বিষাক্ত বর্জ্যে হালদা দূষণ

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ মে ২০২২, ১২: ৩৪
Thumbnail image

চট্টগ্রাম বন্দর নগরী ও তৎসংলগ্ন আবাসিক এলাকার বিষাক্ত বর্জ্য দূষণের মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলেছে দক্ষিণ এশিয়ায় কার্পজাতীয় মাছের অন্যতম প্রজননকেন্দ্র চট্টগ্রামের হালদা নদীকে। হাটহাজারী উপজেলার কাটাখালী ও খন্দকিয়াসহ আরও কয়েকটি খালের বিষাক্ত বর্জ্য প্রতিদিন এসে পড়ছে এই নদীতে।

জানা গেছে, হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট ওয়াপদা কলোনি এলাকায় কাটাখালী হয়ে বন্দর নগরী ও তৎসংলগ্ন আবাসিক এলাকার বিষাক্ত বর্জ্য হালদায় পড়ছে। এ বর্জ্য মা মাছ ও জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকা হুমকি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ক্ষোভ প্রকাশ করে সংবাদকর্মী ও হালদা রক্ষা কমিটির সদস্য আমিন মুন্না জানান, এই খাল (কাটাখালী খাল) দিয়ে হালদা নদী দূষণ আগেও হয়েছে। কিন্তু এমন দৃশ্য অতীতে কখনো দেখেনি এই জনপদের মানুষ। যে খাল ছিল এই জনপদের মানুষের মাছ আর চাষের পানির প্রধান উৎস; তা আজ এমন কুৎসিত—ভাবাই যায় না। শুধু হালদা নয়, এই এলাকার জীববৈচিত্র্য ও মানবগোষ্ঠী বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে।

হালদা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষাক্ত বর্জ্য মা মাছসহ জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য প্রতিকূল। দূষণের ফলে নদীতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়; বাড়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড। এ পরিস্থিতিতে মা মাছসহ জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকা দুষ্কর। পাশাপাশি দূষণে হালদায় মাছের যে প্রাকৃতিক পরিবেশ, তা-ও নষ্ট হচ্ছে।

হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং হালদা বিশেষজ্ঞ মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, মা মাছের পেটে থাকা ডিম অনেক আগেই পরিপূর্ণ বা পরিপক্বতা লাভ করেছে। চলতি মাসের শেষদিকে অমাবস্যার জো’তে ডিম ছাড়তে পারে। তাই নদীকে অবশ্যই বন্দর নগরী ও তৎসংলগ্ন আবাসিক এলাকার বিষাক্ত বর্জ্যের ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে হবে। অন্যথায় হুমকির মুখে পড়বে হালদার মা মাছ ও জীববৈচিত্র্য।

তা ছাড়া প্রতিনিয়তই দূষণের মাত্রা বাড়ছে। এখনই ব্যবস্থা নেওয়া না গেলে হালদার পরিণতি হবে ভয়াবহ। হালদার সঙ্গে যুক্ত বিশেষ করে কাটাখালী ও খন্দকিয়াসহ আরও কয়েকটি খালের বিষাক্ত বর্জ্য এসে পড়ছে নদীতে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ‘অনন্যা’ আবাসিক ও তৎসংলগ্ন আবাসিক এলাকার বর্জ্য প্রকল্পের মূল নালা হয়ে কুয়াইশ, কৃষ্ণ ও খন্দকিয়া খাল হয়ে হালদায় পড়ছে বলে ওই বিশেষজ্ঞ মনে করেন।

এ ব্যাপারে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহিদুল আলম বলেন, ‘বর্জ্য হালদাকে দূষিত করছে বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়েছে। কীভাবে বর্জ্যগুলো আসছে এবং কী করলে তা নির্মূল করা যায়—এ নিয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে কিছুদিনের মধ্যে আমরা কর্তৃপক্ষকে জানাব।’

প্রসঙ্গত, হাটহাজারী-রাউজান-ফটিকছড়ি উপজেলা সীমানাঘেঁষে বয়ে যাওয়া হালদা নদীতে প্রতিবছর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠে কার্পজাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়ে। এরপর হালদাপাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা তা সংগ্রহ করেন। হ্যাচারির চেয়ে হালদার পোনা দ্রুত বর্ধনশীল বলে এর কদর সারা দেশে। সংগ্রহকারীরা ডিম থেকে রেণু ফুটিয়ে বিক্রি করেন। রেণুর আয় দিয়ে পুরো বছর জীবিকা নির্বাহ করেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত