রাহুল শর্মা, ঢাকা
দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী মানসম্পন্ন সামগ্রী সরবরাহ করা হয়নি। ৭৯০টি স্ক্যানার সরবরাহের কথা থাকলেও দেওয়া হয়নি একটিও। কম্পিউটারে যুক্ত করা হয়েছে অপ্রচলিত ও লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যার। সামগ্রী সরবরাহের সময়সীমা ছিল ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর। কোভিডের কারণে চার দফায় সাড়ে ১০ মাস বাড়ানো হয়। কিন্তু সে সময়ের মধ্যেও সব সামগ্রী সরবরাহ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ১৩ হাজারের বেশি আসবাব দেওয়াই হয়নি। এমন বড় আকারের অনিয়ম হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (সেসিপ) প্রায় শতকোটি টাকার কেনাকাটায়।
অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে মন্ত্রণালয়ের তদন্তে। কয়েকটি স্কুলে খোঁজ নিয়েও অপর্যাপ্ত ও নিম্নমানের সামগ্রী সরবরাহের তথ্য মিলেছে।
দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী সামগ্রী সরবরাহ না করা এবং অপ্রচলিত ও লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যার সরবরাহ করায় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করতে বলা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। সেই সঙ্গে সময়মতো পণ্য সরবরাহ না করায় জামানত বাজেয়াপ্ত করারও সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এসব সুপারিশ এখনো কার্যকর করেনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর। তারা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যাখ্যা জানতে একটি কমিটি করেছে।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. বেলায়েত হোসেন তালুকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী সামগ্রী সরবরাহ না করার কারণেই অভিযুক্ত ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। এখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর।
নিম্নমানের কারণে পুরো টাকাই গচ্চা
জানা যায়, সেসিপের আওতায় ৬৪০টি সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রি-ভোকেশনাল ও ভোকেশনাল কর্মসূচি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ২০১৯ সালের ২৩ মে দুটি প্যাকেজের আওতায় ১০টি লটে আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকা হয়। এগুলোর মধ্যে একটি লটে (জিডি-৫০ এ, লট-০১: পিভিআইপি ইকুইপমেন্ট ফর আইসিটি ট্রেড) ৩৯৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি সামগ্রী অর্থাৎ ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, মাউস, কি-বোর্ড, স্ক্যানার এবং আসবাব (কম্পিউটার টেবিল, কম্পিউটার চেয়ার, আলমারি) সরবরাহ করার কথা। ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট এ লটের সামগ্রী ও সেবা সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় যৌথ প্রতিষ্ঠান ‘ফ্লোরা টেলিকম লিমিটেড অ্যান্ড বাংলাদেশ সায়েন্স হাউজ’। সামগ্রী সরবরাহের চুক্তিমূল্য ছিল ১ কোটি ১২ লাখ ৬১ হাজার ৩৭ ডলার (ডলারের তখনকার দর ৮৫ টাকা হিসাবে প্রায় ৯৫ কোটি ৭১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা)। সেবার মূল্য ৯৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নিম্নমানের কারণে ইতিমধ্যে পরিশোধ করা পুরো টাকাই গচ্চা গেছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব আ ন ম তরিকুল ইসলামের সই করা চিঠিতে বলা হয়, ‘স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী মালামাল সরবরাহ না করে অপ্রচলিত ও লাইসেন্সবিহীন অপারেটিং সিস্টেম সরবরাহ করায় সরকারের বিপুল আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। তাদের এ ধরনের কার্যকলাপে বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক।’
দেওয়া হয়নি ৭৯০টি স্ক্যানার
নারায়ণগঞ্জের পাগলা উচ্চবিদ্যালয়ের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আসবাবপত্র যা দিয়েছে, তা বেশি ভালো না। আর কম্পিউটারগুলো ভালো না খারাপ, তা আমার পক্ষে বলা সম্ভব না। কিছুদিন আগে মন্ত্রণালয় থেকে লোকজন এসে সবকিছু দেখে গেছেন।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের অষ্টগ্রাম হাইস্কুলের এক শিক্ষক বলেন, ‘সব জিনিস পাইনি। আসবাবপত্রগুলো তেমন সুবিধার মনে হচ্ছে না।’
জানা যায়, এখনো সরবরাহ করা হয়নি ১ হাজার ৮৪০টি কম্পিউটার টেবিল, ১১ হাজার ২০০টি চেয়ার, ৫৬০টি আলমারি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সেসিপের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ড. সামসুন নাহার বলেন, ‘আমার দায়িত্ব গ্রহণের আগেই কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল। একটি লটে মালপত্রের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এতে প্রায় ৯৭ কোটি টাকার সামগ্রী রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ না করার। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক, তারা (ঠিকাদার) শর্ত অনুযায়ী সফটওয়্যার দেয়নি। বেশ কিছু সামগ্রী এখনো দেওয়ার বাকি।’
পদাধিকারবলে সেসিপের পরিচালক মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। তিনি গত সোমবার বলেন, ‘এ প্রকল্পের দরপত্র আহ্বানসহ কেনাকাটা ও সরবরাহ পুরো বিষয়টিই ঘটেছে আমার দায়িত্ব গ্রহণের আগে। কিছুদিন আগে এ প্রকল্পের একটি লটের কেনাকাটার অনিয়মের বিষয়ে মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা নিতে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মাঠপর্যায় থেকে অভিযোগ
জানা যায়, অভিযোগ ওঠার পর সরেজমিনে এর সঠিকতা দেখতে ২০২২ সালের ২১ জুলাই তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের ১১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে তিনটি প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদনে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী সব সামগ্রী সরবরাহ ও ইনস্টলেশন না করাসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে; পাশাপাশি এই কর্মসূচির আওতায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই অনুরূপ অনিয়মের চিত্র পরিলক্ষিত হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করে কমিটি।
নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, শর্ত অনুযায়ী মোট দুইভাবে টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এর একটি ডলারে সামগ্রীর দামের জন্য, অন্যটি আইসিটি-সংক্রান্ত সেবা প্রদানের জন্য। এর মধ্যে পণ্যের জন্য আট দফায় পরিশোধ করা হয়েছে ৮০ লাখ ১৫ হাজার ১৮৪.৮৫ ডলার (তখনকার হিসাবে ৬৮ কোটি ১২ লাখ ৯০ হাজার ৬৪০ টাকা)। সেবার জন্য পরিশোধ করা হয়েছে ৮৬ লাখ ৩ হাজার ১০০ টাকা।
মাউশির এক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি আগে প্রকল্প কর্মকর্তাদের নজরে আসার কথা, কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। মাঠপর্যায় থেকে অভিযোগ পেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তদন্ত করেছে। এখন বিষয়টি ধামাচাপা দিতে কিছু কর্মকর্তা তৎপর।
জানা যায়, সরবরাহকারীকে আগেই পরিশোধ করা হয়েছে বেশির ভাগ অর্থ। তদন্তাধীন অবস্থায় বাকি টাকা দেওয়ারও পাঁয়তারা চলছে।
এ বিষয়ে মাউশির মহাপরিচালক বলেন, সরকারি বিধিবিধানের বাইরে কিছুই হবে না।
মন্ত্রণালয়কেই দোষারোপ ফ্লোরার
ফ্লোরা টেলিকমের নির্বাহী পরিচালক শহিদুল ইসলাম অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এসব অভিযোগ সত্য নয়। সেরা প্রোডাক্টগুলোই সরবরাহ করেছি। খারাপ পণ্য সরবরাহ করা হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক দরপত্র একবার পাস হয়ে গেলে মন্ত্রণালয় থেকে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। কেন তারা এখন এসব অভিযোগ তুলছে, তা বোধ্যগম্য নয়।’ লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যা দরপত্রে চেয়েছে, তা-ই দিয়েছি।’
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোহাম্মদ কায়কোবাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, এটি গুরুতর অপরাধ। সরকারের উচিত দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি দিন দিন সংস্কৃতিতে পরিণত হচ্ছে। যারা এই অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড না হয়।
দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী মানসম্পন্ন সামগ্রী সরবরাহ করা হয়নি। ৭৯০টি স্ক্যানার সরবরাহের কথা থাকলেও দেওয়া হয়নি একটিও। কম্পিউটারে যুক্ত করা হয়েছে অপ্রচলিত ও লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যার। সামগ্রী সরবরাহের সময়সীমা ছিল ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর। কোভিডের কারণে চার দফায় সাড়ে ১০ মাস বাড়ানো হয়। কিন্তু সে সময়ের মধ্যেও সব সামগ্রী সরবরাহ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ১৩ হাজারের বেশি আসবাব দেওয়াই হয়নি। এমন বড় আকারের অনিয়ম হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (সেসিপ) প্রায় শতকোটি টাকার কেনাকাটায়।
অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে মন্ত্রণালয়ের তদন্তে। কয়েকটি স্কুলে খোঁজ নিয়েও অপর্যাপ্ত ও নিম্নমানের সামগ্রী সরবরাহের তথ্য মিলেছে।
দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী সামগ্রী সরবরাহ না করা এবং অপ্রচলিত ও লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যার সরবরাহ করায় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করতে বলা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। সেই সঙ্গে সময়মতো পণ্য সরবরাহ না করায় জামানত বাজেয়াপ্ত করারও সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এসব সুপারিশ এখনো কার্যকর করেনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর। তারা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যাখ্যা জানতে একটি কমিটি করেছে।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. বেলায়েত হোসেন তালুকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী সামগ্রী সরবরাহ না করার কারণেই অভিযুক্ত ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। এখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর।
নিম্নমানের কারণে পুরো টাকাই গচ্চা
জানা যায়, সেসিপের আওতায় ৬৪০টি সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রি-ভোকেশনাল ও ভোকেশনাল কর্মসূচি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ২০১৯ সালের ২৩ মে দুটি প্যাকেজের আওতায় ১০টি লটে আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকা হয়। এগুলোর মধ্যে একটি লটে (জিডি-৫০ এ, লট-০১: পিভিআইপি ইকুইপমেন্ট ফর আইসিটি ট্রেড) ৩৯৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি সামগ্রী অর্থাৎ ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, মাউস, কি-বোর্ড, স্ক্যানার এবং আসবাব (কম্পিউটার টেবিল, কম্পিউটার চেয়ার, আলমারি) সরবরাহ করার কথা। ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট এ লটের সামগ্রী ও সেবা সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় যৌথ প্রতিষ্ঠান ‘ফ্লোরা টেলিকম লিমিটেড অ্যান্ড বাংলাদেশ সায়েন্স হাউজ’। সামগ্রী সরবরাহের চুক্তিমূল্য ছিল ১ কোটি ১২ লাখ ৬১ হাজার ৩৭ ডলার (ডলারের তখনকার দর ৮৫ টাকা হিসাবে প্রায় ৯৫ কোটি ৭১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা)। সেবার মূল্য ৯৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নিম্নমানের কারণে ইতিমধ্যে পরিশোধ করা পুরো টাকাই গচ্চা গেছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব আ ন ম তরিকুল ইসলামের সই করা চিঠিতে বলা হয়, ‘স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী মালামাল সরবরাহ না করে অপ্রচলিত ও লাইসেন্সবিহীন অপারেটিং সিস্টেম সরবরাহ করায় সরকারের বিপুল আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। তাদের এ ধরনের কার্যকলাপে বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক।’
দেওয়া হয়নি ৭৯০টি স্ক্যানার
নারায়ণগঞ্জের পাগলা উচ্চবিদ্যালয়ের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আসবাবপত্র যা দিয়েছে, তা বেশি ভালো না। আর কম্পিউটারগুলো ভালো না খারাপ, তা আমার পক্ষে বলা সম্ভব না। কিছুদিন আগে মন্ত্রণালয় থেকে লোকজন এসে সবকিছু দেখে গেছেন।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের অষ্টগ্রাম হাইস্কুলের এক শিক্ষক বলেন, ‘সব জিনিস পাইনি। আসবাবপত্রগুলো তেমন সুবিধার মনে হচ্ছে না।’
জানা যায়, এখনো সরবরাহ করা হয়নি ১ হাজার ৮৪০টি কম্পিউটার টেবিল, ১১ হাজার ২০০টি চেয়ার, ৫৬০টি আলমারি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সেসিপের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ড. সামসুন নাহার বলেন, ‘আমার দায়িত্ব গ্রহণের আগেই কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল। একটি লটে মালপত্রের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এতে প্রায় ৯৭ কোটি টাকার সামগ্রী রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ না করার। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক, তারা (ঠিকাদার) শর্ত অনুযায়ী সফটওয়্যার দেয়নি। বেশ কিছু সামগ্রী এখনো দেওয়ার বাকি।’
পদাধিকারবলে সেসিপের পরিচালক মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। তিনি গত সোমবার বলেন, ‘এ প্রকল্পের দরপত্র আহ্বানসহ কেনাকাটা ও সরবরাহ পুরো বিষয়টিই ঘটেছে আমার দায়িত্ব গ্রহণের আগে। কিছুদিন আগে এ প্রকল্পের একটি লটের কেনাকাটার অনিয়মের বিষয়ে মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা নিতে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মাঠপর্যায় থেকে অভিযোগ
জানা যায়, অভিযোগ ওঠার পর সরেজমিনে এর সঠিকতা দেখতে ২০২২ সালের ২১ জুলাই তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের ১১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে তিনটি প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদনে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী সব সামগ্রী সরবরাহ ও ইনস্টলেশন না করাসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে; পাশাপাশি এই কর্মসূচির আওতায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই অনুরূপ অনিয়মের চিত্র পরিলক্ষিত হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করে কমিটি।
নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, শর্ত অনুযায়ী মোট দুইভাবে টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এর একটি ডলারে সামগ্রীর দামের জন্য, অন্যটি আইসিটি-সংক্রান্ত সেবা প্রদানের জন্য। এর মধ্যে পণ্যের জন্য আট দফায় পরিশোধ করা হয়েছে ৮০ লাখ ১৫ হাজার ১৮৪.৮৫ ডলার (তখনকার হিসাবে ৬৮ কোটি ১২ লাখ ৯০ হাজার ৬৪০ টাকা)। সেবার জন্য পরিশোধ করা হয়েছে ৮৬ লাখ ৩ হাজার ১০০ টাকা।
মাউশির এক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি আগে প্রকল্প কর্মকর্তাদের নজরে আসার কথা, কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। মাঠপর্যায় থেকে অভিযোগ পেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তদন্ত করেছে। এখন বিষয়টি ধামাচাপা দিতে কিছু কর্মকর্তা তৎপর।
জানা যায়, সরবরাহকারীকে আগেই পরিশোধ করা হয়েছে বেশির ভাগ অর্থ। তদন্তাধীন অবস্থায় বাকি টাকা দেওয়ারও পাঁয়তারা চলছে।
এ বিষয়ে মাউশির মহাপরিচালক বলেন, সরকারি বিধিবিধানের বাইরে কিছুই হবে না।
মন্ত্রণালয়কেই দোষারোপ ফ্লোরার
ফ্লোরা টেলিকমের নির্বাহী পরিচালক শহিদুল ইসলাম অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এসব অভিযোগ সত্য নয়। সেরা প্রোডাক্টগুলোই সরবরাহ করেছি। খারাপ পণ্য সরবরাহ করা হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক দরপত্র একবার পাস হয়ে গেলে মন্ত্রণালয় থেকে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। কেন তারা এখন এসব অভিযোগ তুলছে, তা বোধ্যগম্য নয়।’ লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যা দরপত্রে চেয়েছে, তা-ই দিয়েছি।’
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোহাম্মদ কায়কোবাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, এটি গুরুতর অপরাধ। সরকারের উচিত দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি দিন দিন সংস্কৃতিতে পরিণত হচ্ছে। যারা এই অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড না হয়।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে