হঠাৎ বেড়েছে ছুরি হামলা

জিয়াউল হক, যশোর
প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮: ৩২
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ১৬

যশোর সদরে চলতি মাসের ১৯ দিনে সাতটি ছুরি হামলার ঘটনা ঘটেছে। দুর্বৃত্তদের এসব ঘটনায় ২১ জন জখম ও দুজন নিহত হয়েছেন।

হঠাৎ করে ছুরিকাঘাতে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে চার কারণ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাঁরা বলছেন, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, সামাজিক অবক্ষয়, আইনের ফাঁক-ফোকর ও আধিপত্য বিস্তারের কারণেই এসব ঘটনা ঘটছে। এসবের সঙ্গে জড়িতদের অধিকাংশ কিশোর।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে জেলা পুলিশ। গত কয়েক দিনের অভিযানে সাতটি ছুরিকাঘাতের মামলায় ২৩ জনকে আটক করা হয়েছে। খুব দ্রুতই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হবে।

জানা গেছে, গত শুক্রবার দিবাগত রাতে শহরের হুশতলা এলাকায় রাকিব সরদার এবং রোববার দুপুরে শংকরপুর এলাকায় সাব্বির হোসেন নামের দুই যুবক দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ১৯ ডিসেম্বর দুপুরে শহরের শংকরপুর এলাকায় সাব্বির হোসেন নামের এক যুবক ছুরিকাঘাতে মারা যান। তাঁর শরীরের একাধিক স্থানে ছুরির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

আগের দিন শনিবার সন্ধ্যায় শহরের শংকরপুর এলাকায় রেজাউল ইসলাম (৩৬) নামের এক যুবক ছুরিকাঘাতের শিকার হন। শংকরপুর মুরগি ফার্মের সামনে এ ঘটনা ঘটে। রেজাউল শহরের শংকরপুর বীর মুক্তিযোদ্ধা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজ্জাম্মেল হকের ছেলে। তিনি এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

শুক্রবার রাতে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কর্মিসভা শেষে বাড়িতে ফেরার সময় ছুরিকাঘাতের শিকার হন রাকিব সরদার (৩০) নামের এক যুবক। সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত রাকিবের বাড়ি বকচর হুশতলা কবরস্থানপাড়ায়। তিনি পেশায় মোটরগাড়ি শ্রমিক ছিলেন।

চলতি মাসের ১১ তারিখ শনিবার যশোরে পৃথক স্থানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে দুই যুবক গুরুতর আহত হয়েছিলেন। একজন যশোর সদরের মহিদ হোসেনের ছেলে হাসিবুর রহমান (১৯) ও শহরের ষষ্টীতলা এলাকার রেজাউল করিমের ছেলে নাসির হোসেন (২৬)। তাঁদের যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ মাসেরই ৮ তারিখে শহরের বেজপাড়া এলাকায় এক দম্পতিকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। শহরের আরএন রোড এলাকার দোকান কর্মচারী জাহিদ হাসান (২৮) ও তাঁর স্ত্রী নুসরাত ফারিয়া (১৮) ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে ছুরিকাহত হন।

আগের দিন মঙ্গলবার ছুরিকাঘাতে জখম হন আরও দুই যুবক। তাঁরা হলেন বাঘারপাড়ার আরিফুল ইসলাম আরিফ (২০) ও দয়ারামপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম (২৪)। তাঁরাও ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিলেন।

১ ডিসেম্বর জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে ছুরিকাঘাতে ১২ জন আহত হন। এ ঘটনায় ১০ জন গুরুতর আহতাবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) যশোরের সভাপতি অধ্যাপক সুকুমার দাস বলেন, ‘সম্প্রতি যশোরে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেখানে যারা আহত বা নিহত হয়েছেন অধিকাংশই ছুরিকাঘাতের শিকার হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘এ অপরাধগুলো যারা ঘটাচ্ছে আর যারা আহত হচ্ছে তাদের একটি বড় অংশই কিশোর। এ ধারা সারা দেশের মতো যশোরেও অতীতে ছিল। কিন্তু সম্প্রতি এটা বেশি দেখা যাচ্ছে।’

মূলত চারটি কারণে এ ঘটনা বেশি ঘটছে বলে মনে করছেন টিআইবি যশোরের সভাপতি অধ্যাপক সুকুমার দাস। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, সামাজিক অবক্ষয়, আইনের ফাঁক-ফোকর ও আধিপত্য বিস্তারের কারণেই এসব ঘটনা ঘটছে।’

যশোর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আইনজীবী শেখ তাজ হোসেন তাজু বলেন, ‘রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার কারণেই এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। শুধু পুলিশের একার পক্ষে এ অবস্থার উত্তরণ করা সম্ভব নয়। এখানে সামাজিক দায়বদ্ধতারও একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। যেখানে রাজনৈতিক, সামাজিকসহ সব শ্রেণি-পেশার সর্বস্তরের মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন গড়ে তুলতে হবে।’

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ইতিমধ্যে বিশেষ অভিযান শুরু করা হয়েছে। আমাদের বিভিন্ন শাখার সমন্বয় করে অপরাধ দমনে কাজ চলছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত