শরিফুল হাসান
করোনা মহামারির মধ্যে গত বছর প্রবাসী আয়ের রেকর্ড হয়েছিল বাংলাদেশে। এবার এল আরেকটি ইতিবাচক খবর। সদ্য শেষ হওয়া নভেম্বর মাসে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের রেকর্ড হয়েছে বাংলাদেশে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) বলছে, এ মাসে ১ লাখ ২ হাজার ৮৬৩ জন কর্মীকে বিদেশে যাওয়ার জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। গত ৫০ বছরে কোনো মাসে ১ লাখ কর্মীর বিদেশে যাওয়ার এটি দ্বিতীয় ঘটনা।
২০১৭ সালের মার্চ মাসে ১ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে গিয়েছিলেন। আর ওই বছর মোট বিদেশে গিয়েছিলেন ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫ জন, যা বাংলাদেশের এযাবৎকালের রেকর্ড। অবশ্য তখন করোনা মহামারি ছিল না। সেই হিসাবে নভেম্বর মাসের ১ লাখ কর্মীর বিদেশে যাওয়ার ঘটনা দারুণ অর্থবহ।
স্বাধীনতার পরপর বছরে মাত্র হাজার পাঁচেক মানুষের বৈদেশিক কর্মসংস্থানের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক শ্রমবাজারে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। ১৯৮৯ সালে প্রথমবারের মতো বছরে ১ লাখ কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান ঘটে। এরপর সেটি ২-৩ লাখ হয়ে ২০০৭ সালে এক লাফে ৮ লাখে পৌঁছে যায়। এরপর ২০০৮ সালে বাংলাদেশ থেকে ৮ লাখ ৭৫ হাজার বাংলাদেশির বিদেশে কর্মসংস্থান হয়।
এরপর টানা কয়েক বছর গড়ে ৫-৬ লাখ বিদেশে গিয়েছেন। ২০১৭ সালে বছরে ১০ লাখ কর্মী পাঠানোর রেকর্ড। তবে পরের বছর ২০১৮ সালে ৭ লাখ ৩৪ হাজার এবং ২০১৯ সালে ৭ লাখ কর্মী বিদেশে যান। এর মানে ঘণ্টায় ৮৪ জন বিদেশে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশের শ্রমবাজারে প্রতিবছর যেখানে ২০ লাখ তরুণ আসেন এবং এর প্রায় অর্ধেকই বিদেশে চলে যান, সেটি কর্মসংস্থানের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, বোঝাই যায়। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে এসে বৈদেশিক সেই কর্মসংস্থান থমকে যায়। মহামারির কারণে গত বছর মাত্র ২ লাখ ১৭ হাজার কর্মী বিদেশে যান।
একদিকে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ভয়াবহভাবে কমে যাওয়া, অন্যদিকে প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশি বিদেশ থেকে ফেরত আসেন। সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ সংকটাপন্ন ছিল। তবে গত বছরের অক্টোবর থেকেই পরিস্থিতির ইতিবাচকভাবে উত্তরণ ঘটে। এ বছরের শুরু থেকে সেই ধারাই অব্যাহত ছিল।
বিএমইটির তথ্য বলছে, ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে ৩৫ হাজার ৭৩২, ফেব্রুয়ারি মাসে ৪৯ হাজার ৫১০ এবং মার্চ মাসে ৬১ হাজার ৬৫৩ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। তবে দেশে দ্বিতীয় দফায় কোভিড মহামারি শুরু হলে এপ্রিলে আবার লকডাউনের কারণে কর্মী যাওয়া কমে যায়। ওই মাসে ৩৪ হাজার ১৪৫, মে মাসে ১৪ হাজার ২০০, জুনে ৪৫ হাজার ৫৬৭, জুলাই মাসে আবার ১২ হাজার ৩৮০ ও আগস্টে ১৯ হাজার ৬০৪ জন কর্মী বিদেশে যান।
লকডাউন উঠে গেলে এবং কোভিড পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হওয়ার পর সেপ্টেম্বর থেকে ফের কর্মী যাওয়া বাড়তে থাকে। সেপ্টেম্বর মাসে ৪২ হাজার এবং অক্টোবরে ৬৫ হাজার ২৩৩ জন বিদেশে যান। এরপর নভেম্বর মাসে ১ লাখ ২ হাজার ৮৬৩ জন কর্মী বিদেশে গেছেন, যেটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড।
মহামারির মধ্যে কোন দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিচ্ছে, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, গত ১১ মাসে যে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৮৯৫ জন কর্মী বিদেশে গেছেন, তার মধ্যে এককভাবে সৌদি আরবেই গেছেন ৩ লাখ ৭০ হাজার ১৪ জন; অর্থাৎ এ বছর বিদেশে যত লোক গেছেন, তার মধ্যে ৭৬ শতাংশই গেছেন সৌদি আরবে।
মহামারির পর সৌদি আরবে বাংলাদেশিদের কাজের সুযোগ যে বেড়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এটি অবশ্যই ইতিবাচক। এ ছাড়া এ বছর ওমানে ৪০ হাজার ৮৬, সিঙ্গাপুরে ২১ হাজার ৩৩৯, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৪ হাজার ২৭৪, জর্ডানে ১১ হাজার ৮৪৫, কাতারে ৯ হাজার ৭২৮ ও কুয়েতে ৯৩৬ জন কর্মী গেছেন।
কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে প্রায় ৫ লাখ কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থানের বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়, বিএমইটি এবং এ খাতের ব্যবসায়ীসহ সবাইকে অভিনন্দন। অথচ গত বছর পরিস্থিতি এতটা ইতিবাচক ছিল না।
এই তো গত বছরের মার্চে শুরু হলো করোনা। মহামারির প্রথম ধাক্কা পড়ল অভিবাসন খাতে। আমরা বারবার হোঁচট খেয়েছি; কিন্তু থেমে যাইনি। নানা সংকটের মধ্যেও সরকার, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বিএমইটি, কল্যাণ বোর্ড, প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি সংস্থাগুলো একসঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করেছে।
ফলাফল, প্রবাসীদের বিক্ষোভের মধ্যেই যথাসময়ে টিকিটের ব্যবস্থা করা, বিদেশগামীদের নিবন্ধন ও টিকার ব্যবস্থা করা, কোয়ারেন্টিনের জন্য ২৫ হাজার করে টাকা, বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর যন্ত্র বসানো, প্রবাসীদের করোনার খরচ সরকারের বহন করা, বিদেশফেরতদের জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ—সবকিছু মিলিয়েই এই অর্জন।
কেউ জানতে চাইতে পারেন, অভিবাসন খাতটা বাংলাদেশের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ? একটু পেছনে তাকালেই দেখবেন, নয় মাসের সশস্ত্র স্বাধীনতাসংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ যখন বিজয় লাভ করে, তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত এ দেশটি ছিল পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশ। একদিকে প্রায় শূন্য রিজার্ভ, আরেক দিকে ডলারের তীব্র সংকট, ভাঙা সব রাস্তাঘাট। কিন্তু স্বাধীনতার পাঁচ দশক পর অন্য এক উচ্চতায় বাংলাদেশ। প্রবাসী আয় প্রাপ্তিতে গোটা পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ কখনো অষ্টম, কখনো-বা সপ্তম স্থানে থাকছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী আয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীর শীর্ষ ১০ দেশের একটি। মূলত ১ কোটির বেশি প্রবাসী বিদেশ থেকে এই প্রবাসী আয় পাঠাচ্ছেন। তাঁদের অবদানে ২০২১ সালের ৩ মে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৫ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছুঁয়েছে।
কথাটা আগেও বহুবার বলেছি। বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে কেউ জানতে চাইলে তিনটি অক্ষর বলি। ই, এফ এবং জি। ই মানে এক্সপার্টিয়েট ওয়ার্কার বা প্রবাসী শ্রমিক। এফ মানে ফার্মারস বা কৃষক, জি মানে গার্মেন্টস ওয়ার্কার বা পোশাকশ্রমিক। বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত আসলে এই তিন খাত। এর মধ্যে প্রবাসীদের অবদান অনন্য।
করোনা মহামারির মধ্যেও রেকর্ড পরিমাণ ২৪ বিলিয়ন ডলারের প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আরেকটু সহজ করে বললে বলা যায়, সারা বিশ্ব মিলিয়ে বাংলাদেশকে এখন যে পরিমাণ ঋণ বা অনুদান দিচ্ছে বা সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের (এফডিআই) যে অর্থ আসছে, তার চেয়ে ৬-১০ গুণ পর্যন্ত বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিবাসন খাতটা দেখছি। স্বীকার করতেই হবে, সরকারের আন্তরিকতা ও চেষ্টার কমতি নেই। এ খাতে অনেক অর্জন আছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বৈদেশিক কর্মসংস্থান স্বাভাবিক হচ্ছে।
আশার কথা হলো, কোভিডের পর সারা বিশ্বেই কৃষিসহ নানা খাতে কর্মীদের চাহিদা বাড়ছে। আগামী দিনগুলোয় কোন খাতের লোক যাবে, তাদের দক্ষতা কী হবে—এসব প্রস্তুতি নিতে হবে; বিশেষ করে করোনার পর যেসব পেশার চাহিদা বেড়েছে, কিংবা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কারণে যেসব খাতে কর্মী লাগবে, সেসব পেশায় দক্ষ জনবল তৈরির জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধানও জরুরি।
কোনো সন্দেহ নেই, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী আয়ের ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবেই। তবে রাষ্ট্র-দূতাবাস-স্বজন সবাইকে মনে রাখতে হবে, প্রবাসীরা শুধু টাকা পাঠানোর যন্ত্র নন। তাঁরাও মানুষ। কাজেই সব সময় তাঁদের মানবিক মর্যাদা দিতে হবে।
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। একই সঙ্গে এটি প্রবাসীদেরও মাস। প্রতিবছরের মতো এ বছরের ১৮ ডিসেম্বর পালিত হয় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস। এবারও হবে। তবে শুধু বছরের একটি দিন নয়, সারা বছর প্রবাসীদের মর্যাদা দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, এক কোটির বেশি প্রবাসী শুধু দেশের অর্থনীতি সচল রাখছেন তা নয়, অনেক দূর থেকেও বুকের মধ্যে পরিবার ও লাল-সবুজের এই বাংলাদেশের জন্য অনেক ভালোবাসা যত্ন করে রাখেন। আর পৃথিবীর প্রতিটি দেশে তাঁরাই তো বাংলাদেশের প্রতিনিধি!
শরিফুল হাসান
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচিপ্রধান
করোনা মহামারির মধ্যে গত বছর প্রবাসী আয়ের রেকর্ড হয়েছিল বাংলাদেশে। এবার এল আরেকটি ইতিবাচক খবর। সদ্য শেষ হওয়া নভেম্বর মাসে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের রেকর্ড হয়েছে বাংলাদেশে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) বলছে, এ মাসে ১ লাখ ২ হাজার ৮৬৩ জন কর্মীকে বিদেশে যাওয়ার জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। গত ৫০ বছরে কোনো মাসে ১ লাখ কর্মীর বিদেশে যাওয়ার এটি দ্বিতীয় ঘটনা।
২০১৭ সালের মার্চ মাসে ১ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে গিয়েছিলেন। আর ওই বছর মোট বিদেশে গিয়েছিলেন ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫ জন, যা বাংলাদেশের এযাবৎকালের রেকর্ড। অবশ্য তখন করোনা মহামারি ছিল না। সেই হিসাবে নভেম্বর মাসের ১ লাখ কর্মীর বিদেশে যাওয়ার ঘটনা দারুণ অর্থবহ।
স্বাধীনতার পরপর বছরে মাত্র হাজার পাঁচেক মানুষের বৈদেশিক কর্মসংস্থানের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক শ্রমবাজারে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। ১৯৮৯ সালে প্রথমবারের মতো বছরে ১ লাখ কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান ঘটে। এরপর সেটি ২-৩ লাখ হয়ে ২০০৭ সালে এক লাফে ৮ লাখে পৌঁছে যায়। এরপর ২০০৮ সালে বাংলাদেশ থেকে ৮ লাখ ৭৫ হাজার বাংলাদেশির বিদেশে কর্মসংস্থান হয়।
এরপর টানা কয়েক বছর গড়ে ৫-৬ লাখ বিদেশে গিয়েছেন। ২০১৭ সালে বছরে ১০ লাখ কর্মী পাঠানোর রেকর্ড। তবে পরের বছর ২০১৮ সালে ৭ লাখ ৩৪ হাজার এবং ২০১৯ সালে ৭ লাখ কর্মী বিদেশে যান। এর মানে ঘণ্টায় ৮৪ জন বিদেশে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশের শ্রমবাজারে প্রতিবছর যেখানে ২০ লাখ তরুণ আসেন এবং এর প্রায় অর্ধেকই বিদেশে চলে যান, সেটি কর্মসংস্থানের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, বোঝাই যায়। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে এসে বৈদেশিক সেই কর্মসংস্থান থমকে যায়। মহামারির কারণে গত বছর মাত্র ২ লাখ ১৭ হাজার কর্মী বিদেশে যান।
একদিকে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ভয়াবহভাবে কমে যাওয়া, অন্যদিকে প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশি বিদেশ থেকে ফেরত আসেন। সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ সংকটাপন্ন ছিল। তবে গত বছরের অক্টোবর থেকেই পরিস্থিতির ইতিবাচকভাবে উত্তরণ ঘটে। এ বছরের শুরু থেকে সেই ধারাই অব্যাহত ছিল।
বিএমইটির তথ্য বলছে, ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে ৩৫ হাজার ৭৩২, ফেব্রুয়ারি মাসে ৪৯ হাজার ৫১০ এবং মার্চ মাসে ৬১ হাজার ৬৫৩ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। তবে দেশে দ্বিতীয় দফায় কোভিড মহামারি শুরু হলে এপ্রিলে আবার লকডাউনের কারণে কর্মী যাওয়া কমে যায়। ওই মাসে ৩৪ হাজার ১৪৫, মে মাসে ১৪ হাজার ২০০, জুনে ৪৫ হাজার ৫৬৭, জুলাই মাসে আবার ১২ হাজার ৩৮০ ও আগস্টে ১৯ হাজার ৬০৪ জন কর্মী বিদেশে যান।
লকডাউন উঠে গেলে এবং কোভিড পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হওয়ার পর সেপ্টেম্বর থেকে ফের কর্মী যাওয়া বাড়তে থাকে। সেপ্টেম্বর মাসে ৪২ হাজার এবং অক্টোবরে ৬৫ হাজার ২৩৩ জন বিদেশে যান। এরপর নভেম্বর মাসে ১ লাখ ২ হাজার ৮৬৩ জন কর্মী বিদেশে গেছেন, যেটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড।
মহামারির মধ্যে কোন দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিচ্ছে, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, গত ১১ মাসে যে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৮৯৫ জন কর্মী বিদেশে গেছেন, তার মধ্যে এককভাবে সৌদি আরবেই গেছেন ৩ লাখ ৭০ হাজার ১৪ জন; অর্থাৎ এ বছর বিদেশে যত লোক গেছেন, তার মধ্যে ৭৬ শতাংশই গেছেন সৌদি আরবে।
মহামারির পর সৌদি আরবে বাংলাদেশিদের কাজের সুযোগ যে বেড়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এটি অবশ্যই ইতিবাচক। এ ছাড়া এ বছর ওমানে ৪০ হাজার ৮৬, সিঙ্গাপুরে ২১ হাজার ৩৩৯, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৪ হাজার ২৭৪, জর্ডানে ১১ হাজার ৮৪৫, কাতারে ৯ হাজার ৭২৮ ও কুয়েতে ৯৩৬ জন কর্মী গেছেন।
কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে প্রায় ৫ লাখ কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থানের বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়, বিএমইটি এবং এ খাতের ব্যবসায়ীসহ সবাইকে অভিনন্দন। অথচ গত বছর পরিস্থিতি এতটা ইতিবাচক ছিল না।
এই তো গত বছরের মার্চে শুরু হলো করোনা। মহামারির প্রথম ধাক্কা পড়ল অভিবাসন খাতে। আমরা বারবার হোঁচট খেয়েছি; কিন্তু থেমে যাইনি। নানা সংকটের মধ্যেও সরকার, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বিএমইটি, কল্যাণ বোর্ড, প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি সংস্থাগুলো একসঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করেছে।
ফলাফল, প্রবাসীদের বিক্ষোভের মধ্যেই যথাসময়ে টিকিটের ব্যবস্থা করা, বিদেশগামীদের নিবন্ধন ও টিকার ব্যবস্থা করা, কোয়ারেন্টিনের জন্য ২৫ হাজার করে টাকা, বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর যন্ত্র বসানো, প্রবাসীদের করোনার খরচ সরকারের বহন করা, বিদেশফেরতদের জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ—সবকিছু মিলিয়েই এই অর্জন।
কেউ জানতে চাইতে পারেন, অভিবাসন খাতটা বাংলাদেশের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ? একটু পেছনে তাকালেই দেখবেন, নয় মাসের সশস্ত্র স্বাধীনতাসংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ যখন বিজয় লাভ করে, তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত এ দেশটি ছিল পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশ। একদিকে প্রায় শূন্য রিজার্ভ, আরেক দিকে ডলারের তীব্র সংকট, ভাঙা সব রাস্তাঘাট। কিন্তু স্বাধীনতার পাঁচ দশক পর অন্য এক উচ্চতায় বাংলাদেশ। প্রবাসী আয় প্রাপ্তিতে গোটা পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ কখনো অষ্টম, কখনো-বা সপ্তম স্থানে থাকছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী আয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীর শীর্ষ ১০ দেশের একটি। মূলত ১ কোটির বেশি প্রবাসী বিদেশ থেকে এই প্রবাসী আয় পাঠাচ্ছেন। তাঁদের অবদানে ২০২১ সালের ৩ মে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৫ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছুঁয়েছে।
কথাটা আগেও বহুবার বলেছি। বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে কেউ জানতে চাইলে তিনটি অক্ষর বলি। ই, এফ এবং জি। ই মানে এক্সপার্টিয়েট ওয়ার্কার বা প্রবাসী শ্রমিক। এফ মানে ফার্মারস বা কৃষক, জি মানে গার্মেন্টস ওয়ার্কার বা পোশাকশ্রমিক। বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত আসলে এই তিন খাত। এর মধ্যে প্রবাসীদের অবদান অনন্য।
করোনা মহামারির মধ্যেও রেকর্ড পরিমাণ ২৪ বিলিয়ন ডলারের প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আরেকটু সহজ করে বললে বলা যায়, সারা বিশ্ব মিলিয়ে বাংলাদেশকে এখন যে পরিমাণ ঋণ বা অনুদান দিচ্ছে বা সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের (এফডিআই) যে অর্থ আসছে, তার চেয়ে ৬-১০ গুণ পর্যন্ত বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিবাসন খাতটা দেখছি। স্বীকার করতেই হবে, সরকারের আন্তরিকতা ও চেষ্টার কমতি নেই। এ খাতে অনেক অর্জন আছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বৈদেশিক কর্মসংস্থান স্বাভাবিক হচ্ছে।
আশার কথা হলো, কোভিডের পর সারা বিশ্বেই কৃষিসহ নানা খাতে কর্মীদের চাহিদা বাড়ছে। আগামী দিনগুলোয় কোন খাতের লোক যাবে, তাদের দক্ষতা কী হবে—এসব প্রস্তুতি নিতে হবে; বিশেষ করে করোনার পর যেসব পেশার চাহিদা বেড়েছে, কিংবা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কারণে যেসব খাতে কর্মী লাগবে, সেসব পেশায় দক্ষ জনবল তৈরির জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধানও জরুরি।
কোনো সন্দেহ নেই, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী আয়ের ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবেই। তবে রাষ্ট্র-দূতাবাস-স্বজন সবাইকে মনে রাখতে হবে, প্রবাসীরা শুধু টাকা পাঠানোর যন্ত্র নন। তাঁরাও মানুষ। কাজেই সব সময় তাঁদের মানবিক মর্যাদা দিতে হবে।
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। একই সঙ্গে এটি প্রবাসীদেরও মাস। প্রতিবছরের মতো এ বছরের ১৮ ডিসেম্বর পালিত হয় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস। এবারও হবে। তবে শুধু বছরের একটি দিন নয়, সারা বছর প্রবাসীদের মর্যাদা দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, এক কোটির বেশি প্রবাসী শুধু দেশের অর্থনীতি সচল রাখছেন তা নয়, অনেক দূর থেকেও বুকের মধ্যে পরিবার ও লাল-সবুজের এই বাংলাদেশের জন্য অনেক ভালোবাসা যত্ন করে রাখেন। আর পৃথিবীর প্রতিটি দেশে তাঁরাই তো বাংলাদেশের প্রতিনিধি!
শরিফুল হাসান
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচিপ্রধান
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৪ দিন আগে