চাই চাকরি, ঠিকাদারি কাজ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ০৩
আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২২, ১৩: ১৩

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি চান ছাত্রলীগ নেতারা। চান ঠিকাদারির কাজও। এ জন্য বিভিন্ন সময় উপাচার্যের ওপর চাপ প্রয়োগের কানাঘুষা শোনা যাচ্ছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকে সঙ্গে নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের কাছে তাঁর দপ্তরে যান। সেখানে এসব দাবির বিষয়ে কথা বললে উপাচার্য সায় দেননি। পরে দপ্তর থেকে খাওয়ার উদ্দেশ্যে বাংলোতে যাওয়ার পথে গাড়িতে উঠলে ছাত্রলীগ নেতারা উপাচার্যের পথ আটকান। এ সময় উপাচার্যের সঙ্গে সভাপতি ইলিয়াস ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ছাত্রলীগ নেতাদের চাকরি দাবির বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। ছাত্রলীগের ছেলেমেয়েদের চাকরির জন্য বলেছি। তাঁরা তো জামাত-শিবির না। সরকার ক্ষমতায়, এখন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি চাওয়া তো অন্যায় দাবি না।’

তবে তিনি ঠিকাদারি দাবির বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। সভাপতি বলেন, ‘মেয়েদের হলের পাম্পের সমস্যা। এটা লাখ টাকার কমের কাজ। এই ঠিকাদারি আমরা কেন চাইব!’

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকে সঙ্গে নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের কাছে তাঁদের বেশ কয়েকজন নেতার চাকরি, ঠিকাদারি কাজসহ নানা দাবি জানান। কিন্তু উপাচার্য তাঁদের দাবির সঙ্গে এক মত না হওয়ায় সভাপতি ইলিয়াস উপাচার্যের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন।

এরপর উপাচার্য দুপুরের খাবারের জন্য দপ্তর থেকে নেমে বাংলোর উদ্দেশে গাড়িতে উঠলে ছাত্রলীগের কর্মীদের নিয়ে গাড়ি অবরোধ করেন ইলিয়াস। এ সময় ইলিয়াসসহ ছাত্রলীগের অন্য নেতাদের বিভিন্ন আক্রমণাত্মক কথা বলতে শোনা গেছে বলে জানান সেখানে উপস্থিত অন্তত তিনজন। প্রায় ১০ মিনিট বাগ্‌বিতণ্ডা চলার পর শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার শর্তে গাড়ি ছেড়ে দেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

ঘটনার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘তাদের কিছু দাবি ছিল। সে দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই প্রায় ১০ মিনিটের মতো উপাচার্যের গাড়ি অবরুদ্ধ রেখেছিল তারা। এরপর শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে উপাচার্যের গাড়ি ছেড়ে দেয়।’

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘উপাচার্য তাঁদের দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে লিখিত চাইলে তাঁরা লিখিত দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা এসে বিভিন্ন আবদার করবেন, কিন্তু সেগুলো যৌক্তিক হওয়া উচিত। উপাচার্যকে কেউ বলতে পারেন না, এটা করেন বা এটা বন্ধ রাখেন। কিছু করা বা না করা এটা উপাচার্যের এখতিয়ার।’

কোষাধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘আমি দেখেছি, উপাচার্য সবকিছু নিয়মের ভেতর থেকেই করেন। নিয়মের বাইরে তিনি কিছুই করেন না। এখন হয়তো নিয়মের বাইরে যেতে অনেকেই চাপ প্রয়োগ করছেন।’

তবে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষেও কথা বলতে গেছেন বলে দাবি করেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আমরা গিয়েছিলাম। মেয়েদের হলের পানি সমস্যা আছে, সেটার সমাধানের জন্য গিয়েছিলাম, কিন্তু তিনি (উপাচার্য) কর্ণপাত করেননি।’

এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘তাঁদের দাবিগুলো যৌক্তিক ছিল না। কিছু অন্যায় দাবি নিয়ে এসেছিলেন তাঁরা। আমি এগুলো মেনে নিইনি। তাই তাঁরা আমার গাড়ি অবরুদ্ধ করেছেন। আমি বলে দিয়েছি, আমি কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করব না।’

এর আগে ৩০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে নবীনবরণ অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগ নেতা ইলিয়াসের বিরুদ্ধে উপাচার্যকে উদ্দেশ করে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, ‘নবীনবরণ অনুষ্ঠানে ইলিয়াস যে বক্তব্য দিয়েছেন, এটা অত্যন্ত অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও আক্রমণাত্মক। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট বোঝা গেছে, তিনি উপাচার্যকে ইঙ্গিত করেই এই আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত