আইন হচ্ছে না তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৩, ১০: ৪১

‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক, ২০২৩’ এ বাংলাদেশের স্কোর ৭২, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ। এতে বলা হয়, তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে প্রধান বাধা হিসেবে কাজ করছে তামাক কোম্পানির অব্যাহত হস্তক্ষেপ। চলমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন ঘিরে তারা সবচেয়ে বেশি হস্তক্ষেপ করেছে। এ পরিস্থিতিতে তিন বছরেও খসড়া সংশোধনী পাস করতে পারেনি সরকার।

‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক: এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩ বাস্তবায়ন প্রতিবেদন, বাংলাদেশ ২০২৩’ বিষয়ক ওয়েবিনারে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা) এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে।

গবেষণার ফল প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল রোববার এ ওয়েবিনার হয়। প্রজ্ঞার কো-অর্ডিনেটর নাফিউর আহমেদের সঞ্চালনায় গবেষণার ফল উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মসূচিপ্রধান হাসান শাহরিয়ার।

এ বছর বিশ্বের ৯০টি দেশে এই গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। সরকারগুলো তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ কীভাবে আমলে নেয় এবং হস্তক্ষেপ মোকাবিলায় কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তা এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩ গাইডলাইনের আলোকে মূল্যায়ন করা হয় এই গবেষণার মাধ্যমে। স্কোর যত কম, হস্তক্ষেপ তত কম। তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপের বৈশ্বিক সূচক ২০২৩ অনুযায়ী সবচেয়ে ভালো করেছে ব্রুনেই (স্কোর, ১৪) এবং সবচেয়ে খারাপ করেছে ডোমিনিকান রিপাবলিক (স্কোর, ১০০)। বাংলাদেশের স্কোর ৭২, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। প্রজ্ঞা ২০১৮ সাল থেকে ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক, বাংলাদেশ’ প্রকাশ করে আসছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আইন শক্তিশালীকরণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। তারপরও আইন সংশোধনে এত সময় লাগছে কেন? আমরা বলি, স্বাস্থ্য খাতে আমাদের অর্জন অনেক। তাহলে তামাকের কারণে এত মানুষ মারা যায়, আমরা কেন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারি না? জনস্বাস্থ্যকে আমাদের প্রাধান্য দিতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘তামাক কোম্পানি থেকে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহার করতে হবে। তামাক কোম্পানিকে পুরস্কৃত করা যাবে না এবং সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে।’

গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ মোকাবিলা এবং আর্টিকেল ৫.৩ এর নির্দেশনাবলি বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতিই হয়নি বাংলাদেশে। আইন সংশোধন হলে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে উল্লেখ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি দেয় ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটিবি)। তামাক কোম্পানির এ ধরনের অপব্যাখ্যা আমলে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পরে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগকে চিঠি দেয় এনবিআর। আইন সংশোধনের বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেয় জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি।

এ ছাড়া তামাক কোম্পানির মদদপুষ্ট বেশ কিছু তথাকথিত আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ই-সিগারেট নিষিদ্ধ না করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায়। স্বাস্থ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন মন্ত্রণালয়, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার সঙ্গে বৃক্ষরোপণ, পানি বিশুদ্ধকরণ, সোলার প্যানেল, কোভিড ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রেশন বুথ স্থাপন ইত্যাদি সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা গেছে কোম্পানিগুলোকে। বরাবরের মতো মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবদের উপস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে তামাক কোম্পানিগুলোকে পুরস্কৃত করতে দেখা গেছে।

অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী হোসেন আলী খোন্দকার, গ্লোবাল সেন্টার ফর গুড গভর্ন্যান্স ইন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (জিজিটিসি) হেড অব গ্লোবাল রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ড. মেরি আসুন্তা, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত