Ajker Patrika

৬৪ কিমিতে ১০৯ বাঁক

গাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডুমুরিয়া
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ৪৪
৬৪ কিমিতে ১০৯ বাঁক

খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার। এই সড়কের বেশির ভাগই গেছে ডুমুরিয়া উপজেলার ওপর দিয়ে। আর এই ৬৪ কিলোমিটার সড়কে ১০৯টি স্থানে রয়েছে বাঁক বা মোড় (টার্নিং পয়েন্ট)। আবার কিছু মোড় আছে, যা দূর থেকে বোঝা যায় না।

এ বাঁকের কারণে প্রতিনিয়ত মহাসড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রতি তিন দিনে অন্তত একটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে বলে ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে।

এসব দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়ত ঝরছে তাজা প্রাণ। সর্বশেষ ১৩ ডিসেম্বর চুকনগর-খুলনা মহাসড়কের চাকুন্দিয়া গ্রামে ট্রাকচাকায় পিষ্ট হয়ে এক বৃদ্ধা মারা যান। এর আগে ৮ অক্টোবর ডুমুরিয়া মহিলা কলেজ মোড়ে ও জিলেরডাঙ্গা এলাকার একটি মোড়ে পৃথক দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত হন। আহতও হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন।

৫ অক্টোবর চুকনগর-খুলনা মহাসড়কের খর্ণিয়া সেতুতে ট্রাকচাপায় এক বৃদ্ধ নিহত হন। ২৮ সেপ্টেম্বর ডুমুরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক গ্রাম্য চিকিৎসক নিহত হন। ১৮ মার্চ এ সড়কের কাঁঠালতলা মোড়ে ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ডিজিএফআই কর্মকর্তা তারিয়েফ সুনাম দীপ (৩০) মারা যান। প্রায় প্রতিদিনই এভাবে মহাসড়কে কারও না কারও প্রাণ ঝরছে।

২০০৭ সালের ১৬ মার্চ এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ডুমুরিয়া উপজেলার বালিয়াখালি ব্রিজের কাছে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান জাতীয় দলেন ক্রিকেটার মানজারুল ইসলাম রানা। খুলনা বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের তথ্যমতে, চলতি বছরে খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের ডুমুরিয়ার অংশে। সেখানে প্রায় প্রতি তিন দিনে গড়ে একটি দুর্ঘটনা ঘটছে।

তাদের পরিসংখ্যানমতে, চলটি বছরের শুরু থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত খুলনা বিভাগে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৯৮৫টি। আর খুলনা জেলায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৯৮টি। এর মধ্যে শুধু খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের ডুমুরিয়া অংশে (খুলনার জিরোপয়েন্ট থেকে আঠারমাইল বাজার পর্যন্ত) সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৮৯টি। এতে ঘটনাস্থল থেকে ৭ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন তারা। এ ছাড়া আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে ১৫১ জনকে। আহতদের অনেকে আবার হাসপাতালে মারা গেছেন। যার হিসাব পাওয়া যায়নি। ইতিমধ্যে তারা ডুমুরিয়ার বালিয়াখালি সেতু, কাঁঠালতলা, খর্ণিয়া, চাকুন্দিয়া মাদ্রাসা দোকানঘর ও গুটুদিয়াকে বিপজ্জনক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

তবে অনুমোদনবিহীন নছিমন, করিমন, মাহিন্দ্রা, ট্রলি, ইজিবাইক দেদার চলাচলের কারণেও প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া সড়কটি ভালো হওয়ায় চালকেরা দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। আবার বেপরোয়া গতি, প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানো, গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইল ফোনে কথা বলাসহ বহু অনিয়ম ঘটে এ রাস্তায়। এসব কারণে রাস্তায় মৃত্যুর মিছিল লেগেই আছে। যে কর্তৃপক্ষ এসব নিয়ন্ত্রণ করার কথা, তারাও উদাসীন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন দুর্ঘটনারোধে কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অতিরিক্ত বোঝাই, লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রোডস অ্যান্ড হাইওয়ের সহযোগিতায় রাস্তার কিছু গাছের ডালপালা কেটে রাস্তা দৃশ্যমান করার কাজ শুরু হবে শিগগির। গত ১৩ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের সমন্বয়ে সভা করে এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তবে এখনো এসব উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি মহিদুল ইসলাম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়ত মৃত্যুর খবর আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। বহু ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল করে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে রাস্তায়। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করলে দুর্ঘটনা কমে আসবে। খর্ণিয়া (চুকনগর) হাইওয়ে থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. মেহেদি হাসান বলেন, লাইসেন্সহীন অদক্ষ ও অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকের হাতে গাড়ির চাবি তুলে দেওয়া এসব দুর্ঘটনার অন্যতম বড় কারণ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বনশ্রীতে স্বর্ণ ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার আমিনুল ছাত্রলীগের, সুমন শ্রমিক দলের নেতা

সামরিক বাহিনীর ৮ সংস্থা ও স্থাপনার নাম পরিবর্তন

ককটেল ফুটতেই সেলুনে লুকায় পুলিশ, রণক্ষেত্র হয় এলাকা

মসজিদে লুকিয়েও রক্ষা পেলেন না স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও তাঁর ভাই, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিল প্রতিপক্ষ

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে আবারও যা বললেন ভারতের সেনাপ্রধান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত