সৌগত বসু, ঢাকা
আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই সড়ক ও রেলপথের আটটি বড় প্রকল্প উদ্বোধনের অপেক্ষায় রেখেছে সরকার। কিন্তু এখনো কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি সব প্রকল্পের। নেই নিখুঁত প্রস্তুতি। রেলের প্রকল্পগুলোর কোনোটির সেতুর কাজ বাকি, কোনোটির স্টেশন প্রস্তুত হয়নি। সড়কপথের প্রকল্পগুলোরও একই অবস্থা। তারপরও ভোটের আগে তড়িঘড়ি করে এসব প্রকল্প উদ্বোধন করতে চায় সরকার।
বড় আট প্রকল্পের চারটিই রেলওয়ের। রেলের এই চার প্রকল্পের দুটি সেপ্টেম্বরে আর দুটি অক্টোবরে উদ্বোধন হওয়ার কথা।
উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে সম্প্রতি সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল প্রকল্প নিয়ে। প্রকল্পটির দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার রেললাইন বসানো হয়ে গেছে। বাকি আছে ১২ কিলোমিটার। এই পথে ভারী ট্রেন চালানোর জন্য কর্ণফুলী নদীর ওপর একটি নতুন রেলসেতু নির্মাণের কথা থাকলেও অর্থায়ন, নকশা পরিবর্তনসহ নানা জটিলতায় তা এখনো শুরুই করা যায়নি। এই অবস্থায় প্রায় শতবর্ষী কালুরঘাট সেতু সংস্কার করে আগামী সেপ্টেম্বরে প্রকল্পটি উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে। কিন্তু গত সপ্তাহে ভয়াবহ বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে নতুন রেললাইনটি যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাতে সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে এটি অক্টোবরে চালুর কথা ভাবা হচ্ছে।
রেলের আরেকটি বড় প্রকল্প হলো পদ্মা সেতু রেল সংযোগ। এটি চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ তৈরি হবে। নির্বাচন সামনে রেখে আগামী সেপ্টেম্বরে প্রকল্পটি উদ্বোধনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়ার কাজও সম্পন্ন।
কিন্তু প্রকল্পের বাস্তব কাজ এখনো অনেকটাই বাকি। ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশের সিগন্যালিং ও রঙের কাজ চলছে। যশোর পর্যন্ত অংশে বাকি আছে স্টেশন নির্মাণ ও রেললাইন বসানোর কাজ। এগুলো শেষ হলে সিগন্যাল ও রঙের কাজ হবে।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি ৯৬ শতাংশ। আর ঢাকা-মাওয়া অংশের অগ্রগতি ৭৯ শতাংশ। তবে ভাঙ্গা-যশোর পর্যন্ত অংশের অগ্রগতি ৭৯ শতাংশ। এই অংশের উদ্বোধন হবে ২০২৪ সালের জুনে।
এদিকে ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়িত আখাউড়া-আগরতলা আন্তর্দেশীয় রেল সংযোগ প্রকল্পটি আগামী সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন হবে। ওই মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যৌথভাবে এই রেললাইন উদ্বোধন করতে পারেন তিনি।
২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য আখাউড়া-আগরতলা রেল প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছিল একনেক। পরে প্রকল্প সংশোধন করে মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। তারপরও কাজ শেষ না হওয়ায় চতুর্থবারের মতো সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ করা হয় ২০২৪ সালের জুন। এ প্রকল্পে মোট ব্যয় হচ্ছে ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৫৭ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং ভারতীয় ঋণ ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়া-আগরতলা প্রকল্পের কাজ ৯০ ভাগের বেশি হয়েছে। রেললাইন বসানোর কাজ পুরো শেষ।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলাকে রেল সংযোগের আওতায় আনতে নেওয়া হয়েছিল খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্প। নানা জটিলতায় কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে অবশেষে এবার নির্মাণকাজ শেষের পথে এটি। এ প্রকল্পও প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, আগস্ট মাসে এ প্রকল্পের ৯৯ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। তবে পাঁচটি ব্রিজের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ চলমান রয়েছে। মূল রেললাইন বসানোর কাজ শেষ। এ রুটে আটটি স্টেশন নির্মাণকাজও শেষ হয়েছে। শেষ মুহূর্তের ফিনিশিংয়ের কিছু কাজ বাকি আছে স্টেশনগুলোর।
রেলের চার প্রকল্পের উদ্বোধনের বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন আজকের পত্রিকাকে বলেন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যেই এই চার প্রকল্প উদ্বোধন করা হবে। সেভাবেই কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
মন্ত্রী জানান, সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখে পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চাওয়া হবে। তিনি ২০ সেপ্টেম্বরের পরে যেদিন সময় দেবেন, সেদিন উদ্বোধন হবে।
কক্সবাজার-দোহাজারী নিয়ে মন্ত্রী বলেন, তাঁরা প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করছেন। আপডেট নেওয়া হচ্ছে। দ্রুততম সময়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অংশ ঠিক করা হবে। এরপর উদ্বোধন করার কথা ভাবা হবে।
তবে খুলনা-মোংলা ও আখাউড়া-আগরতলা নিয়ে এখনো নিশ্চিত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জি২০ সম্মেলনে ভারত যাবেন। সে সময় আলাদা করে সময় বের করে আখাউড়া-আগরতলা প্রকল্প উদ্বোধন করা হবে। সেটি ভারতের সঙ্গে সময় মিলিয়ে করতে হবে।
এই সরকারের আমলে উন্নয়নের একটি মাইলফলক প্রকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণকে। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ নামে বাস্তবায়িত হওয়া এই প্রকল্পের মূল কাজ শেষ। তবে মোবাইলে নেটওয়ার্ক ঝামেলায় এখনো কিছু কাজ বাকি আছে। সেটি শেষ করে আগামী অক্টোবরে প্রকল্পটি উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ আগামী জাতীয় নির্বাচনে পদ্মা সেতুর মতো কর্ণফুলী টানেলকেও ভোট টানার হাতিয়ার করতে চায়। এ জন্য প্রকল্পটি উদ্বোধনে জুতসই সময়ের অপেক্ষায় আছে সরকার।
প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, টানেলের দুই টিউবের ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ কাজ শেষ। সামগ্রিকভাবে যা ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশ। টানেলটি চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ একরকম বুঝে নেওয়া হয়েছে। তবে কাগজে-কলমে আবার বুঝে নেওয়া হবে।
এদিকে রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে যেসব বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, তা-ও নির্বাচনের আগে চালু করে দিতে চায় সরকার। এরই মধ্যে আংশিক খুলে দেওয়া হয়েছে মেট্রোরেল। এরই মধ্যে মেট্রোরেল লাইন-৬-এর দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত নিয়মিত ট্রেন চলাচল করছে। আর অক্টোবরেই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশটিও। যদিও কয়েকটি স্টেশনের কাজ অসম্পূর্ণ থাকবে তখন।
এদিকে সেপ্টেম্বরে খুলে দেওয়া হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত অংশ। এটি চালু হলে মাত্র ১২ মিনিটে ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া যাবে। এই অংশের কাজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে, যা পুরোপুরি শেষ হবে ২০২৪ সালে। তার আগেই এটি উদ্বোধন করার তোড়জোড় চলছে।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার আজকের পত্রিকাকে বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ তিনটি ধাপে সম্পন্ন করা হচ্ছে। বনানী পর্যন্ত অংশে ৯৮ শতাংশ, বনানী থেকে মগবাজার অংশে ৫৪ শতাংশ এবং মগবাজার থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত অংশে ৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সেপ্টেম্বরে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত।
নতুন শহর পূর্বাচলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাকে যুক্ত করার জন্য নির্মিত হচ্ছে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে। ১২ দশমিক ৩ শূন্য কিলোমিটার দীর্ঘ ১২ লেনের এই এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১০ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই প্রকল্পও উদ্বোধনের অপেক্ষায় রেখেছে সরকার।
ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এসব প্রকল্প দেশের যোগাযোগব্যবস্থাকে বদলে দেবে। তবে অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ প্রকল্পগুলো নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বাংলাদেশের বেশির ভাগ বড় প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকে না। এতে করে সময় বাড়ে, বরাদ্দ বাড়ে। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল রাস্তা বাংলাদেশে। এই ঋণের টাকা বাংলাদেশের মানুষকেই শোধ করতে হবে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই সড়ক ও রেলপথের আটটি বড় প্রকল্প উদ্বোধনের অপেক্ষায় রেখেছে সরকার। কিন্তু এখনো কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি সব প্রকল্পের। নেই নিখুঁত প্রস্তুতি। রেলের প্রকল্পগুলোর কোনোটির সেতুর কাজ বাকি, কোনোটির স্টেশন প্রস্তুত হয়নি। সড়কপথের প্রকল্পগুলোরও একই অবস্থা। তারপরও ভোটের আগে তড়িঘড়ি করে এসব প্রকল্প উদ্বোধন করতে চায় সরকার।
বড় আট প্রকল্পের চারটিই রেলওয়ের। রেলের এই চার প্রকল্পের দুটি সেপ্টেম্বরে আর দুটি অক্টোবরে উদ্বোধন হওয়ার কথা।
উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে সম্প্রতি সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল প্রকল্প নিয়ে। প্রকল্পটির দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার রেললাইন বসানো হয়ে গেছে। বাকি আছে ১২ কিলোমিটার। এই পথে ভারী ট্রেন চালানোর জন্য কর্ণফুলী নদীর ওপর একটি নতুন রেলসেতু নির্মাণের কথা থাকলেও অর্থায়ন, নকশা পরিবর্তনসহ নানা জটিলতায় তা এখনো শুরুই করা যায়নি। এই অবস্থায় প্রায় শতবর্ষী কালুরঘাট সেতু সংস্কার করে আগামী সেপ্টেম্বরে প্রকল্পটি উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে। কিন্তু গত সপ্তাহে ভয়াবহ বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে নতুন রেললাইনটি যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাতে সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে এটি অক্টোবরে চালুর কথা ভাবা হচ্ছে।
রেলের আরেকটি বড় প্রকল্প হলো পদ্মা সেতু রেল সংযোগ। এটি চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ তৈরি হবে। নির্বাচন সামনে রেখে আগামী সেপ্টেম্বরে প্রকল্পটি উদ্বোধনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়ার কাজও সম্পন্ন।
কিন্তু প্রকল্পের বাস্তব কাজ এখনো অনেকটাই বাকি। ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশের সিগন্যালিং ও রঙের কাজ চলছে। যশোর পর্যন্ত অংশে বাকি আছে স্টেশন নির্মাণ ও রেললাইন বসানোর কাজ। এগুলো শেষ হলে সিগন্যাল ও রঙের কাজ হবে।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি ৯৬ শতাংশ। আর ঢাকা-মাওয়া অংশের অগ্রগতি ৭৯ শতাংশ। তবে ভাঙ্গা-যশোর পর্যন্ত অংশের অগ্রগতি ৭৯ শতাংশ। এই অংশের উদ্বোধন হবে ২০২৪ সালের জুনে।
এদিকে ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়িত আখাউড়া-আগরতলা আন্তর্দেশীয় রেল সংযোগ প্রকল্পটি আগামী সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন হবে। ওই মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যৌথভাবে এই রেললাইন উদ্বোধন করতে পারেন তিনি।
২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য আখাউড়া-আগরতলা রেল প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছিল একনেক। পরে প্রকল্প সংশোধন করে মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। তারপরও কাজ শেষ না হওয়ায় চতুর্থবারের মতো সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ করা হয় ২০২৪ সালের জুন। এ প্রকল্পে মোট ব্যয় হচ্ছে ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৫৭ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং ভারতীয় ঋণ ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়া-আগরতলা প্রকল্পের কাজ ৯০ ভাগের বেশি হয়েছে। রেললাইন বসানোর কাজ পুরো শেষ।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলাকে রেল সংযোগের আওতায় আনতে নেওয়া হয়েছিল খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্প। নানা জটিলতায় কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে অবশেষে এবার নির্মাণকাজ শেষের পথে এটি। এ প্রকল্পও প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, আগস্ট মাসে এ প্রকল্পের ৯৯ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। তবে পাঁচটি ব্রিজের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ চলমান রয়েছে। মূল রেললাইন বসানোর কাজ শেষ। এ রুটে আটটি স্টেশন নির্মাণকাজও শেষ হয়েছে। শেষ মুহূর্তের ফিনিশিংয়ের কিছু কাজ বাকি আছে স্টেশনগুলোর।
রেলের চার প্রকল্পের উদ্বোধনের বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন আজকের পত্রিকাকে বলেন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যেই এই চার প্রকল্প উদ্বোধন করা হবে। সেভাবেই কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
মন্ত্রী জানান, সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখে পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চাওয়া হবে। তিনি ২০ সেপ্টেম্বরের পরে যেদিন সময় দেবেন, সেদিন উদ্বোধন হবে।
কক্সবাজার-দোহাজারী নিয়ে মন্ত্রী বলেন, তাঁরা প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করছেন। আপডেট নেওয়া হচ্ছে। দ্রুততম সময়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অংশ ঠিক করা হবে। এরপর উদ্বোধন করার কথা ভাবা হবে।
তবে খুলনা-মোংলা ও আখাউড়া-আগরতলা নিয়ে এখনো নিশ্চিত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জি২০ সম্মেলনে ভারত যাবেন। সে সময় আলাদা করে সময় বের করে আখাউড়া-আগরতলা প্রকল্প উদ্বোধন করা হবে। সেটি ভারতের সঙ্গে সময় মিলিয়ে করতে হবে।
এই সরকারের আমলে উন্নয়নের একটি মাইলফলক প্রকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণকে। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ নামে বাস্তবায়িত হওয়া এই প্রকল্পের মূল কাজ শেষ। তবে মোবাইলে নেটওয়ার্ক ঝামেলায় এখনো কিছু কাজ বাকি আছে। সেটি শেষ করে আগামী অক্টোবরে প্রকল্পটি উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ আগামী জাতীয় নির্বাচনে পদ্মা সেতুর মতো কর্ণফুলী টানেলকেও ভোট টানার হাতিয়ার করতে চায়। এ জন্য প্রকল্পটি উদ্বোধনে জুতসই সময়ের অপেক্ষায় আছে সরকার।
প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, টানেলের দুই টিউবের ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ কাজ শেষ। সামগ্রিকভাবে যা ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশ। টানেলটি চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ একরকম বুঝে নেওয়া হয়েছে। তবে কাগজে-কলমে আবার বুঝে নেওয়া হবে।
এদিকে রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে যেসব বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, তা-ও নির্বাচনের আগে চালু করে দিতে চায় সরকার। এরই মধ্যে আংশিক খুলে দেওয়া হয়েছে মেট্রোরেল। এরই মধ্যে মেট্রোরেল লাইন-৬-এর দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত নিয়মিত ট্রেন চলাচল করছে। আর অক্টোবরেই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশটিও। যদিও কয়েকটি স্টেশনের কাজ অসম্পূর্ণ থাকবে তখন।
এদিকে সেপ্টেম্বরে খুলে দেওয়া হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত অংশ। এটি চালু হলে মাত্র ১২ মিনিটে ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া যাবে। এই অংশের কাজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে, যা পুরোপুরি শেষ হবে ২০২৪ সালে। তার আগেই এটি উদ্বোধন করার তোড়জোড় চলছে।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার আজকের পত্রিকাকে বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ তিনটি ধাপে সম্পন্ন করা হচ্ছে। বনানী পর্যন্ত অংশে ৯৮ শতাংশ, বনানী থেকে মগবাজার অংশে ৫৪ শতাংশ এবং মগবাজার থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত অংশে ৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সেপ্টেম্বরে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত।
নতুন শহর পূর্বাচলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাকে যুক্ত করার জন্য নির্মিত হচ্ছে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে। ১২ দশমিক ৩ শূন্য কিলোমিটার দীর্ঘ ১২ লেনের এই এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১০ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই প্রকল্পও উদ্বোধনের অপেক্ষায় রেখেছে সরকার।
ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এসব প্রকল্প দেশের যোগাযোগব্যবস্থাকে বদলে দেবে। তবে অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ প্রকল্পগুলো নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বাংলাদেশের বেশির ভাগ বড় প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকে না। এতে করে সময় বাড়ে, বরাদ্দ বাড়ে। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল রাস্তা বাংলাদেশে। এই ঋণের টাকা বাংলাদেশের মানুষকেই শোধ করতে হবে।
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে