ইটভাটায় পুড়ছে ক্ষতিকর টায়ারের ছাই, শ্বাসকষ্ট

আশরাফুল আলম আপন, বদরগঞ্জ
প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ০৯
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ১৫: ২৬

বদরগঞ্জের ইটভাটাগুলোতে কয়লার সঙ্গে মিশিয়ে পোড়ানো হচ্ছে টায়ারের ক্ষতিকর ছাই। এতে বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টে ভুগছেন আশপাশের বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসনের তদারকির অভাবে এমন অসাধু উপায় অবলম্বন করছেন ভাটার মালিকেরা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বদরগঞ্জে কৃষিজমিতে ইটভাটা রয়েছে ৭১টি। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী ভাটার সংখ্যা ৬৪টি। এর মধ্যে কাগজপত্র আছে ১০ থেকে ১২টির। অন্যগুলো অবৈধ।

উপজেলার মধুপুর, দামোদরপুর ও রামনাথপুর ইউনিয়নে ইটভাটার সংখ্যা বেশি। এই তিন ইউনিয়নে মোট ভাটা রয়েছে ৪৫টি। এর মধ্যে শুধু মধুপুরেই রয়েছে ২৫টি।

সরকারি আইন অনুযায়ী, কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। আবার তা হতে হবে এলজিইডির সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে। কিন্তু এই আইনের মধ্যে উপজেলার একটি ইটভাটাও পড়েনি।

মধুপুরের চেংমারী এলাকায় রংপুর-বদরগঞ্জ পাকা সড়ক ঘেঁষে নতুন নির্মিত বিবিএল ইটভাটায় গত বুধবার গিয়ে দেখা গেছে, শ্রমিকেরা জ্বালানি কয়লার সঙ্গে টায়ারের ছাইসহ প্লাস্টিক ও বিভিন্ন পুরোনো পোশাকের টুকরো মেশাচ্ছেন। ইটে কাঙ্ক্ষিত রং আনতে এটি করা হয় বলে শ্রমিকেরা জানান।

একই ইউনিয়নের এলজিইডি সড়ক ঘেঁষে থাকা পিবিএম ইটভাটায় দেখা যায়, সেখানে বস্তায় মজুত করা আছে টায়ারের ছাই। তবে ভাটার দেখভালের দায়িত্বে থাকা মোস্তা হারুন দাবি করেন, এখানে এই ছাই পোড়ানো হয় না। ভাটার কাগজপত্র ঠিক আছে বলে দাবি করলেও তিনি কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি।

পাশের রাজরামপুর এলাকার এমএমবি এবং এমবিএম নামের দুটি ভাটায়ও ইট পোড়ানোর কোনো অনুমতি দেখাতে পারেননি সংশ্লিষ্ট ম্যানেজারেরা।

ইটভাটায় এমন অনিয়মে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বদরগঞ্জ মহিলা কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল রুহুল আমিন পাইকাড়। তিনি বলেন, ইটভাটার আইন আছে, প্রয়োগ নেই। এ কারণে উপজেলায় দিন দিন ভাটার সংখ্যা বাড়ছে। আইনের প্রয়োগ না থাকায় ভাটায় টায়ারের ছাই পোড়ানোর সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন কিছু মালিক। এতে বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টে ভুগছেন উপজেলার মানুষ।

যোগাযোগ করা হলে মধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আলম ভুট্টু বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে ২৫টি ইটভাটা রয়েছে। আগের চেয়ারম্যান কিছু ট্রেড লাইসেন্স দিলেও আমি দিইনি। পরিষদ কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার ঘেঁটে দেখেছি এমএমবি এবং পিবিএম নামের ইটভাটাসহ বেশ কিছু ভাটার মালিক ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে আসেননি। ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন না থাকলে কেউ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ইট পোড়ানোর অনুমতি পাবেন না। তাঁরা কীভাবে ইট পোড়াচ্ছেন এটা প্রশাসনের দেখার বিষয়।’

রামনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী জানান, তাঁর ইউনিয়নে ১৩টি ইটভাটা রয়েছে। প্রায় সবগুলোই অবৈধভাবে চলছে।

এ বিষয়ে উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে যাঁদের ইটভাটা রয়েছে তাঁরা কেউই পরিবেশ ছাড়পত্র পাননি। আর ছাড়পত্র না পেলে তাঁরা ইট পোড়ানোর অনুমতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পাবেন না। তবে তাঁরা সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে ইট পোড়াচ্ছেন। উপজেলার ১২টি ইটভাটা মালিকের কাগজপত্র ঠিক আছে।

এক প্রশ্নের জবাবে শাহজাহান আলী বলেন, ‘টায়ারের ছাই ক্ষতিকর। তাই ভাটা মালিকদের ইট পোড়াতে টায়ারের ছাই ব্যবহারে নিষেধ করা হয়েছে।’

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু সাঈদ বলেন, ‘আমি সম্প্রতি এ উপজেলায় যোগদান করেছি। কাগজপত্র না থাকলে ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত