দেশে চার্চে নারী যাজক

মান্দি ডি কস্তা, ঢাকা
Thumbnail image

খ্রিষ্টধর্মের প্রোটেস্ট্যান্ট মতবাদের ইভানজেলিক্যাল চার্চগুলোতে প্রধান যাজক হতে পারেন নারী। তিনি সর্বোচ্চ পদেও যেতে পারেন। যদিও দেশে নারী যাজক তুলনামূলকভাবে কম। তবে দেশের চার্চে সর্বোচ্চ পদধারী নারী রেভারেন্ড মার্থা দাস প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চগুলোর সংগঠন ‘ন্যাশনাল খ্রিস্টিয়ান ফেলোশিপ অব বাংলাদেশ’-এরও সাধারণ সম্পাদক। এই সংগঠনের আওতায় দেশে রয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার চার্চ। আছে বেশ কিছু সংস্থাও।

রেভারেন্ড মার্থা দাস ১৯৯৫ সালে পাস্টর বা যাজক হন। ২০০৬ সালে প্রোটেস্ট্যান্ট যাজকদের সর্বোচ্চ পদ রেভারেন্ড পদবিও লাভ করেন তিনি। মার্থা দাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রোটেস্ট্যান্ট মতবাদের ইভানজেলিক্যাল চার্চে নারীদের পাস্টর হতে ধর্মে কোনো বাধা নেই। তারপরও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার কারণে কিছু চার্চ নারীদের পাস্টর হওয়ার ক্ষেত্রে এক ধরনের অলিখিত নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। এটা অন্যায় ও বৈষম্য। এ ক্ষেত্রে মতবাদগত কিছু সমস্যা থাকলেও এটা মূলত সামাজিক ও মানসিকতার সমস্যা। এখানে পুরুষতান্ত্রিক প্রাধান্য বিস্তারের কারণে অনেকেই একজন নারীকে ধর্মযাজক হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত নন।

মার্থা দাস জানান, দেশে নারী যাজক ১ শতাংশেরও কম। অথচ ৫০ বছর আগেও মিয়ানমারে প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চগুলোতে ৩০ শতাংশ নারী পাস্টর ছিল।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের চার্চগুলোতেও নারী যাজকের সংখ্যা বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি। খ্রিষ্টধর্মের অর্থোডক্স ও ক্যাথলিক মতবাদের চার্চগুলোতেও নারীর যাজক হওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকা উচিত নয় বলে তিনি মনে করেন।

রেভারেন্ড গ্লোরিয়া নিহার হালদারবাংলাদেশ অ্যাসেম্বলি অব গড ধারার চার্চে নারীরা কিছুটা এগিয়ে। এই চার্চগুলোর মিনিস্ট্রি ম্যানেজার মিতালি হালদার জানান, তাঁদের চার্চগুলোতে ৩৮ প্রচারক, ১৭ জন স্বীকৃত নারী যাজক, কাজের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অর্ডিনেশন বা উপাধিপ্রাপ্ত তিনজন নারী যাজক আছেন। এ ছাড়া তাঁদের ৫৭টি স্কুলের মধ্যে ৪৭টির প্রধান শিক্ষকও নারীরা।

খাগড়াছড়ি সদরে প্রেয়ার ইউনাইট অ্যাসেম্বলি অব গড চার্চের যাজক রেবি হালদার বলেন, ‘একজন যাজক হিসেবে আমার চার্চের নারী-পুরুষ সবাই আমাকে সম্মান করে। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের বৈষম্যের শিকার হইনি।’

এসব নারীকে দেখে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে আশা করি। অন্যান্য সম্প্রদায়ের জন্যও এটি অনুকরণীয়।

রাশেদা কে চৌধূরী,সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও শিক্ষাবিদ

ঢাকার মিরপুরে গেৎশিমানী ব্যাপটিস্ট চার্চের প্রধান যাজক রেভারেন্ড জুদিথ মিলিতা দাস জানান, অনেকেই নারীদের যাজক হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত নন। এ কারণে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা জানান। তাঁদের চার্চগুলো বাংলাদেশ ব্যাপটিস্ট চার্চ ফেলোশিপ নামে পরিচিত। এই সংগঠনের বোর্ড অব মিশন অ্যান্ড ইভানজিলিজমের ম্যানেজার নব কুমার দাস জানান, তাঁদের সক্রিয় ৩৩১টি চার্চের মধ্যে মিরপুর ছাড়াও সাতক্ষীরায় দুজন এবং যশোর, টাঙ্গাইল ও জামালপুরে একজন করে নারী যাজক আছেন। সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্টও নারী।

খুলনার ফুলবাড়িতে নিউ লাইফ এজি চার্চের প্রধান ধর্মযাজক হিসেবে ২০০৬ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন রেভারেন্ড গ্লোরিয়া নিহার হালদার। তিনি বলেন, ‘এখনো কোনো সমস্যার সম্মুখীন হইনি। এমনকি ক্যাথলিক চার্চের অনেক অনুষ্ঠানেও আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।’

পাস্টর রেবি হালদারদিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে শ্যামপুর চার্চ অব নাজরানি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান যাজক রেভারেন্ড নমিতা হালদার বলেন, ‘আমাদের চার্চটি মূলত সাঁওতালদের। এখানকার নারী-পুরুষ সবাই আমাকে ভালোভাবে নিয়েছেন। তবে অনেক পুরুষ সহকর্মী আমাদের এই দায়িত্ব পালনকে ভালোভাবে দেখেন না। আমরা এগিয়ে যাই, সেটা তারা চান না।’

নারী যাজক প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধূরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এসব নারীকে দেখে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে আশা করি। অন্যান্য সম্প্রদায়ের জন্যও এটি অনুকরণীয়।’

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নারী যাজকেরা সমাজে নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।’  

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত