ছয় বছর যান চলাচল বন্ধ

নুরুল আমীন রবীন, শরীয়তপুর
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২২, ০৬: ৪৬
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ৫৬

ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় ভাষাসৈনিক ডা. গোলাম মাওলা সেতুতে ছয় বছর ধরে যান চলাচল বন্ধ। বিকল্প সড়কে সদর উপজেলার প্রেমতলা হয়ে অতিরিক্ত ১৬ কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করছে যানবাহন। এতে দুর্ভোগে পড়েছে নড়িয়া, জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে পণ্য পরিবহন করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার সঙ্গে সড়কপথে নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার যোগাযোগ সহজ করতে ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে কীর্তিনাশা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয় ভাষাসৈনিক ডা. গোলাম মাওলা সেতু। নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার অন্তত ২৫টি বাজারের পণ্য ঢাকায় নেওয়া হয়। ২০১৫ সালে সেতুর পূর্ব প্রান্তের পিলার আর সংযোগ সড়কের মাটি সরে যাওয়ায় সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এতে বন্ধ হয় সব ধরনের যান চলাচল। হেঁটে পারাপারের জন্য মূল সেতুর সঙ্গে একটি ছোট বেইলি সেতু স্থাপন করা হয়। দুর্ঘটনা এড়াতে ও ভারী যান চলাচল বন্ধ করতে সেতুর দুই প্রান্তে লোহার ব্যারিকেড বসানো হয়।

দুর্ভোগ লাঘবে ঝুঁকিপূর্ণ ওই সেতুর পাশেই নতুন একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ১৪৫ মিটার দৈর্ঘ্যের ওই সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাভানা কনস্ট্রাকশনকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০১৯ সালের জুনে কাজের মেয়াদ শেষ হলেও এক-চতুর্থাংশ কাজও এগোয়নি। পরে কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়েও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত চার পিয়ারের মধ্যে দুটি এবং অ্যাবাটমেন্ট ওয়াল দুটির মধ্যে একটির নির্মাণকাজ শেষ করা হয়। মেয়াদ বাড়িয়েও কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে এলজিইডি।

আগের নকশা বাতিল করে পরে বিকল্প উপায়ে মূল সেতুর সঙ্গে উড়ালসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে নতুন নকশায় ভাষাসৈনিক ডা. গোলাম মাওলা উড়ালসেতুর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ ২৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে উড়ালসেতুটি নির্মাণ করছে। চুক্তি অনুযায়ী সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে।

নড়িয়া বাজারের ব্যবসায়ী মিলন ফকির বলেন, ‘সেতুতে যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় বেচাবিক্রি কমে গেছে। পণ্য পরিবহনে সমস্যায় মধ্যে রয়েছি।’

নড়িয়া উপজেলার বাসিন্দা হারিস মাদবর বলেন, ‘বাড়ির নির্মাণকাজের জন্য নদীর ওপার থেকে ইট আনতে ১৫ কিলোমিটার ঘুরে আসতে হচ্ছে। এতে পরিবহন খরচ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।’

নড়িয়া উপজেলার এনামুল কবির বলেন, ‘ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে সেতুর এমন দশা। সেতু নির্মাণে এবার ঠিকাদার যাতে কোনো গাফিলতি করতে না পারেন সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি রাখতে হবে।’

নড়িয়া উপজেলা প্রকৌশলী শাহাবউদ্দীন খান বলেন, ‘সেতু নির্মাণে অনেক সময় ব্যয় হয়েছে। চিঠি দেওয়ার পরও নির্মাণকাজে দেরি হওয়ায় ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হয়। নতুন নকশায় সেতু নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। মূল সেতুর সঙ্গে দুই প্রান্তে ভায়া ডাক নির্মাণ করে উড়ালসেতু করা হচ্ছে। এতে নড়িয়া শহরের মূল বাজার রক্ষা পাবে। এবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

সাংসদ ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, ‘সেতুর জন্য এলাকাবাসী চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। নানান জটিলতায় নতুন সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করেও শেষ করা যায়নি। এবার যথাসময়ে নির্মাণকাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত