যশোরের মনিরামপুরে কোচিং সেন্টারে ৭ম শ্রেণির ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার ঢাকুরিয়া প্রতাপকাটী মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষক প্রদীপ বাইনকে ১ মাসের জন্য সাময়িক বহিষ্কার করেছে। একইসঙ্গে কর্তৃপক্ষ ওই শিক্ষকের পরিচালিত কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দেয়।

এদিকে গতকাল শনিবার সকাল থেকে শিক্ষকের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার ও কোচিং সেন্টার চালুর দাবিতে প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা বর্জন করে বিদ্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ করেছে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, গতকাল শনিবার তাদের ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা না দিয়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের জানলার গ্লাস ভাঙচুর করেছে। অভিযুক্ত শিক্ষক প্রদীপ বাইন উপজেলার ঢাকুরিয়া প্রতাপকাটী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক। তিনি শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা। ঢাকুরিয়া বাজারে তাঁর নিজের কোচিং সেন্টার রয়েছে।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর স্বজনদের অভিযোগ, প্রদীপ বাইন এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে নিজের পক্ষে নিয়েছেন। নিজে বাঁচতে তিনি ছাত্রদের দিয়ে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করিয়েছেন।

অভিযুক্ত প্রদীপ বাইন বলেন, ‘ওই ছাত্রী ভুল পথে যাচ্ছিল। তাকে শাসন করতে গিয়ে আমি ফেঁসে গেছি।’

এদিকে ছাত্রীর শ্লীলতাহানি ও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কথা শুনে গতকাল শনিবার দুপুরে র‍্যাব-৬ যশোরের সদস্যরা ঢাকুরিয়া প্রতাপকাটী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আসে। পরে তাঁরা অভিযুক্ত শিক্ষক প্রদীপ বাইনকে হেফাজতে নেয়। বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রমজান আলী শিক্ষক প্রদীপের আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর দাদা জানান, প্রদীপ বাইনের কোচিং সেন্টারে পড়তে যেত ওই শিক্ষার্থী। রোজায় বিদ্যালয় বন্ধের মধ্যে একদিন বিকেলে ওই ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি করে প্রদীপ। কোচিং থেকে বাড়ি ফিরে ওই ছাত্রী তার মাকে ঘটনা খুলে বলে। পরে স্কুল কর্তৃপক্ষকে লিখিত দেওয়া হয়। তদন্তে সত্যতা পেয়ে শিক্ষক প্রদীপকে এক মাসের জন্য বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রমজান আলী বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের ৩ জনকে ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করার পর গত বৃহস্পতিবার পরিচালনা পর্ষদের সভায় শিক্ষক প্রদীপ বাইনকে ১ মাসের জন্য সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। একই সঙ্গে তাঁর কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়। শনিবার থেকে শিক্ষক প্রদীপের শাস্তি কার্যকর হয়।

প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষার্থী হৃদয় হোসেনসহ অন্যরা বলে, প্রদীপ স্যারের বিরুদ্ধে যা করা হচ্ছে এটা অন্যায়। আমরা এর প্রতিবাদে পরীক্ষা বর্জন করেছি। স্যারের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে নেওয়া সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।

ঢাকুরিয়া প্রতাপকাটী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর জব্বার বলেন, গত ২২ এপ্রিল সহকারী শিক্ষক প্রদীপ বাইনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়ে কমিটি তাঁকে ১ মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করেছে। গতকাল শনিবার থেকে এ আদেশ কার্যকর হয়। প্রদীপ বাইনের বহিষ্কারের খবর পেয়ে শনিবার সকালে পরীক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এসে বিক্ষোভ করে। তাঁরা পরীক্ষা বর্জন করেছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, আগে থেকে ঘটনার কিছু আমাকে জানানো হয়নি। গতকাল শনিবার শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করায় প্রধান শিক্ষক আমাকে ফোনে বিষয়টি জানিয়েছেন। আগামী পরীক্ষাগুলো যেন হয় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ কোনো শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার করতে পারেন। কিন্তু সময় উল্লেখ করে ১ মাসের জন্য বহিষ্কার করার কোনো সুযোগ নেই।

মনিরামপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।