Ajker Patrika

অনিয়মের ‘শাস্তি’ পদায়ন

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
অনিয়মের ‘শাস্তি’ পদায়ন

সিলেট সিটি করপোরেশনের কর ধার্য শাখায় প্রায় ২৫ কোটি টাকা অনিয়মের তদন্ত করে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয় চার মাস আগে। এতে অভিযুক্তদের চাকরিচ্যুতির পাশাপাশি বিভাগীয় মামলার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু তা আমলে নেননি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। উল্টো প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বদরুল হকের ‘মানবিক দিক বিবেচনা’র সুপারিশ আমলে নিয়ে অভিযুক্তদের নতুন করে পদায়ন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে সিলেট সিটির রাজস্ব বিভাগের কর ধার্য শাখায় অনিয়মের অভিযোগে শাখাপ্রধান চন্দন দাশকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে নগর কর্তৃপক্ষ। সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় কমিটি চার মাস সময় নেয়। পরে সিটি করপোরেশনের রাজস্ব শাখার বিভিন্ন নথি পর্যালোচনা এবং মেয়রসহ ১৩ জনের বক্তব্য নিয়ে গত ১০ জানুয়ারি সিটির প্রধান নির্বাহীর দপ্তরে প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। এতে কর ধার্য শাখার প্রধান চন্দন দাশ, সহকারী শাখাপ্রধান শেখর দেবনাথ ও আহমদুজ্জামানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতিপূরণের জন্য মামলা করার সুপারিশ করা হয়।

কর ধার্য শাখার অনিয়ম নিয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি আজকের পত্রিকায় ‘কারসাজিতে করের বাইরে ছিল ২ হাজার হোল্ডিং’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর কয়েক দিন আগে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল সিটি করপোরেশনের কমিটি।

সিটি করপোরেশন সূত্র বলেছে, মেয়র তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন যাচাইয়ের জন্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠান। প্রধান নির্বাহী সেই প্রতিবেদন আবার মেয়রের কাছে জমা দেওয়ার সময় অভিযুক্তদের বিষয়টি মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে দেখার অনুরোধ করেন। এরপর ১০ মে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত এক পত্রে সিলেট সিটির বাজার তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় চন্দন দাশকে। অপর দুই অভিযুক্ত শেখর দেবনাথ ও আহমদুজ্জামানকে অফিস সহকারী হিসেবে নিযুক্ত করা হয় বস্তি উন্নয়ন শাখায়।

সিটি করপোরেশন সূত্র আরও বলেছে, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওই তিনজনকে ২৫ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি এবং নতুন করে পদায়নের জন্য বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, কর ধার্য শাখার প্রধান চন্দন দাশ ১০ বছর ধরে অন্তত ২ হাজারের বেশি ভবনকে কর আদায়ের বাইরে রেখেছেন। নামমাত্র হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করে ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছেন আর্থিক সুবিধা। তাঁর এসব অনিয়মের কারণে ১ হাজার ৯৪১ হোল্ডিং থেকে প্রায় ২৫ কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন।

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, কোনো ধরনের আর্থিক সুবিধা নিয়ে নয়, নিয়ম অনুযায়ী বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বিভাগীয় মামলা করার মতো অপরাধ সংঘটিত হয়নি। তাদের দায়িত্বে অবহেলার শাস্তি দিয়ে শাখা পরিবর্তন করে পদায়ন করা হয়েছে।

মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি নিরবচ্ছিন্নভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। যাচাই-বাছাইয়ে কারও বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের সত্যতা মেলেনি। তারা কাজে অবহেলা করেছে। এটা না করলে সিটি করপোরেশনের কিছু টাকা আসত। এ জন্য বেতন-ভাতা বন্ধ রাখা হয়েছে আট মাস। এখন রাজস্ব শাখা থেকে সরিয়ে পদায়ন করা হয়েছে।

চাকরিচ্যুতির সুপারিশের পরেও পদায়ন প্রসঙ্গে তদন্ত কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটির প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা হানিফুর রহমান বলেন, ‘আমরা বস্তুনিষ্ঠ এবং সুনির্দিষ্টভাবে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছি। ব্যবস্থা নেওয়া না নেওয়ার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

রাজধানীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে ইরানের দুই নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ: ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা, নিষিদ্ধের দাবি শিক্ষার্থীদের

ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে পন্টিংয়ের আরেকটি রেকর্ড ভাঙলেন কোহলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত