মালিহা লোধি
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তান ক্রমেই অপাঙক্তেয় হয়ে পড়ছে। ফলে দেশটি নিজের স্বার্থকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তার আশপাশের কৌশলগত অবস্থানকে আকার দিতে অক্ষম। বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতিতে দেশটি এখন আর আগের মতো প্রভাব বিস্তার করতে পারছে না।
পাকিস্তান বেশ কয়েকটি ফ্রন্টে, বিশেষ করে কাশ্মীর ও আফগানিস্তানে ধরা খেয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে একসময়কার কূটনীতির এই পাকা খেলোয়াড়ের এখন প্রধান কাজ হলো ধনী আরব দেশগুলোর কাছ থেকে ঋণ চাওয়া। এমনকি চীনের সঙ্গে দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এখন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানের প্রাসঙ্গিকতা ক্রমে কমছে। এর কূটনৈতিক বিকল্পগুলো সংকুচিত হচ্ছে।
বেশ কয়েকটি বিষয়ের সমন্বিত ফল আজকের এই অবস্থার জন্য দায়ী। এর মধ্যে আছে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক দুর্বলতা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অবিরাম অস্থিরতা, দুর্বল শাসনব্যবস্থা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় অব্যাহত হুমকি এবং কৌশলগত বিভ্রান্তি। এতৎসত্ত্বেও মূল প্রশ্নটি হলো, এই বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে বেশ কিছু উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও কেন দেশটি অতীতে কৌশলগতভাবে ‘প্রাসঙ্গিক’ ছিল?
এর জবাব হলো, বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির কারণে বাইরের বিষয়গুলো পাকিস্তানকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছিল। স্বাধীনতার দুই দশক পর পর্যন্ত শীতল যুদ্ধ অব্যাহত ছিল। এটা পাকিস্তানকে কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের প্রিয়ভাজন করে রেখেছিল। এই সময়ে পশ্চিমাদের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট থেকে পাকিস্তান বেশ ভালো রকম সামরিক ও আর্থিক সহায়তা পেয়েছিল।
১৯৮০-এর দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আক্রমণের ফলে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক জোটের অংশ হিসেবে সম্মুখ সারিতে চলে আসে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পরাজয় ও বিচ্ছিন্নতার পর পাকিস্তানের ভূ-কৌশলগত গুরুত্ব কমে গেলেও নাইন ইলেভেনে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর এটি দ্রুত পাল্টে যায়। পাকিস্তান কথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে আবারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় চলে আসে। ফলে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোটের দেশগুলোর আরও দুই দশক পাকিস্তানের সহযোগিতা প্রয়োজন হয়, যা এই সময়ে দেশটির ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব বিশেষভাবে বেড়ে যায়।
পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক গুরুত্বের মূলে ছিল বাইরের শক্তি, আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এবং বড় শক্তিগুলোর দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া। দেশটির আন্তর্জাতিক ভূমিকার এই পরিবর্তনের সব চালিকাশক্তিই বাইরের বিষয়। শীতল যুদ্ধ-পরবর্তী যুগে যে বৈশ্বিক পরিবেশ রচিত হয়, সেখানে কোনো দেশকে নিজের গুরুত্ব নিজেকেই বোঝাতে হয়। ফলে পাকিস্তান পিছিয়ে পড়ে।
বহিরাগত বাড়তি গুরুত্ব এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়কে খাটো করে দেখাই এত দিন পাকিস্তানের অতীত অগ্রাধিকার ও কর্মপন্থাকে ঠিক করে দিয়েছে। তবে সেটা আর টেকসই ছিল না। কিন্তু দেশটির সব সরকারই এটা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে যে গোটা বিশ্বের আগাপাছতলা বদলে গেছে এবং ভূ-রাজনীতির সুযোগ নিয়ে অর্থ কামিয়ে বেঁচে থাকার দিন শেষ হয়ে গেছে। অভিজাত শাসক শ্রেণি বুঝতে পারেনি যে দেশটির কৌশলগত গুরুত্বহীনতা মোকাবিলার একমাত্র উপায় হলো নিজেকে শক্তিশালী করা, ক্ষমতায়ন করা এবং নিজের ঘর সাজানো। কিন্তু পুরোনো অভ্যাসগুলো পুরোনো দৃষ্টান্তের মতোই টিকে ছিল।
পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বহিরাগত ও অভ্যন্তরীণ চাপের কারণে দেশটি বিপদে পড়েছে এবং সরকারের উচিত বিশ্ব পরিস্থিতির পরিবর্তনকে স্বীকার করে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া এবং নিজেকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা।
পাকিস্তানকে এখন পুরো পাল্টে যাওয়া আন্তর্জাতিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে। বিশ্বের সব রাষ্ট্রের মধ্যেই তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। পাকিস্তানকে এখন দক্ষতার সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নতি করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে হবে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থাধারীরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা তাদের ভূ-রাজনীতি প্রভাবিত ও গঠন করার ক্ষমতা দেয়। যদিও তারা পরাশক্তি নয়, তবু তাদের শক্তিশালী অর্থনীতি ও কূটনৈতিক দক্ষতার কারণে তারা অনেক দেশে সম্পর্ক গড়ে তোলার এবং জাতীয় স্বার্থের ব্যাপারে সমর্থন আদায়ের ক্ষেত্রে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় ক্ষমতার কাঠামোগত পরিবর্তন ও বিচ্ছুরণ, ক্ষমতার মুদ্রায় পরিবর্তন এবং মধ্যম মানের ক্ষমতাধারীদের কূটনৈতিক সক্রিয়তা তাদের জন্যই আরও বড় প্রভাব বলয় তৈরি করতে এবং বৈশ্বিক খেলোয়াড় হয়ে উঠতে সাহায্য করে। মধ্যম শক্তির দেশগুলো তাদের দর-কষাকষির অবস্থানকে শক্তিশালী করার জন্য মার্কিন-চীন দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে উভয় বৈশ্বিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে চায়। তারা সেই দ্বন্দ্বের সূক্ষ্ম ফাঁস এড়াতে চেষ্টা করে কিন্তু এর থেকে সুবিধাটাও সুদে-আসলে তুলে নেয়।
মধ্যম শক্তিগুলোর কূটনৈতিক সক্রিয়তা এবং ক্ষমতার কাঠামোগত পরিবর্তনের ফলে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় একটি পরিবর্তিত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তারা মার্কিন-চীন প্রতিযোগিতা ব্যবহার করে তাদের নিজস্ব অবস্থান শক্তিশালী করতে পারে এবং উভয় শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করে। এর ফলে, মধ্যম শক্তিগুলো তাদের কূটনৈতিক দর-কষাকষির অবস্থানকে উন্নত করতে পারছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয় দেশই তাদের প্রতি আরও মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানায়, যাতে তারা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীর শিবিরে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ না হয়।
গ্লোবাল সাউথের অনেক দেশ যেমন তুরস্ক, ভারত, সৌদি আরব, কাতার ও সিঙ্গাপুরের মতো মধ্যম শক্তির দেশগুলোর তালিকায় পাকিস্তান এখনো স্থান পায় নি। তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের মাধ্যমে ভবিষ্যতে সেই অবস্থানে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। পাকিস্তানের শক্তি ও অবস্থানের উন্নতি করার জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
আন্তর্জাতিকভাবে প্রাসঙ্গিক হওয়ার জন্য পাকিস্তানকে প্রথমে একটি শক্তিশালী এবং স্থিতিস্থাপক অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে, যা বেলআউট ও ঋণের ওপর নির্ভরশীল নয়। এমন একটি অর্থনীতি তৈরি করতে হবে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে একীভূত হবে। তবে এ থেকে বর্তমানে পাকিস্তান অনেক দূরে। এর জন্য দরকার দক্ষ শাসন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক কোন্দলের অবসান। অস্থিতিশীলতা ও কোন্দল দেশকে অস্থির, বিভ্রান্ত ও বিভক্ত অবস্থায় রাখে। এর জন্য একটি শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ও কর্মিবাহিনীরও প্রয়োজন, যা বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে উদ্ভাবন এবং অবদান রাখার ক্ষমতা রাখে। এই সবই জাতীয় আত্মবিশ্বাসের জন্ম দেবে, যা দেশকে আশা দিয়ে শক্তিশালী করতে পারে।
অভ্যন্তরীণ শক্তি তৈরির পাশাপাশি দেশের কূটনৈতিক কৌশলে সফট পাওয়ার অন্তর্ভুক্ত করাও এর বৈশ্বিক অবস্থান ও সুনাম উন্নত করতে সহায়তা করবে। পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি সফট পাওয়ারের উৎস রয়েছে, তা যদি চিহ্নিত করা হয় এবং বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যবহার করা হয়, তবে দেশ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারে।
সংক্ষেপে বলা যায়, পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক প্রাসঙ্গিকতা এখন তার অভ্যন্তরীণ অবস্থান এবং অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা, টেকসই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা, উপযুক্ত শাসনব্যবস্থা প্রদান, জনগণের জন্য বিনিয়োগ এবং এর মানব সম্পদের উন্নয়নের ঘাটতি মেটানোর ওপর নির্ভরশীল। ফলে পাকিস্তানকে একটি সুসংগত এবং ভবিষ্যৎমুখী বৈদেশিক নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। এগুলো ছাড়া বিশ্বে পাকিস্তানের প্রভাব পুনরায় বাড়ানোর কোনো সহজ পথ নেই।
(পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত এবং ঈষৎ সংক্ষেপিত)
লেখক: মালিহা লোধি
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তান ক্রমেই অপাঙক্তেয় হয়ে পড়ছে। ফলে দেশটি নিজের স্বার্থকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তার আশপাশের কৌশলগত অবস্থানকে আকার দিতে অক্ষম। বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতিতে দেশটি এখন আর আগের মতো প্রভাব বিস্তার করতে পারছে না।
পাকিস্তান বেশ কয়েকটি ফ্রন্টে, বিশেষ করে কাশ্মীর ও আফগানিস্তানে ধরা খেয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে একসময়কার কূটনীতির এই পাকা খেলোয়াড়ের এখন প্রধান কাজ হলো ধনী আরব দেশগুলোর কাছ থেকে ঋণ চাওয়া। এমনকি চীনের সঙ্গে দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এখন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানের প্রাসঙ্গিকতা ক্রমে কমছে। এর কূটনৈতিক বিকল্পগুলো সংকুচিত হচ্ছে।
বেশ কয়েকটি বিষয়ের সমন্বিত ফল আজকের এই অবস্থার জন্য দায়ী। এর মধ্যে আছে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক দুর্বলতা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অবিরাম অস্থিরতা, দুর্বল শাসনব্যবস্থা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় অব্যাহত হুমকি এবং কৌশলগত বিভ্রান্তি। এতৎসত্ত্বেও মূল প্রশ্নটি হলো, এই বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে বেশ কিছু উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও কেন দেশটি অতীতে কৌশলগতভাবে ‘প্রাসঙ্গিক’ ছিল?
এর জবাব হলো, বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির কারণে বাইরের বিষয়গুলো পাকিস্তানকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছিল। স্বাধীনতার দুই দশক পর পর্যন্ত শীতল যুদ্ধ অব্যাহত ছিল। এটা পাকিস্তানকে কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের প্রিয়ভাজন করে রেখেছিল। এই সময়ে পশ্চিমাদের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট থেকে পাকিস্তান বেশ ভালো রকম সামরিক ও আর্থিক সহায়তা পেয়েছিল।
১৯৮০-এর দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আক্রমণের ফলে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক জোটের অংশ হিসেবে সম্মুখ সারিতে চলে আসে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পরাজয় ও বিচ্ছিন্নতার পর পাকিস্তানের ভূ-কৌশলগত গুরুত্ব কমে গেলেও নাইন ইলেভেনে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর এটি দ্রুত পাল্টে যায়। পাকিস্তান কথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে আবারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় চলে আসে। ফলে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোটের দেশগুলোর আরও দুই দশক পাকিস্তানের সহযোগিতা প্রয়োজন হয়, যা এই সময়ে দেশটির ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব বিশেষভাবে বেড়ে যায়।
পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক গুরুত্বের মূলে ছিল বাইরের শক্তি, আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এবং বড় শক্তিগুলোর দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া। দেশটির আন্তর্জাতিক ভূমিকার এই পরিবর্তনের সব চালিকাশক্তিই বাইরের বিষয়। শীতল যুদ্ধ-পরবর্তী যুগে যে বৈশ্বিক পরিবেশ রচিত হয়, সেখানে কোনো দেশকে নিজের গুরুত্ব নিজেকেই বোঝাতে হয়। ফলে পাকিস্তান পিছিয়ে পড়ে।
বহিরাগত বাড়তি গুরুত্ব এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়কে খাটো করে দেখাই এত দিন পাকিস্তানের অতীত অগ্রাধিকার ও কর্মপন্থাকে ঠিক করে দিয়েছে। তবে সেটা আর টেকসই ছিল না। কিন্তু দেশটির সব সরকারই এটা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে যে গোটা বিশ্বের আগাপাছতলা বদলে গেছে এবং ভূ-রাজনীতির সুযোগ নিয়ে অর্থ কামিয়ে বেঁচে থাকার দিন শেষ হয়ে গেছে। অভিজাত শাসক শ্রেণি বুঝতে পারেনি যে দেশটির কৌশলগত গুরুত্বহীনতা মোকাবিলার একমাত্র উপায় হলো নিজেকে শক্তিশালী করা, ক্ষমতায়ন করা এবং নিজের ঘর সাজানো। কিন্তু পুরোনো অভ্যাসগুলো পুরোনো দৃষ্টান্তের মতোই টিকে ছিল।
পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বহিরাগত ও অভ্যন্তরীণ চাপের কারণে দেশটি বিপদে পড়েছে এবং সরকারের উচিত বিশ্ব পরিস্থিতির পরিবর্তনকে স্বীকার করে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া এবং নিজেকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা।
পাকিস্তানকে এখন পুরো পাল্টে যাওয়া আন্তর্জাতিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে। বিশ্বের সব রাষ্ট্রের মধ্যেই তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। পাকিস্তানকে এখন দক্ষতার সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নতি করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে হবে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থাধারীরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা তাদের ভূ-রাজনীতি প্রভাবিত ও গঠন করার ক্ষমতা দেয়। যদিও তারা পরাশক্তি নয়, তবু তাদের শক্তিশালী অর্থনীতি ও কূটনৈতিক দক্ষতার কারণে তারা অনেক দেশে সম্পর্ক গড়ে তোলার এবং জাতীয় স্বার্থের ব্যাপারে সমর্থন আদায়ের ক্ষেত্রে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় ক্ষমতার কাঠামোগত পরিবর্তন ও বিচ্ছুরণ, ক্ষমতার মুদ্রায় পরিবর্তন এবং মধ্যম মানের ক্ষমতাধারীদের কূটনৈতিক সক্রিয়তা তাদের জন্যই আরও বড় প্রভাব বলয় তৈরি করতে এবং বৈশ্বিক খেলোয়াড় হয়ে উঠতে সাহায্য করে। মধ্যম শক্তির দেশগুলো তাদের দর-কষাকষির অবস্থানকে শক্তিশালী করার জন্য মার্কিন-চীন দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে উভয় বৈশ্বিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে চায়। তারা সেই দ্বন্দ্বের সূক্ষ্ম ফাঁস এড়াতে চেষ্টা করে কিন্তু এর থেকে সুবিধাটাও সুদে-আসলে তুলে নেয়।
মধ্যম শক্তিগুলোর কূটনৈতিক সক্রিয়তা এবং ক্ষমতার কাঠামোগত পরিবর্তনের ফলে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় একটি পরিবর্তিত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তারা মার্কিন-চীন প্রতিযোগিতা ব্যবহার করে তাদের নিজস্ব অবস্থান শক্তিশালী করতে পারে এবং উভয় শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করে। এর ফলে, মধ্যম শক্তিগুলো তাদের কূটনৈতিক দর-কষাকষির অবস্থানকে উন্নত করতে পারছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয় দেশই তাদের প্রতি আরও মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানায়, যাতে তারা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীর শিবিরে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ না হয়।
গ্লোবাল সাউথের অনেক দেশ যেমন তুরস্ক, ভারত, সৌদি আরব, কাতার ও সিঙ্গাপুরের মতো মধ্যম শক্তির দেশগুলোর তালিকায় পাকিস্তান এখনো স্থান পায় নি। তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের মাধ্যমে ভবিষ্যতে সেই অবস্থানে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। পাকিস্তানের শক্তি ও অবস্থানের উন্নতি করার জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
আন্তর্জাতিকভাবে প্রাসঙ্গিক হওয়ার জন্য পাকিস্তানকে প্রথমে একটি শক্তিশালী এবং স্থিতিস্থাপক অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে, যা বেলআউট ও ঋণের ওপর নির্ভরশীল নয়। এমন একটি অর্থনীতি তৈরি করতে হবে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে একীভূত হবে। তবে এ থেকে বর্তমানে পাকিস্তান অনেক দূরে। এর জন্য দরকার দক্ষ শাসন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক কোন্দলের অবসান। অস্থিতিশীলতা ও কোন্দল দেশকে অস্থির, বিভ্রান্ত ও বিভক্ত অবস্থায় রাখে। এর জন্য একটি শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ও কর্মিবাহিনীরও প্রয়োজন, যা বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে উদ্ভাবন এবং অবদান রাখার ক্ষমতা রাখে। এই সবই জাতীয় আত্মবিশ্বাসের জন্ম দেবে, যা দেশকে আশা দিয়ে শক্তিশালী করতে পারে।
অভ্যন্তরীণ শক্তি তৈরির পাশাপাশি দেশের কূটনৈতিক কৌশলে সফট পাওয়ার অন্তর্ভুক্ত করাও এর বৈশ্বিক অবস্থান ও সুনাম উন্নত করতে সহায়তা করবে। পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি সফট পাওয়ারের উৎস রয়েছে, তা যদি চিহ্নিত করা হয় এবং বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যবহার করা হয়, তবে দেশ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারে।
সংক্ষেপে বলা যায়, পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক প্রাসঙ্গিকতা এখন তার অভ্যন্তরীণ অবস্থান এবং অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা, টেকসই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা, উপযুক্ত শাসনব্যবস্থা প্রদান, জনগণের জন্য বিনিয়োগ এবং এর মানব সম্পদের উন্নয়নের ঘাটতি মেটানোর ওপর নির্ভরশীল। ফলে পাকিস্তানকে একটি সুসংগত এবং ভবিষ্যৎমুখী বৈদেশিক নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। এগুলো ছাড়া বিশ্বে পাকিস্তানের প্রভাব পুনরায় বাড়ানোর কোনো সহজ পথ নেই।
(পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত এবং ঈষৎ সংক্ষেপিত)
লেখক: মালিহা লোধি
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে