তীব্র তাপপ্রবাহ, পর্যটক কমছে কুয়াকাটায়

খান রফিক, বরিশাল
Thumbnail image

ঈদুল ফিতরের পর চলে গেল পয়লা বৈশাখ। কিন্তু দীর্ঘ এ ছুটিতে কাঙ্ক্ষিত পর্যটক আসেনি পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায়। স্থানীয় ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তারা বলেছেন, অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহের কারণে এবার পর্যটক কমেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কুয়াকাটায় যে তাপমাত্রা বয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে নতুন লক্ষণ (দুর্যোগ) দেখা দিতে পারে। 

জানা গেছে, গত সোমবার কুয়াকাটায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়ায় সেখানে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা সাগরকন্যা কুয়াকাটায় এতটা ভয়াবহ তাপমাত্রায় শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, এ পর্যটন এলাকার উন্নয়ন অপরিকল্পিতভাবে হওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। 

গত রোববার সরেজমিনে কুয়াকাটা সি বিচ ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে তাপমাত্রা অত্যধিক। বেলা গড়াতেই বিচ গরমে যেন ফুটছে। তা উপেক্ষা করেও ঈদ আর নববর্ষের ছুটিতে পর্যটক এলেও বেলা ১১টার মধ্যেই প্রচণ্ড তাপে হাঁসফাঁস করতে দেখা গেছে মানুষকে। আসমা আক্তার নামে এক গৃহিণী বলেন, তাঁর সাড়ে ৫ বছরের শিশু সন্তানকে বিচে এনে ভয় পেয়েছেন। বেলা ১১টার পর থেকে সাগরে ছিল না যেমন ঢেউ, তেমনি ছিল না বাতাস। তার ওপর তীব্র গরমে দর্শনার্থীদের মাঝে অস্বস্তি দেখা দেয়। একটু স্বস্তির জন্য গাছের নিচে ছায়া নিতে চেষ্টা করেও বিচের আশপাশে গাছপালা দেখা যায়নি। 

কুয়াকাটার লতা চাপালি ইউপির তাজপাড়া গ্রামের মো. শাহিন ২৭ বছর ধরে সাগরে মাছ ধরেন। তিনি বলেন, প্রতিবছর এত তাপ থাকে না। চৈত্র-বৈশাখ মাসে দক্ষিণ কিংবা পূর্বে বাতাস হওয়ার কথা। ঋতু পরিবর্তনের কারণে কুয়াকাটায় বসবাস কঠিন হয়ে পড়ছে।

সেখানকার ভ্যানচালক আফেজ মিয়া বলেন, কদিন আগে পুরো বরিশালে এত ঝড়বৃষ্টি হলো, কিন্তু তাঁদের এলাকায় এখনো বৃষ্টি হয়নি। গত বছর এত গরম পড়েনি। হোটেল ড্রিম প্যালেসের ম্যানেজার মো. হাবিব বলেন, ‘বরিশালের সর্বত্র বৃষ্টি হলেও কুয়াকাটায় হয়নি। যে কারণে ঈদ আর নববর্ষে পর্যটক কমেছে। যারা এসেছিল, তারাও হোটেলে বসেই সময় কাটিয়েছে। গত বছর ঈদে এ সময় বৃষ্টি হয়েছিল।’ 

জানতে চাইলে খেপুপাড়া আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ প্রকৌশলী আ. জব্বার শরীফ বলেন, ‘কুয়াকাটায় তাপমাত্রা আগের চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত। এখনই পর্যটকদের লাইট জামাকাপড় পড়ে থাকতে হবে। লং প্রসেসে তাদের বলা ছিল যে কুয়াকাটায় তাপমাত্রা বাড়বে।

বরিশালের আশপাশে বৃষ্টি হলেও কুয়াকাটায় বৃষ্টি নেই। এটা অ্যালার্মিং বিষয়। আগামী এক সপ্তাহে বৃষ্টি না এলে অন্য সিম্পটম দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে নিম্নচাপ কিংবা ঘূর্ণিঝড় হতে পারে।’ কুয়াকাটায় তাপমাত্রা এতটা বৃদ্ধি পাওয়া প্রসঙ্গে আ. জব্বার বলেন, এখানকার গাছপালা মরে যাচ্ছে। জনসচেতনতার অভাবে আবহাওয়ার অবস্থা এমনটা দাঁড়িয়েছে। 

কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, গরমে পর্যটক এসে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন। যে কারণে মানুষ এসে টিকতে পারছেন না। সাগরের পাড়ে এসে মানুষ উত্তাপে টিকতে পারছে না। লবণাক্ত পানিতে শরীর শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে। বেড়িবাঁধে গাছপালা যা ছিল, বন্যায় ধ্বংস করছে। 

কুয়াকাটা নেক্সট সিভিলাইজেশন এর উদ্যোক্তা হাসনুল ইকবাল বলেন, গরমে মনে হচ্ছে বড় ধরনের নিম্নচাপ হতে পরে। পর্যটন এলাকায় গাছপালা কমে গেছে। প্রাকৃতিক এবং মনুষ্য কারণে কুয়াকাটা ন্যাশনাল পার্কের ঝাউবন, ফয়েজ মিয়ার নারিকেলবাগান উজাড় হয়ে গেছে। কিন্তু নতুন বেড়িবাঁধে পাথর দেখা দিয়েছে, গাছ লাগাবে কীভাবে। তা ছাড়া অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা পাকা হোটেল, মোটেল, বিনোদনকেন্দ্র গড়ে ওঠায় সেসব স্থানের গাছ কাটা হচ্ছে। 

এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের বিভাগীয় প্রধান ড. হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, চৈত্র-বৈশাখে সাধারণত ঝড়বৃষ্টি হয়। এ বছর বৃষ্টি হয়েছে এক দিন। বরিশালসহ পর্যটন এলাকা কুয়াকাটায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে গেছে। এ কারণে তাপ সঞ্চিত হয়ে থাকে, কমতে পারে না। তিনি আরও বলেন, কুয়াকাটায় গাছের পরিমাণ কমে গেছে। মানুষের চাপ, পাকা ভবন বাড়ছে। ম্যানগ্রোভ বন কমেছে। অপরিকল্পিত পর্যটন এলাকার কারণে কুয়াকাটা এমনটা হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত