মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের সহিংসতায় সমেলা বেগম (৫০) নামের এক নারী নিহত হন। ৫ জানুয়ারি উপজেলার বাচামারা ইউনিয়নের ২ নম্বর বাচামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই ইউপি সদস্যের সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্যে পড়ে ওই নারী নিহত হন।

ঘটনার পরদিন ৬ জানুয়ারি নিহত সমেলা বেগমের ছেলে ইলিয়াস হোসেন দৌলতপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় আইয়ান (৬৫), আব্দুস সালাম (৫০), লিয়াকত আলী শেখ (২৮), আরিফ শাহরিয়ারের (৩০) নাম উল্লেখ করে আরও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। মামলা করার ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। উল্টো মামলা তুলে নিতে তাঁদের চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের সদস্যদের।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বাচামারা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত সদস্য ওয়াজেদ আলী সরকারের কর্মী-সমর্থকেরা বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে সমেলা বেগমকে হত্যা করেছেন।

সমেলা বেগম ওই ওয়ার্ডের পরাজিত ইউপি সদস্য প্রার্থী সারোয়ার হোসেনের আপন খালা। সারোয়ার হোসেন বলেন, ওই দিন সংঘর্ষের সময় তিনি ধাওয়া খেয়ে ওই কেন্দ্র থেকে সরে গিয়েছিলেন। পরে তিনি জেনেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ওয়াজেদ আলী সরকারের সমর্থকেরা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তাঁর খালাকে হত্যা করেছেন।

মামলার বাদী ইলিয়াস হোসেন বলেন, সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও অজ্ঞাত কারণে ওয়াজেদ আলীর বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। মামলা করার পর ১৫ দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত একজন আসামিকেও গ্রেপ্তার করা হয়নি। উল্টো আসামিদের আত্মীয়স্বজন ও ওয়াজেদ আলীর সমর্থকেরা মামলা তুলে নিতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।

নির্বাচনের দিন দায়িত্বরত ২ নম্বর বাচামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকেরা কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে ব্যালট ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। আমি তৎক্ষণাৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় তাঁদের কেন্দ্র থেকে বাইরে বের করে দিই। বাইরে যাওয়ার পর তাঁদের সমর্থকদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। মারামারির মধ্যে পড়ে বৃদ্ধা নিহত হন।’

অভিযোগের বিষয়ে ওয়াজেদ আলী সরকার বলেন, নির্বাচনের দিন তিনি কেন্দ্রের বাইরে ছিলেন। কে বা কারা হামলা করেছে, সেটা তাঁর জানা নেই। পরে শুনেছেন এক ভোটার ভোট দিতে এসে মারা গেছেন।

মামলা তুলে নিতে ভয়ভীতি দেখানো প্রসঙ্গে ওয়াজেদ বলেন, তিনি বা তাঁর সমর্থক কেউ এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তাই মামলা তুলে নেওয়ার ব্যাপারে হুমকি দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাকারিয়া হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’

সমেলা বেগমের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিবালয় সার্কেল) তানিয়া সুলতানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ছাড়া মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হয়ে বলা যাবে না। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এখনো হাতে আসেনি। বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছি।’