Ajker Patrika

নতুন দলের নিবন্ধন: বিএসপির কার্যালয় চেনা খানকা শরিফ হিসেবে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২৩, ১০: ৪১
Thumbnail image

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে (বিএনএম) নিবন্ধনের জন্য প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। ইসিতে দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী বিএসপির প্রধান কার্যালয় খুঁজতে রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের শাহ আলীবাগ এলাকায় গেলে কয়েকজন জানান, উল্লিখিত ঠিকানার বাড়িটি তাঁরা খানকা শরিফ হিসেবে চেনেন। আর বিএনএমের কেন্দ্রীয় কার্যালয় মহাখালীর আমতলী এলাকায় মোল্লা ভবনের চারতলায়। সোমবার বিকেলে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কোনো নেতা-কর্মীর দেখা পাওয়া যায়নি। 
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, দুটি কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুটি দল সব শর্ত পূরণ করতে পেরেছে। এ জন্য তাদের নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। বাকি যারা পারেনি, তাদের নিবন্ধন দেওয়া হয়নি।

শাহ আলীবাগ এলাকায় বিএসপি কার্যালয়ের খোঁজে গিয়ে জানা যায়, পাঁচতলা ভবনটির লোহার মূল দরজা সব সময় আটকানো থাকে। দরজার ওপরে দেয়ালে লাগানো কাঠের ফ্রেমে নতুন তিনটি প্যানাফ্লেক্স সাইনবোর্ড। একটি বিএসপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের, বাকি দুটি ঢাকা জেলা ও মিরপুর মেট্রো মডেল থানা কার্যালয়ের।

ভেতরে ঢুকে পরিচয় দিলে নিরাপত্তাকর্মী সবুজ অপেক্ষা করতে বলেন। একটু পর কারও ফোন পেয়ে সবুজ বলেন ‘জুতা খুলে’ চারতলায় যেতে।

ভবনের তিনতলায় বিএসপির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদের কার্যালয়টি তালাবদ্ধ। চারতলায় তিনটি ছোট কক্ষ ব্যবহৃত হয় দলের কাজে। এর একটিতে চৌকি পাতা, দূরদূরান্ত থেকে নেতা-কর্মীরা এলে সেখানে থাকেন।

বিএসপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, দলের প্রায় সবাই একসময় আওয়ামী লীগ ও ন্যাপের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর দাবি, এককভাবে নির্বাচন করলে তাঁরা ২০০ আসনে প্রার্থী দিতে পারবেন।

দলের প্রতিষ্ঠা কবে জানতে চাইলে ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা রুহুল আমীন ভুঁইয়া চাঁদপুরী পাশে থাকা আজাদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘২০১৮ সাল বলব, না ২০১৯?’

দলের কেউ কখনো সংসদ সদস্য ছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের বাবা (সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ) একবার ফটিকছড়ি-২ আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন।’ পাশে থাকা আরেক ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফজলুল হক আকন্দকে দেখিয়ে বলেন, ‘ইনি শরীয়তপুরের একটি আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন। তা ছাড়া আর এমন কেউ নেই।’

মহাখালীর আমতলী এলাকায় গিয়ে বিএনএমের কেন্দ্রীয় কার্যালয় খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়। ভবনের সামনের একটি দোকানের মালিক আব্দুস সোবহান বলেন, ‘শুনেছি এখানে একটা দলের অফিস হয়েছে। তবে লোকজনের আসা-যাওয়া তেমন দেখিনি।’

জানা যায়, বিএনএম মূলত বিএনপির দুই সাবেক নেতার দল। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক আবদুর রহমান দলটির আহ্বায়ক। আর সদস্যসচিব হলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য মেজর (অব.) মো. হানিফ।

বিএনএমের কেন্দ্রীয় কার্যালয় মহাখালীর আমতলী এলাকায় মোল্লা ভবনে বিকেলে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কোনো নেতা-কর্মীর দেখা পাওয়া যায়নি।

বিএনএমের অফিস সহকারী সাইফুল ইসলাম জানান, গত মে মাসে কার্যালয়টি ভাড়া নেওয়া হয়েছে। কার্যালয়ের ভাড়া প্রায় ১৫ হাজার টাকা। দলের নেতা-কর্মীরা সপ্তাহে ২-৩ দিন সেখানে আসেন। গত ১৫ জুলাই পুনর্মিলনী ছাড়া বড় কোনো কর্মসূচি সেখানে হয়নি।

গত রোববার নতুন এই দুই দলের নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকে সমালোচনার মুখে পড়ে ইসি।

দল দুটির কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েছে কি না জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, নতুন দলের নিবন্ধনের আইন অনুযায়ী দলীয় কার্যক্রম দেখার কোনো সুযোগ নেই।

ইসির দাবি, দলীয় কার্যক্রম যা-ই থাক, ইসির চাহিদামতো সব শর্ত পূরণ করেছে দল দুটি। ইসির তদন্ত কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা পর্যায়ের অফিসে গিয়ে তাঁদের লোকজন পেয়েছেন। সভা করার কাগজপত্র রয়েছে। এমনকি প্রতিটি উপজেলায় ২০০ সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর যাচাই করেও সত্যতা পাওয়া গেছে। জানা গেছে, এত সূক্ষ্মভাবে সবকিছু জমা দেওয়ায় ইসির কর্মকর্তারা কিছুটা বিস্মিতও হন।

নিবন্ধনের জন্য প্রাথমিক তালিকায় থাকা দলগুলোর মধ্যে কমবেশি সক্রিয় দেখা যায় নাগরিক ঐক্য ও গণ অধিকার পরিষদকে। সক্রিয় দল বাদ দিয়ে নামসর্বস্ব দলকে নিবন্ধন দেওয়া প্রসঙ্গ নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে এমন দলগুলোকে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য বেছে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত