Ajker Patrika

গৃহস্থালীর বর্জ্যে নদ দূষণ

মেহেরাব্বিন সানভী, চুয়াডাঙ্গা
আপডেট : ১৭ মে ২০২২, ১৫: ১৭
গৃহস্থালীর বর্জ্যে নদ দূষণ

চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের ময়লা-আবর্জনা আর ড্রেনের নোংরা পানিতে দূষিত হয়ে পড়ছে শহর সংলগ্ন মাথাভাঙ্গা নদী। এমনকি শহরের অধিকাংশ বাসা-বাড়ির পয়োনিষ্কাশনের পাইপগুলো ড্রেনের সঙ্গে সংযুক্ত থাকায়, সে গৃহস্থালির ময়লা-আবর্জনাও মিশে যাচ্ছে নদীতে। প্রতিনিয়ত ময়লা-আবর্জনা ফেলায় দূষিত হওয়ার পাশাপাশি নাব্যতা হারিয়ে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে নদীটি।

উপজেলার পরিবেশবাদীরা বলছেন, নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। দূষিত পানিতে গোসল করলে শরীরে দেখা দিচ্ছে চুলকানিসহ নানান চর্মরোগ।

এলাকার সচেতন বাসিন্দাদের অভিযোগ, পৌর এলাকার সব ড্রেনের মুখ গিয়ে মাথাভাঙ্গা নদীতে মেশায় নদীর পানি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মাথাভাঙ্গার তীর ও পানিতে আবর্জনা ফেলা বন্ধ করেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। বারবার আপত্তি ও প্রতিবাদ জানিয়েও মেলেনি সমাধান।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাথাভাঙ্গা নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তসীমান্ত নদী। এটি কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। এর দৈর্ঘ্য ১২১ কিলোমিটার। নদীটির উৎপত্তি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জলাঙ্গী উৎস থেকে ১৬ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে পদ্মা নদী থেকে। চুয়াডাঙ্গা পৌর কর্তৃপক্ষ প্রায় ৩০ বছর আগে ড্রেনেজ ব্যবস্থা চালু করে। সেই থেকে পৌর এলাকার নোংরা পানি ড্রেন দিয়ে ফেলা হচ্ছে এ নদীতে।

‘মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলন’ এর আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সী জানান, সম্প্রতি নদীটি নাব্যতা হারিয়ে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। পানির প্রবাহও আগের মতো নেই। এরপরও প্রতিদিন পৌর শহরের হাজার হাজার টন নোংরা পানি নদীতে ফেলা হচ্ছে। ইদানীং নদীতে গোসল করলে শরীর চুলকায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘শহরের ড্রেনের ভেতর দিয়ে মরা মুরগি, আবর্জনা, পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল নদীতে গিয়ে পড়ছে। ময়লা আবর্জনা ও শহরের বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে নদীর পাড়ে। এ কারণেই পানি দিন দিন দূষিত হয়ে উঠছে। নোংরা পানি শোধন করে যদি নদীতে ফেলার দাবি জানাচ্ছি।’

শহরের মালো পাড়ার বাসিন্দা গোকুল রায় বলেন, ‘আগে আমরা মাঝেমধ্যেই মাথাভাঙ্গা নদীতে গোসল করতাম। এখন গোসল করলে শরীর চুলকায়, তাই নদীতে গোসল করা বন্ধ করে দিয়েছি। আগে নদীর পানি ভালো ছিল, এখন পানিতে ময়লা-আবর্জনা ভেসে বেড়ায়।’

পুলিশ পার্ক লেনের বাসিন্দা সুলতান আলম বলেন, ‘ছোটবেলায় এই নদীতে কত গোসল করেছি। তখন পানি ছিল স্বচ্ছ ও পরিষ্কার। বর্তমানে নদীর পানি কালচে ও দুর্গন্ধযুক্ত। রোগের ভয়ে তেমন কেউই পানিতে নামে না।’

ওই এলাকার অপর এক বাসিন্দা হাবিবুর রহমান জানান, ‘কয়েক বছর আগে নদীর পানির একেবারেই স্বচ্ছ ছিল। নদীর পাশে বসবাস করা পরিবারগুলো নদী থেকে পানি নিয়ে কাজে লাগাত। এখন নদীর পানির যে অবস্থা তাতে পানিবাহিত রোগ হওয়ার শঙ্কা হওয়াটা স্বাভাবিক। রোগ-বালাইয়ের আশঙ্কায় পানি সংগ্রহ করা তো দূরের কথা মানুষ এখন গোসলই করে না।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ফাতেহ আকরাম বলেন, ‘নদীর পানিতে ড্রেনের ময়লা পানি মিশলে নদীর পানির দূষিত হয় এটা সবাই বোঝে। দূষিত পানি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করলে বা ওই পানিতে গোসল করলে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে। শিগগিরই নদীর পানিতে নোংরা পানি ও আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা উচিত।’

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গির আলম মালিকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিষয়টি খেয়াল করেছি। আসলে পৌরসভা নিজস্ব অর্থায়নে চলে। বড় প্রকল্পের বরাদ্দ দিয়ে বড় বড় উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়ে থাকে। আমরা সরকারের কাছে বিষয়টি নিয়ে লিখেছি। আর আপাতত বড় বড় ড্রেনগুলো থেকে যেন বড় ময়লা নদীর পানিতে না পড়ে, সে জন্য ড্রেনগুলোর মুখে ছাঁকনি দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিগগিরই সে কাজে হাত দেওয়া হবে। আর বড় বাজারের ব্যবসায়ীদের নোটিশ করা হয়েছে, যাতে বাজারের ময়লা-আবর্জনা নদীর পানিতে না ফেলেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আমিনুল ইসলাম নন, শিক্ষা উপদেষ্টা হচ্ছেন অধ্যাপক আবরার

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোঁড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

উপদেষ্টা হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

বসুন্ধরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ২ বিদেশি নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত