শিবগঞ্জে আতঙ্কের নাম ‘আশরাফ চেয়ারম্যান’

মো. তারেক রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২৪, ১২: ২৩

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল হক হত্যা, মাদক, ছিনতাইসহ প্রায় দুই ডজন মামলার আসামি। এলাকাবাসীর কাছে ‘আতঙ্কের’ নাম আশরাফুল।

সম্প্রতি জেলা পরিষদ সদস্য ও নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম এবং একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল মতিন খুনের পর আবার আলোচনায় এসেছে আশরাফ ও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী।

পুলিশ জানিয়েছে, আশরাফুলকে ধরতে অভিযান চলছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আশরাফের স্ত্রী এবং বিএনপির এক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আশরাফুল উপজেলা বিএনপির সভাপতি থাকা অবস্থায় ২০০০ সালে প্রথম ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর আরও দুই দফা চেয়ারম্যান হন তিনি। বিএনপি নেতা হলেও এখন তাঁর সখ্য বেশি আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে। নিজের প্রভাব বিস্তারে জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলেন। গত তিন দশকে অনেক হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিলেন তিনি। তাঁর নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনীও আছে।

পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার জোড়া খুনসহ আশরাফুলের বিরুদ্ধে মোট মামলা ২২টি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকে জানান, নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পরিচিত। ৩ দশকের বেশি সময় ধরে এখানে রাজনৈতিক আধিপত্যের দ্বন্দ্বে খুনের ঘটনা ঘটেছে অনেক। এসবের নেতৃত্বে ছিলেন আশরাফুল হক। যাঁরা তাঁর বিরোধিতা করেছেন, আব্দুস সালামসহ তাঁদের সবাইকে লাশ হতে হয়েছে। তিনি কারাগারে থাকা অবস্থায় তাঁর লোকজন এসব হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

জানা গেছে, গত বছরের ১২ এপ্রিল খুন হন ইউপি সদস্য বিএনপি নেতা আলম হোসেন। পরাজিত ইউপি সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা আঙুর বাহিনী তাঁকে খুন করে বলে অভিযোগ ওঠে। আশরাফ চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন আলম। হত্যার প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে আশরাফ বাহিনী। গত বছরের ২৫ জুলাই আলম হত্যার আসামি দুরুল হোদাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর আওয়ামী লীগ নেতা সালামকে টার্গেট করে আশরাফ বাহিনী। গত ২৫ মার্চ তাঁর গাড়িতে ককটেল হামলা চালিয়ে হত্যাচেষ্টা করা হয়।

পুলিশ জানায়, আগের ২১ মামলার মধ্যে ১২টি বিস্ফোরক আইনের, দুটি হত্যা, তিনটি ছিনতাই, দুটি প্রতারণা, একটি মাদক ও
 আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপরাধের। দ্রুত বিচার আইনেও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আলী বলেন, ‘আশরাফ শুধু নয়ালাভাঙ্গার নয়, পুরো উপজেলার ত্রাস। সালাম ও মতিন হত্যায় সরাসরি জড়িত। খুন, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ এমন কোনো জঘন্য অপরাধ নেই, যার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। সঠিক বিচার না হওয়ার কারণে দিন দিন তাঁর অপরাধের সাম্রাজ্য বাড়ছে। ২০-২২টি মামলা থাকার পরেও তিনি দাপটের সঙ্গে এলাকায় ঘুরে বেড়ান।’
পুলিশ সুপার মো. ছাইদুল হাসান জানান, আশরাফুলের লোকজন সালাম ও মতিন হত্যায় জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী। সব তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। 

আশরাফের স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার ২
বৃহস্পতিবারের খুনের ঘটনায় আশরাফুল হকসহ ৫২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। শুক্রবার রাতে মামলাটি করেন নিহত আব্দুস সালামের স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম। এতে ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে আশরাফুলের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম আম্বিয়া এবং ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত