Ajker Patrika

কচুরিপানায় বোরো চাষ ব্যাহত

হারুনুর রশিদ, রায়পুরা
আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪: ০২
কচুরিপানায় বোরো চাষ ব্যাহত

নরসিংদীর রায়পুরার মুছাপুরে পুরোনো ব্রহ্মপুত্রের শাখা থেকে (স্থানীয়দের কাছে মরা নদী নামে পরিচিত) পানি সরতে না পারায় ফসলি জমিতে আটকে আছে কচুরিপানা। এ কারণে ছয় বছর বন্ধ আছে প্রায় এক হাজার একর জমির চাষাবাদ। এসব কচুরিপানা পরিষ্কার করতে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকেরা। ফলে এবারও এসব জমিতে বোরো আবাদ সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাহমুদাবাদ পুরোনো ফেরিঘাট থেকে তুলাতলী হয়ে মেঘনায় চলে গেছে মরা নদীটি। বর্তমানে মরা এ নদীতে তথা জমিতে প্রায় ছয় বছর ধরে পানি চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফসলি জমিগুলোতে পর্যায়ক্রমে কচুরিপানা ও আগাছায় ভরে গেছে। ফলে প্রায় ছয় বছর কোনো ধরনের চাষাবাদ করতে পারছে না এখানকার শতাধিক কৃষক। সেই সঙ্গে জমিতে গিয়ে পড়ছে নদীর তীরে থাকা পোলট্রি ফার্মের বিষাক্ত ময়লা-আবর্জনা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনের মরা নদীতে জমে আছে কচুরিপানা। পাঁচ-সাত বছর ধরে কচুরিপানা জমে থাকার কারণে জমিগুলো প্রায় জঙ্গল হয়ে গেছে। অন্যদিকে ইউপি ভবনের নাকের ডগায় ঘরে ওঠা দুটি পোলট্রি খামারের বিষাক্ত ময়লা-আবর্জনা জমিতে ফেলা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন জমির পানি বিষাক্ত করা হচ্ছে অন্যদিকে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।

স্থানীয় বাসিন্দা আলি আকবর গান্ধী বলেন, ‘এসব জমি থেকে গত ৫-৭ বছর আগেও একটা বড় পরিমাণ ধান উৎপাদন হতো। জমিগুলো আমাদের রোজগারের অন্যতম মাধ্যম ছিল। কিন্তু পানির প্রবাহ ধীরে ধীরে কমতে থাকায় কচুরিপানাগুলো জমিতে আটকে যায়। ফলে পাঁচ-সাত বছর আমরা কোনো ধরনের চাষাবাদ করতে পারছি না।’

আবদুল হাই বলেন, ধানের পাশাপাশি গোখাদ্য সংগ্রহ করা হতো। এ ছাড়া আগে আমরা এখানে অনেক পশু পালন করতাম। এখন জমিতে পোলট্রি ফার্মের বর্জ্য মিশে সে পথও বন্ধ হয়ে গেছে।

আবুল কাশেম নামে এক কৃষক জানান, যদি কখনো কোনো কৃষক নিজ খরচে কচুরিপানা পরিষ্কার করে চাষাবাদ করতে যান, তখন পোলট্রি ফার্মের বিষাক্ত পানির ভয়ে কেউ জমিতে নামতে সাহস পান না।

মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হোসেন ভূইয়া কৃষকদের এসব সমস্যার সত্যতা শিকার করে বলেন, এই কাজগুলো ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে করা সম্ভব নয়। আমাদের দাবি কৃষকের কল্যাণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।

সরকারি সহযোগিতা ছাড়া স্থানীয়দের দিয়ে এসব জমি আবাদযোগ্য করে তোলা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন কৃষকেরা। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চাইলেই কৃষকদের সোনালি দিনগুলো ফিরিয়ে দিতে পারবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি, তাই বিষয়টি অবগত নই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি জমি কাজে লাগাতে হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জমিগুলো যদি ব্যবহার উপযোগী করে তোলা যায়, তাহলে কৃষকদের পাশাপাশি দেশের উপকারে আসবে। আমি ইউএনওর সঙ্গে পরামর্শ করে জমিগুলো ব্যবহার উপযোগী করে তোলার চেষ্টা করব।’

পরিবেশ অধিদপ্তর নরসিংদীর উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, পরিবেশদূষণের বিষয়টি আমরা আমলে নিয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজগর হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি। সরেজমিন পরিদর্শন করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত