে মণপ্রতি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। এ অবস্থায় সাধারণ ভোক্তা ও কৃষকদের মনে প্রশ্ন, কোন পথে যাচ্ছে ধান-চালের বাজার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মৌসুমের শুরুতে ধানের দর ছিল ৮৫০ থেকে ১ হাজার টাকা মণ। প্রয়োজনের তাগিদে তখন অল্প দামেই ফলন বিক্রি করেছেন কৃষক। যখন কৃষকদের গোলা অনেকটা শূন্য; তখন হঠাৎ বেড়ে যায় ধানের দাম। পাশাপাশি চালের বাজারেও শুরু হয় অস্থিরতা।

এরপর ধান-চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাঠে নামে প্রশাসন। বিভিন্ন মিল ও ধানের আড়তে চালানো হয় অভিযান, করা হয় জরিমানা। অভিযান শুরুর পর আবারও সপ্তাহের ব্যবধানে ধানের দাম কমে যায়। সেই সঙ্গে বাজারে কমতে শুরু করে চালের দাম।

সম্প্রতি নওগাঁর মান্দা ও মহাদেবপুরের কয়েকটি ধানের হাট ঘুরে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে চলতি মৌসুমে ফলনে কিছুটা ঘাটতি হয়েছে। এরপরও কৃষক যে ধান পেয়েছেন, সেই ফলন তাঁরা তুলে দিয়েছেন আড়তদারদের হাতে। মৌসুমের শুরুতে যখন তাঁরা অধিকাংশ ধান বিক্রি করেছেন; তখন বাজারে তেমন একটা দাম পাননি তাঁরা। কৃষকের ঘরে ধান যখন শেষের দিকে হঠাৎ করে প্রতিমণে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায় দাম। এতে করে কৃষকের খুব একটা লাভ হয়নি। কৃষকদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের কারণে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

মান্দার সতীহাটে গিয়ে কথা কৃষক আব্দুল হালিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ধান কাটামাড়াই শেষ করেই শ্রমিকের, সারের ও পানির দাম দিতে গিয়ে আগেই সব ধান বিক্রি করেছেন তাঁরা। তখন ধানের দর কম ছিল। এরপর হঠাৎ করে ধানের দাম বেড়ে গেছে। এতে দাম বাড়লেও তাঁর কোনো লাভ হয়নি।

এদিকে স্থানীয় মিলাররা বলছেন, মন্ত্রী পরিষদ বৈঠক থেকে নির্দেশনা আসে অবৈধ মজুত ভাঙার। এতেই ধানের দর প্রতি মণে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা কমে যায়। মিলারদের দাবি, ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ধান মজুত করেছেন পুঁজিপতি ব্যবসায়ীরা। যখন তাঁরা ধান কেনা কমে দিয়েছেন, তখন হাটেও ধানের দামও কমে গেছে।

মহাদেবপুরের সরস্বতীপুর হাটে কথা হয় ক্ষুদ্র মিলার ও ধান ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে। তিনি বলেন, মৌসুমের শুরু থেকে তিনি ধান কিনছেন। ধান কিনে তিনি অন্তত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ধান বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে কিছু ধান তিনি তাঁর মিলের জন্য কিনেছেন। তাঁর দাবি, ‘বড় কোম্পানির কাছে ধান বিক্রি করলে বেশি লাভ হয়। সে জন্য হাট থেকে ধান কিনে পুঁজিপতি ব্যবসায়ীদের কাছে তিনি বিক্রি করেন।’

এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা চাউল কল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, প্রথমত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া এই অঞ্চল থেকে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ধান বড় কোম্পানিগুলো সংগ্রহ করেছে। তাদের কারণেই বাজার অস্থিতিশীল হয়েছে। তাদের সঙ্গে তাঁরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না। কারণ, তারা ছোট ছোট প্যাকেট করে বেশি দামে চাল বিক্রি করবে।

ফরহাদ হোসেন চকদার আরও বলেন, ‘অতীতে কখনোই বাজারে এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখিনি। যেদিন থেকে বড় ব্যবসায়ীরা এই সেক্টরে এসেছে, সেদিন থেকে রাতারাতি ধান চালের বাজার কম-বেশি হচ্ছে।’

এ দিকে সপ্তাহের ব্যবধানে ধানের দাম কমে গেছে মণ প্রতি ১০০ থেকে ২৫০ টাকা। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মাতাজিহাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জিরা ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, কাটারি ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা, গোল্ডেন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬৫০ টাকাতে।

মাতাজি হাটের আড়তদার মো. জালাল হোসেন বলেন, ‘এখনো ধানের দাম ওঠানামা করছে। বড় কোম্পানিগুলো ধান কিনলে হাটে দাম বাড়ছে, আবার না কিনলে এক দিনের ব্যবধানে দাম কমে যাচ্ছে। ধানের দাম আবারও বাড়বে বলে ধারণা তাঁর।

অন্যদিকে নওগাঁর বাজারে চালের দামের দাপট কিছুটা কমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকার ভেদে প্রতি কেজি চালের দাম কমেছে ২ টাকা।

খুচরা চাল ব্যবসায়ী তাপস কুমার বলেন, প্রশাসন অভিযান শুরু পর প্রতি কেজিতে ২ টাকা কমেছে। মোকামে ৫০ কেজির বস্তায় ১০০ টাকা পর্যন্ত দাম কমায় খুচরা বাজারেও দাম কমেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদত্যাগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

পাগল বেশে রাস্তায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা কন্টেন্ট ক্রিয়েটর সম্পর্কে যা জানা গেল

হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের উপাধ্যক্ষকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা

প্রধান উপদেষ্টার নতুন বিশেষ সহকারী কে এই আনিসুজ্জামান চৌধুরী

সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জাতিসংঘের ফলকার তুর্কের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাল আইএসপিআর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত