খুদে বার্তায় বেঁধে দেয় ডিমের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৩, ০৯: ৪৮

দেশে ৭৫ শতাংশ ডিমের জোগান দেন প্রান্তিক ও স্বতন্ত্র খামারিরা। ২৫ শতাংশ আসে বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ খামার থেকে। এই ক্ষুদ্র অংশ দিয়েই কৌশলে ডিমের পুরো বাজার দখল করে নিচ্ছে বড় কোম্পানিগুলো। মুরগির খাবার, ওষুধ, বাচ্চা উৎপাদনের জন্য এসব কোম্পানির ওপর নির্ভরশীলতার সুযোগ নিয়েই ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে তারা। আড়তদার ও খামারিদের কাছে প্রতিদিন খুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠিয়ে দামও ঠিক করে দেয় কোম্পানিগুলোর বিপণন  বিভাগ। সেই দামেই ডিম বিক্রি করতে বাধ্য হন খামারিরা। কয়েকজন প্রান্তিক খামারি, পাইকার ও আড়তদারের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

আগের রাতে এসএমএসে পরের দিনের ডিমের দর বেঁধে দেওয়ার তথ্য মিলেছে ২২ মার্চ রাজধানীর কয়েকটি আড়ত ঘুরে। কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোলট্রি লিমিটেড, পিপলস পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লি. এবং ডায়মন্ড এগের বিপণন কর্মকর্তারা আড়তদারদের কাছে দামসংক্রান্ত যে এসএমএস পাঠিয়েছেন, তার অনুলিপিও পাওয়া গেছে। কয়েকটি কোম্পানির কর্মকর্তারা বিষয়টি স্বীকার করলেও পরিচয় প্রকাশ করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তাঁরা বলেন, এসএমএস তাঁরা পাঠালেও সবকিছু নির্ধারণ হয় প্রধান কার্যালয় থেকে।

কাপ্তানবাজারের আড়তদার মোরশেদ আলম বলেন, ‘ডিমের দাম এখন নিয়ন্ত্রণ করে কোম্পানিগুলো। এখানে খামারি, আড়তদার, পাইকারদের হাত নেই। বিষয়টি নিয়ে আমরা আড়তদারেরাই বিরক্ত। প্রতিদিন মেসেজ পাই। সেখানে যে দাম দেওয়া থাকে, সে অনুযায়ীই আমরা ডিম কিনি।’

কাজী ফার্মস, প্যারাগনসহ কোম্পানিগুলোর বিপণন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কেউ সাড়া দেননি। ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামও মন্তব্য করতে  চাননি। উল্টো ডিমের দাম বাড়ার জন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ী করেন। তিনি বলেন, মাত্র চারটি কোম্পানির ২৫ শতাংশ ডিম দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ বাস্তবসম্মত নয়। এগুলোর পেছনে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত আছে। তবে খামারিরা লোকসান দিয়ে ডিম বিক্রি করছেন। এভাবে চললে তাঁরা খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন।

প্রান্তিক খামারিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, খামারে প্রতিটি ডিম উৎপাদনে খরচ পড়ে ১১ টাকা ১১ পয়সা। কোম্পানির নির্দেশনায় গত শনিবার পর্যন্ত এই ডিম তাঁরা বিক্রি করেছেন ৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে। ডিমপ্রতি লোকসান ১ টাকা ৬১ পয়সা। অথচ বাজারে দাম ১২ টাকা ৫০ পয়সা।

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের স্বতন্ত্র খামারি মো. আমীর হামজা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আজ (শনিবার) আমি ডিম বিক্রি করেছি প্রতিটি সাড়ে ৯ টাকায়। অথচ একটা ডিম উৎপাদনে খরচ ১১ টাকার বেশি। কোম্পানিগুলোর ঠিক করা দরের চেয়ে বেশি দামে আমাদের থেকে কেউ ডিম কেনে না। এভাবে চলতে থাকলে আমরা পথে বসব। আর কোম্পানিগুলো পুরো বাজার কবজায় নেবে।’

ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, ২০২২ সালেও দেশে উৎপাদিত ডিমের ১০ শতাংশ ছিল তাদের। এক বছরে ১৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ শতাংশে। প্রান্তিক খামারিদের মতে, কারসাজির মাধ্যমে তাঁদের পথে বসিয়ে দ্রুত পুরো বাজার কবজায় নিচ্ছে বড় কোম্পানিগুলো।

পোলট্রি ফিড ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরামর্শ
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ‘এই বিপদ থেকে বাঁচতে হলে পোলট্রি ফিড ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিতে হবে।’
এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, ‘আমরা কোনো কিছুর দাম নির্ধারণ করে দিতে পারি না৷ তবে ডিম ও মুরগির আনুমানিক একটা উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করে দিতে পারি৷’

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খামারিরা যদি লোকসান দিয়ে ডিম বিক্রি করেন, তাহলে উৎপাদন খরচ কমানোর বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত। আর করপোরেট কোম্পানিগুলো যদি দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে কারসাজি করে, তাহলে আইনের আওতায় আনা হোক।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত