টানেলের পথে পথে বিদ্যুতের খুঁটি

তাসনীম হাসান, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২২, ০৮: ১১

সরকারের জন্য গর্ব করার মতো প্রকল্প বলা হচ্ছে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর নিচের সুড়ঙ্গপথ—বঙ্গবন্ধু টানেল। কেননা, এ ধরনের টানেল দেশে এটাই প্রথম। কিন্তু সেই মেগা প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। কারণ, এই দুই সংস্থার বিদ্যুতের খুঁটি সারি ধরে দাঁড়িয়ে আছে টানেলের পথে। দফায় দফায় বলার পরও এসব খুঁটি তারা দ্রুত সরিয়ে নিচ্ছে না। এ কারণে আগামী ডিসেম্বরে পুরোপুরি চালু হওয়ার অপেক্ষায় থাকা বহুল প্রতীক্ষিত এই টানেলের সুফল পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে।

কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম সড়ক সার্কেলের সড়ক ও জনপথের (সওজ) দোহাজারী সড়ক বিভাগ আনোয়ারা উপজেলা সংযোগ সড়কসহ কর্ণফুলী টানেল সংযোগ সড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ (শিকলবাহা–আনোয়ারা সড়ক) প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু সড়কের মাঝখানে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের  ৩৩টি ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ২১০টি বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকায় প্রকল্পের কাজে ব্যাঘাত ঘটছে।

অথচ এসব খুঁটি স্থানান্তর-অপসারণে প্রায় এক বছর আগে দুই সংস্থাকে অর্থও দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়নি দুই সংস্থা। পিডিবি ও আরইবিকে খুঁটি অপসারণ-স্থানান্তরের জন্য ব্যবস্থা নিতে গত ৪ জুলাই পুনরায় চিঠি দেন চট্টগ্রাম সড়ক সার্কেল, সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহেদ হোসেন।

চিঠিতে বলা হয়, ডিসেম্বরে টানেল চালুর আগেই সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প শেষ করতে হবে। কিন্তু খুঁটিগুলো অপসারণ কিংবা স্থানান্তর না করলে সড়কের কাজ যথাসময়ে শেষ করা যাবে না। খুঁটির কারণে সড়কের কাজ সমাপ্ত করা না গেলে কর্ণফুলী টানেল হয়ে জাতীয় মহাসড়কের সঙ্গে সরাসরি সংযোগও স্থাপিত হবে না।

পিডিবির বিতরণ দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলীকে দেওয়া চিঠি থেকে জানা যায়, শিকলবাহা থেকে আনোয়ারার কালাবিবির দীঘি পর্যন্ত টানেল সংযোগ সড়কের মাঝখানে পিডিবি, পটিয়া বিতরণ বিভাগের আওতাধীন ১৩৫টি খুঁটি ছিল। এসব খুঁটি স্থানান্তর কিংবা অপসারণের জন্য এই বিতরণ বিভাগকে ৪ মে ৩ কোটি ২০ লাখ ৯৭ হাজার ২৭০ টাকার চেক দেওয়া হয়। কিন্তু প্রায় এক বছর দুই মাস সময় পার হলেও সড়কের মাঝখানে থাকা ৩৩টি খুঁটি এখন পর্যন্ত স্থানান্তর কিংবা অপসারণ করা হয়নি।

অন্যদিকে আরইবির চট্টগ্রাম জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, একই সড়কের মাঝখানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১, পটিয়ার আওতাধীন ৪১৫টি খুঁটি ছিল। এসব খুঁটি স্থানান্তর-অপসারণে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩ কোটি ৮৫ লাখ ২৪ হাজার ২৮০ টাকার দুটি চেক দেওয়া হয়। কিন্তু ৯ মাস পার হলেও ২১০টি বৈদ্যুতিক খুঁটি এখন পর্যন্ত রয়ে গেছে। 

চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয় চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিনকেও। এর পরই তিন পক্ষকে ডাকেন বিভাগীয় কমিশনার। ১৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত এই সভায় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে তিনি তিন পক্ষকে নির্দেশ দেন।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যে টানেলের কাজ শেষ করতে চাই। তার আগেই সড়ক থেকে খুঁটিগুলো সরানো কিংবা স্থানান্তর করতে হবে। সড়কের কাজ যদি ঠিকমতো না হয় তাহলে টানেলের সুফল পাবে না মানুষ। সে জন্য পিডিবি, আরইবি, সওজ—তিন পক্ষকে বলেছি সরেজমিনে গিয়ে খুঁটিগুলো সরাতে কী সমস্যা, সেগুলো চিহ্নিত করতে। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে দ্রুত এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে তাঁদের।’

খুঁটিগুলো কেন এত দিন সরানো হয়নি, তা জানাতে পারেননি পিডিবির দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম ও আরইবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী স্বপন বণিক। তবে দুজনেই আজকের পত্রিকাকে বলেন, খুঁটিগুলো দ্রুত সরাতে ব্যবস্থা নিচ্ছেন তাঁরা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত