Ajker Patrika

টুপি-পায়জামা-চাপকান

সন্জীদা খাতুন
টুপি-পায়জামা-চাপকান

শৈশব-কৈশোরে দুরন্ত ছিলেন সন্জীদা খাতুন। ঝোঁকের মাথায় অনেক কিছুই করতেন। একবার এক বান্ধবী পীর সাহেবের কাছে যাওয়া শুরু করল। পানিপড়া, তাবিজ ইত্যাদির সঙ্গে যোগাযোগ হলো তার। পীর সাহেবের কাছে গিয়ে সে এমনভাবে কথা বলত, যেন ওর মতো দুঃখী আর কেউ নেই। সন্জীদা খাতুন ভাবলেন, তিনিও পীর সাহেবের কাছে যাবেন। মায়ের শখ করে বানানো বোরকা পরে একদিন বান্ধবীর সঙ্গে চললেন পীর সাহেবের কাছে। বান্ধবীকে বললেন, ‘তোর পীর সাহেবকে বলব, আমার স্বামী আমাকে নেয় না। দেখি তিনি কী করেন।’

বান্ধবী আগেই এ কথা পীর সাহেবকে বলে রেখেছিল কি না, সেটা সন্জীদা খাতুন জানেন না। কিন্তু পীর সাহেবের কাছে পৌঁছানোর পর তিনি বললেন, ‘নেকাব তোলো।’ নেকাব তুলে ইনিয়ে-বিনিয়ে সন্জীদা খাতুন তাঁর বানিয়ে তোলা ‘দুঃখের কথা’ বললেন। জানালেন, স্বামী তাঁকে নেয় না। চোখ তুলে দেখেন পীর সাহেব হাসছেন। তারপর তিনি সন্জীদাকে বললেন, ‘ঠিক আছে, যাও। বিয়ের তাবিজ দিয়ে দেব।’

কাকতালীয়ভাবে এর কয়েক দিন পর একটা বিয়ের প্রস্তাবও এসেছিল সন্জীদা খাতুনের।

তখন বেশ টাউন সার্ভিস বাসে উঠতেন তিনি। একদিন শখ হলো টুপি-পায়জামা-চাপকান পরে তিনি আজিমপুরে বড়দিদির বাড়িতে যাবেন। তাঁর এই সাজপোশাক দেখে মা-ও সঙ্গ নিলেন। বাসের কাছে এসে ছেলেদের মতো এক লাফে বাসে উঠলেন। মা-ও উঠলেন। কন্ডাক্টর সন্জীদাকে মেয়ে বলে চিনতে পারল না। ছেলেই মনে করল। মায়ের সম্মানে বলল, ‘লেডিস!’ আর সন্জীদা খাতুনকে ক্রমেই পেছনের দিকে যেতে বলল। ছেলেরা তো পেছন দিকেই যায়। এদিকে মা রাগ করে বলেন, ‘এই দিকে সরে আয়!’ কন্ডাক্টর একটু অবাক হয়ে বারবার সন্জীদা খাতুনের দিকে আড়চোখে তাকাতে লাগল।
যা হোক, দ্রুত পৌঁছে গেলেন তাঁরা আজিমপুরে। কিন্তু ফেরার সময় বাস ফাঁকা থাকলেও মা তাঁকে আর বাসে চড়তে দেননি। একটা রিকশা ভাড়া করে ফিরলেন বাড়ি।

সূত্র: সন্জীদা খাতুন, অতীত দিনের স্মৃতি, পৃষ্ঠা ৬০-৬১

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত