নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার প্রভাব রেস্তোরাঁ ব্যবসায়

মেহেদী হাসান, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১৫: ১০

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর পৌর শহর বাজারে ৫০ বছর ধরে ডুঙ্গি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট চালাচ্ছেন উজ্জ্বল কুমার মোহন্ত। এর আয় দিয়েই চলে রেস্তোরাঁটির শ্রমিক, রাঁধুনিসহ ১৪ জনের সংসার। কিন্তু চাল, আটা, ভোজ্যতেলসহ খাদ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ায় লোকসানে পড়েছে তাঁর ব্যবসা। উজ্জ্বলের মতো ফুলবাড়ী উপজেলার রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন।

উজ্জ্বল কুমার মোহন্ত জানান, তাঁর রেস্তোরাঁয় ৫০ বছর ধরে সকাল ও বিকেলের নাশতার সঙ্গে ডাল ও ভাজি বিনা মূল্যে দেওয়া হয়েছে; কিন্তু এখন ডালের জন্য টাকা ক্রেতাদের আপত্তি ও ব্যবসা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে নিতে পারছেন না। ফলে বিনা মূল্যেই ডাল ও ভাজি দিতে হচ্ছে। এতে লাভের চেয়ে লোকসানের মুখে পড়েছেন তিনি। শুধু উজ্জ্বলের রেস্তোরাঁই নয়, উপজেলার শতাধিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি হোটেল ব্যবসায়ী বিপদে রয়েছেন। অনেকে বড় পুঁজি না পেয়ে ছোট পরিসরে কৌশলে রেস্তোরাঁ ব্যবসা চালাতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।

পৌর শহরের ননীগোপাল মোড়ের রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী খোকন পাল ও আসোয়াত আলী বলেন, ‘বাপ-দাদার আমল থেকে এ ব্যবসা করে আসছি কিন্তু; দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে হোটেল ব্যবরসায় জীবন-জীবিকার ছেদ পড়েছে। গ্রাহক কমে যাওয়ার পাশাপাশি হোটেল ব্যবসায় মন্দা অবস্থা চলছে। হঠাৎ করে খাদ্যসামগ্রীর দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।’

ব্যবসায়ীরা জানান, গত জানুয়ারিতে ৩৭ কেজি ওজনের আটার বস্তা ৯০০ থেকে ৯২৫ টাকা ছিল, এখন সেই বস্তা ২ হাজার ৫৫০ টাকা। ৯০ টাকা লিটারের ভোজ্যতেলের বোতল এখন ১৯০, ৮৮ টাকার পাম অয়েল ১৬০, ৭৫ টাকার চিনি ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে ৫৬ টাকা কেজির নাজিরশাইল চাল ৬৮, ৬ টাকার ডিম ১০-১২টাকা, ১২০ টাকার প্রতিমণ খড়ি ২৫০ টাকা, ৮৫০ টাকার গ্যাস সিলিন্ডার এখন এক হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় ভোক্তা পর্যায়েও হোটেলের খাবারের দাম বেড়েছে। ডিমভাজি ১৫ টাকা থেকে বেড়ে ২০, ১৫ টাকা ভাতের প্লেট এখন ২০, ৫ টাকার পরোটা ১০ টাকা, ৫ টাকার দুধ-চা এখন এলাকাভেদে ৭-১০ টাকা, ১০ টাকার ভাজি ১৫-২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ফুলবাড়ী শহরের রাজধানী হোটেলে সম্প্রতি খেতে আসা আবু সাঈদ, আরমান আলী ও আলী আকবর বলেন, আগে যে পরিমাণ ভাত-তরকারি দেওয়া হতো, এখন এর চেয়ে কম দেওয়া হচ্ছে। খাবারের দামও বেড়েছে। তাই এখন রেস্তোরাঁয় খেয়ে পোষায় না।

রেস্তোরাঁ-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জানুয়ারিতে হোটেল শ্রমিকের মজুরি ছিল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। এখন মজুরি দিতে হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। উপজেলার প্রতিটি রেস্তোরাঁতেই গ্রাহকসংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ কমেছে।

রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী শম্ভু প্রসাদ বলেন, খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় হোটেল চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বেশি পুঁজি খাটিয়ে লভ্যাংশ কমেছে। এতে পুঁজি হারিয়ে যেতে বসেছে।

ইতিমধ্যে অনেক রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে পুঁজি-সংকটে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত