Ajker Patrika

চাইলেই মেলে নিষিদ্ধ জাল

সাইফুল আরিফ জুয়েল, মোহনগঞ্জ
আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২২, ১২: ৫৭
চাইলেই মেলে নিষিদ্ধ জাল

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল। উপজেলা শহরের জালপট্টি বাজারের প্রায় সব দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে বিক্রয় নিষিদ্ধ এই কারেন্ট জাল। এখান থেকেই খালিয়াজুরী, পাশের জেলা সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা, মধ্যনগর, জামালগঞ্জ ও তাহেরপুর উপজেলায় নিষিদ্ধ এই জাল সরবরাহ করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া রয়েছে।

অন্যান্য সংগঠনের মতো জাল বিক্রেতাদের রয়েছে কমিটি। কমিটির দুজনের দায়িত্ব রয়েছে প্রশাসনিক সমস্যা মোকাবিলা করা। জেলেদের অভিযোগ, প্রশাসন শহরের মার্কেটে পাইকারি বিক্রেতাদের না ধরে শুধু গরিব জেলেদের জাল পুড়িয়ে দায় শেষ করে। এতে পেটের দায়ে ঋণ করে জাল কিনে মাছ বিক্রি করে পরিবার- পরিজন চালানো জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। আর মূল বিক্রেতারা রয়ে যান আড়ালে।

উপজেলা প্রশাসন বলছে, দোকানগুলোয় কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছে। দোকানে মূলত নিষিদ্ধ জাল রাখা হয় না। অন্য কোথাও লুকানো থাকে। মোহনগঞ্জ থেকেই হাওরাঞ্চলে এসব নিষিদ্ধ জাল সরবরাহ হয়। মৎস্য অফিস ও প্রশাসনকে সবার তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। এখন থেকে কৌশল নিয়ে হাতেনাতে ধরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গেছে, মোহনগঞ্জ বাজারে ১০ পায়া (জালে ফাঁস) কারেন্ট জাল ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। ১৫-১৬ পায়ার জাল বিক্রি হয় ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে। আর ১৭-১৮, ২০-২২ ও ২৪ পায়ার জাল বিক্রি হয় ১ হাজার ৭০০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া চায়না জাল, মশারি নেটসহ নানা ধরনের জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। এর মধ্যে মশারি নেট দিয়ে একেবারে পোনা মাছও ধরা সম্ভব বলে জানা গেছে। পোনা মাছ ধরতে এই জাল বেশি ব্যবহার করা হয়।

মোহনগঞ্জ শহর থেকে পাইকারি দরে কারেন্ট জাল নিয়ে ডিঙাপোতা হাওরাঞ্চলে জেলেদের কাছে খুচরায় বিক্রি করেন এমন একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মোহনগঞ্জের জালপট্টি থেকেই জেলেদের চাহিদা অনুযায়ী কারেন্ট জাল, মশারি জালসহ অন্যান্য জাল কিনে নিয়ে বিক্রি করি। প্রতিবছর শতাধিক কেজি জাল বিক্রি করি স্থানীয় জেলেদের কাছে। এ ছাড়া অনেক জেলেও শহরের ওইসব দোকান থেকে কেনেন। বর্ষা মৌসুমে হাওর এলাকার মানুষের তেমন কাজ থাকে না।

তাই এসব এলাকার কয়েক হাজার জেলে মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের চাহিদা অনুযায়ীই আমি জাল সরবরাহ করি। এর মধ্যে মশারি জাল মূলত একেবারে ছোট মাছ ধরার জন্য ব্যবহার হয়। এ জাল দিয়ে মাছের ডিমও তুলে আনা যায়।’

ডিঙাপোতা হাওরের জেলে মজিবুর রহমান, রফিকুল, রবিনসহ অনেক বলেন, গরিব জেলেরা সুদে টাকা এনে জাল কেনেন। মাছ ধরে বিক্রি করে পরিবার চালান। কেউ কেউ গরু বিক্রি করে জাল কেনেন। কিন্তু প্রশাসন মাঝেমধ্যে এই গরিব জেলেদের অবলম্বন পুড়িয়ে দেয়। এসব জাল তো মোহনগঞ্জ বাজার থেকেই কেনা হয়।

কিন্তু বাজারে প্রকাশ্যে যাঁরা এসব জাল বিক্রি করছেন, তাঁদের গুদামে হানা দেওয়া হয় না। পাইকারি বাজার বন্ধ হলে তো জেলেরা কিনতে পারবেন না। আগে পাইকারি মার্কেট বন্ধ করার দাবি তাঁদের।

মোহনগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান চয়ন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মোহনগঞ্জ হলো হাওরাঞ্চলের অবৈধ জালের একমাত্র মার্কেট। এখান থেকে মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুড়ি, পাশের জেলা সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা, মধ্যনগর, জামালপুর, তাহেরপুরসহ পুরো হাওরাঞ্চলের অবৈধ কারেন্ট জাল, মশারি জাল, চায়না জালসহ সব রকমের জাল বিক্রি হয়। এসব অবৈধ জালের ব্যবহারের কারণে হাওরে এখন মাছের সংকট।

এ পর্যন্ত প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হওয়া প্রতিটি সভা-সেমিনারে বলেছি, শহরেই অবৈধ জালের মার্কেট। এগুলোয় অভিযান চালান। মার্কেট বন্ধ হলেই অবৈধ জালের ব্যবহার বন্ধ হবে। গরিব জেলেদের মারবেন না।

কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করছে না।’ তিনি আরও বলেন, অনেক সময় জালের মার্কেটে লোক দেখানো অভিযান হয়। কিন্তু কিছুই পাওয়া যায় না। কারণ ঢাকঢোল পিটিয়ে অভিযানে গেলে তো সবাই লুকিয়ে ফেলে। এসব ধরতে হলে সোর্স নিয়োগ করে পরে অভিযান চালাতে হবে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তানভীর আহম্মেদ বলেন, ‘মৎস্য সপ্তাহে হাওরে অভিযান চালিয়ে অনেক ধরনের অবৈধ জাল জব্দ করেছি। পাশাপাশি শহরের জালের মার্কেটেও অভিযান চালিয়েছি। ওরা অনেক চালাক। উপস্থিতি টের পেয়েই একে অন্যকে ইশারা দিয়ে লুকিয়ে পড়ে। গুদাম কোথায় জানা যায় না।

এবার অভিযানে একটা গুদাম পেলেও এর মালিক পাওয়া যায়নি। ইউএনওসহ আমরা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ভেতর থেকে টেনে এক বস্তা জাল বের করে এনে পুড়িয়েছি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছাব্বির আহম্মেদ আকুঞ্জি বলেন, ‘হাওরের পাশাপাশি শহরের দোকানগুলোয় অভিযান চালিয়েছি। দোকানে মূলত অবৈধ জালগুলো রাখে না। অন্য কোথাও লুকানো থাকে। দোকানগুলোই আসলে বন্ধ করতে হবে। এখান থেকেই হাওরাঞ্চলে জাল সরবরাহ হয় শুনেছি। সবার তথ্য সংগ্রহ করতে বলেছি। এখন থেকে কৌশল নিয়ে হাতেনাতে ধরব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আমিনুল ইসলাম নন, শিক্ষা উপদেষ্টা হচ্ছেন অধ্যাপক আবরার

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোঁড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

উপদেষ্টা হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

বসুন্ধরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ২ বিদেশি নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত