Ajker Patrika

পানিবন্দী দেড় লাখ মানুষ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ১৭ জুন ২০২২, ১৫: ১৮
পানিবন্দী দেড় লাখ মানুষ

গত বন্যার ধকল কাটিয়ে ওঠার আগেই আবারও বন্যায় প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জ। টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জ পৌরশহরসহ ছয় উপজেলার দুই শতাধিক গ্রাম। এতে দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ছাতক, দোয়ারাবাজার, শান্তিগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

শান্তিগঞ্জ: উপজেলার ৯৫ ভাগ ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ১১৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মহাসিং, লাউয়া ও নাইন্দা নদীর পানিতে ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় উপজেলাবাসী আতঙ্কে রয়েছে। কাজে যেতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ।

উপজেলার বুড়ুমপুর গ্রামের বাসিন্দা মনির উদ্দিন বলেন, ‘বন্যায় গৃহপালিত গরু, ছাগল, হাঁস নিয়ে বিপাকে পড়েছি। পানিতে রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় এখন আমাদের নৌকায় চলাচল করতে হচ্ছে।’

ডুংরিয়া শিবপুর গ্রামের নোয়াবাড়ির বাসিন্দা হজিবুর রহমান, আবুল হাসানাত, মাসুক মিয়া জানান, বন্যায় রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরে বসে দিন কাটছে। জরুরি কাজে বের হলে কোমরপানিতে ভিজে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সেলিম খান বলেন, উপজেলার ৯৭টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫টিতে বন্যার পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। পানি নেমে গেলে আবার কার্যক্রম শুরু হবে।

স্থানীয়রা জানান, অনেকের ঘরে খাবার নেই। আবার খাবার থাকলেও চুলা পানিতে তলিয়ে রয়েছে। হাটবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা তলিয়ে গেছে। বন্ধ রয়েছে বিদ্যালয়ের পাঠদান।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন ভূইয়া জানান, বন্যা এলাকায় চাল ও শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হবে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে প্রশাসনের।’

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফারুক আহমদ বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের সহায়তায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যাঁদের বসতবাড়ি ডুবে গেছে, তাঁদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার-উজ জামান বলেন, গতকাল সকাল থেকে পানি বাড়ায় বন্যার্তদের জন্য উপজেলার ১১৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পানিবন্দী মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

দোয়ারাবাজার: বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে বিভিন্ন সড়ক ও লোকালয়। গত বুধবার রাতে বানের পানির স্রোতে ভেঙে গেছে উপজেলার দোহালিয়া-বাজিতপুর সড়কের একটি সেতু। নতুন করে আমবাড়ি-কাটাখালি সড়ক বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। গ্রাম এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি ও স্যানিটেশনের অসুবিধা দেখা দিয়েছে।

ভুজনা গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘বন্যার পানি ঘরে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। ঘরবাড়ি থেকে কোথাও বের হতে পারছি না। নৌকা ছাড়া কোথাও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আম্বিয়া আহমেদ বলেন, সুরমা ও নরসিংপুর ইউনিয়নের প্রায় শতভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অন্যান্য ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত নতুন করে ৫২টি বন্যার্ত পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

দোয়ারাবাজারের ইউএনও ফারজানা প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সব এলাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। যাঁদের ঘরে পানি উঠেছে, তাঁদের স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রে পুনর্বাসন করা হচ্ছে এবং ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’

জামালগঞ্জ: সুরমা নদীর পানি উপচে বিভিন্ন সড়ক ও বাড়িতে প্রবেশ করেছে। রক্তি ও বৌলাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের হাওরের মধ্যে থাকা ছোট-ছোট গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে।

যদিও পাউবোর জামালগঞ্জ উপসহকারী প্রকৌশলী রেজাউল কবির বলছেন, জামালগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে নদীর তীরবর্তী বাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।

উপজেলার সাচনা বাজার থেকে জেলা শহরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে ওঠায় উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের হাওরের দুর্গম এলাকা যতিন্দ্রপুর, উলুকানি, পৈন্ডুব, আছানপুর, মাহমুদপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে আফালে (ঢেউ) বাড়ির সীমানা ভেঙে গেছে।

পৈন্ডুব গ্রামের বাসিন্দা দীপক তালুকদার বলেন, ‘গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। গবাদিপশু নিয়ে পানিবন্দীদের দুর্ভোগ বেড়েছে। এখনো সরকারিভাবে কোনো ত্রাণ আসেনি।’

পানি বাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মৎস্যজীবী ও কৃষকেরা। ভেসে গেছে অনেক খামারের মাছ। এদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে জামালগঞ্জে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে জানিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মঈনুদ্দিন আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য আমরা পেয়েছি। চর্মরোগও বাড়ছে।’

পানি কমলে রোগবালাই আরও বাড়তে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘পানিবাহিত রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে এ জন্য একাধিক চিকিৎসক দল গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তারা বিভিন্ন এলাকায় বন্যার্তদের সেবায় কাজ করবে।’

ইউএনও বিশ্বজিত দেব বলেন, বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া হবে। তবে এখনো ভয়াবহ কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত