মধুর বাক্সের সঙ্গে বড় হচ্ছে চাষির স্বপ্ন

যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০: ৫২

যশোর সদর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামে সরিষাখেতের পাশে মৌ চাষের ৫১টি বাক্স বসিয়েছিলেন সুলাইমান হক। সেগুলো থেকে এই মৌসুমে তিনি অন্তত দেড় মণ মধু সংগ্রহ করেন। সুলাইমান জানান, সরিষাখেত থেকে মধু আহরণ করলে পরাগায়ন হয়। এতে সরিষার উৎপাদন বাড়ে। তাই খেতের মালিকেরাও মৌচাষিদের উৎসাহিত করেন।

শুধু সুলাইমান নন, যশোর অঞ্চলের ছয় জেলাতেই ব্যাপকভাবে সরিষাখেতের পাশে মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মধু আহরণ চলে। কৃষি বিভাগ এবার ছয় জেলায় সরিষা মৌসুমে ৩৬ হাজার ৩২৯ কেজি মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এবার সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ হয়েছে ৩৬ হাজার ৪৫৭ কেজি (৯১১ দশমিক ৪২ মণ)। অর্থাৎ ১২৮ কেজি মধু বেশি সংগ্রহ হয়। এ জন্য মৌমাছির বাক্স বসানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল ৫ হাজার ৮৩০টি।

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে এ বছর ৯৩ হাজার ২৯৯ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। এসব জমির পাশে ৫ হাজার ৮৩০টি মৌ চাষের বাক্স স্থাপন করা হয়। বাক্সে থাকা মৌমাছি সরিষা ফুলে উড়ে উড়ে মধু সংগ্রহ করে। এতে সরিষা ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হয়। ফলে একদিকে সরিষার উৎপাদন বেড়ে, অন্যদিকে অতিরিক্ত হিসেবে মধু পাচ্ছেন কৃষক। সমন্বিত এই চাষে কৃষক লাভবান হচ্ছেন।

গত বছর এ ছয় জেলায় ৯০ হাজার ৮৫২ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়। এসব জমির পাশে পাঁচ হাজার মৌ চাষের বাক্স বসানো হয়। এসব বাক্স থেকে ৩২ হাজার ৭০০ কেজি মধু উৎপাদিত হয়। রবিশস্য সরিষার সঙ্গে মৌমাছি পালন করে মধু চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে যশোর অঞ্চলের ছয় জেলায়।

এসব জেলায় স্থানীয় মধুচাষির চেয়ে বাইরের মধুচাষিরা বেশি মধু সংগ্রহ করেন। তবে স্থানীয় মধুচাষি বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বলে কৃষি বিভাগের দাবি। এ ছাড়া এ বছরই প্রথম সরকারিভাবে যশোরে শতাধিক কৃষককে ৯ হাজার ৪০৪টি মৌবাক্স ও মধু সংগ্রহের সরঞ্জাম দেওয়া হয়।

মৌচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি মৌবাক্সের মধ্যে ছয় থেকে আটটি ফ্রেম থাকে। প্রতিটি বাক্সে একটি করে রানি মৌমাছির সঙ্গে রয়েছে ৫০ হাজারের বেশি মৌমাছি। মৌমাছিগুলো প্রায় চার কিলোমিটার দূরে গিয়ে মধু সংগ্রহ করে আনতে পারে। সাধারণত ছয় মাস দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে মধু সংগ্রহ করে থাকেন মৌচাষিরা।

সম্প্রতি এক বিকেলে সদর উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের আবাদকচুয়া গ্রামে মৌবাক্স বসান বাগেরহাটের মৌচাষি ও মধু সংগ্রহকারী আবদার গাজী। প্রায় দুই মাস ধরে তিনি সেখানে মৌবাক্সগুলো বসিয়ে মধু সংগ্রহ ও বাজারজাত করছেন। তাঁর সঙ্গে মৌবাক্স পরিচর্যাকারী দুজন শ্রমিকও কাজ করছেন।

আবদার গাজী জানালেন, সপ্তাহে এক দিন মৌবাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। প্রতিটি বাক্স থেকে গড়ে দুই কেজি মধু পাওয়া যায়। ৫০ বাক্স থেকে সপ্তাহে ১০০ কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, সাধারণত অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে বেশি পরিমাণে মধু সংগ্রহ করা যায়। মধু চাষের মাধ্যমে মৌচাষিরা যেমন বাড়তি আয় করেন, তেমন মৌমাছির পরাগায়নের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। যশোরে ছয়টি জেলায় বিভিন্ন উপজেলায় ৩২৪ জন প্রায় চার হাজার মৌবাক্স স্থাপন করেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত