অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ হয়নি

অরূপ রায়, সাভার
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ০১
আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২২, ১৪: ৩০

ঢাকাসহ রাজধানীর চারপাশের পাঁচ জেলার অবৈধ সব ইটভাটা ১৫ দিনের মধ্যে ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এ-সংক্রান্ত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি ইকবাল কবিরের বেঞ্চ গত ১ মার্চ এই আদেশ দেন। এর পর এক মাস পার হয়ে গেলেও সাভার ও ধামরাইয়ের একটি ইটভাটাও ধ্বংস করা হয়নি।

সাভার ও ধামরাইয়ে ইটভাটার সংখ্যা কত, তার হিসাব নেই পরিবেশ অধিদপ্তরসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে। তথ্য অধিকার আইনে একাধিকবার আবেদন করেও ইটভাটার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।

তবে ইটভাটার মালিক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাভার ও ধামরাইয়ে প্রায় ৩০০ ইটভাটা রয়েছে, যার অধিকাংশই অবৈধ। আদালতের নির্দেশের পরেও এসব অবৈধ ইটভাটা ধ্বংসে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

গতকাল রোববার সাভারের গেন্ডা ও নামা গেন্ডা এলাকায় গিয়ে কর্ণফুলী সুপার ব্রিকস, মধুমতি ব্রিকস, একলাছ ব্রিকস ও ফিরোজ ব্রিকসে ইট পোড়াতে দেখা যায়। অথচ এসব ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও ইট পোড়ানোর অনুমতি নেই। অনুমতির তোয়াক্কা না করে মালিকেরা ইটভাটা পরিচালনা করলেও ভাটা ধ্বংসে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

কর্ণফুলী ব্রিকসের ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ভাটাগুলোর অবস্থান আবাসিক এলাকার মধ্যে থাকায় আবেদন করেও ছাড়পত্র ও ইট পোড়ানোর অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই তাঁরা অবৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনা করছেন।

হাইকোর্ট ২০১৯ সালে তুরাগ নদকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করে নদকে দূষণমুক্ত করার নির্দেশ দেন। এ বছর অপর এক আদেশে হাইকোর্ট রাজধানীর চারপাশের সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দেন। উচ্চ আদালতের এমন নির্দেশনা থাকার পরেও রাজধানীর অদূরে সাভারের আশুলিয়া বাজারের পাশ দিয়ে প্রবহমান তুরাগ নদের তীরে গড়ে ওঠা ইটভাটা মেঘনা ব্রিকস, আল-আশরাফ ব্রিকস, রাজু ব্রিকস, আশুলিয়া ব্রিকস ও সুরমা ব্রিকস ইট পুড়িয়ে নদী ও বায়ুদূষণ করে চলেছে।

তবে রাজু ও সুরমা ব্রিকসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কাঁচা ইট পোড়ানো ও কেনা মাটি শেষ করে ভাটা স্থানান্তরের জন্য তাঁরা হাইকোর্ট থেকে ছয় মাসের স্থগিতাদেশ পেয়েছেন। এ বছর এপ্রিল মাসে স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হবে। এরপর আর তাঁরা বর্তমান স্থানে ইটভাটা পরিচালনা করবেন না।

সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর বাজারের পাশে আবাসিক এলাকার মধ্যে গড়ে ওঠা মাহিম ব্রিকস ও রিপন ব্রিকসের ইট পোড়ানোর অনুমতি নেই। এরপরেও গত পাঁচ মাস এই দুই ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে ইট।

মাহিম ব্রিকসের ব্যবস্থাপক ইসমাইল হোসেন জানান, গত জানুয়ারি মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর তাঁদের ভাটা দুটিতে অভিযান চালিয়ে কিছু জরিমানা করেছিল। এ সময় ভাটার কিছু অংশ ভেঙে দেওয়া হয়। অভিযানের পর মেরামত করে আবার তা চালানো হচ্ছে।

ধামরাইয়ের জলসীন কান্দাপড়া আবাসিক এলাকার কয়েক গজের মধ্যে গড়ে ওঠা পিউর ব্রিকসের মালিকদের একজন বোরহান উদ্দিন জানান, সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে তাঁদের এলাকার চারটি ভাটাকে জরিমানা করলেও ভাটা বন্ধ বা ধ্বংস করে দেননি। এই সুযোগে তাঁরা ইট পোড়ানো অব্যাহত রেখেছেন।

জানতে চাইলে ধামরাইয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, ‘আমরা ইটভাটা ভেঙে দিই, তাঁরা ঠিক করে আবার চালান। জেল-জরিমানার ঝুঁকির মধ্যে এভাবেই ভাটাগুলো চলছে। সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া ইটভাটা ধ্বংস করা সম্ভব নয়।’

কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হলেও ফোন না ধরায় ঢাকার জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। পরে খুদে বার্তা পাঠিয়ে তাঁর কাছে ইটভাটা ধ্বংসের বিষয়ে মতামত জানতে চেয়েও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কয়েক ঘণ্টা পর জেলা প্রশাসকের স্টাফ কর্মকর্তা সিফাত বিন সাদিক এ প্রতিবেদকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। তিনি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে পরে তাঁর মতামত জানাবেন বলে জানান।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত