অর্ধকোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা ‘সোনালী’

রাশেদুজ্জামান, মেহেরপুর
Thumbnail image

বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) পরিচালনার লাইসেন্স দূরের কথা, সমাজসেবা অধিদপ্তরের অনুমোদনই নেই। নেই সমবায় অফিসের নিবন্ধনও। অথচ শহরে বসে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ঋণ দেওয়ার নাম করে সঞ্চয় আদায় করে ‘সোনালী ফাউন্ডেশন’ নামক একটি সংগঠন। এরই মধ্যে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্ধকোটি টাকা আদায় করে লাপাত্তা হয়েছে ভুয়া প্রতিষ্ঠানটি। গত মঙ্গলবার বিকেলে অফিসে তালা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন ভুক্তভোগীরা।

জানা গেছে, মেহেরপুর শহরের যাদবপুর মোড়ে এক সপ্তাহ আগে একটি অফিস নিয়ে বসে ‘সোনালী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি ভুয়া এনজিও। গ্রাহকদের কাছে নানা প্রলোভনে তারা সঞ্চয় উত্তোলন কার্যক্রম শুরু করে। ১০ হাজার টাকা জমা দিলে মিলবে ১ লাখ টাকার ঋণ, এমন চটকদার অফারে সাধারণ মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েন। জমা দিতে থাকেন ১ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। মাত্র সাত-আট দিনের ব্যবধানে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় অর্ধকোটি টাকা। মঙ্গলবার দুপুরে অফিসে তালা দিয়ে উধাও হয়ে যান ওই অফিসের লোকজন। খবর পেয়ে দুপুর থেকে অফিসের সামনে ভিড় জমাতে থাকেন প্রতারণার শিকার শত শত মানুষ।

কথা হয় আমঝুপির ভুক্তভোগী সাথি খাতুনের সঙ্গে। তিনি জানান, ১০ লাখ টাকা ঋণ দেবে বলে কোনো কাগজপত্র ছাড়াই তাঁর কাছ থেকে ১ লাখ টাকা নেওয়া হয়। শুধু বিশ্বাস করে এ টাকা তিনি দিয়েছেন। এখন অফিসে এসে দেখেন কেউ নেই। নিজের গরু-ছাগল বিক্রি করে এ টাকা দিয়েছেন। সবকিছু হারিয়ে এখন সর্বস্বান্ত তিনি। স্বামীর অগোচরে তিনি এ টাকা দেন। স্বামী জানতে পারলে তাঁকে বাড়িতে উঠতে দেবেন না। এখন পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

একই গ্রামের হাসিয়ারা দিয়েছেন ৪০ হাজার, শিল্পী খাতুন ৪০ হাজার এবং নৈতন খাতুন ৩০ হাজার টাকা। শুধু একটি গ্রাম থেকে তারা আদায় করেছে ৪ লাখ টাকা।

যাদবপুরের বাসিন্দা সাজেদা খাতুন ১ লাখ ঋণ পাবেন বলে দিয়েছেন ১০ হাজার টাকা। মর্জিনা খাতুন দিয়েছেন ৫ হাজার টাকা। হিরা খাতুন ৭ হাজার, আনোয়ার হোসেন ৭ হাজার টাকা। কালাচাঁদপুরের ভ্যানচালক আক্তার হোসেন ২ লাখ টাকা ঋণের আশায় দিয়েছেন ২০ হাজার। ঋণ নিতে এসে অফিস উধাওয়ের খবর পেয়ে তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। 
খবর পেয়ে সেখানে আসে মেহেরপুর সদর থানা-পুলিশের একটি দল। তারা নানাভাবে গ্রাহকদের বোঝানোর চেষ্টা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ভুক্তভোগীদের থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মোয়াজ্জেম হোসেন। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

কথিত এই এনজিওর শাখা ব্যবস্থাপক মো. শাহিদের মোবাইল নম্বরও কেউ দিতে পারেননি। তাই তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

‘সোনালী ফাউন্ডেশন’ নামক কোনো এনজিওর অনুমোদন নেই বলে জানান জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক কাজী কাদের ফজলে রাব্বী। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষকে কোনো জায়গায় লগ্নি করার আগে সচেতন হওয়া দরকার। এমন ভুয়া এনজিওর কাছে সাধারণ মানুষ কেন তাঁদের সঞ্চয়ের টাকা জমা রাখেন, তা বোঝা দায়। সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত