রাজবাড়ীতে গত আড়াই মাসে ১৮টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ২৫ জন। বেশির ভাগ দুর্ঘটনা মোটরসাইকেলের সঙ্গে। এ ছাড়া মহাসড়কে নছিমন, করিমন, ইজিবাইক চলাচল করায় ঘটছে এসব দুর্ঘটনা। তবে পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সবাই আইন মেনে গাড়ি চালালে দুর্ঘটনা অনেক কমে যেত। সেই সঙ্গে সচেতনতাও জরুরি। হাইওয়ে পুলিশ বলছে, রাস্তায় অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণেই দুর্ঘটনা ঘটছে। এর প্রতিকার অবশ্যই জরুরি।

জানা গেছে, গত ১ মে থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত রাজবাড়ী জেলায় ১৮টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ২৫ জন। ১৬টি দুর্ঘটনার মধ্যে ১০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেলের সঙ্গে ট্রাক অথবা বাসের। এতে মারা গেছে ১০ জন। একজন মারা গেছে মোটরসাইকেলের ধাক্কায়, দুজন মারা গেছে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে। গত ১ জুন কালুখালী উপজেলার রেলগেট এলাকায় দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ছয়জন মারা যায়। ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটে এ দুর্ঘটনা। এ ছাড়া পিকআপ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একজন, নছিমন-ট্রাক সংঘর্ষে একজন, ট্রাকচাপায় এক শিশু, মাহিন্দ্র নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

অটোরিকশাচালক আব্দুর রহিম বলেন, যারা রাস্তায় অটোরিকশা চালায়, তারা বেশির ভাগই নতুন চালক। কোনোমতে চালানো শিখে রাস্তায় নামে। এরা রাস্তার নিয়মকানুন জানে না। সিগন্যাল বোঝে না। যে কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে।

বাসচালক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মহাসড়কে ছোট গাড়ি চলাচলের কারণে সমস্যা হয়। এরা হর্ন দিলেও সাইড দিতে চায় না। নছিমন-করিমনের শব্দ অনেক বেশি। হর্ন দিলেও শোনে না। এ কারণে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে।

ট্রাকচালক হুমায়ুন আলী বলেন, মহাসড়কে যারা গাড়ি চালায়, তাদের বেশির ভাগেরই সিগন্যাল মানার প্রবণতা নেই। সিগন্যাল মেনে চললে রাস্তায় দুর্ঘটনা অনেক কমে যেত। অনেক সময় গাড়ি রং সাইড দিয়ে চলার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে।

নছিমনচালক মেহেদী হাসান বলেন, মহাসড়কে নছিমন চালানো ঠিক নয়। তারপরও ঝুঁকি নিয়েই চালান।

রাজবাড়ীর আহ্লাদিপুর হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট আসিফ হোসেন বলেন, মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে তাঁরা সার্বক্ষণিক টহল দেন। নছিমন, করিমন, ভটভটি, ইজিবাইকের বিরুদ্ধে তাঁদের অবস্থান সুস্পষ্ট। এ ছাড়া দ্রুতগতিতে যেন কোনো বাস-ট্রাক চলতে না পারে, এ জন্য স্পিডগান ব্যবহার করেন। কোনো চালক যাতে নেশাগ্রস্ত হয়ে গাড়ি না চালান, সেদিকেও দৃষ্টি রাখা হয়।

হাইওয়ে পুলিশের মাদারীপুর রিজিওনের পুলিশ সুপার হামিদুল আলম বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে। তারপরও দুর্ঘটনা ঘটছে। মহাসড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। একই মোটরসাইকেলে তিনজন আরোহী এবং হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালানোর প্রবণতা এখনো রয়ে গেছে। এক মোটরসাইকেল আরোহী তিনজন এবং হেলমেট ছাড়া চালালে আমরা ছাড় দিচ্ছি না। এ ছাড়া মহাসড়কে ওভার স্পিডে গাড়ি চালানোও দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ। ইজিবাইকের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর অবস্থান রয়েছে। তারা যেন মহাসড়কে না ওঠে।’

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘গত এক বছরে ইজিবাইক থেকে প্রায় ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা জরিমানা আদায় হয়েছে। আমাদের জনবল কম কিন্তু সীমানা বড়। প্রতি থানায় একটিমাত্র গাড়ি। ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত একটি থানার এরিয়া। জনবল বাড়লে দুর্ঘটনা অনেক কমে যাবে। এ ছাড়া চালকদের সতর্ক হয়ে গাড়ি চালাতে হবে।