সৌদি আরবের কাছে প্রথম ম্যাচে হারের পর আর্জেন্টিনাকে নিয়ে বাজি ধরার লোক কমে গিয়েছিল আশঙ্কাজনক হারে। সব সমালোচনার জবাব দিয়ে সেই দলটাই এখন ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে। ‘বিরক্তিকর’ ফুটবল দর্শন নিয়ে সমালোচনা থাকলেও ব্রাজিলের মতো দলকে পেছনে ফেলে ঠিকই টিকে আছে ক্রোয়েশিয়া। প্রতিপক্ষ যে-ই হোক, শেষ চার মানেই কঠিন এক পরীক্ষা। কঠিন সে পরীক্ষায় মেসিদের আছে স্বস্তির এক ইতিহাস। ইতিহাস বলে, সেমিফাইনালে কখনো হারেনি আর্জেন্টিনা।

শেষ চারে আর্জেন্টিনার ইতিহাস ১৯৩০,

প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র, উরুগুয়ে বিশ্বকাপ 
ফল: ৬-১ গোলে জয়ী 
ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপে ১৩ দল ভাগ হয়ে খেলেছিল ৪ গ্রুপে। চার গ্রুপের সেরা দল খেলেছিল সেমিফাইনালে। আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ছিল যুক্তরাষ্ট্র, যাদের অধিকাংশ ফুটবলারই ছিল ব্রিটিশ। ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত করে ফাইনালে মুখোমুখি হয় স্বাগতিক উরুগুয়ের। ৪-২ গোলে হেরে প্রথম বিশ্বকাপের রানার্সআপ হয় আর্জেন্টিনা। 

১৯৮৬, প্রতিপক্ষ বেলজিয়াম, মেক্সিকো বিশ্বকাপ 
ফল: ২-০ গোলে জয়ী
কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের পর সেমিতে বেলজিয়ামের বিপক্ষেও এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জোড়া গোল করেছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা।

জোড়া গোল করেন বেলজিয়ামের বিপক্ষেও। স্তাদিও আজতেকে ৫১ ও ৬৩ মিনিটে গোল পান আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। দলকে তোলেন ফাইনালে। পশ্চিম জার্মানিকে ৩-২ গোলে হারিয়ে সেবার নিজেদের দ্বিতীয় ও সবশেষ বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পায় আলবিসেলেস্তারা। 

১৯৯০, প্রতিপক্ষ ইতালি, ইতালি বিশ্বকাপ 
ফল: ১-১ গোলে ড্র, টাইব্রেকে ৪-৩ গোলে জয়ী
নেপলসে ১৭ মিনিটে শিলাচির গোলে এগিয়ে থাকা ইতালির বিপক্ষে আর্জেন্টিনাকে ৬৭ মিনিটে সমতায় ফেরান কানিজিয়া। খেলা টাইব্রেকে গড়ালে গোলরক্ষক গয়কোচিয়া ঠেকান দুই শট।

ফাইনালে আবারও পশ্চিম জার্মানির মুখোমুখি হলে রেফারির বিতর্কিত এক সিদ্ধান্তে পেনাল্টিতে হেরে যায় আর্জেন্টিনা। 

২০১৪, প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস, ব্রাজিল বিশ্বকাপ 
ফল: গোলশূন্য ড্র, টাইব্রেকে ৪-২ গোলে জয়ী
১৯৯০ সালের পর আরেকটি সেমিফাইনালে উঠতে আর্জেন্টিনাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২৪ বছর। অ্যারেনা করিন্থিয়ানসে ১২০ মিনিটে গোল করতে পারেনি আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস কোনো দলই। খেলা টাইব্রেকে গেলে ডাচদের সামনে চীনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়ান গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরো। ডাচদের টপকালেও আবারও জার্মানির কাছেই কপাল পোড়ে আর্জেন্টিনার। ১৯৭৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতলেও সেবারের ফরম্যাটে ছিল না সেমিফাইনাল। দ্বিতীয় রাউন্ডের সেরা দুই দল খেলে ফাইনালে। 

ক্রোয়েশিয়ার শেষ চারের ইতিহাস 
১৯৯৮, প্রতিপক্ষ ফ্রান্স, ফ্রান্স বিশ্বকাপ 
ফল: ২-১ গোলে হার 
গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনার কাছে রানার্সআপ হয়েছিল ক্রোয়াটরা। কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে চমকে দেয় ফুটবল বিশ্বকেও। শেষ আটে ক্রোয়েশিয়া ৩-০ গোলে হারিয়ে দেয় ইউরোপিয়ান পাওয়ার হাউস খ্যাত জার্মানিকে। সেমিফাইনালে ফ্রান্সের কাছে ২-১ গোলে হারলেও অভিষিক্ত দল হিসেবে তৃতীয় হয়ে গড়ে ইতিহাস। 

২০১৮, বিপক্ষ ইংল্যান্ড, রাশিয়া বিশ্বকাপ 
ফল: ২-১ গোলে জয় 
১৯৯৮ বিশ্বকাপে তৃতীয় হওয়া দলটি পরের ১৬ বছরে খেলেছে তিন বিশ্বকাপে। ২০১৮ বিশ্বকাপে জ্বলে ওঠে দলটি। লুকা মদরিচ, মারিও মানজুকিচ, ইভান পেরিসিচ, ইভান রাকিতিচদের নিয়ে গড়া দলটা গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে হয় গ্রুপের সেরা। দ্বিতীয় রাউন্ড, কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকে জিতে শেষ চারে প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় ইংল্যান্ডকে। ১২০ মিনিট ফুটবল খেলে ২-১ গোলে জিতে প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলে ক্রোয়াটরা। ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে ৪-২ গোলে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় বিশ্বকাপ জয়ের।