সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
উন্নয়নের হিংস্র উন্মাদনায় অসুস্থ ব্যবস্থায় তরুণ ও তারুণ্য উভয়ের পক্ষেই আজ সুস্থ থাকাটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মনের ব্যাধি অনেক ক্ষতিকর শরীরের ব্যাধির তুলনায়। তরুণ ও তারুণ্যের জন্য সবচেয়ে বড় মানসিক ব্যাধিটা হলো হতাশা।
শুধু বাংলাদেশ বলে নয়, গোটা বিশ্বেই বুর্জোয়া গণতন্ত্র এখন বেশ ভালো রকমের মুশকিলের মধ্যে পড়েছে। এই সংকট পুঁজিবাদেরই সংকট। পুঁজিবাদ এখন তার অন্তিম সময়ে এসে পৌঁছেছে। তাই তো দেখা যাচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ঘরে-বাইরে নিন্দিত এক লোকও পুনরায় নির্বাচিত হয়ে আসবেন—এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এবং সেটা ঘটতে পারে গণতন্ত্রের তীর্থস্থান বলে স্বীকৃত খোদ আমেরিকাতেই। অন্যত্রও দক্ষিণপন্থীরাই নির্বাচিত হয়ে আসছে। যারা সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখে, তারা পিছিয়ে যাচ্ছে। এমনটা ঘটানোর ক্ষমতা পুঁজিবাদ রাখে। পুঁজিবাদের যেটা স্বভাবগত, সেটাই সে করে চলেছে। করতলগত অর্থ, কূটকৌশল, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন হাতিয়ার ব্যবহার করে এবং মানবতাবিদ্বেষী বর্ণবাদ, উগ্র জাতীয়তাবাদ, ধর্মীয় মৌলবাদ ইত্যাদি প্রচারে সামান্যতম বিরতি দিচ্ছে না।
সভ্যতার হাজার হাজার বছর ধরে অর্জিত জ্ঞান ও অর্জনের সমস্তটা নিয়ে মানুষ একটি খাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে—সভ্যতা কী বিপজ্জনক, যে পথ ধরে এগোচ্ছে, সেই পথ ধরেই এগোবে এবং যাদের মধ্যে পড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে; নাকি পথ বদলে, ব্যক্তিমালিকানাকে পরিত্যাগ করে, সামাজিক মালিকানার দিকে এগিয়ে নিজেকে এবং মানবজাতিকেও বাঁচাবে? বাঁচাবে প্রাণী এবং প্রকৃতিকেও? এক কালে এই ধরাধামে ডাইনোসর নামে বিরাটাকার এক প্রাণী ছিল। তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে; মানব প্রজাতিও কি সেভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে? এবং সেই ধ্বংসের জন্য অন্য কেউ নয়, দায়ী হবে সে নিজেই? সমস্ত কিছুই তো ভেঙেচুরে যাচ্ছে। মানবিক সম্পর্কগুলো আর মানবিক থাকছে না। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো আশার আলো দেখায় না। তা ছাড়া এগুলো নমুনামাত্র। এদের তুলনায়ও কত কত ভয়ংকর ঘটনা যে প্রতিনিয়ত ঘটছে, যার খবর আমরা রাখি না এবং না রাখাটাই হয়তো মঙ্গলজনক, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য।
আমরা আশা করব ভয়ংকর এই ধ্বংসকাণ্ড ঘটবে না। কিন্তু না ঘটানোর জন্য তো চেষ্টার দরকার হবে। সেই প্রচেষ্টা কে করবে? জবাব হলো, করবে মানুষের তারুণ্য। তরুণ না বলে তারুণ্যের কথাই বলতে হয়। কেননা, তারুণ্য বয়সনির্ভর নয়, গুণনির্ভর বটে। কোনো তরুণই তরুণ নয়, যদি তার ভেতরে তারুণ্য জিনিসটা না থাকে। সে জন্য দেখা যায় তরুণও অকালে বৃদ্ধ হয়ে পড়ে, আবার বৃদ্ধের মধ্যেও তারুণ্য জীবন্ত ও কার্যকর থাকে।
যথার্থ তরুণের কথাই ভাবতে হবে। আজ যারা তরুণ, তাদের ওপরই নির্ভর করছে ভবিষ্যৎ—তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ এবং সমগ্র দেশের ভবিষ্যৎ। কারণ ভবিষ্যতে তারাই থাকবে এবং তাদের হাতেই থাকবে তাদের ভবিষ্যৎ; যদি থাকে।
তারুণ্যের গুণ কী? প্রধান গুণ সাহস। তারুণ্যের সাহস বাড়ে, যদি সে বিদ্রোহ করে। ব্যক্তিগত বিদ্রোহ নয়, সমষ্টিগত বিদ্রোহ। ব্যক্তিগত বিদ্রোহ বেয়াদবি, অসামাজিক কাজ, সন্ত্রাসী ইত্যাদি হতে পারে। হয়ও। ব্যক্তিগত নয়, বিদ্রোহ চাই সমষ্টিগত। তারুণ্যের অপর গুণ স্বপ্ন দেখার সাহস রাখা এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবিক করে তোলার ক্ষেত্রে সাহসী সংগ্রামে যুক্ত হওয়া। একা নয়, অনেকের সঙ্গে মিলে। যেমনটা ঘটেছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে। তরুণের জন্য জীবিকার সমস্যা ওত পেতে বসে আছে। ওই সমস্যাই চাইবে তাকে গিলে খেয়ে ফেলতে; কিন্তু জীবিকার সমস্যা তো আসলে জীবনেরই সমস্যা। জীবনের জন্যই জীবিকা প্রয়োজন—এই উপলব্ধিটা তরুণের জন্য পাথেয় হওয়া দরকার। আর আজকের দিনে জীবিকা অর্জন যে কঠিন হয়ে পড়ছে, তার কারণ হচ্ছে জীবন নিজেই এখন বিপন্ন। বিপন্ন মুনাফালিপ্সা ও ভোগবাদিতার খপ্পরে পড়ে। মুনাফালিপ্সা সৃজনশীল শ্রমের উৎপাদনক্ষমতাকে সংকুচিত করে যন্ত্রকে বড় করে তুলতে চাইছে। সে ব্যস্ত হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সৃষ্টিশীল কর্মের বিপরীতে এবং প্রতিপক্ষ হিসেবে স্থাপন করতে। উদ্ভাবন করছে নতুন নতুন মারণাস্ত্র, যুদ্ধ বাধাচ্ছে; বায়ুদূষণ, পানিদূষণ ঘটাচ্ছে; উত্ত্যক্ত করছে প্রকৃতিকে, উদ্যত হয়েছে প্রকৃতির বিনাশে; যার ফলে প্রকৃতি বন্ধু না হয়ে শত্রুতে পরিণত হয়েছে। চারদিকে এখন ধ্বংস ও মৃত্যুর ঘণ্টাধ্বনি। সুস্থ চিত্তবিনোদনের পরিবর্তে সরবরাহ চলছে মাদক ও পর্নোগ্রাফি। মাদক এখন নানা রকমের। ধর্মকেও ব্যবহার করা হচ্ছে মাদক হিসেবে, যে জন্য জঙ্গিবাদ প্রবল হয়ে উঠছে। কেবল অল্পশিক্ষিতরাই নয়, উচ্চশিক্ষিত তরুণেরাও ওই মাদকে আসক্ত হচ্ছে। বর্ণবাদ ও উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রচার চলছে, সমানে। এই সব তৎপরতার লক্ষ্যবিন্দু হচ্ছে তরুণ এবং তারুণ্য।
তারুণ্যের সঙ্গে শত্রুতার বিষয়ে সজ্ঞানতা তৈরি হলে তরুণ যাবে যুদ্ধে। সমাজ বদলের যুদ্ধে। কিন্তু সচেতনতা কেমন করে তৈরি হবে? তৈরি হওয়ার প্রধান উপায় হচ্ছে আন্দোলন। রাজনৈতিক আন্দোলন চাই। কিন্তু রাজনৈতিক আন্দোলন চাইলেই তো পাওয়া যাচ্ছে না। তাকেও গড়ে তুলতে হবে।
এই গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকাটা হতে পারে অত্যন্ত কার্যকর। বুদ্ধিজীবীরা দিতে পারেন পথের সন্ধান। তরুণকে নয় শুধু, তরুণদের অভিভাবকদেরও। আলোচনা, লেখা, বক্তৃতা—সবকিছুর মধ্য দিয়েই এই সত্যটা সামনে নিয়ে আসা দরকার যে পুঁজিবাদকে বিদায় করা চাই। পুঁজিবাদের সংস্কারে কাজ হবে না। আর পুঁজিবাদের বিকল্প তো পুঁজিবাদ হতে পারে না। পুঁজিবাদের বিকল্প হচ্ছে সমাজতন্ত্র। তার জন্য দরকার ব্যক্তিমালিকানার জায়গায় সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা। আর সেটা সম্ভব হবে না সামাজিক বিপ্লব না ঘটলে। সামাজিক বিপ্লব আজ অত্যাবশ্যক। কোনো এক দেশে নয়, সব দেশে। স্থানীয়ভাবে, তবে অবশ্যই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এবং পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে, অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান করে এবং মানবসভ্যতাকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে মানুষ ও মনুষ্যত্বের সমস্ত অর্জন সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে উচ্চতর একটি মানবিক সভ্যতা সমগ্র বিশ্বপরিসরে গড়ে তুলে।
সামাজিক বিপ্লবের কাজটা রাজনৈতিক। কারণ রাষ্ট্রই দায়িত্বে রয়েছে পুঁজিবাদকে রক্ষা করার। বিশ্বব্যাপী সব রাষ্ট্রেরই এখন ওই ভূমিকা। কারণ রাষ্ট্র সর্বদাই শাসকশ্রেণির স্বার্থকেই রক্ষা করতে চায় এবং শাসকশ্রেণি তার নিজের স্বার্থেই সামাজিক বিপ্লবকে প্রতিহত করতে তৎপর হয়। কিন্তু বৈপ্লবিক রাজনৈতিক কাজ কিছুতেই সফল হয় না সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি ও সমর্থন ছাড়া। সামাজিক বিপ্লবের জন্য সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি তাই অপরিহার্য। সেখানে বুদ্ধিজীবীদের এগিয়ে আসা চাই। গড়ে তোলা চাই সাংস্কৃতিক আন্দোলন, যে আন্দোলন কোনোমতেই আদর্শবিহীন হবে না। আদর্শ হবে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সামাজিক বিপ্লবকে সম্ভব করে তোলা। অব্যাহত জ্ঞানানুশীলন, সংস্কৃতিচর্চার যত মাধ্যম আছে, সবগুলো ব্যবহার করা এবং সৃষ্টিশীলতা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে ওই আন্দোলনের কাজ।
উন্নয়নের হিংস্র উন্মাদনায় অসুস্থ ব্যবস্থায় তরুণ ও তারুণ্য উভয়ের পক্ষেই আজ সুস্থ থাকাটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মনের ব্যাধি অনেক ক্ষতিকর শরীরের ব্যাধির তুলনায়। তরুণ ও তারুণ্যের জন্য সবচেয়ে বড় মানসিক ব্যাধিটা হলো হতাশা। হতাশা মানুষকে উদ্যমহীন করে, প্ররোচিত করে আত্মসমর্পণে, করে তোলে বিষণ্ন। জগদ্ব্যাপী এখন বিষণ্নতা বিরাজমান এবং বর্ধিষ্ণু। এর প্রতিকার হলো সৃষ্টিশীল কাজে যুক্ত থাকা। আর সবচেয়ে সৃষ্টিশীল কাজটা হচ্ছে সমাজবিপ্লবের লড়াই। সেটা যেন না ভুলি।
বিপদ আছে, কিন্তু আশাও আছে। আশা হলো পৃথিবীজুড়েই এখন এই সচেতনতা তৈরি হচ্ছে যে পুঁজিবাদই শেষ কথা নয়। তাকে বদলানো প্রয়োজন এবং বদলানো সম্ভব, যদি তরুণেরা এগিয়ে আসে তাদের তারুণ্য নিয়ে।
লেখক: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
উন্নয়নের হিংস্র উন্মাদনায় অসুস্থ ব্যবস্থায় তরুণ ও তারুণ্য উভয়ের পক্ষেই আজ সুস্থ থাকাটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মনের ব্যাধি অনেক ক্ষতিকর শরীরের ব্যাধির তুলনায়। তরুণ ও তারুণ্যের জন্য সবচেয়ে বড় মানসিক ব্যাধিটা হলো হতাশা।
শুধু বাংলাদেশ বলে নয়, গোটা বিশ্বেই বুর্জোয়া গণতন্ত্র এখন বেশ ভালো রকমের মুশকিলের মধ্যে পড়েছে। এই সংকট পুঁজিবাদেরই সংকট। পুঁজিবাদ এখন তার অন্তিম সময়ে এসে পৌঁছেছে। তাই তো দেখা যাচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ঘরে-বাইরে নিন্দিত এক লোকও পুনরায় নির্বাচিত হয়ে আসবেন—এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এবং সেটা ঘটতে পারে গণতন্ত্রের তীর্থস্থান বলে স্বীকৃত খোদ আমেরিকাতেই। অন্যত্রও দক্ষিণপন্থীরাই নির্বাচিত হয়ে আসছে। যারা সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখে, তারা পিছিয়ে যাচ্ছে। এমনটা ঘটানোর ক্ষমতা পুঁজিবাদ রাখে। পুঁজিবাদের যেটা স্বভাবগত, সেটাই সে করে চলেছে। করতলগত অর্থ, কূটকৌশল, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন হাতিয়ার ব্যবহার করে এবং মানবতাবিদ্বেষী বর্ণবাদ, উগ্র জাতীয়তাবাদ, ধর্মীয় মৌলবাদ ইত্যাদি প্রচারে সামান্যতম বিরতি দিচ্ছে না।
সভ্যতার হাজার হাজার বছর ধরে অর্জিত জ্ঞান ও অর্জনের সমস্তটা নিয়ে মানুষ একটি খাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে—সভ্যতা কী বিপজ্জনক, যে পথ ধরে এগোচ্ছে, সেই পথ ধরেই এগোবে এবং যাদের মধ্যে পড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে; নাকি পথ বদলে, ব্যক্তিমালিকানাকে পরিত্যাগ করে, সামাজিক মালিকানার দিকে এগিয়ে নিজেকে এবং মানবজাতিকেও বাঁচাবে? বাঁচাবে প্রাণী এবং প্রকৃতিকেও? এক কালে এই ধরাধামে ডাইনোসর নামে বিরাটাকার এক প্রাণী ছিল। তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে; মানব প্রজাতিও কি সেভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে? এবং সেই ধ্বংসের জন্য অন্য কেউ নয়, দায়ী হবে সে নিজেই? সমস্ত কিছুই তো ভেঙেচুরে যাচ্ছে। মানবিক সম্পর্কগুলো আর মানবিক থাকছে না। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো আশার আলো দেখায় না। তা ছাড়া এগুলো নমুনামাত্র। এদের তুলনায়ও কত কত ভয়ংকর ঘটনা যে প্রতিনিয়ত ঘটছে, যার খবর আমরা রাখি না এবং না রাখাটাই হয়তো মঙ্গলজনক, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য।
আমরা আশা করব ভয়ংকর এই ধ্বংসকাণ্ড ঘটবে না। কিন্তু না ঘটানোর জন্য তো চেষ্টার দরকার হবে। সেই প্রচেষ্টা কে করবে? জবাব হলো, করবে মানুষের তারুণ্য। তরুণ না বলে তারুণ্যের কথাই বলতে হয়। কেননা, তারুণ্য বয়সনির্ভর নয়, গুণনির্ভর বটে। কোনো তরুণই তরুণ নয়, যদি তার ভেতরে তারুণ্য জিনিসটা না থাকে। সে জন্য দেখা যায় তরুণও অকালে বৃদ্ধ হয়ে পড়ে, আবার বৃদ্ধের মধ্যেও তারুণ্য জীবন্ত ও কার্যকর থাকে।
যথার্থ তরুণের কথাই ভাবতে হবে। আজ যারা তরুণ, তাদের ওপরই নির্ভর করছে ভবিষ্যৎ—তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ এবং সমগ্র দেশের ভবিষ্যৎ। কারণ ভবিষ্যতে তারাই থাকবে এবং তাদের হাতেই থাকবে তাদের ভবিষ্যৎ; যদি থাকে।
তারুণ্যের গুণ কী? প্রধান গুণ সাহস। তারুণ্যের সাহস বাড়ে, যদি সে বিদ্রোহ করে। ব্যক্তিগত বিদ্রোহ নয়, সমষ্টিগত বিদ্রোহ। ব্যক্তিগত বিদ্রোহ বেয়াদবি, অসামাজিক কাজ, সন্ত্রাসী ইত্যাদি হতে পারে। হয়ও। ব্যক্তিগত নয়, বিদ্রোহ চাই সমষ্টিগত। তারুণ্যের অপর গুণ স্বপ্ন দেখার সাহস রাখা এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবিক করে তোলার ক্ষেত্রে সাহসী সংগ্রামে যুক্ত হওয়া। একা নয়, অনেকের সঙ্গে মিলে। যেমনটা ঘটেছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে। তরুণের জন্য জীবিকার সমস্যা ওত পেতে বসে আছে। ওই সমস্যাই চাইবে তাকে গিলে খেয়ে ফেলতে; কিন্তু জীবিকার সমস্যা তো আসলে জীবনেরই সমস্যা। জীবনের জন্যই জীবিকা প্রয়োজন—এই উপলব্ধিটা তরুণের জন্য পাথেয় হওয়া দরকার। আর আজকের দিনে জীবিকা অর্জন যে কঠিন হয়ে পড়ছে, তার কারণ হচ্ছে জীবন নিজেই এখন বিপন্ন। বিপন্ন মুনাফালিপ্সা ও ভোগবাদিতার খপ্পরে পড়ে। মুনাফালিপ্সা সৃজনশীল শ্রমের উৎপাদনক্ষমতাকে সংকুচিত করে যন্ত্রকে বড় করে তুলতে চাইছে। সে ব্যস্ত হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সৃষ্টিশীল কর্মের বিপরীতে এবং প্রতিপক্ষ হিসেবে স্থাপন করতে। উদ্ভাবন করছে নতুন নতুন মারণাস্ত্র, যুদ্ধ বাধাচ্ছে; বায়ুদূষণ, পানিদূষণ ঘটাচ্ছে; উত্ত্যক্ত করছে প্রকৃতিকে, উদ্যত হয়েছে প্রকৃতির বিনাশে; যার ফলে প্রকৃতি বন্ধু না হয়ে শত্রুতে পরিণত হয়েছে। চারদিকে এখন ধ্বংস ও মৃত্যুর ঘণ্টাধ্বনি। সুস্থ চিত্তবিনোদনের পরিবর্তে সরবরাহ চলছে মাদক ও পর্নোগ্রাফি। মাদক এখন নানা রকমের। ধর্মকেও ব্যবহার করা হচ্ছে মাদক হিসেবে, যে জন্য জঙ্গিবাদ প্রবল হয়ে উঠছে। কেবল অল্পশিক্ষিতরাই নয়, উচ্চশিক্ষিত তরুণেরাও ওই মাদকে আসক্ত হচ্ছে। বর্ণবাদ ও উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রচার চলছে, সমানে। এই সব তৎপরতার লক্ষ্যবিন্দু হচ্ছে তরুণ এবং তারুণ্য।
তারুণ্যের সঙ্গে শত্রুতার বিষয়ে সজ্ঞানতা তৈরি হলে তরুণ যাবে যুদ্ধে। সমাজ বদলের যুদ্ধে। কিন্তু সচেতনতা কেমন করে তৈরি হবে? তৈরি হওয়ার প্রধান উপায় হচ্ছে আন্দোলন। রাজনৈতিক আন্দোলন চাই। কিন্তু রাজনৈতিক আন্দোলন চাইলেই তো পাওয়া যাচ্ছে না। তাকেও গড়ে তুলতে হবে।
এই গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকাটা হতে পারে অত্যন্ত কার্যকর। বুদ্ধিজীবীরা দিতে পারেন পথের সন্ধান। তরুণকে নয় শুধু, তরুণদের অভিভাবকদেরও। আলোচনা, লেখা, বক্তৃতা—সবকিছুর মধ্য দিয়েই এই সত্যটা সামনে নিয়ে আসা দরকার যে পুঁজিবাদকে বিদায় করা চাই। পুঁজিবাদের সংস্কারে কাজ হবে না। আর পুঁজিবাদের বিকল্প তো পুঁজিবাদ হতে পারে না। পুঁজিবাদের বিকল্প হচ্ছে সমাজতন্ত্র। তার জন্য দরকার ব্যক্তিমালিকানার জায়গায় সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা। আর সেটা সম্ভব হবে না সামাজিক বিপ্লব না ঘটলে। সামাজিক বিপ্লব আজ অত্যাবশ্যক। কোনো এক দেশে নয়, সব দেশে। স্থানীয়ভাবে, তবে অবশ্যই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এবং পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে, অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান করে এবং মানবসভ্যতাকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে মানুষ ও মনুষ্যত্বের সমস্ত অর্জন সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে উচ্চতর একটি মানবিক সভ্যতা সমগ্র বিশ্বপরিসরে গড়ে তুলে।
সামাজিক বিপ্লবের কাজটা রাজনৈতিক। কারণ রাষ্ট্রই দায়িত্বে রয়েছে পুঁজিবাদকে রক্ষা করার। বিশ্বব্যাপী সব রাষ্ট্রেরই এখন ওই ভূমিকা। কারণ রাষ্ট্র সর্বদাই শাসকশ্রেণির স্বার্থকেই রক্ষা করতে চায় এবং শাসকশ্রেণি তার নিজের স্বার্থেই সামাজিক বিপ্লবকে প্রতিহত করতে তৎপর হয়। কিন্তু বৈপ্লবিক রাজনৈতিক কাজ কিছুতেই সফল হয় না সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি ও সমর্থন ছাড়া। সামাজিক বিপ্লবের জন্য সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি তাই অপরিহার্য। সেখানে বুদ্ধিজীবীদের এগিয়ে আসা চাই। গড়ে তোলা চাই সাংস্কৃতিক আন্দোলন, যে আন্দোলন কোনোমতেই আদর্শবিহীন হবে না। আদর্শ হবে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সামাজিক বিপ্লবকে সম্ভব করে তোলা। অব্যাহত জ্ঞানানুশীলন, সংস্কৃতিচর্চার যত মাধ্যম আছে, সবগুলো ব্যবহার করা এবং সৃষ্টিশীলতা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে ওই আন্দোলনের কাজ।
উন্নয়নের হিংস্র উন্মাদনায় অসুস্থ ব্যবস্থায় তরুণ ও তারুণ্য উভয়ের পক্ষেই আজ সুস্থ থাকাটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মনের ব্যাধি অনেক ক্ষতিকর শরীরের ব্যাধির তুলনায়। তরুণ ও তারুণ্যের জন্য সবচেয়ে বড় মানসিক ব্যাধিটা হলো হতাশা। হতাশা মানুষকে উদ্যমহীন করে, প্ররোচিত করে আত্মসমর্পণে, করে তোলে বিষণ্ন। জগদ্ব্যাপী এখন বিষণ্নতা বিরাজমান এবং বর্ধিষ্ণু। এর প্রতিকার হলো সৃষ্টিশীল কাজে যুক্ত থাকা। আর সবচেয়ে সৃষ্টিশীল কাজটা হচ্ছে সমাজবিপ্লবের লড়াই। সেটা যেন না ভুলি।
বিপদ আছে, কিন্তু আশাও আছে। আশা হলো পৃথিবীজুড়েই এখন এই সচেতনতা তৈরি হচ্ছে যে পুঁজিবাদই শেষ কথা নয়। তাকে বদলানো প্রয়োজন এবং বদলানো সম্ভব, যদি তরুণেরা এগিয়ে আসে তাদের তারুণ্য নিয়ে।
লেখক: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১০ বছর ধরে নিজের আত্মজীবনী লিখেছেন বরেণ্য অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্মাতা আবুল হায়াত। নাম দিয়েছেন ‘রবি পথ’। অবশেষে প্রকাশ হচ্ছে তাঁর আত্মজীবনী। আগামী ২ নভেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজন করা হয়েছে রবি পথের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান।
৩ ঘণ্টা আগেপর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে