বাণিজ্যমন্ত্রীকে ধরা, না-ধরা

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮: ৩০

ব্রিকস সম্মেলনে যোগদান-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কিছু মৌসুমি সিন্ডিকেট বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে জনগণের পকেট থেকে অনেক টাকা নিয়ে যায়। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। এর কারণ কী?  

উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমি বাণিজ্যমন্ত্রীকে ‘‘ধরব’’।’ এই সংবাদ সম্মেলন সরাসরি সব ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে এবং পরদিন দেশের সব সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। মানুষ আশা করছে, যারা সিন্ডিকেট করে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়, তাদের বিরুদ্ধে সরকার শক্ত অবস্থান নেবে এবং প্রধানমন্ত্রী নিজে উদ্যোগী হয়ে এ বিষয়ে কঠোর নজরদারির কথা বাণিজ্যমন্ত্রীকে বলবেন।  

কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পরদিন বুধবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘সংবাদ সম্মেলনের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দুই ঘণ্টা ছিলাম, আমেরিকান চেম্বার্সের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। কিন্তু এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি, উনিও জিজ্ঞেস করেননি।’

প্রধানমন্ত্রী কি তাহলে বাণিজ্যমন্ত্রীকে ‘ধরা’র বিষয়টি ভুলে গেছেন? নাকি বাণিজ্যমন্ত্রীকে ধরার কথাটি তিনি বলেছিলেন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে, ওটা কোনো সিরিয়াস কথা ছিল না। অথচ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কারসাজি করে বাড়ানোর বিষয়টি মোটেও কোনো হালকা বা মামুলি বিষয় নয়।  

টিপু মুনশি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন, কী মিন (বোঝাতে) করেছেন, সেটা তিনি ভালো জানেন। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না। বাজারে সিন্ডিকেট আছে, ভাঙা হবে বা হবে না—এ ধরনের কোনো কথা আমি কোথাও বলিনি।’

অথচ জাতীয় সংসদে ২৫ জুন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও বাজার সিন্ডিকেট নিয়ে তোপের মুখে পড়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান এবং জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী ও শামীম হায়দার পাটোয়ারীও মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন।  

মন্ত্রী সেদিন সংসদে বলেছিলেন, ‘চাইলে জেল-জরিমানাসহ বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। এটা ঠিক যে, বড় গ্রুপগুলো একসঙ্গে অনেক বেশি ব্যবসা করে। আমাদের লক্ষ রাখা দরকার—আমরা জেলে ভরলাম, জরিমানা করলাম—সেটা হয়তো করা সম্ভব। কিন্তু তাতে হঠাৎ করে যে ক্রাইসিসটা তৈরি হবে, সেটা সইতে তো আমাদের কষ্ট হবে। এ জন্য আমরা আলোচনার মাধ্যমে নিয়মের মধ্যে থেকে চেষ্টা করি।’

কিন্তু নিয়মের মধ্যে থেকে দ্রব্যমূল্য কমানোর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো চেষ্টা দেশের মানুষের কাছে যেমন দৃশ্যমান হয়নি, তেমনি বাজারেও এর কোনো প্রভাব লক্ষ করা যায়নি। বাজার সিন্ডিকেট যে আছে, তা নিয়ে কারও মধ্যে কোনো সংশয় নেই। বরং মানুষের মনে প্রশ্ন, বাজার সিন্ডিকেটের হাত কি সরকারের হাতের চেয়েও লম্বা?

উৎপাদনে সমস্যা নেই, সরবরাহে ঘাটতি নেই। তাহলে কেন জিনিসপত্রের দাম দফায় দফায় বাড়ে? সব মানুষের আয় তো আর নিয়মিত বাড়ে না, কিন্তু জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে বিরতিহীন। এই নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থা চলতে থাকলে তো সাধারণ মানুষ সরকারকেই ধরবে। ভোটের আগে এটা মাথায় রাখতে হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত