বন্ধ চিনিকলে নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি

শাহীন রহমান, পাবনা 
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২২, ০৭: ২৭

৪০০ কোটি টাকা ঋণের দায় নিয়ে ১৫ মাস ধরে বন্ধ পাবনা চিনিকল। এতে নষ্ট হওয়ার পথে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৮০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। আখচাষি, চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ও আখ চাষি ফেডারেশনের নানামুখী আন্দোলনের পরও চিনিকল চালুর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কলটি আদৌ চালু হবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন আখচাষিরা।

২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন পাবনা সুগার মিলসহ ছয়টি মিলে আখমাড়াই বন্ধ ঘোষণা করে চিঠি দেয়। ইতিমধ্যে পাবনা চিনিকল জোনে আখ চাষ তিন-চতুর্থাংশ কমে গেছে।

চিনিকল কর্তৃপক্ষ বলছে, আপাতত মাড়াই বন্ধ রাখা হয়েছে, মিলটি আবার চালু হতে পারে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মিলের ভেতরে গিয়ে গার্ড আর প্রশাসনিক কাজ চালু রাখতে এমডিসহ কয়েকজন কর্মচারী ছাড়া কারও দেখা পাওয়া যায়নি। চিনিকলের ভেতরে পড়ে আছে আখ পরিবহনের দুই শতাধিক ট্রলি। মাড়াইয়ের যন্ত্রপাতিগুলোও মরিচা ধরে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

চিনিকল-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আখমাড়াই প্ল্যান্টসহ চিনিকলে প্রায় ৮০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি রয়েছে। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় মাড়াই করা যন্ত্রের ডোঙ্গা, নাইফ, ক্রাশার, বয়লার হাউস, রুলার, ড্রায়ারসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে।

স্থানীয় আখচাষিরা বলেন, পাবনার ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া ইউনিয়নের পাকুড়িয়ায় ১৯৯২ সালে ২৭ ডিসেম্বর পাবনা সুগার মিলটি ৬০ একর জমির ওপর স্থাপিত হয়। এটি চালু করতে ১২৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়। মিলটি ১৯৯৭-৯৮ মাড়াই মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়। পরের বছর থেকেই বাণিজ্যিকভাবে মাড়াই মৌসুম চালু করে কারখানাটি। চিনিকল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর জেলার ৯ উপজেলায় ব্যাপকভাবে আখ চাষ শুরু হয়। তবে উৎপাদন শুরুর পর থেকেই লোকসান গুনতে থাকে চিনিকলটি। ফলে ২০২০ সালে শিল্প মন্ত্রণালয় চিনি আহরণের হার, আখের জমি, লোকসানের পরিমাণ এবং ব্যবস্থাপনার খরচ বিবেচনায় পাবনা চিনিকলসহ ছয়টি চিনিকলে আখমাড়াই না করার প্রস্তাব দেয়। এরপর থেকেই পাবনা চিনিকলে আখমাড়াই বন্ধ হয়ে যায়। এতে আখ নিয়ে ভোগান্তি শুরু হয় চাষিদের। বর্তমানে মিলটির প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। মিলটিতে স্থায়ী, অস্থায়ী ও মৌসুমিভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারী ছিলেন প্রায় ১ হাজার ২০০ জন। বিভিন্ন মিলে তাঁদের সংযুক্ত করা হচ্ছে।

স্থানীয় দাশুড়িয়া গ্রামের আখচাষি আজাহার আলী বলেন, বন্ধ ঘোষণার সময় চিনিকল কর্তৃপক্ষ তাদের উৎপাদিত আখ কাছের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল ও নাটোর চিনিকলে বিক্রি করা যাবে বলে জানায়। কিন্তু এক বছরেও সেই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়নি। ফলে আখ নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে চলতি মৌসুমে অনেক চাষি আখের জমিতে সবজি চাষ করেছেন। অন্যদিকে যাঁরা আখ চাষ করেছেন, তাঁরা আখ বিক্রি নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন।

পাবনা জেলা আখ চাষি কল্যাণ সমিতির সেক্রেটারি আনছার আলী ডিলু জানান, জেলার ৯ উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার ৩০০ জন আখচাষি রয়েছেন। চিনিকল চালু থাকা অবস্থায় তাঁরা প্রায় ৬ হাজার একর জমিতে আখ চাষ করতেন। মিল বন্ধ ঘোষণার পর থেকে অনেকে আখ চাষ বন্ধ করে দিয়েছেন। এরপর গত মৌসুমে প্রায় ১ হাজার ৫০০ একর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। কিন্তু এই আখ তাঁরা কোথায় বিক্রি করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন।

বাংলাদেশ চিনিকল আখ চাষি ফেডারেশনের মহাসচিব এবং পাবনা জেলা আখ চাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি শাহজাহান আলী ওরফে পেপে বাদশা বলেন, কৃষকদের স্বার্থে দেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল আখের উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য বন্ধ মিল চালু করা দরকার। এসব মিলের সঙ্গে জড়িত কৃষকেরা দেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন। এতে দেশীয় চিনি উৎপাদন বড় ধরনের সংকটে পড়বে। চিনির বাজার পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি।

এ বিষয়ে পাবনা চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফ উদ্দিন বলেন, চিনিকলটি এখনো পুরোপুরি বন্ধ করা হয়নি। আধুনিকায়নের মাধ্যমে এটি চালুর প্রক্রিয়া চলছে। তবে যত দিন পর্যন্ত চালু না হচ্ছে, তত দিন পাবনা জেলার আখচাষিদের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পাবনা চিনিকলের প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পুলিশের ভিন্ন বক্তব্যের পরও সালমা হত্যায় নিজ ভাষ্য়ে অনড় র‍্যাব

ফারুকীরা কীভাবে এই উপদেষ্টা পরিষদে আসে: সারজিস আলম

বাংলাদেশের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জন্য ডাক্তারের তদবিরের ঘোষণা

এই সরকারের সংবিধান সংশোধনের সুযোগ কি আছে, অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রশ্ন

বাংলাদেশ সিরিজের আগে ধাক্কা খেয়েই চলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত