মামুনুর রশীদ
লুই কানের সঙ্গে দেখা হলো অনেক দিন পর। প্রায় ৬০ বছর হবে। সেটা পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খানের সময়। হঠাৎ করে ফার্মগেট এলাকা, যেখানে ছিল রাজাবাজার-ইন্দিরা রোডের দিকে ছোট ছোট পথ। সেখানে তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। বড় বড় রাস্তার পরিকল্পনা করা হলো। আমরা জানলাম, এখানেই হবে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাজধানী। পাকিস্তানের প্রথম রাজধানী থাকবে পশ্চিম পাকিস্তানেই। ১৯৪৭ সালের পর রাজধানী করাচি থেকে রাওয়ালপিন্ডি এবং এরপর হয় ইসলামাবাদ। আর দেশের দুই প্রান্তের মধ্যে বৈষম্য কমাতে হলে প্রয়োজন এখানেও একটা রাজধানী করা। তখন একতলা একটা হলঘরে ওপরে টিনের চালা দিয়ে গরিবানা হালের প্রাদেশিক আইনসভা চলছিল। আর জাতীয় সংসদের জন্য কোনো ব্যবস্থাই ছিল না। একটা ব্যবস্থা ছিল জগন্নাথ হলের ওখানে, যেখানে বায়ান্ন সালের ভাষা আন্দোলনের সময় প্রাদেশিক আইনসভার অধিবেশন চলছিল।
আইয়ুব খান উর্দি ছেড়ে রাজনীতিতে নেমেছেন। প্রচুর মার্কিন সাহায্য আসছে। কাজেই প্রয়োজন রাস্তাঘাট, কলকারখানা নির্মাণ। শুরু হলো কর্মযজ্ঞ। বিশ্ববিখ্যাত স্থপতি লুই কানকে দিয়ে নকশা করে বেশ তড়িঘড়ি কাজ শুরু হয়ে গেল। প্রশস্ত রাস্তা, বিশাল সংসদ ভবন, চারদিকে কৃত্রিম জলাধার, স্পিকার, মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের থাকার জায়গা এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থাসহ সবকিছুর কাজই শুরু হয়ে গেল।
এদিকে দেশে গণতন্ত্র নেই। অথচ গণতন্ত্রের জন্য বিশাল অবকাঠামো তৈরি হতে চলল। কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংসদ ভবন নির্মাণ হবে। একদিকে চলছে পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদ লুণ্ঠন করে রাওয়ালপিন্ডি-ইসলামাবাদে নিয়ে যাওয়া আর অন্য দিকে দ্বিতীয় রাজধানীর কাজ। আমরা কিছুটা খুশিই। হোক না দরিদ্র পূর্ব পাকিস্তানে কিছু অবকাঠামোর কাজ। আন্দোলন তো থামছে না। বৈষম্য কমিয়ে আনার প্রচেষ্টাও চলছে বক্তৃতায়, বিবৃতিতে। কিন্তু সামরিক জান্তার ওপর কারোরই আস্থা নেই। গণ-আন্দোলনের চাপে আইয়ুব খান সরে গেলেন। এলেন আরেক সামরিক একনায়ক ইয়াহিয়া খান। একটা নির্বাচনও হয়ে গেল। কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তর হলো না। লুই কানের স্বপ্নের দ্বিতীয় রাজধানীর কাজ একটু শম্বুকগতিতে চলছে।
এর মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। স্বাধীন দেশে আবার কাজ শুরু হলো। দ্রুতই সংসদ ভবন দাঁড়িয়ে গেল। প্রখ্যাত নগরবিদের পরিকল্পনার ফসল দ্বিতীয় রাজধানীর বদলে প্রধান রাজধানীর সংসদ ভবনে গণতান্ত্রিক চর্চা শুরু হলো। সারা দেশের, এমনকি ঢাকা শহরের অবকাঠামোর সঙ্গে সংগতিহীন কাজটি বেশ চোখে পড়ার মতো। নাম হলো শেরেবাংলা নগর। এর প্রশস্ত রাস্তাটির নাম মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ। বিলাসবহুল এই সংসদ এমনই এক ইন্দ্রপুরী, যেখানে কোনো সংসদ সদস্য সিঁড়ি বা লিফটে ভুল করলে হারিয়ে যেতে পারেন।
আমার মনে হয় এমন জটিল ব্যবস্থার ভবনে কোথাও সংসদ বসে না। বিপুল তার রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়। বাংলাদেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে কত দিন এই সংসদ সত্যিকারভাবে সক্রিয় থেকেছে তা রীতিমতো গুনে বলা যাবে। তবু আজকের এই ঢাকা শহরে লুই কান তাঁর বিপুল পরিকল্পনা নিয়ে বেঁচে আছেন।
ডালাসে এসে সেই ফোর্টওয়ার্থ বা ষাঁড়ের শহরের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে কিম্বেল আর্ট মিউজিয়াম। প্রচণ্ড গরমে লম্বা সিংয়ের ষাঁড়গুলোর প্যারেড দেখার পরই দেখা মিলবে লুই কানের। এই মিউজিয়ামেরও পরিকল্পনা করেছেন তিনি। চারদিকে প্রশস্ত জায়গা। এর মধ্যে বিশাল অট্টালিকা এবং উদ্যানের মধ্যেই এই জাদুঘর। ঢাকায় দ্বিতীয় রাজধানীর কাজ করার সময়ই এটার কাজ শুরু হয়। ১৯৭২ সালে এই মিউজিয়ামের উদ্বোধন হয়। গত বছর ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে।
একই শিল্পী পৃথিবীর দুই প্রান্তে দুটি বিশাল স্থাপনা করেছেন। আয়তনে অবশ্য ঢাকার কাজটি অনেক বড়। এই সময়ে তিনি আর কোথাও কোনো স্থাপনার পরিকল্পনা করেছেন কি না, তা অবশ্য আমার জানা নেই। ঢাকার এই অংশের নগর-পরিকল্পনার কাজ করেছেন এক সামরিক একনায়কের সময়। এখানকার কোনো পরিকল্পনাবিদের কোনো মতামত তাঁকে নিতে হয়নি। আর ডালাসের কিম্বেল মিউজিয়াম ব্যক্তিগত সম্পদ হলেও নানা বিশেষজ্ঞের নানা ধরনের মতামত তাঁকে নিতে হয়েছিল।
কিম্বেল আর্ট মিউজিয়ামের ভেতরটা বিশাল বিশাল প্রদর্শনী-কক্ষে বিন্যস্ত, কিন্তু নয়নজুড়ানো দৃশ্য বাইরে। বাইরে অসংখ্য গাছগাছালি, বসার জায়গা; প্রচণ্ড গরমেও একটা প্রশান্তি এনে দেয়। স্থাপত্যবিদ্যায় আকাট মূর্খ আমার কাছে ওই কর্মটিতেই তাঁর অধিক মনোযোগ লক্ষ করেছি।
মানব-ইতিহাসের এক একটি পর্যায় থেকে আমরা দেখি রাজা-বাদশাহদের একটা স্থাপত্যপ্রেম ছিল। বিশ্বের অনেক বড় বড় স্থাপনা হাজার বছর ধরে আমাদের চিন্তাকে নতুন করে জাগ্রত করে। নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হই। কী করে ওই সময়ে এত বড় বড় স্থাপনা নির্মাণ সম্ভব হয়েছে? এসব দেখে মানুষের ভাবনা ও সৃজনশীলতার দরজা খুলে যায়। সুদূর অতীতে পৃথিবীর প্রায় সব বড় শহরেই বিস্ময়কর কিছু পরিকল্পিত স্থাপনা চোখে পড়ে। বর্তমানে যেকোনো বড় স্থাপনা বা শহর পরিকল্পনা করতে একক নয়, নানা ধরনের মেধার সংযোজনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। একদিকে নাগরিকদের সুবিধার চিন্তা, অন্য দিকে বড় ধরনের মনোযোগ দেওয়া হয় পরিবেশের দিকে। এখন এমন অনেক শহর তৈরি হচ্ছে যেটি আসলে একটি গ্রাম। দুই দিকে সবুজ বনানী, মাঝখানে পথটি চলে গেছে নিঃশব্দে। পথিকের চোখের ক্লান্তি হচ্ছে না। আমাদের প্রিয় ঢাকা শহরে যেমন একদা বিশাল বিশাল প্রাচীন অট্টালিকা ছিল, তেমনি সবুজ বনানীর মধ্য দিয়ে পথ চলতাম আমরা। কত প্রাচীন বৃক্ষ, জলাশয় এসবে আমাদের স্বপ্ন নির্মাণ হতো। আজ শহর রুক্ষ, মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের দোকান সংস্কৃতির স্বপ্নহীন এক আবাস। অথচ এখনো যৌথ মেধার ভিত্তিতে কত চমৎকার স্থাপনা করা সম্ভব। একেবারেই ঢাকার কেন্দ্রস্থলে হাতিরঝিল কী করে সম্ভব হলো? বিশাল জলাধারের চারদিকে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করে স্থানটি এখন অনেক মানুষের বিনোদনের স্থান হয়ে গেছে। ছুটির দিনে পরিবারসহ তারা এখানে অবসর কাটায়।
আমাদের পরিত্যক্ত এয়ারপোর্টেও এ রকম ব্যবস্থা হতে পারে। পুরান ঢাকার জেলখানাটিতেও এমন ব্যবস্থা করা সম্ভব। কিন্তু এসব হয়তো হবে না। কারণ রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে থাকে ক্ষমতা দখল, দেশটাকে বাসযোগ্য করার অ্যাজেন্ডা সেখানে উপেক্ষিত। আমাদের এই শহরে একটা ছোট্ট রেলস্টেশন ছিল ফুলবাড়িয়ায়। অনেক স্মৃতিবিজড়িত সেই স্টেশনটিকে রক্ষা করা হয়নি। চারদিকে দোকান আর নিয়ন্ত্রণহীন বাস, রিকশার তুমুল জট।
এমনি অনেক ঐতিহ্যবাহী রেলস্টেশন, জংশন আছে এ দেশে। প্রচুর তাদের জায়গাজমি, যা ক্ষমতাবানেরা দখল করে রেখেছে। সেই সব জায়গাতেও বিনোদনকেন্দ্র হতে পারত। সেই ছোটবেলায় যখন রেলে করে ঢাকায় এসেছি, তখন কী প্রবল উৎসাহে স্টেশনগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখেছি যেন রেলের জানালা দিয়ে পৃথিবীটাই দেখছি। সেই রেলভ্রমণের আনন্দটুকু শেষ করে দিয়ে বাস-মিনিবাসের সংকীর্ণতায় নিক্ষেপ করল আমাদের। জাপান-চীন-ভারত দিন দিন রেলকে এক নম্বর পরিবহন মনে করছে আর বাংলাদেশ হয়ে গেল তাদের অটোমোবাইলের বড় রপ্তানির কেন্দ্র।
রাজনীতিবিদ, আমলা, প্রকৌশলী সবাই প্রায়ই হয়ে যান সবজান্তা। দেশে অনেক প্রতিভাবান স্থপতি আছেন। একদা লুই কান এ দেশে এসেছিলেন সামরিক শাসনামলে। আজ দেশের স্থপতিদের মেধা ব্যবহার করলে দেশটা অনেক বেশি বাসযোগ্য হতে পারে। সেই সঙ্গে নৃবিজ্ঞানী, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক সবার স্বপ্নকেও ঠাঁই দিতে হবে।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব
লুই কানের সঙ্গে দেখা হলো অনেক দিন পর। প্রায় ৬০ বছর হবে। সেটা পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খানের সময়। হঠাৎ করে ফার্মগেট এলাকা, যেখানে ছিল রাজাবাজার-ইন্দিরা রোডের দিকে ছোট ছোট পথ। সেখানে তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। বড় বড় রাস্তার পরিকল্পনা করা হলো। আমরা জানলাম, এখানেই হবে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাজধানী। পাকিস্তানের প্রথম রাজধানী থাকবে পশ্চিম পাকিস্তানেই। ১৯৪৭ সালের পর রাজধানী করাচি থেকে রাওয়ালপিন্ডি এবং এরপর হয় ইসলামাবাদ। আর দেশের দুই প্রান্তের মধ্যে বৈষম্য কমাতে হলে প্রয়োজন এখানেও একটা রাজধানী করা। তখন একতলা একটা হলঘরে ওপরে টিনের চালা দিয়ে গরিবানা হালের প্রাদেশিক আইনসভা চলছিল। আর জাতীয় সংসদের জন্য কোনো ব্যবস্থাই ছিল না। একটা ব্যবস্থা ছিল জগন্নাথ হলের ওখানে, যেখানে বায়ান্ন সালের ভাষা আন্দোলনের সময় প্রাদেশিক আইনসভার অধিবেশন চলছিল।
আইয়ুব খান উর্দি ছেড়ে রাজনীতিতে নেমেছেন। প্রচুর মার্কিন সাহায্য আসছে। কাজেই প্রয়োজন রাস্তাঘাট, কলকারখানা নির্মাণ। শুরু হলো কর্মযজ্ঞ। বিশ্ববিখ্যাত স্থপতি লুই কানকে দিয়ে নকশা করে বেশ তড়িঘড়ি কাজ শুরু হয়ে গেল। প্রশস্ত রাস্তা, বিশাল সংসদ ভবন, চারদিকে কৃত্রিম জলাধার, স্পিকার, মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের থাকার জায়গা এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থাসহ সবকিছুর কাজই শুরু হয়ে গেল।
এদিকে দেশে গণতন্ত্র নেই। অথচ গণতন্ত্রের জন্য বিশাল অবকাঠামো তৈরি হতে চলল। কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংসদ ভবন নির্মাণ হবে। একদিকে চলছে পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদ লুণ্ঠন করে রাওয়ালপিন্ডি-ইসলামাবাদে নিয়ে যাওয়া আর অন্য দিকে দ্বিতীয় রাজধানীর কাজ। আমরা কিছুটা খুশিই। হোক না দরিদ্র পূর্ব পাকিস্তানে কিছু অবকাঠামোর কাজ। আন্দোলন তো থামছে না। বৈষম্য কমিয়ে আনার প্রচেষ্টাও চলছে বক্তৃতায়, বিবৃতিতে। কিন্তু সামরিক জান্তার ওপর কারোরই আস্থা নেই। গণ-আন্দোলনের চাপে আইয়ুব খান সরে গেলেন। এলেন আরেক সামরিক একনায়ক ইয়াহিয়া খান। একটা নির্বাচনও হয়ে গেল। কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তর হলো না। লুই কানের স্বপ্নের দ্বিতীয় রাজধানীর কাজ একটু শম্বুকগতিতে চলছে।
এর মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। স্বাধীন দেশে আবার কাজ শুরু হলো। দ্রুতই সংসদ ভবন দাঁড়িয়ে গেল। প্রখ্যাত নগরবিদের পরিকল্পনার ফসল দ্বিতীয় রাজধানীর বদলে প্রধান রাজধানীর সংসদ ভবনে গণতান্ত্রিক চর্চা শুরু হলো। সারা দেশের, এমনকি ঢাকা শহরের অবকাঠামোর সঙ্গে সংগতিহীন কাজটি বেশ চোখে পড়ার মতো। নাম হলো শেরেবাংলা নগর। এর প্রশস্ত রাস্তাটির নাম মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ। বিলাসবহুল এই সংসদ এমনই এক ইন্দ্রপুরী, যেখানে কোনো সংসদ সদস্য সিঁড়ি বা লিফটে ভুল করলে হারিয়ে যেতে পারেন।
আমার মনে হয় এমন জটিল ব্যবস্থার ভবনে কোথাও সংসদ বসে না। বিপুল তার রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়। বাংলাদেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে কত দিন এই সংসদ সত্যিকারভাবে সক্রিয় থেকেছে তা রীতিমতো গুনে বলা যাবে। তবু আজকের এই ঢাকা শহরে লুই কান তাঁর বিপুল পরিকল্পনা নিয়ে বেঁচে আছেন।
ডালাসে এসে সেই ফোর্টওয়ার্থ বা ষাঁড়ের শহরের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে কিম্বেল আর্ট মিউজিয়াম। প্রচণ্ড গরমে লম্বা সিংয়ের ষাঁড়গুলোর প্যারেড দেখার পরই দেখা মিলবে লুই কানের। এই মিউজিয়ামেরও পরিকল্পনা করেছেন তিনি। চারদিকে প্রশস্ত জায়গা। এর মধ্যে বিশাল অট্টালিকা এবং উদ্যানের মধ্যেই এই জাদুঘর। ঢাকায় দ্বিতীয় রাজধানীর কাজ করার সময়ই এটার কাজ শুরু হয়। ১৯৭২ সালে এই মিউজিয়ামের উদ্বোধন হয়। গত বছর ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে।
একই শিল্পী পৃথিবীর দুই প্রান্তে দুটি বিশাল স্থাপনা করেছেন। আয়তনে অবশ্য ঢাকার কাজটি অনেক বড়। এই সময়ে তিনি আর কোথাও কোনো স্থাপনার পরিকল্পনা করেছেন কি না, তা অবশ্য আমার জানা নেই। ঢাকার এই অংশের নগর-পরিকল্পনার কাজ করেছেন এক সামরিক একনায়কের সময়। এখানকার কোনো পরিকল্পনাবিদের কোনো মতামত তাঁকে নিতে হয়নি। আর ডালাসের কিম্বেল মিউজিয়াম ব্যক্তিগত সম্পদ হলেও নানা বিশেষজ্ঞের নানা ধরনের মতামত তাঁকে নিতে হয়েছিল।
কিম্বেল আর্ট মিউজিয়ামের ভেতরটা বিশাল বিশাল প্রদর্শনী-কক্ষে বিন্যস্ত, কিন্তু নয়নজুড়ানো দৃশ্য বাইরে। বাইরে অসংখ্য গাছগাছালি, বসার জায়গা; প্রচণ্ড গরমেও একটা প্রশান্তি এনে দেয়। স্থাপত্যবিদ্যায় আকাট মূর্খ আমার কাছে ওই কর্মটিতেই তাঁর অধিক মনোযোগ লক্ষ করেছি।
মানব-ইতিহাসের এক একটি পর্যায় থেকে আমরা দেখি রাজা-বাদশাহদের একটা স্থাপত্যপ্রেম ছিল। বিশ্বের অনেক বড় বড় স্থাপনা হাজার বছর ধরে আমাদের চিন্তাকে নতুন করে জাগ্রত করে। নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হই। কী করে ওই সময়ে এত বড় বড় স্থাপনা নির্মাণ সম্ভব হয়েছে? এসব দেখে মানুষের ভাবনা ও সৃজনশীলতার দরজা খুলে যায়। সুদূর অতীতে পৃথিবীর প্রায় সব বড় শহরেই বিস্ময়কর কিছু পরিকল্পিত স্থাপনা চোখে পড়ে। বর্তমানে যেকোনো বড় স্থাপনা বা শহর পরিকল্পনা করতে একক নয়, নানা ধরনের মেধার সংযোজনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। একদিকে নাগরিকদের সুবিধার চিন্তা, অন্য দিকে বড় ধরনের মনোযোগ দেওয়া হয় পরিবেশের দিকে। এখন এমন অনেক শহর তৈরি হচ্ছে যেটি আসলে একটি গ্রাম। দুই দিকে সবুজ বনানী, মাঝখানে পথটি চলে গেছে নিঃশব্দে। পথিকের চোখের ক্লান্তি হচ্ছে না। আমাদের প্রিয় ঢাকা শহরে যেমন একদা বিশাল বিশাল প্রাচীন অট্টালিকা ছিল, তেমনি সবুজ বনানীর মধ্য দিয়ে পথ চলতাম আমরা। কত প্রাচীন বৃক্ষ, জলাশয় এসবে আমাদের স্বপ্ন নির্মাণ হতো। আজ শহর রুক্ষ, মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের দোকান সংস্কৃতির স্বপ্নহীন এক আবাস। অথচ এখনো যৌথ মেধার ভিত্তিতে কত চমৎকার স্থাপনা করা সম্ভব। একেবারেই ঢাকার কেন্দ্রস্থলে হাতিরঝিল কী করে সম্ভব হলো? বিশাল জলাধারের চারদিকে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করে স্থানটি এখন অনেক মানুষের বিনোদনের স্থান হয়ে গেছে। ছুটির দিনে পরিবারসহ তারা এখানে অবসর কাটায়।
আমাদের পরিত্যক্ত এয়ারপোর্টেও এ রকম ব্যবস্থা হতে পারে। পুরান ঢাকার জেলখানাটিতেও এমন ব্যবস্থা করা সম্ভব। কিন্তু এসব হয়তো হবে না। কারণ রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে থাকে ক্ষমতা দখল, দেশটাকে বাসযোগ্য করার অ্যাজেন্ডা সেখানে উপেক্ষিত। আমাদের এই শহরে একটা ছোট্ট রেলস্টেশন ছিল ফুলবাড়িয়ায়। অনেক স্মৃতিবিজড়িত সেই স্টেশনটিকে রক্ষা করা হয়নি। চারদিকে দোকান আর নিয়ন্ত্রণহীন বাস, রিকশার তুমুল জট।
এমনি অনেক ঐতিহ্যবাহী রেলস্টেশন, জংশন আছে এ দেশে। প্রচুর তাদের জায়গাজমি, যা ক্ষমতাবানেরা দখল করে রেখেছে। সেই সব জায়গাতেও বিনোদনকেন্দ্র হতে পারত। সেই ছোটবেলায় যখন রেলে করে ঢাকায় এসেছি, তখন কী প্রবল উৎসাহে স্টেশনগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখেছি যেন রেলের জানালা দিয়ে পৃথিবীটাই দেখছি। সেই রেলভ্রমণের আনন্দটুকু শেষ করে দিয়ে বাস-মিনিবাসের সংকীর্ণতায় নিক্ষেপ করল আমাদের। জাপান-চীন-ভারত দিন দিন রেলকে এক নম্বর পরিবহন মনে করছে আর বাংলাদেশ হয়ে গেল তাদের অটোমোবাইলের বড় রপ্তানির কেন্দ্র।
রাজনীতিবিদ, আমলা, প্রকৌশলী সবাই প্রায়ই হয়ে যান সবজান্তা। দেশে অনেক প্রতিভাবান স্থপতি আছেন। একদা লুই কান এ দেশে এসেছিলেন সামরিক শাসনামলে। আজ দেশের স্থপতিদের মেধা ব্যবহার করলে দেশটা অনেক বেশি বাসযোগ্য হতে পারে। সেই সঙ্গে নৃবিজ্ঞানী, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক সবার স্বপ্নকেও ঠাঁই দিতে হবে।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব
১০ বছর ধরে নিজের আত্মজীবনী লিখেছেন বরেণ্য অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্মাতা আবুল হায়াত। নাম দিয়েছেন ‘রবি পথ’। অবশেষে প্রকাশ হচ্ছে তাঁর আত্মজীবনী। আগামী ২ নভেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজন করা হয়েছে রবি পথের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান।
১ ঘণ্টা আগেএকদিন ভোরবেলা জাকারবার্গ লক্ষ করলেন যে পৃথিবীতে একটা ছোট্ট দেশে তাঁর সবচেয়ে বেশি ব্যবসা হচ্ছে। সামনের ফ্লোরটায় দেখলেন দেশটা ছোট বটে, কিন্তু জনসংখ্যা বেশি। আর এই দেশের জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। ফেসবুকে দেখতে পেলেন অসংখ্য বার্তা—সবই রাজনৈতিক এবং ছবিতে এ বিষয়ে বিপুল জনগণের
২ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২৩ অক্টোবর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ওই সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ—বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তাদের নেতা-কর্মীরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র হামলা পরিচালনা করে অসংখ্য আন্দোলনকারীকে হত্যা ও অনেকের জীবন বি
২ ঘণ্টা আগেইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম রোমান্টিক কবি ছিলেন জন কিটস। কবিতা ছাড়া কিটস কোনো গদ্য লেখার চেষ্টা করেননি। তাঁর কাব্যজীবন ছিল মাত্র ছয় বছরের। অর্থাৎ উনিশ থেকে চব্বিশ বছর বয়স পর্যন্ত। মৃত্যুর মাত্র চার বছর আগে তাঁর কবিতাগুলো প্রকাশিত হয়। তৎকালীন সমালোচকদের দ্বারা কিটসের কবিতা খুব একটা আলোচিত হয়নি। তবে মৃত্য
২ ঘণ্টা আগে