গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। গতকাল বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরপরই গুম হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। এদিকে ছেলেকে গুমের আশঙ্কায় বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুন। সব মিলিয়ে মেয়র পদে ১২ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে, তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের দুজন বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। রয়েছেন বিএনপির এক নেতার ভাতিজাও।

মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার মহানগরীর বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে প্রার্থীরা তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। এদিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর নিজের গুম হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করে নগরবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছরের জন্য আমি নির্বাচিত মেয়র, আমার মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি। একটি মিথ্যা চিঠি দিয়ে এমন (সাময়িক বরখাস্ত) করেছে। আমি আজকে আপনাদের সামনে আসছি, কালকে না-ও আসতে পারি। হয়তো কালকের পর আমার পায়ে শিকল পরতে পারে, আমাকে গ্রেপ্তার বা গুম করতে পারে। এ জন্য আমি বলতে চাই, আমি এই শহরের কোনো মানুষের ক্ষতি করার মতো কিছু করি নাই।’ 

জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন। নির্বাচনে জাহাঙ্গীর ছাড়া আরও একজন আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি হলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পরিবেশ ও বনবিষয়ক উপকমিটির সাবেক সদস্য ও বর্তমান কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন মণ্ডল। 

মামুন মণ্ডল বলেন, ‘আমি দলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যেহেতু প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় রয়েছে, আমি আশাবাদী জনপ্রিয়তা বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে আওয়ামী লীগ আমাকে সুযোগ দেবে।’ 

মেয়র পদে মনোনয়ন জমাদানকারী অপর প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন, গণফ্রন্ট মনোনীত আতিকুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত গাজী আতাউর রহমান, জাকের পার্টির প্রার্থী রাজু আহমেদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ, অলিউর রহমান, আবুল হোসেন এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাসান উদ্দিন সরকারের ভাতিজা সরকার শাহনুর ইসলাম রনি। 

গতকাল সকালে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলামের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন নৌকার প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গাসিকের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মণ্ডল, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়াজ উদ্দিন মিয়া প্রমুখ।

গতকাল বিকেলে কয়েকজন কর্মী-সমর্থককে সঙ্গে নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন জাহাঙ্গীর আলম। মেয়র পদে মা জায়েদা খাতুনের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। আর জাহাঙ্গীরের পক্ষে তাঁর মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহদপ্তর সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। 

আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খান বলেন, ‘স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক, অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত জনকল্যাণমুখী একটি সিটি করপোরেশন গড়ে তোলার জন্য আমি কাজ করব। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ প্রার্থী হলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের অবহিত করা হয়েছে। এসব বিষয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নেবে।’ 

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৫ মে অনুষ্ঠিত হবে গাসিক নির্বাচন। নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা আসনের কাউন্সিলর পদে ৮৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৮২ জন গতকাল মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ২৯০ জন।

তিন প্রার্থীকে শোকজ
গাসিক নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অপরাধে দুই মেয়র ও এক কাউন্সিলর পদপ্রার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম। গতকাল তাঁদের এ নোটিশ দেওয়া হয়। 

নোটিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা হলেন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন মণ্ডল, জাতীয় পার্টির (জাপা) মনোনীত মেয়র প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন এবং নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সনজিৎ মল্লিক।