ফারুক মেহেদী, ঢাকা
যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলার ঘরে ঘরে খাদ্য ঘাটতি। সাড়ে ৭ কোটি মানুষ অথচ সাকল্যে ফসল উৎপাদন ১ কোটি টন। ৫০ বছর পর সেই বাংলাদেশের প্রায় ১৮ কোটি মানুষ। ফসল উৎপাদন পৌঁছেছে ৪ কোটি টনে। ঘাটতির বাংলাদেশ এখন খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। সব বাধা পেরিয়েও কৃষকের মন-প্রাণ উজাড় করা শ্রমে-ঘামে কৃষির প্রায় সব উপখাতে জয়জয়কার। ৫০ বছর ধরে শ্রমজীবী মানুষই পেছন থেকে সমৃদ্ধির চাকা ঠেলে দেশের অর্থনীতির বনিয়াদ গড়ে দিয়েছেন। শত প্রতিকূলতায় তারাই বাংলাদেশের পোশাক খাতের অগ্রযাত্রাকে করেছেন অপ্রতিরোধ্য। বিশ্বে শীর্ষে তুলে ধরেছেন লাল-সবুজের পতাকা। আর প্রায় ১ কোটি প্রবাসী, তাঁদের অমানুষিক পরিশ্রমের আয়ের প্রায় পুরোটাই দেশে পাঠিয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে অনেকটা দূর এগিয়ে দিয়েছেন।
এই নায়কদের শ্রমে গড়া রূপান্তরের রূপকথা হয়ে উঠছে বিশ্বের কাছে উন্নয়নের নজির। স্বাধীনতার পর ধারকর্জের মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার টানাটানির বাজেট ৭৬৮ গুণ বেড়ে এখন ৬ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার মহিরুহ। তথ্য-উপাত্ত বলছে, একদা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ এখন সাফল্যের কাহিনিতে উপচে পড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা ওয়েলথ এক্স-এর সবশেষ প্রতিবেদন বলছে, শুধু জিডিপি প্রবৃদ্ধিই নয়; অতি ধনী বাড়ার দিক থেকেও বিশ্বে শীর্ষে বাংলাদেশ। আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড, জাপান, হংকং, চীন, ভারতসহ পৃথিবীর বহু দেশের চেয়ে ধনীর সংখ্যা বাড়ার দিক থেকে এগিয়ে বাংলাদেশ। গত এক দশকে বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ হারে ধনী ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েছে, যাঁদের সম্পদের পরিমাণ ৫০ লাখ ডলারের বেশি।
৫০ বছরে বাংলাদেশের রূপান্তর নিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলছিলেন, ‘স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। তখন কিছুই ছিল না। মাথাপিছু আয়, রপ্তানি, প্রবাসী আয়—সবকিছুই ছিল নিম্ন পর্যায়ে। সেখান থেকে ধীরে ধীরে দেশ বেরিয়ে এসেছে। তবে গত ১০ বছরে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। যদিও ধারাটা শুরু হয়েছিল মূলত নব্বইয়ের দশক থেকে। সম্প্রতি আমি এশিয়ার ১১-১২টি দেশের অর্থনৈতিক পর্যালোচনায় দেখেছি, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ প্রতি পাঁচ বছরে ১ শতাংশ করে জিডিপি প্রবৃদ্ধি যোগ করেছে। দু-তিন বছর ধরে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। অবশ্যই এর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও কৃষি খাতের। কৃষি খাতে বৈচিত্র্য এসেছে। যার ফলে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। তবে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। পোশাকের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ এবং নতুন বাজারের প্রসার করতে হবে। রেমিট্যান্স বেশি হলেও এটা আশপাশের অনেক দেশের থেকে কম। এটাকে বাড়াতে হবে।’
সরকারের পরিকল্পনা কমিশন, দেশি-বিদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৯৭১ সালে ধ্বংসস্তূপের ওপর যে দেশের জন্ম, ৫০ বছর পরে এসে তা এখন বিশ্বের দ্রুত অগ্রসরমাণ অর্থনীতির একটি। মাত্র কয়েক মাস আগেও খোদ হেনরি কিসিঞ্জারের প্রখ্যাত মার্কিন গণমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ মডেল অনুসরণ করার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে পরামর্শ দিয়েছেন। জাতিসংঘের নির্ধারিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এমডিজির আটটি লক্ষ্যের প্রায় সব কটিতেই ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বা এসডিজি বাস্তবায়ন এগিয়ে চলছে। প্রায় এক দশক ধরেই বিশ্বের শীর্ষ সংস্থা ও বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, জাইকা, গোল্ডম্যান স্যাকস, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, এইচএসবিসি, সিটিব্যাংক এনএ, পিডব্লিউসি বাংলাদেশকে অমসৃণ হীরা, ইমার্জিং টাইগার, নেক্সট ইলেভেনসহ বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করেছে। ধারাবাহিক উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রিজার্ভ, রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়, রপ্তানি, মাথাপিছু আয়, গড় আয়ু, সামাজিক নিরাপত্তাসহ অর্থনীতির প্রধান প্রধান সূচকে প্রতিবেশী দেশগুলোসহ বিশ্বের অনেক দেশের চেয়েও এগিয়ে। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর কাছে বাংলাদেশ এখন বিস্ময়।
তথ্য বলছে, স্বাধীনতা-পরবর্তী মাত্র ৫০১ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপির আকার চলতি অর্থবছরে সোয়া ২ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ওই সময়ের ১২৯ ডলারের মাথাপিছু আয় এখন আড়াই হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। যে সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৩ শতাংশের নিচে ছিল, তা এখন পৌঁছেছে ৮ শতাংশে। স্বাধীনতার পরের বছর মাত্র ৩৪ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি পাঁচ দশকের ব্যবধানে ১১১ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ডলারের ঘরে। ৫০ বছর আগে যেখানে প্রবাসী আয় ছিল নামমাত্র, তা পৌঁছে গেছে বছরে ২৫ বিলিয়ন বা আড়াই হাজার কোটি ডলারে। রপ্তানি আর প্রবাসী আয়ে ভর করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের ঘর ছাড়িয়ে গেছে।
পাকিস্তানে এখন ১ ডলার কিনতে ১৩০ পাকিস্তানি রুপি খরচ করতে হয়। অথচ বাংলাদেশের লাগে ৮৫ টাকা। একসময় বাংলাদেশের ১০০ টাকায় ভারত দিত ৩৫-৪০ রুপি। আজ সমপরিমাণ টাকায় পাওয়া যায় প্রায় ৮০-৮৫ ভারতীয় রুপি। প্রায় সব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সূচকে ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ। নারীশিক্ষা, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, গড় আয়ু, বাণিজ্য ঘাটতি, দারিদ্র্য এবং অতি দারিদ্র্য হ্রাস, বিশুদ্ধ পানীয় জলপ্রাপ্তি, গৃহসংস্থান, স্কুলে ভর্তি, মাতৃমৃত্যুর হার, শিশুমৃত্যুর হার—এ জাতীয় সব সূচকে বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বস্বীকৃত। এত যে সাফল্য; অগ্রগতি, বলা যায় অর্থনীতির তিনটি মূল খাত কৃষি, রপ্তানি আর প্রবাসী আয়ের ওপর ভর করেই অন্য সব দিকে সক্ষমতার ভিত তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশের কৃষক ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খরাসহ সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেও দ্বিগুণ উদ্যম আর শক্তিতে কৃষির অগ্রযাত্রা ধরে রেখেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশের বেশি কৃষি খাতে নিয়োজিত, বাপ-দাদার আমলের লাঙল-জোয়ালের কৃষিকে তাঁরা আধুনিক যন্ত্রপাতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। উন্নত বীজ, সার, কীটনাশকসহ সব ধরনের কৃষি উপকরণ কাজে লাগিয়ে, জমি কমে যাওয়ার পরও কয়েকগুণ বেশি ফসল ফলাতে সক্ষম হয়েছেন। স্বাধীনতার পর দেশের ১০ শতাংশ জমি উচ্চফলনশীল শস্যের আওতায় ছিল। এখন তা ৯০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। সেচের আওতায় ছিল ১০ শতাংশ জমি, এখন তা ৭০ শতাংশ। এসবের ফলে ধানের উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণের বেশি, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচ গুণ ও ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে দশ গুণ। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে ধান উৎপাদনে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, উন্মুক্ত জলাশয়ে মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে তৃতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম, আলু উৎপাদনে সপ্তম এবং পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে রয়েছে। স্বাধীনতার পর আলুর উৎপাদন ছিল ২০-২৫ লাখ টন। আর এখন তা ১ কোটি ৯ লাখ টন। সবজি উৎপাদন বছরে ৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। পোলট্রি, ডেইরিতেও ঈর্ষণীয় সাফল্য। এসবই সম্ভব হয়েছে কৃষকের পরিশ্রমে।
দেশকে মধ্যম আয় ও স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের পথে এগিয়ে দেওয়ায় কৃষির মতো অবদান রাখছে রপ্তানি তথা পোশাক খাত। এ খাতের প্রায় ৪০ লাখ কর্মী অপেক্ষাকৃত কম মজুরিতে কাজ করছেন বলে বিশ্বে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় এগিয়ে রয়েছে। যার ফলে চীনের পর বিশ্বের শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক হিসেবে বাংলাদেশ। ৫০ বছর আগে রপ্তানি আয়ের তালিকায় যে খাতের নাম ছিল না, অথচ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই খাত থেকে দেশে এসেছে ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ডলার, দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ২ লাখ ৯০ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। করোনার আঘাতে গত অর্থবছরে রপ্তানি কিছুটা কমে এলেও মোট রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশই তৈরি পোশাকের দখলে।
গত ৫০ বছরের এই পোশাক খাতই দেশের রপ্তানি আয়ের পুরো চেহারা বদলে দিয়েছে। পাঁচ দশকের পরিক্রমায় রপ্তানি আয় ৯৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামীণ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান, নারীর আর্থসামাজিক ক্ষমতায়ন আর অসংখ্য সহযোগী শিল্পের প্রসারসহ বাংলাদেশের সমৃদ্ধির অগ্রভাগে নেতৃত্ব দিচ্ছে খাতটি। একসময়ের মৃত্যুপুরী একেকটি কারখানা এখন পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানায় রূপান্তরিত হয়েছে। সংখ্যার দিক থেকেও পরিবেশবান্ধব কারখানার তালিকায় বিশ্বে সবার ওপরে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে এর চেয়ে বড় বিস্ময় আর কী হতে পারে! দাম, মান আর লিড টাইমকে দক্ষতার সঙ্গে সমন্বয় করে সামনে থেকে বিশ্ববাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে খাতটি। এ খাতের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভকে ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে।
এ বিষয়ে পোশাকশিল্পের মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএয়ের প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাংলাদেশের পোশাক খাতের সাফল্য বিস্ময়কর। একদিকে বিনিয়োগ বেড়েছে, কর্মসংস্থান তৈরি করেছে; অন্যদিকে যাঁদের কাজের অভিজ্ঞতা নেই, এমন অদক্ষ কর্মীদের রুটিরুজি, আর্থসামাজিক সক্ষমতা তৈরি করেছে। এটা আর কোনো খাতে সম্ভব নয়।
এর বাইরে আর যে খাতটি বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ হওয়ায় অন্যতম ভূমিকা রেখে চলেছে, সেটি প্রবাসী আয়। প্রবাসীরা নিজের পরিবার-প্রিয়জন ফেলে রেখে পরবাসী হয়ে দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে যা আয় করেন, তার সিংহভাগই দেশে পাঠিয়ে দেন। এর ওপর ভর করেই আজ দেশের সচ্ছলতা এসেছে। অথচ ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত বিদেশে কাজ করতেন এমন লোকের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৪ হাজার। আর বর্তমানে কমবেশি তা প্রায় ১ কোটি। ১৯৭৬-৭৭ সালে মাত্র ৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এলেও ২০২০ সালে বাংলাদেশ ২২ বিলিয়ন বা ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার আসে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, একদিকে, কৃষকের উৎপাদিত শস্যে দেশের ভেতরে খাদ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে, অন্যদিকে মোটা রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে বৈদেশিক মুদ্রার শক্তিশালী তহবিল গড়ে উঠেছে। এসবের মিলিত ফলই হলো দেশের এগিয়ে যাওয়ার শক্তি। দেশের সর্বত্র সড়ক-মহাসড়ক ও মেগা প্রকল্প। পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র—দেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে আরও বেগবান করার হাতছানি দিচ্ছে।
বাড়ছে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার। এনবিআরের বিশ্লেষণ বলছে, আগামী এক বছরের ব্যবধানে দেশের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবসা দাঁড়াবে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকায়। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসে বৈদেশিক মুদ্রায় আয় করছেন তরুণেরা। এ খাতের রপ্তানি আয়ও ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। একসময়ের শতভাগ আমদানিনির্ভর মোবাইল ফোনসেটের প্রায় সিংহভাগই দেশে তৈরি হচ্ছে। সামনে রপ্তানির ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিপুল বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে উৎপাদন খাতের হাব হয়ে উঠবে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে গত ৫০ বছরে অর্থনৈতিকভাবে আমূল বদলে গেছে বাংলাদেশ। আর যে ভিত্তি গড়ে উঠছে, তা সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে অন্য উচ্চতায়।
যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলার ঘরে ঘরে খাদ্য ঘাটতি। সাড়ে ৭ কোটি মানুষ অথচ সাকল্যে ফসল উৎপাদন ১ কোটি টন। ৫০ বছর পর সেই বাংলাদেশের প্রায় ১৮ কোটি মানুষ। ফসল উৎপাদন পৌঁছেছে ৪ কোটি টনে। ঘাটতির বাংলাদেশ এখন খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। সব বাধা পেরিয়েও কৃষকের মন-প্রাণ উজাড় করা শ্রমে-ঘামে কৃষির প্রায় সব উপখাতে জয়জয়কার। ৫০ বছর ধরে শ্রমজীবী মানুষই পেছন থেকে সমৃদ্ধির চাকা ঠেলে দেশের অর্থনীতির বনিয়াদ গড়ে দিয়েছেন। শত প্রতিকূলতায় তারাই বাংলাদেশের পোশাক খাতের অগ্রযাত্রাকে করেছেন অপ্রতিরোধ্য। বিশ্বে শীর্ষে তুলে ধরেছেন লাল-সবুজের পতাকা। আর প্রায় ১ কোটি প্রবাসী, তাঁদের অমানুষিক পরিশ্রমের আয়ের প্রায় পুরোটাই দেশে পাঠিয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে অনেকটা দূর এগিয়ে দিয়েছেন।
এই নায়কদের শ্রমে গড়া রূপান্তরের রূপকথা হয়ে উঠছে বিশ্বের কাছে উন্নয়নের নজির। স্বাধীনতার পর ধারকর্জের মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার টানাটানির বাজেট ৭৬৮ গুণ বেড়ে এখন ৬ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার মহিরুহ। তথ্য-উপাত্ত বলছে, একদা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ এখন সাফল্যের কাহিনিতে উপচে পড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা ওয়েলথ এক্স-এর সবশেষ প্রতিবেদন বলছে, শুধু জিডিপি প্রবৃদ্ধিই নয়; অতি ধনী বাড়ার দিক থেকেও বিশ্বে শীর্ষে বাংলাদেশ। আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড, জাপান, হংকং, চীন, ভারতসহ পৃথিবীর বহু দেশের চেয়ে ধনীর সংখ্যা বাড়ার দিক থেকে এগিয়ে বাংলাদেশ। গত এক দশকে বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ হারে ধনী ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েছে, যাঁদের সম্পদের পরিমাণ ৫০ লাখ ডলারের বেশি।
৫০ বছরে বাংলাদেশের রূপান্তর নিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলছিলেন, ‘স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। তখন কিছুই ছিল না। মাথাপিছু আয়, রপ্তানি, প্রবাসী আয়—সবকিছুই ছিল নিম্ন পর্যায়ে। সেখান থেকে ধীরে ধীরে দেশ বেরিয়ে এসেছে। তবে গত ১০ বছরে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। যদিও ধারাটা শুরু হয়েছিল মূলত নব্বইয়ের দশক থেকে। সম্প্রতি আমি এশিয়ার ১১-১২টি দেশের অর্থনৈতিক পর্যালোচনায় দেখেছি, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ প্রতি পাঁচ বছরে ১ শতাংশ করে জিডিপি প্রবৃদ্ধি যোগ করেছে। দু-তিন বছর ধরে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। অবশ্যই এর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও কৃষি খাতের। কৃষি খাতে বৈচিত্র্য এসেছে। যার ফলে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। তবে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। পোশাকের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ এবং নতুন বাজারের প্রসার করতে হবে। রেমিট্যান্স বেশি হলেও এটা আশপাশের অনেক দেশের থেকে কম। এটাকে বাড়াতে হবে।’
সরকারের পরিকল্পনা কমিশন, দেশি-বিদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৯৭১ সালে ধ্বংসস্তূপের ওপর যে দেশের জন্ম, ৫০ বছর পরে এসে তা এখন বিশ্বের দ্রুত অগ্রসরমাণ অর্থনীতির একটি। মাত্র কয়েক মাস আগেও খোদ হেনরি কিসিঞ্জারের প্রখ্যাত মার্কিন গণমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ মডেল অনুসরণ করার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে পরামর্শ দিয়েছেন। জাতিসংঘের নির্ধারিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এমডিজির আটটি লক্ষ্যের প্রায় সব কটিতেই ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বা এসডিজি বাস্তবায়ন এগিয়ে চলছে। প্রায় এক দশক ধরেই বিশ্বের শীর্ষ সংস্থা ও বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, জাইকা, গোল্ডম্যান স্যাকস, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, এইচএসবিসি, সিটিব্যাংক এনএ, পিডব্লিউসি বাংলাদেশকে অমসৃণ হীরা, ইমার্জিং টাইগার, নেক্সট ইলেভেনসহ বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করেছে। ধারাবাহিক উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রিজার্ভ, রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়, রপ্তানি, মাথাপিছু আয়, গড় আয়ু, সামাজিক নিরাপত্তাসহ অর্থনীতির প্রধান প্রধান সূচকে প্রতিবেশী দেশগুলোসহ বিশ্বের অনেক দেশের চেয়েও এগিয়ে। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর কাছে বাংলাদেশ এখন বিস্ময়।
তথ্য বলছে, স্বাধীনতা-পরবর্তী মাত্র ৫০১ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপির আকার চলতি অর্থবছরে সোয়া ২ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ওই সময়ের ১২৯ ডলারের মাথাপিছু আয় এখন আড়াই হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। যে সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৩ শতাংশের নিচে ছিল, তা এখন পৌঁছেছে ৮ শতাংশে। স্বাধীনতার পরের বছর মাত্র ৩৪ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি পাঁচ দশকের ব্যবধানে ১১১ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ডলারের ঘরে। ৫০ বছর আগে যেখানে প্রবাসী আয় ছিল নামমাত্র, তা পৌঁছে গেছে বছরে ২৫ বিলিয়ন বা আড়াই হাজার কোটি ডলারে। রপ্তানি আর প্রবাসী আয়ে ভর করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের ঘর ছাড়িয়ে গেছে।
পাকিস্তানে এখন ১ ডলার কিনতে ১৩০ পাকিস্তানি রুপি খরচ করতে হয়। অথচ বাংলাদেশের লাগে ৮৫ টাকা। একসময় বাংলাদেশের ১০০ টাকায় ভারত দিত ৩৫-৪০ রুপি। আজ সমপরিমাণ টাকায় পাওয়া যায় প্রায় ৮০-৮৫ ভারতীয় রুপি। প্রায় সব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সূচকে ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ। নারীশিক্ষা, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, গড় আয়ু, বাণিজ্য ঘাটতি, দারিদ্র্য এবং অতি দারিদ্র্য হ্রাস, বিশুদ্ধ পানীয় জলপ্রাপ্তি, গৃহসংস্থান, স্কুলে ভর্তি, মাতৃমৃত্যুর হার, শিশুমৃত্যুর হার—এ জাতীয় সব সূচকে বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বস্বীকৃত। এত যে সাফল্য; অগ্রগতি, বলা যায় অর্থনীতির তিনটি মূল খাত কৃষি, রপ্তানি আর প্রবাসী আয়ের ওপর ভর করেই অন্য সব দিকে সক্ষমতার ভিত তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশের কৃষক ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খরাসহ সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেও দ্বিগুণ উদ্যম আর শক্তিতে কৃষির অগ্রযাত্রা ধরে রেখেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশের বেশি কৃষি খাতে নিয়োজিত, বাপ-দাদার আমলের লাঙল-জোয়ালের কৃষিকে তাঁরা আধুনিক যন্ত্রপাতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। উন্নত বীজ, সার, কীটনাশকসহ সব ধরনের কৃষি উপকরণ কাজে লাগিয়ে, জমি কমে যাওয়ার পরও কয়েকগুণ বেশি ফসল ফলাতে সক্ষম হয়েছেন। স্বাধীনতার পর দেশের ১০ শতাংশ জমি উচ্চফলনশীল শস্যের আওতায় ছিল। এখন তা ৯০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। সেচের আওতায় ছিল ১০ শতাংশ জমি, এখন তা ৭০ শতাংশ। এসবের ফলে ধানের উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণের বেশি, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচ গুণ ও ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে দশ গুণ। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে ধান উৎপাদনে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, উন্মুক্ত জলাশয়ে মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে তৃতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম, আলু উৎপাদনে সপ্তম এবং পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে রয়েছে। স্বাধীনতার পর আলুর উৎপাদন ছিল ২০-২৫ লাখ টন। আর এখন তা ১ কোটি ৯ লাখ টন। সবজি উৎপাদন বছরে ৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। পোলট্রি, ডেইরিতেও ঈর্ষণীয় সাফল্য। এসবই সম্ভব হয়েছে কৃষকের পরিশ্রমে।
দেশকে মধ্যম আয় ও স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের পথে এগিয়ে দেওয়ায় কৃষির মতো অবদান রাখছে রপ্তানি তথা পোশাক খাত। এ খাতের প্রায় ৪০ লাখ কর্মী অপেক্ষাকৃত কম মজুরিতে কাজ করছেন বলে বিশ্বে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় এগিয়ে রয়েছে। যার ফলে চীনের পর বিশ্বের শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক হিসেবে বাংলাদেশ। ৫০ বছর আগে রপ্তানি আয়ের তালিকায় যে খাতের নাম ছিল না, অথচ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই খাত থেকে দেশে এসেছে ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ডলার, দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ২ লাখ ৯০ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। করোনার আঘাতে গত অর্থবছরে রপ্তানি কিছুটা কমে এলেও মোট রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশই তৈরি পোশাকের দখলে।
গত ৫০ বছরের এই পোশাক খাতই দেশের রপ্তানি আয়ের পুরো চেহারা বদলে দিয়েছে। পাঁচ দশকের পরিক্রমায় রপ্তানি আয় ৯৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামীণ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান, নারীর আর্থসামাজিক ক্ষমতায়ন আর অসংখ্য সহযোগী শিল্পের প্রসারসহ বাংলাদেশের সমৃদ্ধির অগ্রভাগে নেতৃত্ব দিচ্ছে খাতটি। একসময়ের মৃত্যুপুরী একেকটি কারখানা এখন পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানায় রূপান্তরিত হয়েছে। সংখ্যার দিক থেকেও পরিবেশবান্ধব কারখানার তালিকায় বিশ্বে সবার ওপরে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে এর চেয়ে বড় বিস্ময় আর কী হতে পারে! দাম, মান আর লিড টাইমকে দক্ষতার সঙ্গে সমন্বয় করে সামনে থেকে বিশ্ববাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে খাতটি। এ খাতের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভকে ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে।
এ বিষয়ে পোশাকশিল্পের মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএয়ের প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাংলাদেশের পোশাক খাতের সাফল্য বিস্ময়কর। একদিকে বিনিয়োগ বেড়েছে, কর্মসংস্থান তৈরি করেছে; অন্যদিকে যাঁদের কাজের অভিজ্ঞতা নেই, এমন অদক্ষ কর্মীদের রুটিরুজি, আর্থসামাজিক সক্ষমতা তৈরি করেছে। এটা আর কোনো খাতে সম্ভব নয়।
এর বাইরে আর যে খাতটি বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ হওয়ায় অন্যতম ভূমিকা রেখে চলেছে, সেটি প্রবাসী আয়। প্রবাসীরা নিজের পরিবার-প্রিয়জন ফেলে রেখে পরবাসী হয়ে দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে যা আয় করেন, তার সিংহভাগই দেশে পাঠিয়ে দেন। এর ওপর ভর করেই আজ দেশের সচ্ছলতা এসেছে। অথচ ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত বিদেশে কাজ করতেন এমন লোকের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৪ হাজার। আর বর্তমানে কমবেশি তা প্রায় ১ কোটি। ১৯৭৬-৭৭ সালে মাত্র ৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এলেও ২০২০ সালে বাংলাদেশ ২২ বিলিয়ন বা ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার আসে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, একদিকে, কৃষকের উৎপাদিত শস্যে দেশের ভেতরে খাদ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে, অন্যদিকে মোটা রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে বৈদেশিক মুদ্রার শক্তিশালী তহবিল গড়ে উঠেছে। এসবের মিলিত ফলই হলো দেশের এগিয়ে যাওয়ার শক্তি। দেশের সর্বত্র সড়ক-মহাসড়ক ও মেগা প্রকল্প। পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র—দেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে আরও বেগবান করার হাতছানি দিচ্ছে।
বাড়ছে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার। এনবিআরের বিশ্লেষণ বলছে, আগামী এক বছরের ব্যবধানে দেশের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবসা দাঁড়াবে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকায়। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসে বৈদেশিক মুদ্রায় আয় করছেন তরুণেরা। এ খাতের রপ্তানি আয়ও ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। একসময়ের শতভাগ আমদানিনির্ভর মোবাইল ফোনসেটের প্রায় সিংহভাগই দেশে তৈরি হচ্ছে। সামনে রপ্তানির ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিপুল বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে উৎপাদন খাতের হাব হয়ে উঠবে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে গত ৫০ বছরে অর্থনৈতিকভাবে আমূল বদলে গেছে বাংলাদেশ। আর যে ভিত্তি গড়ে উঠছে, তা সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে অন্য উচ্চতায়।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে